নামাজ আদায়কারীর জন্য বিশেষ পুরস্কার

নামাজ হলো ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ বা খুঁটি। যে এই খুঁটিকে বিনষ্ট করল বা অমান্য করল; সে যেন ইসলামকেই বিনষ্ট করল। ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ নামাজ আদায়ে রয়েছে বান্দার দুনিয়া ও পরকালীন জীবনে অত্যাধিক কল্যাণ। তাই ইসলামের সকল অনুসারিদের যথাযথভাবে নামাজ আদায়ে একনিষ্ঠ হওয়া প্রয়োজন। কুরআন এবং হাদিসে নামাজ আদায়কারীর জন্য দুনিয়া ও পরকালের বিশেষ কল্যাণ ও পুরস্কারের কথা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। যা তুলে ধরা হলো-

দুনিয়ার কল্যাণে নামাজ
নামাজের শারীরিক উপকারিতা হলো- দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জন্য পাঁচবার ওজু করতে হয়, যা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারি। নামাজ আদায়ে শারীরিক নড়াচড়াও স্বাস্থ্যের জন্য কল্যাণকর। তাছাড়া মসজিদে গিয়ে নামাজ আদায়ের জন্য কিছু হাঁটাচলা করতে হয়, তাও সুস্বাস্থ্যকর কাজ। বিশেষ করে ফজরের সময় ঘুম থেকে জেগে মসজিদে যাতায়াতের ফলে সকালের মৃদু বাতাস গ্রহণও সুস্বাস্থ্যের জন্য কল্যাণকর।

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আপনার প্রতি যে কিতাব ওহি করা হয়েছে তা পাঠ করুন এবং যথাযথভাবে নামাজ আদায় করুন। নিশ্চয় নামাজ অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে। আর অবশ্যই আল্লাহর স্মরণ সর্বশ্রেষ্ঠ। তোমরা যা কর আল্লাহ তা জানেন। (সুরা আনকাবুত : আয়াত ৪৫)

নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর সঙ্গে মানুষের এক বিশেষ সম্পর্ক তৈরি হয়। যার ফলে মানুষের ওপর আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য আসে। যে সাহায্য তার জীবনের সর্বত্রই সুপ্রতিষ্ঠা লাভ এবং দুঢ় মনোভাবের কারণ এবং কল্যাণ লাভে সহায়ক হয়। এ জন্যই কুরআনের অন্য জায়গায় আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা ধৈর্য এবং নামাজের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর। (সুরা বাক্বারা : আয়াত ১৫৩)

নামাজ এবং ধৈর্য দুটিই অদৃশ্যমান বস্তু। যা ধরা, ছোঁয়া যায় না। যা একান্তভাবে আল্লাহর জন্যই করা হয়। তাই মানুষ দুনিয়ার জিন্দেগিতে সার্বিকভাবে আল্লাহ তাআলার একান্ত সাহায্য লাভ করে থাকে।

পরকালীন কল্যাণে নামাজ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে বক্তি যথাযথভাবে নামাজ আদায় করবে, কিয়ামাতের দিন নামাজ তার জন্য নূর হবে; হিসাবের সময় দলিল হবে এবং নাজাতের ওসিলা হবে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি যথাযথভাবে নামাজ আদায় করবে না, নামাজ তার জন্য নূর, দলিল এবং নাজাতের ওসিলা হবে না। অধিকন্তু তার হাশর হবে কারূন, ফিরাউন, হামান এবং উবাই ইবনে খালফের সঙ্গে। (মুসনাদে আহমাদ, বাইহাকি, মিশকাত)

পরকালের পুরস্কার প্রদান নামাজের হিসাব-নিকাশের ওপর ভিত্তি করেই হবে। এ কারণেই বিশ্বনবি বলেছেন, ‘কিয়ামাতের সর্বপ্রথম বান্দার নামাজের হিসাব গ্রহণ করা হবে।’ সুতরাং কিয়ামতের দিন নামাজের বিষয়ে যারা ইতিবাচক হিসাব দিতে পারবে তাদের জন্য আল্লাহর তরফ থেকে বান্দাকে উপহার দেয়া হবে জান্নাত। আর যারা ব্যর্থ হবে তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের কঠিন শাস্তি।

হাদিসে আরো বলা হয়েছে যে, কেউ নামাজের হিসাব সঠিকভাবে দিতে পারলে তার অন্যান্য আমলও শুদ্ধ বলে পরিগণিত হবে। কিন্তু নামাজের হিসাব দিতে গিয়ে কেউ ব্যর্থ হলে তার অন্যান্য আমলও অশুদ্ধ হবে।

তাই দুনিয়া ও পরকালের কল্যাণ লাভে নামাজ আদায়ের মাধ্যমে বান্দা আল্লাহ তাআলাকে স্মরণ করবে। তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাবে। এ জন্য আল্লাহ তাআলাও তাঁর বান্দাকে পাপরাশি ক্ষমা করে জান্নাত দানের মাধ্যমে পুরস্কৃত করার ঘোষণা দিয়েছেন। উভয় জগতের সফলতার জন্য নামাজের সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে বান্দার জন্য আরও কিছু নির্দেশ এসেছে। আল্লাহ তাআলা বলেন-

‘আমি তোমাদের সঙ্গে আছি, তোমরা যদি নামাজ পড়, জাকাত দাও, আর আমার রাসুলদের বিশ্বাস কর ও তাদেরকে সাহায্য কর এবং আল্লাহকে উত্তম ঋণ প্রদান কর, তাহলে তোমাদের পাপরাশি অবশ্যই মোচন করব এবং নিশ্চয় তোমাদেরকে বেহেশতে প্রবেশাধিকার দান করব; যার পাদদেশে নদীমালা প্রবাহিত। এরপরও তোমাদের মধ্যে যে অবিশ্বাস করবে সে সরল পথ হারাবে। (সুরা মায়িদা : আয়াত ১২)

সুতরাং কোনো অবস্থায় নামাজ থেকে বিচ্যুত হওয়া যাবে না। আল্লাহ তাআলা সমগ্র মুসলিম উম্মাহকে দুনিয়া ও পরকালের সর্বোচ্চ কল্যাণ লাভে সঠিকভাবে তাঁর হুকুম পালনে নামাজ আদায়ের তাওফিক দান করুন। আমিন।



মন্তব্য চালু নেই