ভালবাসা দিবসের বিশেষ ছোট গল্প

রূপকের প্রেমকাহিনী

রূপক নিশ্চিতে অনেক ভাল একজন ছাত্র ছিল।৫ম শ্রেনিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি ,৮ম শ্রেনিতে বৃত্তি,মেট্ট্রিকে গোল্ডেন এ+। এতকিছুর পর আর বলার অপেক্ষা রাখেনা লেখা পড়ার প্রতি তার আকর্ষনটা কত প্রবল।নারী ও নেশা যে একটা পুরুষের মানব সত্তা, জীব সত্তা বা পুরুষত্বকে কোন এক স্যান্ডি হয়ে লন্ডভন্ড করে দিতে পারে রূপক তার একটি বাস্তব উদাহরন।

যাইহোক এবার মূল গল্পে আসি, এসএসসি পরীক্ষা ২০১৩ আজ থেকে শুরু হতে যাচ্ছে, রূপক খাওয়া দাওয়া সেরে কেন্দ্র খুব কাছে হওয়ায় পায়ে হেঁটে রওনা দিয়েছে। রাস্তায় একমোটর সাইকেলে বসা মেয়ের হাত থেকে একটি কোর্ট ফাইল পড়ে গেল,রুপক মানবতার খাতিরে সেটা ওঠিয়ে মেয়েটির হাতে দিল,মেয়েটি মুচকি হাসির সাথে একটা থ্যাংসও জানালো রূপককে ।মেয়েটির সেই মায়বী হাসির ঝলকানিতে বিভোর হয়ে রূপক ভাবছে, মেয়েটা কত সুন্দর! দূর কি ভাবছি এসব আজ আমার পরীক্ষা।রূপক অনেক খোঁজা খুঁজি করে তার সিট বের করল ।কিন্তু একি সেই ফাইলটা এখানে ,এখানে কেন? ততক্ষনে মেয়েটিই রুপককে বলে উঠল Hello……….! …..একি আপনি? আপনার সিটটা কি এখানেই ? এনিওয়ে আমি লাবনী। রুপক যেন অনেকটা অবাক,অনেকটাই নির্বাক,এমন মনে হচ্ছে যে সে যেন কারো নিরবতা পালন করছে। তারপর হঠাৎ ওহ! আমি রুপক।এসএসসি পরীক্ষা শেষের দিন দুজনে দুজনের সেল নাম্বারটা বিনিময় করে।

রূপকের পরিকল্পনা ছিল এসএসসি পরীক্ষা শেষে গ্রামের নীরক্ষতা দূরি করন ,স্যানিটেশন,কৃষি ইত্যাদি বিষয়ে সে গ্রামের মানুষের জন্য কাজ করবে।কিন্তু তা আর হলো কই,চুটিয়ে রাতÑদিন চলতে থাকল তাদের প্রেম।এমনকি গোসল করতে করতে লাইডস্পিকারেও চলত প্রেমালাপ,বার্থরোমে চলত মেসেজ।রুপকের কাছে লাবনীই ছিল তার পুরো পৃথিবী,তার জান প্রাণ এবং সবকিছু।হঠাৎ লাবনী একদিন খবর দিল তাকে বাসা থেকে বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছে,এখন রুপককে বলছে সে কি করবে?
রুপকের মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ল,সে ভাবতেই পারছেনা যে সেই বা এখন কি করবে?

বিয়ের ঠিক দু”দিন আগের কথা রূপক লাবনীকে বলছে ”চলো সঙ্গীনী চলো আমরা হারিয়ে যায় কোন দূর অজান্তে,যেখানে আমাদের কেউ চিনবে না,সারা জীবন তুমি শুধু আমার আর আমি তোমার হয়ে বেঁচে থাকব।আমরা সংসার করব,আমাদের একটি ,(একটু থামিয়ে আবার) না একটি না….সেই মহূর্তে লাবনী,রূপক দাঁড়াও…কিন্তু রূপক না থামল না সে বলেই চলছে তাদের দুটি বেবী হবে।এবার তাদের নাম কি রাখব জান,(লাবনী এবার অন্য রকম ভাবে) রূপক প্লিস….তবুও রুপক বলে চলল… নাম রাখব সিরাজুম মুনিরা।

এবার লাবনী কিছুটা রাগ আর অভিমানী কন্ঠে না রূপক আমি পারব না।আরে পারবে না মানে,এই পারবে না মানে কি?হ্যাঁ পারবনা মানে আমি পারবনা আমি বিয়ে হয়ে যাচ্ছি।কি অলক্ষনে কথা বলছ সোনা?ফোনের লাইনটা কেটে গেল,না কেটে যায়নি লাবনীই আসলে কেটে দিয়েছে।রাতে আর ঘুম আসছে না রূপক শতবার চেষ্টা চালালো কিন্তু সুইচ অফ।বার বার বিরক্ত লাগছিল রূপকের ”আপনার কাঙ্কিত মোবাইল নম্বরটিতে এই মহূর্তে সংযোগ দেওয়া….কিন্তু তবুও উপায় ছিলনা।নিজের অজান্তে সে রাতে ঘুমিয়ে পড়ে…!

