নির্বাচন বন্ধের পায়তারার অভিযোগ চলচ্চিত্র শিল্পীদের

নতুন নেতৃত্ব ও শিল্পীদের স্বার্থে ইতিবাচক পরিবর্তনের প্রত্যাশায় আগামী ৫ মে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচন। এরমধ্যে তিনটি প্যানেল নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য মনোনয়ন দাখিল করেছে। প্যানেলগুলো হচ্ছে মিশা সওদাগর-জায়েদ খান, ওমর সানি-অমিত হাসান ও ড্যানি সিডাক-ইলিয়াস কোবরা।

বিভিন্ন পদে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা হচ্ছেন সভাপতি মিশা সওদাগর, ওমর সানি ও ড্যানি সিডাক, সহসভাপতি নূতন, রিয়াজ, সাংকো পাঞ্জা ও অমৃতা খান, সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান, অমিত হাসান ও ইলিয়াস কোবরা, সহ-সাধারণ সম্পাদক আরমান, ফরহাদ ও ব্যানেট, সাংগঠনিক সম্পাদক একা, রিনা খান ও সুব্রত, আর্ন্তজাতিক বিষয়ক সম্পাদক আলেকজান্ডার বো, ইমন ও ডিজে সোহেল, দপ্তর ও প্রচার সম্পাদক আমির সিরাজী, জ্যাকি আলমগীর ও শামিম খান, সংস্কৃতি ও ক্রীড়া সম্পাদক গাঙ্গুয়া, জাকির হোসেন, ডন ও তনু পান্ডে, কোষাধক্ষ্য আজাদ খান, কমল ও সোহেল, কার্যকরী পরিষদ সদস্য রোজিনা, অঞ্জনা, অরুনা বিশ্বাস, আহমেদ শরীফ, শহীদুজ্জামান সেলিম, আলীরাজ, রিয়াজ, পূর্ণিমা, ফেরদৌস, বাপ্পারাজ, মৌসুমী, সাইমন সাদিক, নিরব, পপি, আমির, আখতার, জেসমিন, দীপুল, নানা শাহ, নাসরিন, মো. হোসেন লিটন, সাইফুল, যুবরাজ, রমিজ উদ্দিন, সুশান্ত, সাউদ নূর, শোয়াইব খান পলাশ, হরবোলা। আগামীকাল ২৪ এপ্রিল চূড়ান্ত হবে মনোনয়ন। আশা করা হচ্ছে মনোনয়নপত্র জমা দেয়া সবাই নির্বাচনের অনুমতি পাবেন।

নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রার্থীদের প্রচরণাও বেশ জমে উঠেছে। কিন্তু এরইমধ্যে দুঃসংবাদ ভর করেছে চলচ্চিত্রাঙ্গনে। গুঞ্জন উঠেছে, কিছু অসাধু লোকের কারণে বন্ধ হয়ে যেতে পারে শিল্পী সমিতির নির্বাচন। এবং এই কাজটি করার জন্য একটি বিশেষ মহল উঠে পড়ে লেগেছে বলেও সাধারণ শিল্পীরা অভিযোগ করেছে।

বিশেষ করে ২১ এপ্রিল এফডিসিতে একদল অচেনা লোক এফডিসিতে অবৈধভাবে প্রবেশ করে মটর সাইকেল নিয়ে মহড়া দেয়ার পর সেখানে পুলিশের উপিস্থিতির কারণে নির্বাচন বন্ধের গুঞ্জন আরও বেশি ডালপালা মেলছে।

