পাখি বিদ্যুতের তারে বসলে মরে না কেন?

আমাদের একটা ভুল ধারণা চালু আছে। অনেকে ভাবেন, যেসব প্রাণি ডিম পাড়ে তাদের বৈদ্যুতিক শক লাগে না। অন্যদিকে যেসব প্রাণি বাচ্চা প্রসব করে তাদের বৈদ্যুতিক শক লাগে। পাখিই এর বড় প্রমাণ বলে মনে করে মানুষ। এটা একেবারে অবৈজ্ঞানিক ধারণা।

যেকোনো প্রাণির দেহ বিদ্যুৎ পরিবাহী। তাই বিদ্যুতের সংস্পর্শে এলে যেকোনো প্রাণিই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হবে।কিন্তু পাখিরা অবলীলায় বিদ্যুতের তারে বসে থাকে।

অথচ প্রায়ই দেখা যায় বাদুড় বিদ্যুতের তারে মরে ঝুলে আছে। এ দৃশ্যই সাধারণ মানুষের ভুল ধারণাকে আরও উসকে দেয়। তারা ভাবে, বাদুড় সরাসরি বাচ্চা প্রসব করে বলে বিদ্যুতের তারে বসলেও মরে না।

আসল ব্যাপার তা নয়। বিদ্যুৎ পরিবহনের জন্য মাধ্যম দরকার হয়। মাধ্যমের ভেতর দিয়ে বিদ্যুৎ চলে যায় মাটিতে। একটা তারে কিন্তু বৈদ্যুতিক কাজ চলে না। দরকার হয় দুটো তার। দুটো তারের একটা মাটির সাথে সংযুক্ত। একে বলে আর্থ কেবল। আরেকটা তার উৎপাদন কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ বয়ে আনে। একে বলে ফেজ তার। যখন আর্থ আর ফেজ তারের ভেতর সংযোগ ঘটে তখন ফেজ তারের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত ইলেক্ট্রন খুব সহজেই আর্থ কেবলের ভেতর দিয়ে মাটিতে চলে যেতে পারে। এখন মানুষ বা অন্য কোনও প্রাণি যদি ফেজ তার স্পর্শ করে তাহলে সে এক ধরনের ঝাঁকুনি অনুভব করবে। যদি ওই প্রাণী বা মানুষের শরীরের কোনও অংশ মাটি বা আর্থ কেবলের সাথে যুক্ত থাকে তাহলে তার শরীর তখন পরিবাহকের ভূমিকা পালন করবে। শরীরের ভেতরে তখন বৈদ্যুতিক ক্রিয়া শুরু হবে ভীষণ মাত্রায়। শরীরের ভেতরের কোষগুলো ভেঙে যাবে। ভেঙে পড়বে শরীরে সকল সিস্টেম। তখন ওই প্রাণি বা মানুষ মারা যাবে।

কোনো পাখি যখন বিদ্যুতের তারে বসে, তখন সে একটি তারের সাথেই সংযুক্ত থাকে। তাই তার ভেতর দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয়ে মাটিতে চলে যেতে পারে না। অন্যদিকে বাদুড় স্বাভাবিকভাবে বসতে পারে না। সে সব সময় ঝুলে থাকে। বাদুড় যখন বিদ্যুতের ওপরের তারে ঝোলে, তখন তার মাথা ঠেকে যায় নিচের তারে। ফলে আর্থ আর ফেজ কেবলের মধ্যে সংযোগ ঘটে। এতে করে শর্ট সার্কিটের সৃষ্টি হয়। বাদুড়ের শরীরের ভেতরে দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয়। মারা বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যায় বাদুড়।

অন্যদিকে পাখিরা যেকোনো একটা তারেই বসে। অন্যতারে সাথে সংযোগ ঘটে না। তাই শট সার্কিট হওয়ার কোনও ভয় থাকে না। এজন্য পাখি মারা যায় না।



মন্তব্য চালু নেই