সিলিন্ডার গ্যাসের বিস্ফোরণের হাত থেকে বাঁচতে আপনার যা করণীয়!

বাংলাদেশের অল্প কিছু এলাকায় লাইনের গ্যাস রয়েছে। বাকী সব এলাকার মানুষই এলপিজি বা সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবহার করে রান্নার কাজে। এটি এখন একটি নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য হয়ে দাড়িয়েছে। কিন্তু একটু অসাবধানতার কারনেই ঘটতে পারে সিলিন্ডার বিস্ফোরণ। এই বিস্ফোরণের ফলে মারাত্বক দূর্ঘটনা ঘটতে পারে, হতে পারে প্রাণহানি। তাই আমাদের সব সময় সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।

বিভিন্ন কারণে এলপিজি সিলিন্ডারের গ্যাস লিক হতে পারে। গ্যাস ভাল্ব, হোস পাইপ কিংবা রেগুলেটর ইত্যাদি লিক হয়ে বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে। গ্যাস লিক হলেই বিপদ। এই গ্যাস আপনার ফুসফুসের মধ্যে প্রবেশ করে শ্বাস-প্রশ্বাসে ব্যাঘাত ঘটায়। দম বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এই গ্যাস আপনার শরীরে অক্সিজেনের ঘাটতির কারণ হয়ে দাড়ায়।

সিলিন্ডারের গ্যাস খুব বেশি চাপে তরল করে প্রবেশ করানো হয়। এ কারণেই এর বিস্ফোরণ খুবই ভয়াবহ হয়। এই বিস্ফোরণের ফলে শক ওয়েভ ছড়িয়ে পড়ে। এ শক্ত ওয়েভ আপনার শরীরের যে অংশে লাগবে, সে অংশেরই ব্যাপক ক্ষতি করবে। এমন কি প্রাণহানির ঘটনাও ঘটাতে পারে। এই বিস্ফোরণের সময় এত বেশি শক্তি উৎপন্ন হয় যে তা আশেপাশের লোকদের শূণ্যে ভাসিয়ে ছিটকে ফেলতে পারে। এতে শরীরের বিভিন্ন অংশের হাড় ও মাথায় প্রচন্ড আঘাত লাগতে পারে।

সিলিন্ডারের গ্যাস খুবই বাজে গন্ধযুক্ত। কোন অংশ লিক হলেই এই বাজে গন্ধ দ্রুত আশেপাশে ছড়িয়ে পড়ে। তাই এমন উৎকট গন্ধ পেলেই সাবধান হয়ে যান। কোন প্রকার আগুন জ্বালানো যাবেনা এই সময়। পাশাপাশি বাসার বিদ্যুৎ লাইনের মেইন সুইচ বন্ধ করে দিন। বাসার সকল দরজা, জানালা খুলে দিন যাতে বাতাস যাতায়াত করতে পারে। সিলিন্ডারের রেগুলেটর বন্ধ করুন এবং সেফটি ক্যাপ লাগান।

যদি সিলিন্ডার বিস্ফোরণ ঘটে, তাহলে খুব দ্রুত আক্রান্তদের এমন খোলা জায়গায় নিয়ে যান যেখানে পর্যাপ্ত বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা আছে। সব থেকে ভাল হয় দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারলে। কারণ আক্রন্তকে অক্সিজেন দিতে হতে পারে।

আর কিছু বিষয় জেনে রাখা খুবই প্রয়োজন। যদি সিলিন্ডারের গ্যাস শরীরের কোথাও লাগে তাহলে ঐ স্থান ২০ মিনিট পানি দিয়ে ধুতে হবে। যদি কাপড়ে লাগে তাহলে ঐ কাপড় দ্রুত খুলে ফেলতে হবে। চোখে লাগলে পানির ঝাপটা দিয়ে চোখ ধুয়ে ফেলতে হবে। আর যদি কোনভাবে শরীরে আগুন লেগে যায়, তাহলে শরীরের সব জামা-কাপড় খুলে মাটিতে গড়াগড়ি দিতে হবে। যতটা দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে যেতে হবে। আগুনে পুড়ে যদি শরীরে ফোস্কা পড়ে তা ভুলেও তুলে ফেলবেন না। এতে ঐ স্থানে ইনফেকশন হতে পারে।

সিলিন্ডারের গ্যাস বিস্ফোরণের ফলে মারাত্বক দূর্ঘটনা হতে পারে। তাই নিয়মিত পরীক্ষা করতে হবে সিলিন্ডার লিক হচ্ছে কি না। এই পরীক্ষা করার জন্য পানিতে সাবানের গুঁড়া মিশিয়ে ফেনা তৈরি করুন। এই ফেনা রেগুলেটর, হোস পাইপ, ভাল্ব ইত্যাদিতে লাগান। যদি কোন স্থানে সাবান পানির ফোঁটা বড় হতে দেখা যায় তাহলে বুঝবেন ঐ স্থান লিক হয়ে গ্যাস বের হচ্ছে। দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে তখন।
সিলিন্ডার গ্যাস বিস্ফোরণ রোধে আপনাকে আরও কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। কখনো গ্যাসের চুলায় রান্না তুলে দিয়ে অন্যত্র যাবেন না। খাবারে আগুন ধরে সিলিন্ডার বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। রান্নার সময় আপনার পড়নের কাপড়ের দিকেও সাবধান দৃষ্টি রাখতে হবে।

আর একটি বিষয় না বললেই নয়। আপনার কোন প্রতিবেশী যদি সিলিন্ডার বিস্ফোরণে আক্রান্ত হয়, কখনোই বিষয়টি এড়িয়ে যাবেন না। এগিয়ে যাবেন ঐ ব্যক্তিতে সাহায্য করতে। আপনার একটু সহযোগীতার হাতই বাঁচাতে পাড়ে ঐ ব্যক্তির জীবন।



মন্তব্য চালু নেই