এ নিয়ে সাধারণ সদস্যদের মধ্যে আতঙ্কও বিরাজ করছে বলে কেউ কেউ জানিয়েছেন। মটর সাইকেল আরোহী অচেনা লোকদের কারা এফডিসিতে নিয়ে এসে শো ডাউন করেছেন; আবার পুলিশ এসে কেনই বা অবস্থান করেছে এ নিয়ে চলছে বিস্তর আলোচনা। কথা উঠেছে শিল্পীদের কেউ ক্ষমতায় টিকে থাকতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। কেউ আবার ক্ষমতা দখল করতে উঠে পড়ে লেগেছেন। ইন্ডাস্ট্রির স্বার্থে নির্বাচন করতে গিয়ে তারা নিজেরাই নিজেদের ভেতরের সম্পর্ককে নষ্ট করে ফেলছেন।

এদিকে শিল্পী সমিতির বর্তমান সভাপতি শাকিব খানও এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে নির্বাচন বন্ধের ইঙ্গিত দিয়েছেন। তার বক্তব্য, ‘এখনও বর্তমান কমিটি ক্ষমতায়। তার আগেই কিছু লোকজন পারলে আমাকে বের করে দিতে চাচ্ছে। এফডিসির এমডির অনুমতি ছাড়াই পুলিশ প্রবেশ করিয়েছে। এটা শিল্পীদের জন্য অসম্মানের। কারা পুলিশ দিয়ে সবকিছুর নিয়ন্ত্রণ নিতে চায় এটা ‍খুঁজে বের করতে হবে। শিল্পীদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে শিল্পীরা। পুলিশের এখানে কোনো প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। দরকার হলে সবাই মিলে আইনের দ্বারস্থ হবো।’

আবার অন্যদিকে নির্বাচন যথাসময়ে অনুষ্ঠিত করার করার জন্য সাধারণ শিল্পীদের বড় একটি অংশ যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তারা দাবি করছেন, এফডিসিতে সন্ত্রাসী এনে মহড়া দিয়ে কেউ যদি নির্বাচন বন্ধ করার পায়তারা করে তাহলে এর ফল ভালো হবে না। তাদের এই ইঙ্গিতপূর্ণ দাবি সমিতির বর্তমান কমিটিকে লক্ষ্য করেই করা হচ্ছে বলে মনে করছেন চলচ্চিত্রপাড়ার লোকজন।

যদিও বর্তমান কমিটির সভাপতি শাকিব খান সবকিছুই অস্বীকার করছেন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, নির্বাচন বন্ধ করে কার লাভ বেশী? নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রার্থী জানান, ‘লাভ তো কারো না কারো আছেই। তবে আমি মনে করি নির্বাচনের জন্য ভিন্ন ভিন্ন প্যানেল থেকে নির্বাচন করলেও শিল্পী পরিচয়ে আমরা সবাই এক। এফডিসি বা ইন্ডাস্ট্রি কারো ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়। শিল্পীদের সমিতিকে কাজে লাগিয়ে কারো ব্যক্তিগত ক্যারিয়ার, স্বার্থ উন্নয়ন আর হতে দেয়া যাবে না। সবাইকে নিয়ে ভালো থাকার জন্যই আমরা নির্বাচন চাই। কেউ আমাদের এই দাবি থেকে টলাতে পারবে না।’

সাধারণ শিল্পীরা বলছেন, নির্দিষ্ট কাউকে ক্ষমতায় রাখার জন্য কিংবা নির্দিষ্ট কোনো প্যানেলকে নির্বাচনে জয়ী করার জন্য বিশেষ কোনো মহল যদি শান্তিপূর্ণ এ নির্বাচনকে অশান্ত করে তোলে তাহলে শিল্পী সমাজ কখনোই চুপ থাকবে না। তারা এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে প্রতিবাদ গড়ে তুলবে। কারো হাতে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার দিন শেষ। সবাই পরিবর্তন চায়। সবাই কাজ চায়। সবাই ইন্ডাস্ট্রিটাকে সচল রাখতে চায় সিনিয়র-জুনিয়রদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায়। কেউ এই একতা নষ্ট করতে পারবে না। ভোট দিয়ে পছন্দের প্রার্থীদের ক্ষমতার মসনদে পাঠাবে শিল্পীরা।



মন্তব্য চালু নেই