বরফশীতল মহাদেশ এন্টার্কটিকার কিছু অজানা কথা

আমরা সাধারণত পৃথিবীর প্রায় সকল মহাদেশ সম্পর্কেই কিছু না কিছু জানি। যেমন এশিয়া পৃথিবীর বৃহত্তম ও সবচেয়ে জনবহুল মহাদেশ। আফ্রিকায় পৃথিবীর বৃহত্তম নদী নীলনদ বইছে, যা পৃথিবীর মধ্যে সর্বাধিক দেশে প্রবাহিত। দক্ষিণ অ্যামেরিকায় রয়েছে পৃথিবীর সর্বোচ্চ বিন্দু চুড়া চিম্বোরাজো পর্বত। অস্ট্রেলিয়া পুরোটাই শুধু একটি দেশ নয়, এটি পৃথিবীর সর্ববৃহৎ দ্বীপও বটে। ইউরোপে রয়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট রাষ্ট্র ভ্যাটিকান সিটি। উত্তর অ্যামেরিকায় সকল জলবায়ু রয়েছে। আর রয়েছে মিষ্টিপানির সর্ববৃহৎ হ্রদ ‘সুপিরিয়র’।

কিন্তু একটু পুরাতন মহাদেশ এন্টার্কটিকা সম্পর্কে কিছু জানেন কি? এই গ্রহের নীচ অংশের শীতল অংশটি সম্পর্কে? বরফে মোড়ানো অনুর্বর এই ভূমি সম্পর্কে আমরা কতটুকু জানি? কিন্তু সত্য হলো যে, পৃথিবীর এই বিরান ও হিমশীতল মহাদেশে রয়েছে অনেক আশ্চর্যজনক ও মজার সব ব্যাপার। আসুন, এসকল মজার ব্যাপারস্যাপারেরই কিছু জেনে নেওয়া যাক।

তাপমাত্রা: এন্টার্কটিকার তাপমাত্রা সম্পর্কে ধারণা করা তেমনমাত্র কঠিন কিছু না বলেই মনে হয়। এ যাবৎকালে এই মহাদেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ১৭.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

অনুর্বর ভূমি: মরুভূমি সম্পর্কে বেশিরভাগ মানুষেরই ধারণা যে, এটা শুষ্ক, ধূলোময় আর অসহ্য রকমের গরম। কিন্তু সংজ্ঞা অনুযায়ী, বরফমোড়ানো তীব্র ঠাণ্ডার এন্টার্কটিকা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মরুভূমি।

অপ্রত্যাশিত অগ্নুৎপাত: আপনি কি জানেন, পৃথিবীর সর্ব দক্ষিণের বৃহৎ আগ্নেয়গিরির আবাস এন্টার্কটিকায়? তবে এটা লাভা উদগিরণের বদলে বরফের ক্রিস্টাল উদগিরণ করে থাকে।

ঠাণ্ডার আবাসভূমি: যদিও সাইবেরিয়াকে পৃথিবীর শীতলতম স্থান বলা হয়ে থাকে। কিন্তু অনেকেই মনে করে থাকেন, এন্টার্কটিকা হলো পৃথিবীর সবচেয়ে শীতলতম স্থান। আমাদের কথা হলো, তারা হয়তো ঠিকই বলেন। কারণ, এখানকার তাপমাত্রা -১৩৫.৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা -৯৩.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।

বরফঘেরা জলাশয়: এন্টার্কটিক মূলত কঠিন বরফের এলাকা। কিন্তু এখানে পানিও রয়েছে প্রচুর। গোটা এন্টার্কটিকায় প্রায় ৩০০টি হ্রদের সন্ধান পাওয়া গেছে। এই হ্রদের পানি পৃথিবীপৃষ্টের উষ্ণতার কারণে পুরোপুরি বরফে পরিণত হয় না।

ঠিক যেন রক্তের নদী: এন্টার্কটিকায় প্রবাহিত হচ্ছে টকটকে লাল জলের প্রপাত। দেখে মনে হয়, যেন রক্তের নদী বয়ে চলেছে। আসলে এই পানির সাথে মিশে আছে প্রচুর পরিমাণে আয়রণ অক্সাইড। আর ফলে এই জলের রঙ লাল দেখায়।

সরীসৃপহীন মহাদেশ: পৃথিবীর সর্বত্র- প্রায় সকল সকল স্থানেই সরীসৃপ জাতীয় প্রাণী দেখা যায়। কিন্তু এন্টার্কটিকায় আপনি কোনো আঁশযুক্ত প্রাণী বা সরীসৃপের দেখা পাবেন না।

পরিষ্কার ও বিশুদ্ধ পানির আধার: আপনি টলটলে পরিষ্কার ও বিশুদ্ধ পানি পান করতে চান। তাহলে আপনাকে অবশ্যই এন্টার্কটিকায় যেতে হবে। কারণ পৃথিবীর মোট বিশুদ্ধ পানির ৭০ ভাগ এই মহাদেশেই রয়েছে। তাই এন্টার্কটিকাকে পরিষ্কার ও বিশুদ্ধ পানির আধার আমরা বলতেই পারি।

মাটি কোথায়?: এন্টার্কটিকায় গিয়ে মাটি খোঁজা আর ডুমুরের ফুল খোঁজা প্রায় সমান কথা। বরফের রাজ্যে আপনি মাটি পাবেন কোথায়? হ্যাঁ, এন্টার্কটিকায়ও বরফহীন ভূমি রয়েছে। এই মহাদেশের মোট আয়তনের মাত্র এক শতাংশ অঞ্চল বরফহীন। এখানেই আপনি মাটির দেখা পাবেন।

বরফের পুরুত্ব: আপনি কি কল্পনা করতে পারেন, এন্টার্কটিকার বরফের পুরুত্ব কতখানি? এ পর‌্যন্ত রেকর্ড করা বিভিন্ন অংশের মধ্যে সবচেয়ে কম পুরু বা চিকন বরফের পুরুত্ব মাত্র এক কিলোমিটার।

বিশাল এই বরফ রাজ্য এন্টার্কটিকা মহাদেশের বিভিন্ন অংশ বিভিন্ন রাষ্ট্র দাবি করে আসছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় একটি অংশ নিজেদের বলে দাবি করে অস্ট্রেলিয়া। এই মহাদেশে নিজেদের দখল জারি করার জন্য ১৯৭৭ সালে আর্জেন্টিনা এক গর্ভবতী মহিলাকে এন্টার্কটিকায় পাঠায়। মহিলা সেখানেই সন্তান প্রসব করেন। সেই শিশুটিই এই বরফরজ্যে জন্মগ্রহণকারী প্রথম মানুষ। নিজেদের দখলদারিত্ব জারি রাখতে অনেক রাষ্ট্র এন্টার্কটিকাকে সভ্য করার কাজে নেমে পড়েছে। ইতিমধ্যে এখানে এটিএম বুথও স্থাপন করা হয়েছে। রয়েছে সেনা ক্যাম্প সহ নানাকিছু।

যদি আপানদের কারো যদি ভ্রমণের লোভ জেগে থাকে, তবে চেষ্টা করতে পারেন, ঘুরে আসুন বরফ শীতল মহাদেশ এন্টার্কটিকা।



মন্তব্য চালু নেই