রাজশাহী যুবদলে নজিরবিহীন গণপদত্যাগ

রাজশাহী যুবদলের নতুন কমিটি থেকে ৭০ জন যুবদলের নেতাকর্মী পদত্যাগ করেছেন। রাজশাহী বিএনপিতে এটি নজিরবিহীন ঘটনা।
সোমবার নগরীর একটি কমিউনিটি সেন্টারে প্রায় ৪ ঘণ্টা রুদ্ধদ্বার বৈঠক করে যুবদলের নেতাকর্মীরা। দীর্ঘ আলোচনা শেষে নতুন কমিটির ৭০ জন সদস্য পদত্যাগ করেন।
আলোচনা শেষে বাইরে অপেক্ষা করা সাংবাদিকদের সামনে পদত্যাগপত্র তুলে ধরেন রাজপাড়া থানা যুবদলের সভাপতি ও নবগঠিত মহানগর যুবদল কমিটির সহসভাপতি শাহানুল ইসলাম মিঠু।
কাউন্সিল ছাড়াই নতুন কমিটি ঘোষণা করার পর থেকেই গত কয়েকদিন থেকে রাজশাহী বিএনপিতে অসন্তোষ বিরাজ করছিলো। কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন কমিটি করা না হলে নতুন কমিটি থেকে আরো ৪০ থেকে ৫০ জন নেতাকর্মী পদত্যাগ করবে পারে বলে হুমকি দিয়েছে।
যুবদলের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, রোববার রাতে যুবদলের ১৬৯ জন সদস্যবিশিষ্ট নতুন কমিটির মধ্যে ১২০ জন পদত্যাগ করেন। তবে সোমবার সন্ধ্যায় আলোচনা শেষে নতুন কমিটিতে থাকা ৭০ জন পদত্যাগ করেছেন। অন্য ৫০ জন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব, রাজশাহী মহানগর বিএনপির সভাপতি ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনুর অনুরোধে পদত্যাগ করেননি।
তবে যারা পদত্যাগ করেননি তারা জানান, মিজানুর রহমান মিনু ঢাকায় অবস্থান করছে। তার প্রতি সম্মান রেখে তারা আপাতত পদত্যাগ করেননি। তবে এ কমিটির বিষয়ে নতুন কোনো সিদ্ধান্ত না নেয়া হলে দুই থেকে তিনদিনের মধ্যেই বাকিরা এ ঘোষণা দেবেন।
সোমবার সন্ধ্যায় নগরীর সাফাওয়াং কমিউনিটি সেন্টারে নতুন কমিটির ১০০ জনের বেশি সদস্য আলোচনায় বসে। আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন- নতুন কমিটির সিনিয়র সহসভাপতি ও ১৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর রবিউল ইসলাম মিলু, যুবদলের সহসভাপতি ও ১৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর বেলাল হোসেন, ১৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর নুরুজ্জামান টিটু, ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কমিশনার বজলুল হক মন্টু।
শেষে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলররা কোনো কথা না বলেই বের হয়ে যান। তবে যুবদলের অন্য নেতারা সেখানেই পদত্যাগের ঘোষণা দেন।
এর আগে ১৯ আগস্ট রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র ও মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলকে বাদ দিয়ে মহানগর যুবদলের নতুন পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়। শুধু তাই না আগের কমিটির অনেককেই যুবদল থেকে বাদ দেয়া হয়। এ নিয়ে রাজশাহী মহানগর বিএনপিতে অসন্তোষ দেখা দেয়।
শনিবার বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব (দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত) অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত কাগজ মহানগর বিএনপিতে এসে পৌঁছায়।
নতুন অনুমোদিত নতুন কমিটিতে সভাপতি করা হয়েছে ওয়ালিউল হক রানা ও সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে আবুল হাসনাইন হিকল।
এদিকে মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলকে রাজশাহী মহানগর বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি করা হয়েছে। এছাড়াও মহানগর বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ সালাম বিপ্লব, মাইনুল ইসলামকে। এছাড়াও সাবেক যুব দলের সাধারণ সম্পাদক আসলাম সরকারকে রাজশাহী মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক পদে নির্বাচিত করা হয়েছে।
এদিকে কমিটি নিয়ে রাজশাহী মহানগর বিএনপির মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। শনিবার রাতেই মোবাইল ফোন নতুন পদ প্রত্যাখান করেছেন আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ সালাম বিপ্লব। এদিকে মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল নতুন পদ প্রত্যাখান করতে পারে বলেও প্রচার হয়। অনেকেই বিষয়টিকে রাসিক মেয়রকে রাজনীতি থেকে নিষ্ক্রিয় করার কৌশল হিসেবে দেখতে শুরু করে।
বিএনপির একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, রাজশাহী বিএনপির মূল চালিকাশক্তি হচ্ছে যুব দল। দীর্ঘদিন ধরে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল রাজশাহী মহানগর যুবদলের দায়িত্বে ছিলেন ও বিএনপিকে সুসংগঠিত করে রেখেছিলেন। বিএনপির রাজনীতি থেকে মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলকে অনেকটা নিষ্ক্রিয় করার জন্যই রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের লোকজন এ কাজ করেছেন।
উল্লেখ্য, সর্বশেষ ২০০৩ সালে মহানগর যুবদলের কাউন্সিল হয়। এ কাউন্সিলে দলের সভাপতি হন মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল ও সাধারণ সম্পাদক হন আসলাম সরকার। দীর্ঘ নয় বছর পর ২০১২ সালে সে কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলকে আহ্বায়ক করা হয়। একই সঙ্গে তিন মাসের মধ্যে ওয়ার্ড কমিটি করে মহানগরের কাউন্সিল করার নির্দেশ দেয় দলের হাই কমান্ড।



মন্তব্য চালু নেই