যাইহোক বিয়ের দিন রূপক তার বন্ধুদের নিয়ে লাবনীর বিয়ে বাড়িতে হাজির, কি ভাবছেন লাবনীকে তুলে আনতে,বিয়ে ভাঙ্গতে,অনশন করতে ? হ্যাঁ আপনি ঠিকই ভেবেছেন।কিন্তু এটা কি ঘটলো দেখুন। লাবনীর বন্ধু বলে তারা বিয়ে বাড়িতে পরিচয় আটল।এদিকে লাবনীতো স্টেজে চুপটি করে বসে আছে,বউ সেজে।রূপক তার দিকে তাকিয়ে যেন নতুন করে তার প্রেমে পড়ল।ফিস ফিস করে বলতে লাগল ”দেখ দোস লাবনীকে কত সুন্দর লাগছে”!

She is so beatifull ! সে ভুলেই যেতে লাগল তার অন্য কারো সাথে বিয়ে হয়ে যচ্ছে!! মনে মনে কল্পনা করছে ঘরে একা একা যখন আমি আর লাবনী… কেমন লাগবে?

হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায় রূপক।হয়তো তার ধ্যান ভেঙ্গেছে,সব মনে পড়ে।পরদিন চোখ খুলে রূপক চেঁচিয়ে উঠল একি আমি হাসপাতালে কেন? আমাকে ছেড়ে দাও আমার লাবনী কোথায়?

বন্ধুরা জানালো সে এখন শশুর বাড়িতে।কি দোস কি বল্লি তোরা?হ্যাঁরে রূপক তোর লাবনী এখন শশুর বাড়িতে!!

খাওয়া দাওয়া,ঘুম সবকিছু সেই থেকে রূপকের জীবনের বাইরে চলে গেল।সে আজ হারিয়ে ফেলেছে প্রান,হারিয়ে ফেলেছে মেধা,এনার্জি এবং সবকিছু।শরীর থেকে আত্মাও যেন বিচ্ছিন্ন হতে চায়!

কান্না আর কান্নায় হয়ে গেল তার জীবনের একমাত্র সঙ্গী,সে এক করুন কান্না বুক যেন ফেটে যাচ্ছিল,দু’চোখে সৃষ্টি চাইছিল যেন বঙ্গোপসাগর! নেশাই হয়ে গেল তার একমাত্র খাদ্য… একমাস পর নতুন করে ট্রিটমেন্ট করা হলো রূপকের।জনার্ধন ডাক্তার তার রিপোর্টে লিখলেন Rupok He is a mental patient! এই তো কয়েকদিন আগেই রূপককে পাঠানো হলো পাবনা পাগলা গারদে! লোহার শীকলে সীমাবদ্ধ ছন্নছাড়া দরূন এক জীবন অতিবাহিত করবে রূপক…এটাই কি ছিল সেই মেধাবী রূপকের ভবিষ্যত? প্রেম মানে তো দুটি আত্মার মিলন, এক তরফা কি ছিল এইটা?এটা কি সত্যিই প্রেম ছিল ?নাকি শুধুই রূপকের পাগলামী? আজকের প্রেম কি সত্যিই দুটি হৃদয়ের আন্তসংযোগ এক নিরবিচ্ছিন্ন নেটওয়ার্ক?নাকি নারীর নেশা?নাকি পেশা?

এখন প্রেম মানে টি-২০ ক্রিকেট ম্যাচ, টক এন্ড রিয়েলিটি শো, গিভ এন্ড টেকের জটিল সূত্র! সত্যিই কি তাই নয়?

(প্রিয় পাঠক ও পাঠিকা এটি কারো জীবনের কাহিনী নয় বা কোথাও থেকে সংগ্রিহিতও নয় এটি রুবাইত হাসানের ভালবাসা দিবসকে কেন্দ্র করে লেখা শুধুই একটি ছোট গল্প মাত্র,প্রিয় পাঠিকা এখানে একতরফা মেয়েদেরই দোষারোপ করা হয়েছে কারন গল্পটিতে মেয়েটিই একতরফা দোষী ছিল)



মন্তব্য চালু নেই