আবারো বাঘের গর্জন শুনলো ক্রিকেট বিশ্ব

সৌম্যর ব্যাটে দাপুটে জয় বাংলাদেশের

আবারো বাঘের গর্জন শুনলো ক্রিকেট বিশ্ব। আবারো প্রতিপক্ষকে দুমড়ে-মুচড়ে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করে দিল বাংলাদেশ। ঘরের মাঠে দুই ম্যাচে পরাজয়ের তিক্ত স্বাদ গ্রহণের পর জয়ের ধারায় ফিরল বাংলাদেশ।

সফররত দক্ষিণ আফ্রিকাকে মাটিতে নামিয়ে এনে পরাজয়ের গ্লানি মুছে ফেলল লাল-সবুজের টাইগাররা। ২০০৭ ক্রিকেট বিশ্বকাপে গায়ানায় বাঘের গর্জন শুনেছিল বাংলাদেশ। রোববার মিরপুরে যেন গায়ানার সুখস্মৃতি ফিরে আসলো।

টি-টোয়েন্টি সিরিজ হার ও প্রথম ওয়ানডেতে হারের পর মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিল বাংলাদেশ। মাশরাফিও জানিয়েছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জয়ে ফেরাই একমাত্র চ্যালেঞ্জ তার। সেটা অধিনায়ক হিসেবেও চ্যালেঞ্জ আর দলেরও চ্যালেঞ্জ।

দুই চ্যালেঞ্জেই শতভাগ সফল বাংলাদেশ। আর সফলতার পথে শুরুতেই বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যান বোলাররা। মিরপুরে টসে জিতে ব্যাটিং করতে নেমে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ১৬২ রানে আটকে ফেলে বোলাররা। এরপর ব্যাটিংয়ে সৌম্য সরকার আর মাহমুদউল্লাহর দক্ষতায় জয়ের বন্দরে সহজেই নোঙর ফেলে টাইগাররা।

সাত উইকেট ও ১৩৪ বল হাতে রেখে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দ্বিতীয় জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ। এর আগে ২০০৭ বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৬৭ রানে হারিয়ে প্রোটিয়াদের বিশ্বমঞ্চ থেকে বিদায় করে দিয়েছিল বাংলাদেশ।

১৬৩ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ইনিংসের শুরুতেই তামিম বিদায় নেন রাবাদার বলে। এরপর লিটন কুমার দাসের মিনি তান্ডবে স্বরূপে বাংলাদেশ। কিন্তু আঙ্গুলে ব্যাথা পাওয়ার পর রাবাদার দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হন লিটন। এর আগে ১৪ বলে ২ চার ও ১ ছক্কায় ১৭ রান করেন লিটন।

এরপর আর ম্যাচে ফিরতে পারেনি দক্ষিণ আফ্রিকা। সৌম্য সরকার ও মাহমুদউল্লাহর ১৩৫ রানের জুটিতে সহজেই জয় পায় বাংলাদেশ। তৃতীয় উইকেট জুটিতে এই দুই ব্যাটসম্যানের এটি দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে রেকর্ড রানের জুটি। এর আগে হাবিবুল বাশার ও সানোয়ার হোসেন ৬৮ রান করেন।

মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ জয় থেকে ৪ রান দূরে থেকে আউট হয়ে গেলে সৌম্য অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়েন। ইনজুরি কাটিয়ে প্রথম ম্যাচে রান না পেলেও দ্বিতীয় ম্যাচে ৬৪ বলে ৫০ রান করে নিজেকে নতুনভাবে প্রমাণ করলেন রিয়াদ।

সৌম্য সরকার ৭৯ বলে ৮৮ রান করেন। ১৩ চার ও ১ ছক্কায় এ ইনিংস সাজান তিনি। সাকিব শূন্য রানে অপরাজিত থাকেন।

এর আগে বোলারদের দাপটে সবকটি উইকেটে হারিয়ে রোববার দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ১৬২ রানে গুটিয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংস।

পেসারদের পাশাপাশি স্পিনাররা বেশ দাপটের সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংস হ্যান্ডেল করেছেন। ইনিংসের শুরুতেই তরুণ তুর্কী মুস্তাফিজ কুইন্টন ডি কককে ফিরেয়ে সফরকারী শিবিরে আঘাত করেন। মুস্তাফিজের লাফিয়ে ওঠা বল না পারলেন ছাড়তে না পারলেন খেলতে! ফলাফল ব্যাটের কানায় লেগে বল পয়েন্টে সাব্বিরের হাতে।

পরের আঘাতটি আনেন একাদশে সুযোগ পাওয়া রুবেল হোসেন। আত্মবিশ্বাসী ও ধারাবাহিক হাশিম আমলার উইকেটে আঘাত করে কমপক্ষে পনের গজ দূরে পাঠিয়ে দেন রুবেল।

এরপর শুরু হয় সাকিব, নাসির, মাহমুদউল্লাহর ম্যাজিক শো। রানের চাকা আটকে রাখার পাশাপাশি দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটসম্যানদের বাইশ গজের উইকেটে স্বচ্ছন্দে খেলতে দেননি তিন স্পিনার। সাকিব উইকেটের দেখা না পেলেও নাসির দুটি ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ একটি উইকেট তুলে নেন। স্কোরবোর্ড তিন অঙ্কে পৌঁছানোর আগেই আরো এক ব্যাটসম্যান সাজঘরে। ৬ উইকেটে সফরকারীদের রান ১০০।

সেখান থেকে ক্রিস মরিসকে রুবেল, রাবাদাকে মুস্তাফিজ ফিরিয়ে দিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংসের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় বাংলাদেশ। প্রোটিয়াদের ইনিংসের লেজটা গুড়িয়ে দেন নাসির হোসেন ও মাশরাফি বিন মর্তুজা।

৪৬ ওভারে সবকটি উইকেট হারিয়ে ১৬২ রানে গুটিয়ে যায় প্রোটিয়াদের ইনিংস। স্বাগতিক বোলারদের সুনিন্ত্রিত বোলিংয়ে ওভারপ্রতি ৩.৫২ গড়ে রান তোলেন তারা। শুধু সুনিয়ন্ত্রিত বোলিংই নয়, দাপটের সঙ্গে ফিল্ডিং করে দক্ষিণ আফ্রিকাকে চমকে দিয়েছেন নাসির-সাব্বিররা।

বাংলাদেশের সেরা বোলার নাসির হোসেন। ৮ ওভারে ২৬ রানে ৩ উইকেট নেন। সমানসংখ্যক উইকেট নেন মুস্তাফিজুর রহমান। তবে রান খরচ করেন ৩৮। রুবেলের ২ উইকেটের সঙ্গে মাশরাফি ও মাহমুদউল্লাহ ১টি করে উইকেট নেন।



মন্তব্য চালু নেই