রাষ্ট্রায়ত্ত ৩ ব্যাংকের প্যানেল নিয়োগ বাতিল

নিশ্চিত চাকরি হারাচ্ছে ৭ হাজার নিয়োগ প্রত্যাশী

রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা ও রূপালী ব্যাংকের ২০১৩-১৪ সালে গৃহীত নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের গঠিত প্যানেল নিয়োগ বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে নতুন করে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে পরীক্ষা নেয়ার জন্য ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটির চেয়ারম্যান ড. আতিউর রহমান ও উল্লিখিত তিন ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের বরাবর একটি চিঠি দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এর মধ্য দিয়ে তিনটি ব্যাংকের প্যানেলভুক্ত প্রায় ৭ হাজার নিয়োগ প্রত্যাশী তাদের নিশ্চিত চাকরি হারাচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, ১০ ফেব্রুয়ারি অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে উপসচিব মো. রিজওয়ানুল হুদা স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘যেসব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থী আছেন তাদের কাউকেই এখন নিযুক্তি দেয়া যাবে না। আগের পরীক্ষার প্রায় তিন বছর পেরিয়ে গেছে। দ্রুতগতিতে নতুন পরীক্ষা নেয়া উচিত। পরীক্ষার তারিখ, তার ফলাফল ঘোষণার তারিখ এবং সেই সহ নতুন নিযুক্তির তারিখ সম্মন্ধে জানতে চাই। এই তারিখ ঘোষণার সময় কত পদ পূরণ করা হবে সেটাও ঘোষণা করা সম্মন্ধে সুপারিশ চাই।’

এটি অর্থমন্ত্রীর মন্তব্য উল্লেখ করে চিঠির শেষে বলা হয়েছে, ‘অর্থমন্ত্রীর উপরোক্ত মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রাহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।’

এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র শুভংকর সাহা বলেন, ‘আমরা চিঠিটি পেয়েছি। তবে এখনো কোনো অফিসিয়াল সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। তবে মন্ত্রণালয় যেভাবে চাইছে সেভাবেই কাজটি হওয়ার কথা।’

তিনটি ব্যাংকের ২০১৩-১৪ সালের নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীরা বেশ কিছুদিন ধরেই প্যানেল নিয়োগের দাবিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সামনে আন্দোলন করে আসছিল; যা বৃহষ্পতিবারও দুপুর থেকে বিকেল বেলা পর্যন্ত চলেছে। সন্ধ্যার পর তারা আবার গণভবনের সামনেও মানববন্ধন করেছে। এর মধ্যে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বেশ কয়েকবার নিয়োগ প্রার্থীদের পক্ষ থেকে একটি দল মিটিংও করেছে। তবে এতে কোনো ফল অসেনি।

এদের মধ্যে সোনালী ব্যাংকের প্যানেল নিয়োগ প্রত্যাশী ও আলোচনা কমিটির মুখপাত্র শাহদাত হোসেন বলেন, ‘আমরা যখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সামনে মানববন্ধন করছিলাম একপর্যায়ে পুলিশ এসে আমাদের হাতে একটি চিঠি ধরিয়ে দিল। যার মাধ্যমে আমরা জানতে পারলাম আমাদের আর প্যালেন থেকে নিয়োগ দেয়া হবে না। নতুন করে পরীক্ষা নেয়া হবে।’

‘নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে পরীক্ষা নেয়া হলে তো দেশের হাজার হাজার ছেলেমেয়ে আবেদন করবে। আমাদের অনেকের তো এখন সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়সই শেষ হয়ে গেছে। তাহলে আমরা কি করবো? আমরা তো প্রিলিমিনারি, লিখিত ও ভাইভা দিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছি। তাহলে কেন আমরা চাকরি থেকে বঞ্চিত হবো? কেন আমাদের নিশ্চিত চাকরি থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে? মন্ত্রণালয় ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক আমাদের সঙ্গে ছলনা করছে কেন, এর কোনো কারণ আমরা খুঁজে পাচ্ছি না’, বললেন কমিটির মুখপাত্র শাহদাত।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘আমরা প্যানেল নিয়োগের বিষয়টি আমাদের কার্যপত্রে তুলেছিলাম; যা পরবর্তীতে বোর্ড মিটিংয়ে উঠতো। এটা নিয়ে কাজ চলছিল। কিন্তু বৃহস্পতিবার যখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকে গেলাম তখন মিটিংয়ের সময় আমরা দেখলাম, সামনে একটা করে চিঠি রাখা হয়েছে। যেটি মন্ত্রণালয় পাঠিয়েছে। এ চিঠিতে নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়ার কথা বলা হয়েছে। মন্ত্রণালয় কোনো কিছু বললে সেটার বাইরে তো আর আমরা যেতে পারি না। সুতরাং নতুন করেই আবার নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হবে।’

উল্লেখ্য, আন্দোলনকারীদের কাছ থেকে জানা যায়, প্যালেনভুক্ত প্রায় ৭ হাজার প্রার্থীর মধ্যে সোনালীর ব্যাংকের নিয়োগ প্রত্যাশী ৪ হাজার ১৭৭ জন, রূপালীর ২ হাজার ৫০০ এবং বাকিগুলো জনতা ব্যাংকের। সোনালী ও রূপালীর প্যানেলের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও জনতার প্যানেলের মেয়াদ রয়েছে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। জনতার প্যানেল থেকে বেশকিছু প্রার্থীর চাকরিও হয়েছে বলে জানা যায়।

২০১৫ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয় একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটি (বিএসসি) গঠনের ঘোষণা দেয়। এ কমিটির চেয়ারম্যান বানানো হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরকে। আর রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, রূপালী, জনতা, অগ্রণী, বিডিবিএল, বেসিক, কৃষি ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, কর্মসংস্থান ব্যাংক, আনসার ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংক, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক ও পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক এবং বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স কপোররেশন, ইনভেস্টমেন্ট কপোররেশন বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা সদস্য হিসেবে রয়েছেন। এ কমিটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে কাজ করে।



মন্তব্য চালু নেই