দিল্লি বেড়াতে গেলে যে ১০ টি স্থান অবশ্যই দেখে আসবেন!

দিল্লি, ইন্ডিয়ার রাজধানী। পুরাতন শহর এই দিল্লির রয়েছে অনেক ইতিহাস। অনেক ঐতিহ্যবাহী মসজিদ, কেল্লা, স্থাপত্য রয়েছে এখানে। তাই পুরাতন দিল্লি অথবা নয়া দিল্লি, উভয় স্থানেই বেড়ানোর আছে অনেক জায়গা।

আসুন জেনে নিই দিল্লির এমন ১০ টি জায়গার কথা যেখানে অবশ্যই বেড়াবেন। মজার ব্যাপার হল, এই তালিকার বেশির ভাগ জায়গাই আপনি বেড়াতে পারবেন বিনামূল্যে।

লাল দূর্গ বা Red fort:
দিল্লির অনেক পুরাতন আর ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্য লাল দূর্গ। দূর্গটি মোঘল সাম্রাজ্যের কথা মনে করিয়ে দেওয়া হয়। দূর্গের দেয়াল ২ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত। লাল ইটের এই দেয়াল তৈরি করা হয় ১৬৩৮ সালে যাতে শত্রুর আক্রমণ থেকে দূর্গকে রক্ষা করা যায়। যদিও মোঘলরা শিখ এবং পরবর্তীতে বিটিশদের হাত থেকে একে রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়।পর্যটকদের মনে মোঘল সাম্রাজ্যের সেই প্রাচীন অনুভুতি এনে দিতে প্রতি সন্ধ্যায় একটি লাইট শো হয় যেখানে ইতিহাসের বেশ কিছু ঘটনা তুলে ধরা হয়।

অবস্থান- চাঁদনী চকের বিপরীতে, পুরাতন দিল্লি

প্রবেশ মূল্য- বিদেশী পর্যটকদের জন্য ২৫০ রুপী, দেশী পর্যটকদের জন্য ১০ রুপী, ১৫ বছরের নীচে শিশুদের জন্য বিনামূল্যে প্রবেশের ব্যবস্থা রয়েছে।
সময়- ৯টা থেকে ৬টা। সোমবার বন্ধ।

জামা মসজিদ বা Jama Mosque:
পুরাতন দিল্লির আরেকটি চমৎকার স্থাপনা হল জামা মসজিদ। এটি ইন্ডিয়ার সবচেয়ে বড় মসজিদ। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, এই মসজিদের অঙ্গনে একত্রে ২৫০০ জন মুসলমান ব্যাক্তি নামাজ পড়তে পারেন। মসজিদটি তৈরি করতে সময় লেগেছে ১৩ বছর। ১৬৫০ সালে এর নির্মাণ কাজ শেষ হয়। মসজিদের দক্ষিণ মিনারের চূড়ায় ওঠা যথেষ্ঠ শ্রমসাধ্য। কিন্তু উপর থেকে আপনি যে অসাধারণ দৃশ্য দেখতে পাবেন তা আপনার ক্লান্তি দূর কর দেবে নিমিষে।মসজিদে প্রবেশের ক্ষেত্রে পোশাক পরিধানের কিছু নিয়ম রয়েছে। মানে আপনাকে অবশ্যই মাথায় কাপড় দিয়ে সম্পূর্ণ হাত এবং পা ঢেকে প্রবেশ করতে হবে। তবে চিন্তার কিছু নেই। পোশাক ওখানেই পাওয়া যাবে।
অবস্থান- চাঁদনী চকের বিপরীতে, পুরাতন দিল্লি, লাল দূর্গের কাছেই।
প্রবেশ মূল্য- ফ্রি, কিন্তু ক্যামেরা নিলে ৩০০ রুপী দিতে হয়।
সময়- প্রতিদিনই খোলা থাকে, শুধু নামাজের সময় প্রবেশ নিষেধ। সূর্যাস্তের আগে বন্ধ করে দেওয়া হয়।

চাঁদনী চক:
পুত্রাতন দিল্লির প্রধান রাস্তা হল চাঁদনী চক। গাড়ি, সাইকেল, রিক্সা, বাজার, পশু-পাখি কি নেই এখানে। জায়গাটিতে ভীষণ ভিড়, হইচই, বিশৃঙ্খলা। এর মাঝেই খুঁজে নিতে হবে আনন্দ। বিশেষ করে আপনি যদি দিল্লির স্ট্রীট ফূডের স্বাদ নিতে চান তাহলে অবশ্যই যাবেন এখানে। এছাড়াও দিল্লির অন্যতম বড় মার্কেট হওয়ায় এখান থেকেই কিনতে পারবেন মানসম্পন্ন কাপড়, গয়না ইত্যাদি।

