প্রেমের ফাঁদ: এটি শুধু সংবাদ নয়, আবেগী তরুনীদের জন্য একটি সতর্কবার্তা

নির্যাতনের শিকার কলেজছাত্রী রাজধানীর মোহাম্মদপুরের একটি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী (নাম প্রকাশ করা হলনা) । পিতা গার্মেন্ট ব্যবসায়ী। পিতা-মাতা ও পরিবারের অন্য সদস্যের সঙ্গে তিনি থাকেন মোহাম্মদপুর পিসিকালচার হাউজিং এলাকায়। দুই মাস আগে কলেজে যাওয়ার পথে মোহনের সঙ্গে পরিচয় হয় মেয়েটির।মাত্র দুই মাসের পরিচয় তারপর ধীরে ধীরে দু’জনের ভাললাগা। প্রেমিক মোহনকে বিশ্বাস করে তাকে মনপ্রাণ উজাড় করে ভালবেসেছিলেন কলেজছাত্রী (১৮)। স্বপ্ন দেখেছিলেন ঘর বাঁধার। দিন দিন তাদের প্রেম গাঢ় থেকে গাঢ় হয়। প্রতারক প্রেমিক মোহন মোহাম্মদপুর এলাকায় একটি এমব্রয়ডারি হাউসে মাসিক বেতনে কাজ করে। থাকে পশ্চিম আগারগাঁও এলাকায়। প্রেমিকের কাছে নিজেকে সে পরিচয় দেয় বায়িং হাউসের বড় কর্মকর্তা হিসেবে।সরল বিশ্বাসে কলেজছাত্রী তাতেই মনপ্রাণ উজাড় করে দেয় মোহনকে। মঙ্গলবার প্রেমিক মোহন ও কলেজছাত্রী সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়ায়। সন্ধ্যায় তাদের সঙ্গে মিলিত হয় মোহনের বন্ধু রিয়াজ।

কিন্তু বিশ্বাসঘাতক প্রেমিক মোহনের মনে ছিল অন্য চিন্তা। মোহন তাঁর বন্ধু রিয়াজের সঙ্গে মিলে পরিকল্পনা করে প্রেমিকাকে নির্জন কোন জায়গায় নিয়ে যাওয়ার। যে প্রেমিকাকে সে ভালবেসেছিল, বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, সেই প্রেমিকাকেই ফুঁসলিয়ে বন্ধু রিয়াজের বাসায় নিয়ে ধর্ষণ করেছে দু’জন মিলে। সম্ভ্রম হারিয়ে কলেজছাত্রী প্রেমিকা এখন দিশাহারা। বর্তমানে তার ঠাঁই হয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

ছবিটি প্রতিকী

ঘটনার দিন পূর্ব পরিকল্পনা মত কলেজছাত্রীকে দু’জনে মিলে নিয়ে যায় পশ্চিম মণিপুরিপাড়ার ১/বি প্লটের ১২৪ নম্বরের একটি বাসায়। সেখানে রাত ১০টা পর্যন্ত মোহন ও রিয়াজ মিলে কলেজছাত্রীকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। একপর্যায়ে তারা ওই ছাত্রীকে তার মোহাম্মদপুরের বাসার সামনে ফেলে রেখে যায়। এদিকে সন্ধ্যা হয়ে গেলেও মেয়ে বাসায় না ফেরায় তাকে হন্যে হয়ে খুঁজতে থাকেন মেয়ের পিতা ও মা। অসুস্থ মেয়ে বাসায় ফিরলে তাকে জিজ্ঞাসা করেন কোথায় সে ছিল, কেন বাসায় ফিরতে এত দেরি হলো। ঘটনা শুনে দিশাহারা ও হতভম্ব পিতা, মা মেয়েকে নিয়ে যান স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে। কিন্তু অবস্থার অবনতি হলে তাকে নিয়ে যান ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে ওসিসিতে তাকে ভর্তি করা হয় বৃহস্পতিবার ভোরে। মিরপুর থানা পুলিশ জানিয়েছে, বুধবার নির্যাতিত কলেজছাত্রীর পিতা বাদী হয়ে মোহন ও রিয়াজের নামে নারী ও নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করেছেন। তবে দু’জনের কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। পুলিশ আরও জানিয়েছে, মেয়েটিকে যে ফ্ল্যাটে ধর্ষণ করা হয়েছে ফ্ল্যাটটি রিয়াজের ফুফাতো ভাইয়ের। ফ্ল্যাটের মালিক দীর্ঘদিন ধরে প্রবাসী। এ জন্য এ ফ্ল্যাটের দায়িত্ব পায় রিয়াজ। ফ্ল্যাটের চাবি ও ফ্ল্যাটের দেখাশোনা সে-ই করতো।

মিরপুর থানার এসআই (উপপরিদর্শক) আতাউর রহমান মেডিকেল পরীক্ষার জন্য নির্যাতিত মেয়েকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। তিনি বলেন, মেয়েটি অসুস্থ হয়ে পড়ায় তার কাছ থেকে বিস্তারিত তথ্য জানা সম্ভব হয়নি। তিনি নির্যাতিত ছাত্রীর আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে জেনেছেন, মোহন নামের এক যুবকের সঙ্গে ওই কলেজছাত্রীর প্রেমের সম্পর্ক ছিল। তবে তা বেশিদিন হয়নি। প্রেমের ফাঁদে ফেলে মঙ্গলবার মেয়েটিকে পশ্চিম মণিপুরিপাড়ার ওই বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। বিকাল থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত মোহন, রিয়াজ ও মেয়েটি ওই বাসায় অবস্থান করে। রাতে মেয়েটি ফিরতে চাইলে মোহন ও রিয়াজ নানা টালবাহানা করে সময়ক্ষেপণ করে। একপর্যায়ে দু’জন মিলে মেয়েটিকে শারীরিক নির্যাতন করে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার (ওসিসি)’র সমন্বয়ক ডা. বিলকিস বেগম মানবজমিনকে বলেন, নির্যাতিতা মেয়েটির প্রাথমিক শারীরিক পরীক্ষা করা হয়েছে। আরও কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে। এ জন্য তাকে কয়েক দিন হাসপাতালে থাকতে হবে। এ সময় তাকে আমরা পর্যবেক্ষণে রাখব। মামলা তদন্ত করছেন মিরপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মাইনুল ইসলাম। তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে আসামি মোহন ও রিয়াজ পরিকল্পিতভাবেই কলেজছাত্রীকে ধর্ষণ করেছে। ভিকটিম আমাদের কাছে বলেছে মোহনের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। তবে দু’জন আসামির কারও পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা আমরা এখনও খুঁজে পাইনি। এ জন্য তাদের গ্রেপ্তার করতে একটু সমস্যা হচ্ছে।



মন্তব্য চালু নেই