দুই স্কুলছাত্রীর দাম ৭ লাখ টাকা

জেলার সুবলপুরে দুই স্কুলছাত্রীকে ৭ লাখ টাকায় বিক্রি করা হয়েছে। গ্রামের হতদরিদ্র দুটি পরিবারে এখন শুধুই আহাজারি। একই গ্রামের নারী পাচারকারী মোজামের খপ্পরে পড়ে নবম শ্রেণির স্কুলছাত্রী ফরিদা ও তার বান্ধবী টুনু এখন ভারতীয় দালালদের বন্দিশিবিরে।

মেয়েকে খুঁজতে গিয়ে স্কুলছাত্রী ফরিদার মা রাহিমা খাতুন ও টুনুর মা রোকেয়া খাতুনও পাচারকারীদের খপ্পড়ে পড়েন। তবে মুন্সীপুর বিজিবি ক্যাম্পের হাবিলদার তোতা মিয়ার নেতৃত্বে অভিযানে রাহিমাকে উদ্ধারসহ তিন পাচারকারীকে আটক করা হয়।

তবে ভারতে পাচার হয়ে যাওয়া দুই কিশোরীর ভাগ্যে কী ঘটছে, সে দুশ্চিন্তায় তাদের বাড়িতে নাওয়া-খাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। তাদের ফিরে আসার জন্য পথ চেয়ে পরিবারের সবার নির্ঘুম রাত কাটছে।

পাচারের শিকার দুই কিশোরী ভারত থেকে মোবাইল ফোনে বারবার জানাচ্ছে যে তারা ভারতে চিরদিনের জন্য বন্দি হয়ে গেছে, সেখান থেকে তাদের আর ফেরার পথ নেই।

মানব পাচারের শিকার দুই স্কুলছাত্রীর স্বজনরা জানান, গত বৃহস্পতিবার দামুড়হুদা পাইলট বালিকা স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির ছাত্রী ফরিদা খাতুন (১৫) প্রতিদিনের মতো তার নিজ গ্রাম থেকে স্কুলে আসার উদ্দেশে বাড়ি থেকে বের হয়। পথে একই গ্রামের হানেফের মেয়ে তার বন্ধবী টুনু খাতুনকে (১৬) সঙ্গে নিয়ে দামুড়হুদায় আসে।

এখান থেকেই একই গ্রামের নারী পাচারকারী দলের সদস্য মোজাম ফরিদা ও টুনুকে কৌশলে মোবাইল ফোনে ডেকে নিয়ে যায়। এরপর মোজাম তাদের চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে মুন্সীপুর সীমান্তে নিয়ে যায়। ওই দিনই সকাল ১০টার দিকে মুন্সীপুর থেকে ভারতের হাটখোলা গ্রাম দিয়ে ভারতীয় মানব পাচারকারী দালালদের কাছে ৭ লাখ টাকায় দুই স্কুলছাত্রীকে বিক্রি করে দেয়। ফরিদা উপজেলার সুবলপুর গ্রামের আসমানের মেয়ে।

ঘটনা জানার পর পাচারকারীদের হাত থেকে দুই স্কুলছাত্রীকে উদ্ধারের জন্য শনিবার সকালে ফরিদার মা রাহিমা খাতুন ও টুনুর মা রোকেয়া খাতুনসহ তার স্বজনরা মুন্সীপুর সীমান্তের কাছে গেলে সেখানে ওঁত পেতে থাকা নারী পাচারকারী দলের সদস্যরা রাহিমা খাতুন ও রোকেয়া খাতুনকে জোরপূর্বক ভারতে পাচারের চেষ্টা করে। এ সময় তারা চিৎকার করতে থাকলে সীমান্তে টহলরত মুন্সীপুর বিজিবি তিন পাচারকারীকে আটক করে এবং রাহিমা ও রোকেয়াকে উদ্ধার করে।

এ ব্যাপারে গত ৮ আগস্ট দামুড়হুদা মডেল থানায় বিজিবির হাবিলদার তোতা মিয়া বাদী হয়ে আটক তিন পাচারকারীসহ অজ্ঞাতনামা আরো একজনের নামে মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করেছেন।

গত ১০ আগস্ট দুই কিশোরীর স্বজনরা মোজামকে আসামি করে দামুড়হুদা মডেল থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। তবে দুই স্কুলছাত্রী পাচারের বিষয়ে দামুড়হুদা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শিকদার মশিউর রহমান কিছুই জানেন না। অপরদিকে তার স্কুল কর্তৃপক্ষও এ বিষয়ে নির্বিকার। মূল হোতা মোজাম ও তার পরিবারের লোকজন পলাতক রয়েছে।

দামুড়হুদা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ শিকদার মশিউর রহমান জানান, গত রোববার চুয়াডাঙ্গা আদালতে ভিকটিম রাহিমা খাতুনের ১৬৪ ধারার জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়েছে।



মন্তব্য চালু নেই