যে জীবন শাওন, সাবা, মৌসুমীর…

দিনটা ১২ অক্টোবর। রোজ সোমবার। এই দিনে লাখ লাখ নবজাতক পৃথিবীতে এসেছে। বিজ্ঞান বলছে, প্রতিদিন গড়ে সাড়ে তিন লাখ মানুষ পৃথিবীতে আসে। সে হিসেবে ১২ অক্টোবরও এতগুলো মানুষ জন্মছে। সেই সাড়ে তিন লাখি মানুষের তালিকায় আছে তিন তারকারও নাম। তিন জনই অভিনয়ের মানুষ। ভিন্ন ভিন্ন বছরে হলেও তিন কন্যার জন্ম একই তারিখে। তারা অভিনয়শিল্পী মেহের আফরোজ শাওন, সোহানা সাবা ও মৌসুমী হামিদ।

মেহের আফরোজ শাওনের জন্ম ১৯৮১ সালে। বয়সটা এবার ৩৪ ছাড়ালো। ১৯৯৪ সালে কিশোরী বয়সে ‘নতুন কুঁড়ি’ প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হন। কাজ শুরু করেন শিশুশিল্পী হিসেবে। অল্প সময়েই বেশ নাম করেন। তবে ধারাবাহিকে তার উঠে আসা হুমায়ূন আহমেদের হাত ধরে। তখন বয়স ষোল। ‘নক্ষত্রের রাত’ নাটকে কাজ করে হুল্লোড় ফেলেন দেন। এপর হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে আরো বেশ কটি কাজ করেছেন। সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয়েছেন ‘আজ রবিবার’ নাটকে। নাটকটিই তার জীবনের টার্নিং পয়েন্ট। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। অভিনয়ের পাশাপাশি নির্মাণেও সিদ্ধহস্ত তিনি। ২০০৩ সালে ‘পক্ষীরাজ’ নাটকের মাধ্যমে নির্মাণ শুরু করেন। অর্ধশতাধিক নাটক-টেলিছবি পরিচালনা করেছেন। ২০০৫ সালে নন্দিত উপন্যাসিক হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। নিনিত ও নিষাদ নামে দুই সন্তানের মা। হুমায়ূন আহমেদ মারা যাবার পর তার স্মৃতিকে আঁকড়ে ধরেই তিনি বেঁচে আছেন।

বর্তমানে হুমায়ূন আহমেদের ‘কৃষ্ণপক্ষ’ অবলম্বনে সিনেমা বানাচ্ছেন। সিনেমাটির শুটিং চলছে। গতকালও উত্তরার মন্দিরা শুটিং হাউসে দৃশ্যধারণ করা হয়। শুটিংয়ের ফাঁকেই নিজের জন্মদিন পালন করেন শাওন। এসময় সিনেমার শিল্পীদের মধ্যে পুজা চেরী, পাভেল ইসলামসহ আরো অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।

সোহানা সাবাও গতকাল দুপুর পর্যন্ত ব্যস্ত ছিলেন অভিনয়ে, ফটোশুটে। কাল রাত থেকে তার মুক্তি। হাতে দু’ তিনটা দিন আছে। ইচ্ছামতো কাটিয়ে দেবেন। অনেকটা ছুটির আমেজেই কাটলো তার জন্মদিনটা। জানালেন, ‘কাজিনরা মিলে রাত বারোটার সময় সারপ্রাইজ দিয়েছে। আসলে সারপ্রাইজ হইনা আমি। আমি জানিই তারা কেক কাটবে। বরং বার্থডে এলেন আমার মনটা খারাপ হয়ে যায়। জন্মদিন এলেই মনে হচ্ছে বয়স হয়ে যাচ্ছে আমি তো মারা যাবো।’

