দুর্নীতির আশঙ্কায় টাকা পাচ্ছে না টেলিটক, ক্ষুব্ধ তারানা

দুর্নীতি হতে পারে- এমন আশঙ্কা থেকে নেটওয়ার্কের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণে অনুমোদনের আট মাসেও টেলিটককে ৬৭৫ কোটি টাকা দেয়নি অর্থমন্ত্রণালয়। একে গাফিলতি আখ্যা দিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম।

বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এক অনুষ্ঠানে প্রতিমন্ত্রী এ কথা বলেন। তিনি জানান, এই টাকা পেতে টেলিটক পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছে।

২০০৪ সালে সরকারি মালিকানাধীন টেলিযোগাযোগ কোম্পানি টেলিটক যাত্রা শুরু করে। সে সময় বেসরকারি অন্য মোবাইল ফোন অপারেটরের তুলনায় টেলিটকের সুবিধা এবং কলরেট দুটোই ছিল কম। তার পরও এক যুগে টেলিটকের অগ্রগতি হতাশাজনক।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়ে তারানা হালিম টেলিটক ঘুরে দাঁড়াবে বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন। আর নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণে গত আগস্টে একনেকে অনুমোদন হয় ৬৭৫ কোটি টাকা। এই টাকা টেলিটকের নেটওয়ার্কের উন্নতি ও গ্রাহক সেবা বৃদ্ধির কাজে ব্যবহৃত হওয়ার কথা। এতে টেলিটক অন্য যেকোন বেসরকারি মোবাইল অপারেটর কোম্পানির চেয়ে অনেক বেশি গ্রাহকসেবা দিতে সক্ষম হবে বলে দাবি করা হয়েছিল।

প্রতিমন্ত্রী জানান, ‘দেশের সবচেয়ে ভাল সেবাদানকারী মোবাইল কোম্পানির টাওয়ার রয়েছে ১২ হাজারেরও বেশি, সেখানে টেলিটকের রয়েছে মাত্র তিন হাজার সাতশ। ফলে সেবার মান খারাপ হবে এটাই স্বাভাবিক।’

কিন্তু যাত্রা শুরুর পর পর টেলিটকে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছিল-এই যুক্তি দেখিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় টাকা বরাদ্দ দিতে আপত্তি তুলছে। তবে টেলিটককে টাকা দিলে কোনো ধরনের দুর্নীতি হবে না নিশ্চয়তা দিয়ে টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতি আমার অনুরোধ টেলিটকের প্রতি আস্থা রাখুন, আমার জানামতে টেলিটকের সকল কর্মকর্তারা ভাল, আগামী দিনে তারা ভাল কিছু করে প্রমাণ করবে বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।’

তারানা হালিম বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী টেলিটককে মাতৃসূলভ ব্যবহার দেখিয়ে টেলিটক বিভাগের জন্য এ পরিমাণ টাকা অনুমোদন দিয়েছেন, কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয় আমাদের বলেছেন টেলিটকে এই টাকা দিলে দুর্নীতি হবে। আমি পরিষ্কারভাবে বলতে চাই- আপনারা টাকা দিন আমি নিজে এই টাকার তদারকি করবো। এক টাকার দুর্নীতিও হতে দেব না।’ তারানা বলেন, ‘টেলিটকের প্রতি বিগত সময়ে যেসব নির্দেশনা আমরা দিয়েছি তারা তার শতভাগ মেনে চলেছে। ফলে তাদের জন্যে বরাদ্দকৃত টাকা দিয়ে টেলিটকের অগ্রযাত্রায় সহায়তা অত্যন্ত জরুরি বলে আমি মনে করি।’

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বিগত সময়ে টেলিটক কত টাকা দুর্নীতি করেছে, সেই বিবেচনায় এখন টেলিকটকে টাকা দেবেন না তাহলে টেলিটক এগিয়ে যাবে কি করে? আমরা মনে করি অনুমোদিত টাকা পেলে টেলিটক নিজের পায়ে দাড়াঁতে পারবে।’

টেলিটক প্রতিমাসে তিনটি করে গ্রাহকসেবা কেন্দ্র উদ্বোধন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর অংশ হিসেবে আজ টেলিকনফারেন্সের মাধ্যমে জয়পুরহাট, নওগাঁ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের গ্রাহক সেবাকেন্দ্র উদ্বোধন করেন তারানা হালিম।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ২০০৫ সালে টেলিটকের যাত্রার সময় মাত্র ৬৭৩ কোটি টাকায় কোনরকম হামাগুড়ি দিয়ে আজ অবদি চলছে। এরপর আর কখনো এই খাতে টাকা অনুমোদন দেয়া হয়নি। টেলিটক নিজের টাকা দিয়ে টাওয়ার বৃদ্ধি, গ্রাহক সেবা তৈরি ও লাখ লাখ সিম বিতরণ করেছে। উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের একাদশ শ্রেণির ছাত্র/ছাত্রীদের উপবৃত্তি প্রদানের জন্য সারাদেশে প্রায় আড়াই লাখ সিম বিনামুল্যে বিতরণ করেছে যা এই মাসের শেষ নাগাদ শেষ হবে।

ডাকটিকিট উদ্বোধন

সভায় বাংলা নববর্ষ-১৪২৪ উপলক্ষে ডাক বিভাগ ১০ টাকা মূল্যমানের দুইটি স্মারক ডাকটিকিট, ৫০ টাকা মূল্যমানের ১টি স্যুভেনির, ১০টাকা মূল্যমানের একটি উদ্বোধনী খাম ও পাঁচ টাকা মূল্যমানের ডাটাকার্ড প্রকাশ করেন।

সভায় ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিবসহ মন্ত্রণালয়ের উর্ধতন কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যাবস্থাপনা পরিচালক কাজী গোলাম কুদ্দুস সহ কোম্পানির উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।



মন্তব্য চালু নেই