রয়েছো পুরুষ হয়ে, মানুষ হওনি…

পহেলা বৈশাখে শুকরছানাদের আচরন এবারই প্রথম তাই না, প্রতিবছর এটি হয়। এমনকি ২২ বছর আগে বাংলা ১৪০০ সালে হুমায়ুন আহমেদের স্ত্রী শাওনের সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনাটি পড়ুন… উনি তখন ১২ বছরের একটা কিশোরী ছিলেন।

[শুধু ২২ বছর নয়, অনেক আগে থেকে ইভটিজিং হয়, বাংলা সিনেমার গান ” চুমকি চলেছে একা পথে … সঙ্গী হলে দোষ কি তাতে … ” ইভটিজিং এর প্রাচীন নিদর্শন। তবে এবারের পহেলা বৈশাখে বিষয়টা জোরেসোরে সামনে এসেছে। আশা করব এই টাই শেষ, এর পর আর এভাবে কোন উৎসবকে কলঙ্কিত করতে পারবে না শুয়োরছানা গুলো]

হুমায়ুন আহমেদের স্ত্রী শাওনের সঙ্গে ঘটে যাওয়া সেই ঘটনাটি আওয়ার নিউজ বিডি’র পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো :

১ লা বৈশাখ ১৪০০ সাল…

সদ্য ১২ তে পা দেয়া, শাড়ি পড়া আমি, মা বাবা বড়ভাই আর ছোটবোন নিয়ে গিয়েছিলাম নতুন শতকের বর্ষবরন উৎসবে…

মঙ্গল শোভাযাত্রা দেখে মনের আনন্দে পরিবারের সাথে ঘুরে বেড়াচ্ছি…

আমরা তখন শাহাবাগের কাছাকাছি… ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন ভবনের সামনের দোকানে চটপটি খাওয়াবেন বলে আমার ইঞ্জিনিয়ার বাবা আমাদের ঐদিকে নিয়ে যাচ্ছেন… লক্ষ্য করার আগেই হঠাৎ কেউ একজন পাশ দিয়ে স্বাভাবিক ভঙ্গিতে হেঁটে যেতে যেতেই কি যেন একটা বস্তু আমার পিঠে ছুঁইয়ে গেলো… গুড়ো গুড়ো ঐ বস্তুটি আমার সারা পিঠে ছড়িয়ে গেলো… সাথে সাথে শুরু হল তীব্র যন্ত্রণা এবং চুলকানি… আমি

চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করলাম…

“জ্বলে যাচ্ছে আম্মু… আমার পিঠ…”

এসিড ভেবে আব্বু আম্মু প্রচণ্ড ভয় পেয়ে গেলো… আমি মাটিতে বসে পড়লাম… আশেপাশে দুই একজন করে লোক জমতে শুরু করলো… এদের মধ্যে একজন ভদ্রলোক আমার বাবার পাশে বসে আমাকে লক্ষ্য করে দেখে বললেন

“ভয় পেয়েন না… এসিড না… মনে হয় বিছুটি পাতা…”

তিনি তাঁর মটর সাইকেলের ট্যাংক থেকে খানিকটা পেট্রোল বের করে আনলেন আর তা রুমালে ভিজিয়ে আমার মা আমার পিঠ মুছে দেয়াতে জ্বলুনি কিছুটা কমলো…

সেই শেষবার বর্ষবরণ উৎসবে আমার টিএসসি-তে যাওয়া… এরপর কেটে গেছে ২২ টি বছর..!!! আমার আর বর্ষবরণ উৎসবে যাওয়ার ইচ্ছা বা সাহস কোনটাই হয়নি…

ঐদিনের ঐ লোকটিকে আমার বাবা মা ধন্যবাদ দিয়েছিলেন আমি নিশ্চিত… আমি দিতে পারিনি…

আজ বলছি…
“ভাই… আপনাকে ধন্যবাদ…”

গায়ে বিছুটি পাতা দেওয়া সেইসব অভদ্র পুরুষের বংশধরেরা আজও সমান তালে কুকর্ম করে যাচ্ছে… তাদের কি আর বলব..!!!
হায়রে পুরুষ..!!! রয়েছো পুরুষ হয়ে, মানুষ হওনি…

লেখক: মেহের আফরোজ শাওন, অভিনেত্রী ও নির্মাতা



মন্তব্য চালু নেই