সাবার চলচ্চিত্রে যাত্রা অভিনেত্রী কবরীর হাত ধরেই যাত্রা ধরে। অভিনয় করে ‘আয়না’ সিনেমায়। এরপর গুণী নির্মাতা মোরশেদুল ইসলামের ‘খেলাঘর’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। ছবিগুলো মুক্তির পরই পরিচালকদের নজরে আসেন। গতানুগতিক কাজের বাইরে ভিন্ন ভিন্ন কাজ করতেই স্বাচ্ছন্দবোধ করেন এই অভিনেত্রী। ইতিমধ্যে আলাদা একটি ইমেজ তৈরী করে ফেলেছেন। বেছে বেছে কাজ করতে পছন্দ করেন। তার সিনেমার তালিকাটা খুব বড় নয়, হাতে গোনা। কিন্তু তার বেশিরভাগই সিনেমায় দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছে।

প্রিয়তমেষু’, ‘চন্দ্রগ্রহণ’র মতো দর্শকপ্রিয় সিনেমার নায়িকা তিনি। সর্বশেষ মুক্তি পেয়েছে তার ‘বৃহন্নলা’। ছবিটি দেশ-বিদেশের বিভিন্ন ফেস্টিভালে পুরস্কৃত হয়েছে। জয়পুরে সপ্তম জয়পুর আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে ‘বৃহন্নলা’ চলচ্চিত্রের জন্য সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার অর্জন করেন তিনি। দেশের বাইরে কলকাতার একটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। অয়ন চক্রবর্তীর পরিচালনায় ‘ষড়রিপু’তে সাবা অভিনয় করেছেন ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত, চিরঞ্জিত চক্রবর্তী ও রজতাভ দত্তের সঙ্গে। এখন মুরাদ পারভেজের ‘দৌড়’ সিনেমায় নাম লিখিয়েছেন। শিগগিরই ছবিটির শুটিং শুরু হবে। ২০০৬ সালে নির্মাতা মুরাদ পারভেজের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। ‘স্বরবর্ণ’ নামে তাদের সন্তান আছে। অবসরটা সন্তানের সঙ্গেই কাটাতে ভালোবাসেন তিনি।

শাওনের মতো মৌসুমী হামিদের জন্মদিনটাও কেটেছে শুটিং স্পটে। নির্মাতা সঞ্জীব চৌধুরীর নতুন ধারবাহিক ‘পলাশ ফুলের নোলক’-এ কাজ করছেন পুবাইলে। মৌসুমী জানালেন, রাত বারোটায় কাছের বন্ধুরা কেক কেটে সারপ্রাইজ দিয়েছে। এরপর আসলাম শুটিংয়ে। জন্মদিনের বিশেষ উপহার হিসেবে পেয়েছি সঞ্জীব চৌধুরীর ‘পলাশ ফুলের নোলক’। আমি অভিভূত। আজকের দিনটা সুন্দর কাটবে।’

জন্ম তার সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলায়। বেড়ে উঠা খুলনায়। লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টার-২০১০’ প্রতিযোগিতা মিডিয়ায় আসেন। শুরু করেন মডেলিং-অভিনয়। বেশ কিছু নাটক-টেলিফিল্মে অভিনয় করে আলোচনায় এসেছেন। খালিদ মাহমুদ মিঠুর ‘বাংলা আমার মাতৃভাষা’ নাটকের মাধ্যমে তার অভিষেক হয় ছোটপর্দায়। এরপর নিয়মিত কাজ করছেন ছোটপর্দায়। পাশাপাশি বড়পর্দায়ও দ্যুতি ছড়াচ্ছেন। অনিমেষ আইচের ‘ না মানুষ’ দিয়ে প্রথমবারের মতো সিনেমায় নাম লেখান। কিন্তু ছবিটি মুক্তি পায়নি। তার অভিনীত ‘ব্লাকমেইল’ ‘ব্লাকমানি’, ‘জালালের গল্প’ সিনেমা মুক্তি পেয়েছে। এছাড়া ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনী টু’ ছবির শুটিং শেষ করেছেন।



মন্তব্য চালু নেই