পরিবার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ী বসবাসের সুযোগ

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যেতে আগ্রহী অনেকে। বৈধ উপায়ে মার্কিন মুলুকে বসবাসের এবং স্বপ্নের গ্রিন কার্ড হাতে পাওয়ার সহজ পদ্ধতির অন্যতম হচ্ছে দেশটির অভিবাসী ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রামের অধীনে আবেদন। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসে এবং ব্যবসা-বাণিজ্যে আগ্রহী হলে অভিবাসী ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রামের অধীনে দেশটির স্থায়ী বাসিন্দা হতে পারেন যে কেউ।

যুক্তরাষ্ট্রে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও বিদেশি বিনিয়োগে মার্কিন অর্থনীতিকে আরো চাঙ্গা করতে ১৯৯০ সালে অভিবাসী বিনিয়োগকারী ভিসা প্রোগ্রাম বা ‘ইবি-৫ ভিসা’ অনুমোদন করে দেশটির কংগ্রেস।

বিনিয়োগ ভিসা প্রোগ্রামের আওতায় বাণিজ্যিক উদ্যোগে কমপক্ষে ৫ লাখ ডলার বিনিয়োগ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসের সুযোগ পাওয়া সম্ভব। ওই অর্থ আয়ের স্বপক্ষে বৈধ কাগজপত্র দেখাতে হবে বিনিয়োগপ্রত্যাশীদের। ইবি-৫ কর্মসূচির আওতায় আবেদন গৃহীত হলে দেশটিতে স্থায়ী বসবাসে গ্রিন কার্ড পাবেন বিনিয়োগকারী। পরবর্তীতে আবেদন করলে স্বামী/স্ত্রী ও ২১ বছরের কম বয়সী সন্তানদের ৬ মাসের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যেতে পারবেন তিনি। বিনিয়োগকারী ভিসার আওতায় আবেদনকারী কম বেশি ৬ মাসের মধ্যে গ্রিন কার্ড পাবেন।

এ ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের ব্যবস্থাপনা বিষয়ক কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতার প্রয়োজন পড়বে না। তাদের শুধু বৈধ উপায়ে আয় করা ৫ লাখ ডলার বিনিয়োগ করতে হবে। আবেদন করার ১৫ দিনের মধ্যেই বিনিয়োগকারী জানতে পারবেন ভিসার জন্য তিনি মনোনীত হয়েছেন কি না। আবেদনকারী গ্রিন কার্ড পাওয়ার ৫ বছর পর মার্কিন নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন।

বিনিয়োগ ভিসা প্রোগ্রামের আওতায় আবেদন করার জন্য প্রার্থীকে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট বিষয়ে দক্ষ ও অভিজ্ঞ আইনজীবীর সহায়তা নিয়ে আবেদন করতে হবে। প্রাথমিকভাবে ভিসার এ পদ্ধতি সহজ মনে হলেও এটি বেশ জটিল। সঠিক পদ্ধতিতে এবং সঠিক আইনি প্রক্রিয়া না মেনে আবেদন করলে ভিসা প্রাপ্তির সম্ভাবনা চিরতরে বন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।

ইবিফাইভ ভিসা সম্পর্কিত জরুরি পরামর্শ
১. প্রতি বছর দক্ষ প্রার্থীর জন্য ১০ হাজার ইবি-৫ ভিসা বরাদ্ধ রাখে যুক্তরাষ্ট্র। আবেদনকারী ৩ হাজার বিনিয়োগকারীকে এই ভিসা দেয়া হয়।

২. ইবি-৫ ভিসার জন্যে অন্তত ১০ লাখ ডলার অর্থাৎ এক মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ প্রয়োজন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ৫ লাখ ডলার বিনিয়োগেও আবেদন অনুমোদন দেয়া হয়।

৩. সাধারণত এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে এক বছরের কম সময় লাগে।

৪. কোনো ব্যক্তি তার বাবা, মা কিংবা অন্য আত্মীয়-স্বজনের মাধ্যমেও ইবি-৫ ভিসার আবেদন করতে পারেন।

৫. কারা ইবি-৫ ভিসা পেতে পারে এ প্রশ্নের উত্তরে বলা যেতে পারে, যিনি আমেরিকান অর্থনীতিতে প্রয়োজনীয় পরিমাণ বিনিয়োগ করার ক্ষমতা প্রদর্শন করতে পারেন তিনি, তার স্বামী/স্ত্রী ও ২১ বছরের কম সন্তানও আবেদন করতে সক্ষম।

৬. একজন বিনিয়োগকারী হিসেবে আপনার পূর্বে ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতার দরকার নেই। প্রাথমিকভাবে ইবি-৫ গ্রিন কার্ড শর্তসাপেক্ষে দুই বছরের জন্য দেয়া হয়। এই দুই বছরের মধ্যে প্রার্থী/বিনিয়োগকারীকে যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবসায়িক সক্ষমতা প্রমাণ করতে হবে। বিনিযোগকারীকে দেখাতে হবে যে, তিনি যথেষ্ট সংখ্যক শ্রমিক/কর্মচারী নিয়োগ দিয়েছেন এবং নিয়োগ দিতে সক্ষম। দুই বছরের মধ্যে এটা প্রমাণ করতে না পারলে, গ্রিন কার্ড সাময়িকভাবে বাতিল হয়ে যাবে।

৭. যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন এবং সিটিজেন সার্ভিসেস ইউএসসিআইএস ত্রুটিপূর্ণ এবং মিথ্যা তথ্য সম্বলিত আবেদন মুহূর্তেই বাতিল করে দেয়ার ক্ষমতা রাখে।

৮. ইমিগ্রেশন সার্ভিস আপনার বিনিয়োগকৃত অর্থের উৎস সরেজমিনে পরীক্ষা করে দেখবে। সুতরাং আপনাকে অবশ্যই আইনসম্মতভাবে অর্থ বিনিয়োগ করতে হবে এবং বিনিয়োগ সংক্রান্ত সঠিক ও নির্ভুল তথ্য প্রমাণাদি উপস্থাপন করতে হবে।

৯. আপনাকে অবশ্যই প্রমাণ করতে হবে যে, আপনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে নূন্যতম ১০ জন কর্মচারী ফুল টাইম অর্থাৎ সপ্তাহে ৩৫ ঘণ্টা করে কাজ করে এবং আপনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে ইতিবাচক অবদান রাখছে।

১০. বিনিয়োগকারীর পরিবার অর্থাৎ স্বামী/স্ত্রী কিংবা সন্তানদের এই ১০ জন কর্মচারীর মধ্যে অন্তর্ভূক্ত করা যাবে না। তবে পরিবারের অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনদের কর্মচারী হিসেবে নিয়োগ দেয়া যাবে। এই ১০ জন কর্মচারীকে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হতে হবে এমন নয়। তবে তাদের অবশ্যই নূন্যতম এক বছরের নবায়নযোগ্য নন-ইমিগ্র্যান্ট ভিসা থাকতে হবে এবং অন্য দেশের নাগরিক হওয়া স্বত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রে কাজ করার অনুমতি থাকতে হবে।



মন্তব্য চালু নেই