শিক্ষার মান নিয়ে বিরোধীদলীয় নেতার ক্ষোভ

জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নিয়ে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ দেশে শিক্ষার মান কমে যাচ্ছে দাবি করে তা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। জবাবে শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ দাবি করেছেন, দেশে শিক্ষার মান অনেক বেড়েছে। তবে যুগের সঙ্গে তাল মেলাতে যে মান থাকা প্রয়োজন সেটা নেই। শিক্ষার গুণগত মান অর্জনই আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বৃহস্পতিবার বিকেলে জাতীয় সংসদ অধিবেশন শুরু হয়। অধিবেশনের শুরুতে মন্ত্রীদের জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সম্পূরক প্রশ্নের সুযোগ নেন বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ।

তিনি বলেন, ‘দেশে শিক্ষার মান কমে যাচ্ছে। বিশ্বের একশটি বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম নেই। এরপর ঢালাওভাবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দেয়া হচ্ছে। শিক্ষামন্ত্রী কি কখনো ঢাকার বাইরে গিয়ে দেখেছেন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মান কি? কেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মান কমে যাচ্ছে?’

জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আমি আজও একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিলাম। গতকাল (বুধবার) খুলনাতে দু’টি বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শন করেছি। প্রতিনিয়ত আমি স্কুল-কলেজ-মাদরাসায় যাই। নিয়মিত খোঁজখবর রাখি। ফলে এ বিষয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই।’

তিনি বলেন, ‘আমরা ক্ষমতায় এসে ৫৬টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পেয়েছিলাম। যার একটিও নিয়ম-নীতি মেনে হয়নি। তাদেরকে অনেকটা নিয়মের মধ্যে নিয়ে এসেছি। নীতিমালার পাশাপাশি এ সংক্রান্ত আইনও প্রণয়ন করেছি। এখন ৯১টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যলয় হয়েছে।’

শিক্ষার মান নিয়ে সমালোচকদের উল্টো সমালোচনা করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ছোটবেলা থেকে শুনে আসছি, দেশে শিক্ষার মান নিচে নেমে যাচ্ছে। এই কথা যদি সত্য হতো তাহলে এখন দেশের শিক্ষার মান ৫০ হাত মাটির নীচে থাকতো। কিন্তু তা হয়নি। বরং মান অনেক বেড়েছে। তবে বর্তমান যুগের সঙ্গে তাল মেলাতে যে ধরনের মান থাকা প্রয়োজন তেমনটি হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘এমন কোনো ম্যাজিক নেই, যার দ্বারা শিক্ষার মুহূর্তে বাড়িয়ে দেয়া যায়। এ ক্ষেত্রে সময় লাগবে। আমরা সেই চেষ্টা করছি। বিদেশের ৭০০ বছরের একটি বিশ্ববিদ্যালয়, আর আমার দেশের একশো বছরের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মান এক হবে এটা ভারা ঠিক হবে না।’

তিনি আরো বলেন, ‘মানসম্মত শিক্ষাই বড় কথা। আমরা সেটা নিশ্চিত করতে চাই। সে লক্ষ্যে কাজ চলছে। শিক্ষার গুণগত মান অর্জনই আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।’

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেট বাণিজ্য সংক্রান্ত সাবেক আইনমন্ত্রী আবদুল মতিন খসরুর সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি সার্টিফিকেট দেয়ার ক্ষমতা নেই। তবে অন্যক্ষেত্রে এ ধরনের অভিযোগ আছে। অভিযোগের সত্যতা পেলে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। আগামীতে এ ধরনের অসৎ বাণিজ্যের সুযোগ বন্ধ হবে।’

হুইপ আতিউর রহমান আতিকের প্রশ্নের জবাবে নূরুল ইসলাম নাহিদ আজ অর্থ পেলে কালই সকল স্কুল-কলেজ এমপিওভুক্ত করার ঘোষণা দেয়া হবে বলে জানান। তিনি বলেন, ‘এমপিওভুক্তির দাবি আমারও। কিন্তু অর্থ ছাড়া সেটা সম্ভব নয়। বাজেটে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে যে অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়, তা দিয়ে এই কাজগুলো করা হয়।’ আগামীতে বাজেট পাসের সময় এ বিষয়ে চাপ সৃষ্টির জন্য সংসদ সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

সরকার দলীয় সংসদ সদস্য সফিকুল ইসলাম শিমুলের প্রশ্নের জবাবে দেশের সকল উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গঠনমূলক ছাত্র রাজনীতির ধারা বজায় রাখতে ছাত্র সংসদ কার্যকর করার বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, ‘ছাত্র রাজনীতি গণতন্ত্র চর্চার সূতিকাগার। বাংলাদেশের ইতিহাসে ছাত্র রাজনীতির গৌরবোজ্জল ভূমিকা রয়েছে। সেখান থেকেই শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, হোসনে শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান উঠে এসেছেন। বায়ান্নের ভাষা আন্দোলন থেকে একাত্তরের স্বাধীনতা অর্জন এবং পরবর্তীতে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটিয়ে গণতন্ত্রের বিজয় অর্জনে দেশের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গঠনমূলক ছাত্র রাজনীতি অবশ্যই সুষ্ঠু রাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টিতে সহায়ক হবে।’

জাসদের এ কে এম রেজাউল করিম তানসেন উত্থাপিত প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘চলতি শিক্ষাবর্ষের শুরুতেই দেশের বিভিন্ন স্কুল কলেজে শিক্ষকদের বেতন বাড়ানোর নামে ছাত্র-ছাত্রীদের টিউশন ও ভর্তি ফি’সহ সকল ধরনের ফি’র হার বৃদ্ধির অভিযোগ পাওয়া গেছে। এজন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বর্ধিত বেতন ও অন্যান্য ফি আদায় বন্ধ করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায়কৃত বাড়তি টাকা ফেরৎ দেয়ার জন্য সাতদিন সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে। একই সাথে বাড়তি অর্থ শিক্ষার্থীদের ফেরৎ দিয়ে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ডকে তা অবহিত করতেও বলা হয়েছে। টাকা ফেরৎ না দিলে সংশ্রিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিধি-বিধানের আলোকে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘অষ্টম জাতীয় বেতন স্কেল ঘোষণার মাধ্যমে প্রচলিত টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড পদ্ধতি বাতিল হয়েছে। ফলে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একাংশ সংক্ষুব্ধ হন। শিক্ষকদের সংক্ষুব্ধতা নিরসনে উচ্চপর্যায়ে একটি ক্যাবিনেট উপ-কমিটি গঠন করা হয়েছে। শিগগিরই এ বিষয়ে গ্রহণযোগ্য সমাধান বের হবে।’



মন্তব্য চালু নেই