রাষ্ট্রযন্ত্র যাদের হাতে তারাই নাশকতায় জড়িত: রিজভী

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ চলমান নাশকতার সঙ্গে বিএনপি জোটের কোনো সম্পৃক্ততা নেই দাবি করে বলেছেন, “আমরা অব্যাহত শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে যেতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বিএনপির ঘোষিত নীতিমালাই হচ্ছে বহু দল ও মতে বিশ্বাস করা, মানবতা ও মানুষের মানবিক সাম্য ঊর্ধ্বে তুলে ধরা। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে গুম আর গুপ্তহত্যা যাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি, পেট্রলবোমা ছুঁড়ে নাশকতার মতো বন্য ও আদিম হিংস্রতার মতো মানবতাবিরোধী কাজ তারাই সংঘটিত করছে যারা রাষ্ট্রযন্ত্রকে জনগণের বিরুদ্ধে ব্যবহার করছে।”

সোমবার বিকেলে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে রিজভী এসব কথা বলেন।

রিজভী বলেন, “পেট্রলবোমা, গান পাউডার, গাড়িতে আগুন লাগিয়ে মানুষ পোড়ানো, লগি বৈঠার তাণ্ডবে লাশের ওপর নৃত্য ইত্যাদি সর্বনাশা মরণখেলা আওয়ামী লীগের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি। সুতরাং এই সমস্ত নাশকতাকারীদের পৃষ্ঠপোষকরাই জানে কিভাবে নিজেদের স্বার্থে অমানবিক ঘটনা ঘটাতে হয়, তার প্রমাণ হলো- বিএনপির শাসনামলে হোটেল শেরাটনের সামনে বাসে গান পাউডার দিয়ে নয়জনকে পুড়িয়ে মারা এবং ফেনীর ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান আকরামকে হত্যা করার পর লাশ পোড়ানোর বিভৎস ঘটনা।”

রুহুল কবির রিজভী বলেন, “রাষ্ট্রের চরিত্র কেমন তা বোঝা যায় রাষ্ট্রের কর্মচারীরা কেমন তার ওপর-প্রখ্যাত রাষ্ট্র বিজ্ঞানী হ্যারল্ড লাস্কির এই বহু উদ্ধৃত উক্তিটি যে কতটা কার্যকর তা এখন বাংলাদেশের প্রত্যেকে বুঝতে পারছে। বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটি যে এখন বর্বর, নিপীড়ক, দমন-পীড়ন, হত্যা, গুম, খুন ও যৌথ বাহিনীর নিষ্ঠুর অপারেশনের প্রতিষ্ঠান তা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তারা যথার্থভাবেই সবাইকে টের পাওয়াচ্ছেন। একেকদিন একেকজন কর্মকর্তার বক্তব্য শুনলে মনে হয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অস্ত্র যেন আওয়ামী লীগের তহবিল থেকে কেনা। সুতরাং এই অস্ত্র ব্যবহারে কোনো জবাবদিহিতার দরকার নেই বলে তারা মনে করে। কারণ আওয়ামী লীগপন্থী আইন প্রয়োগকারী সংস্থার প্রধানরা ছাড়পত্র দিয়েছেন তাদের জোয়ানদের। অস্ত্র গোলাবারুদ কেনো অকেজো করে রাখা হয়েছে। এ ব্যাপারে উস্মা প্রকাশ করেছেন র্যা বের ডিজি। কেন অস্ত্রসস্ত্র খেলার উপকরণ হিসেবে ফেলে রাখা হয়েছে। কেন যথাযথ ব্যবহার করা হচ্ছে না। র্যা বের মহাপরিচালক আরো বলেছেন বিচার বহির্ভূত হত্যা বলে নাকি কিছু নাই।”

রিজভী আহমেদ এ প্রসঙ্গে বলেন, “তাহলে খিলগাঁও ছাত্রদল নেতা নুরুজ্জামান জনিকে কোন বিচারের আওতায় প্রাণদণ্ড দেয়া হয়েছে ? কোন আদালতের রায়ে সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর স্বামীকে ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করা হয়? সপ্তাহ খানেক আগে দলের চারজন কর্মীকে ধরে নিয়ে গিয়ে টার্গেট হত্যা করা হয় কোন বিচারে?”

গতকাল খুলনায় র্যা বের মহাপরিচালকের দেয়া বক্তব্যের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব।

রিজভী আহমেদ বলেন, “বিএনপি, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও বিএনপি চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার দর্শণ, চিন্তা, নীতি ও রাজনৈতিক কর্মসূচিকে ধারণ করার জন্যই এই বিচার বহির্ভূত টার্গেট হত্যা করা হয় জনগণের টাকায় কেনা বুলেট দিয়ে।”

রিজভী আহমেদ প্রশ্ন রেখে বলেন, “এগুলো যদি বিচার বহির্ভুত হত্যা না হয় তাহলে এগুলো কোন বিচারের অন্তর্ভুক্ত হত্যা? এসব দেশবাসী জানতে চায়।”

রিজভী আহমেদ বলেন, “খাল বিল, নদী নালায় এতো লাশ পড়ে আছে কার বিচারে? আজকেও নরসিংদীর তিন কিলোমিটার রাস্তাজুড়ে আশেপাশে সাতটি লাশ পাওয়া গেছে। এগুলো কিসের আলামত? দুঃশাসন টিকিয়ে রাখতে রাষ্ট্র এখন ভয়াল ঘাতকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও নাগরিক অধিকারহীন একদলীয় রাষ্ট্র ব্যবস্থায় সরকারি কর্মচারীদের দলের আনুগত্য করা বাধ্যতামূলক করা হয়। সেখানে নিরপেক্ষতার ও জবাবদিহিতার প্রশ্ন করা যায় না। বাংলাদেশে চোখের ইশারাও যদি সরকারবিরোধী মনে হয় তাহলেও নিপীড়নের শিকার হতে হবে, সেই নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি এখন বাংলাদেশে বিরাজমান। অমানবিক নাশকতার বিভৎস ঘটনা ঘটানো হচ্ছে সারাদেশ জুড়ে। পেট্রলবোমা মেরে মানুষকে দগ্ধ করার বিরামহীন দৃশ্য দেখানো হচ্ছে টেলিভিশনে। বার্ন ইউনিটের অমানবিক দৃশ্যকে কেন্দ্র করে হাইপার প্রচারাভিযান চালানো হচ্ছে বিরোধী দলের আন্দোলনের বিরুদ্ধে।”

রিজভী বলেন, “কয়েকদিন ধরেই জনশ্রুতি ছিল, সরকার নিজেই একটা বড় ধরনের নাশকতা করবে। যেটির বিদেশ থেকে পরিচালিত একটি পোর্টালে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যাতে পুরো দায়টা বিরোধী দলের ওপর চাপানো যায়। ২৩ তারিখ রাতেই ডেমরায় ঘটানো হলো বাসে আগুন দিয়ে ৩৫ জন বাসআরোহীদের অগ্নিদগ্ধের ঘটনা। আর তার পরের দিন শোকে কাতর সন্তানহারা মা বেগম খালেদা জিয়াকে হুকুমের আসামি করে মামলা দেয়া হলো। সমগ্র ঘটনাটাই একটা মাস্টারপ্ল্যানের অংশ বলে সর্বসাধারণ বিশ্বাস করে।”



মন্তব্য চালু নেই