রানা প্লাজার প্রদর্শনী বন্ধ কেন বেআইনি নয়

বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ ভবন ধসের ঘটনা- রানা প্লাজা ধসের ঘটনাকে উপজীব্য করে নির্মিত চলচ্চিত্র ‘রানা প্লাজা’র প্রদর্শনী বন্ধের নির্বাহী সিদ্ধান্ত কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।

আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে তথ্য, স্বরাষ্ট্র ও জনপ্রশাসন সচিবসহ সংশ্লিষ্ট ১৩ জনকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

প্রযোজক শামীমা আক্তারের করা রিট আবেদনের ওপর শুনানি করে রোববার হাইকোর্টের বিচারপতি কামরুল ইসলাম সিদ্দিকী ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই রুল জারি করেন।

আদালতে আজ রানা প্লাজা চলচ্চিত্রের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ। অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যার্টনি জেনারেল মাহবুবে আলম।

এরআগে গত ৪ জানুয়ারি সরকারি এক তথ্য বিবরণীতে জানানো হয় বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর আপিল কমিটি সনদ ফিরিয়ে না দেয়ায় দেশের কোথাও রানা প্লাজা চলচ্চিত্রটি প্রদর্শন করা যাবে না।

এতে বলা হয়, শামীমা আক্তার প্রযোজিত ‘রানা প্লাজা’ চলচ্চিত্র বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর আপিল কমিটি কর্তৃক জনসম্মুখে প্রদর্শনের উপযোগী নয় বলে বিবেচিত হওয়ায় সেন্সর সনদবিহীন ঘোষণা করা হয়েছে। সেন্সর সনদপত্রবিহীন ‘রানা প্লাজা’ চলচ্চিত্রটি দেশের কোথাও প্রদর্শিত হলে ছবি বাজেয়াপ্তসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

পরে এই সিন্ধান্তের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন প্রযোজক শামীমা আক্তার।

তার আগে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের পর্যালোচনায় ‘রানা প্লাজা’ মুক্তিতে বাধা কাটলেও সেন্সর আপিল কমিটিতে আবেদন হওয়ায় গত ৩ নভেম্বর চলচ্চিত্রটি প্রদর্শনে স্থগিতাদেশ দেয় তথ্য মন্ত্রণালয়।

২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভার বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন আট তলা রানা প্লাজা ভেঙে পড়লে শিল্পক্ষেত্রে বিশ্বের অন্যতম ভয়াবহ দুর্ঘটনাটি ঘটে। ওই ঘটনায় নিহত হন এক হাজার ১৩৫ জন, আহত হন আরো হাজারখানেক শ্রমিক, যারা ওই ভবনের পাঁচটি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন।

ধসের ১৭ দিনের মাথায় ১০ মে বিকেলে ধ্বংসস্তুপের ভেতর থেকে রেশমা আক্তার নামে এক শ্রমিককে জীবিত উদ্ধার করা হলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও তা আলোড়ন সৃষ্টি করে। ওই বছরই রানা প্লাজা ধস ও রেশমাকে উদ্ধারের ঘটনা নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণের উদ্যোগ নেন পরিচালক নজরুল ইসলাম খান।

এতে পোশাক শ্রমিক ‘রেশমা’ চরিত্রে অভিনয় করেছেন অভিনেত্রী পরী মনি। তার বিপরীতে ‘টিটু’ চরিত্রে অভিনয় করেছেন অভিনেতা সায়মন সাদিক।

বিভিন্ন দৃশ্যের কারণে এ চলচ্চিত্রের ছাড়পত্র দীর্ঘদিন আটকে থাকলেও শেষ পর্যন্ত গত বছরের ১৬ জুলাই বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড ‘রানা প্লাজা’ চলচ্চিত্রকে সনদপত্র দেয়। সে অনুযায়ী ৪ সেপ্টেম্বর ৫০টির বেশি প্রেক্ষাগৃহে চলচ্চিত্রটি মুক্তি দেয়ার উদ্যোগ নেয় প্রযোজক সংস্থা।

তবে বাংলাদেশ ন্যাশনাল গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স এমপ্লয়িজ লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলামের করা একটি রিট আবেদনে ‘রানা প্লাজা’র মুক্তি আটকে যায়। প্রযোজক শামীমা আক্তার ওই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে গেলে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ গত বছরের ৬ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করে দেয়।

এতে ‘রানা প্লাজা’র মুক্তির পথ খোলে; ১১ সেপ্টেম্বর দিন ঠিক করে নতুন করে প্রচারও শুরু হয়। পরে সেন্সর আপিল কমিটির সিন্ধান্তে ‘রানা প্লাজা’র প্রদর্শন বন্ধ রাখা হয়।



মন্তব্য চালু নেই