অবস্থান- চাঁদনী চকের বিপরীতে, পুরাতন দিল্লি, লাল দূর্গের কাছে।

স্বামী নারিয়ণ আকশারধাম:
এটি তেমন পুরাতন স্থাপত্য নয়। ২০০৫ সালে BAPS স্বামী নারায়ণ সংস্থা স্পিরিচুয়াল অর্গানাইজেশন এটি নির্মাণ করেন। ভারতীয় সংস্কৃতিকে তুলে ধরার জন্য এটি নির্মান করা হয়। মন্দিরের মঠগুলোতে ব্যবহার করা হয়েছে চমকপ্রদ গোলাপি পাথর আর সাদা মার্বেল। ভেতরে রয়েছে বিশাল বাগান আর নৌকা চড়ার ব্যবস্থা।মন্দিরের ভেতরে মোবাইল এবং ক্যামেরা নিয়ে প্রবেশ করা নিষিদ্ধ।

অবস্থান- নদীয়া মোড়ের কাছে, নয়া দিল্লি।
প্রবেশ মূল্য- ফ্রি, তবে বিশেষ প্রদর্শনীর ক্ষেত্রে টিকেট নিতে হয়।
সময়- মঙ্গলবার থেকে রবিবার সকাল ৯.৩০ থেকে সন্ধ্যা ৬.৩০ পর্যন্ত। সোমবার বন্ধ।

বাদশা হুমায়ূনের কবর:
১৫৭০ সালে মুঘল সাম্রাজ্যের ২য় বাদশাহ হুমায়ূনের কবর দেয়া হয় একটি রাজমহল নির্মাণ করে। ভারতবর্ষে এটিই প্রথম এ ধরণের স্থাপত্য। এরপর সাড়া ভারত জুড়ে মুঘলরা এরকম আরো অনেক স্থাপত্য নির্মাণ করেছেন। বাদশা হুমায়ূনের কবরটি ভবনের বিশাল কমপ্লেক্স জুড়ে করা হয়েছে। ভেতরে খুব সুন্দর একটি বাগান রয়েছে।

অবস্থান- পূর্ব নিজামুদ্দীন, নতুন দিল্লি
প্রবেশ মূল্য- বিদেশী পর্যটকদের জন্য ২৫০ রুপী, দেশী পর্যটকদের জন্য ১০ রুপী, ১৫ বছরের নীচে শিশুদের জন্য বিনামূল্যে প্রবেশের ব্যবস্থা রয়েছে।
সময়- সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রতিদিন। তবে বাগানটি বিকেলে দেখতেই বেশি ভালো লাগে।
কুতুব মিনার:
পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু মিনার হচ্ছে দিল্লির এই কুতুব মিনার। এটি শুরুর দিকের ইন্দো-ইসলামিক আর্কিটেকচারের একটি অনন্য নিদর্শন। এটি নির্মিত হয় ১২০৬ সালে, নির্মানের কারণ এখনো একটি রহস্য। অনেকে মনে করেন এটি ভারতবর্ষে মুসলিমদের আগমণের স্মারক। আবার অনেকে মনে করেন এটি ছিল বিশ্বাসীদের প্রার্থণার পবিত্র স্থান। এর স্থাপত্য শৈলীর অনন্যতা সকল পর্যটকদের আকর্ষণ করে।
অবস্থান- মেহরাউলি, দক্ষিণ নতুন দিল্লি
প্রবেশ মূল্য- বিদেশী পর্যটকদের জন্য ২৫০ রুপী, দেশী পর্যটকদের জন্য ১০ রুপী, ১৫ বছরের নীচে শিশুদের জন্য বিনামূল্যে প্রবেশের ব্যবস্থা রয়েছে।
সময়- সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রতিদিন।

লোদী গার্ডেন:
শহুরে জীবনে লোদী গার্ডেন যেন প্রশান্তির ছোঁয়া। ক্লান্ত অবসান্ত মনকে বিশ্রাম দিতে এখানে ভীড় করেন পর্যটকেরা। এই বিশাল বাগানটি নির্মিত হয়েছিল ১৯৩৬ সালে। ১৫ এবং ১৬ শতকের শাসকদের কবরকে ঘিরে এই বাগানের বিস্তৃতি। সকালে যারা জগিং করেন বা যোগ ব্যায়াম করেন নিয়মিত তারা এখানে আসেন। তরুণ যুগলদেরও প্রিয় জায়গা এটি।
অবস্থান- লোদী রোড, হুমায়ূনের কবরের কাছে।
প্রবেশ মূল্য- ফ্রি
সময়- সকাল ৮ টা থেকে প্রবেশ করা যায়, তবে রবিবারে তুলনামূলক ভীড় থাকে।

গান্ধী স্মৃতি:
গান্ধীজী কে যেখানে আততায়ীরা হত্যা করে সেখানেই নির্মিত হয়েছে গান্ধী স্মৃতি। ১৯৪৮ সালের ৩০ জানুয়ারি নিহত হন তিনি। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ১৪৪ দিন তিনি এই বাড়িতে অবস্থান করেছেন। তার ঘরটি ঠিক একই রকম রাখা হয়েছে যেমন তিনি ছেড়ে গিয়েছিলেন। যেখানে তিনি প্রার্থণা করতেন সেই জায়গাটিও উন্মুক্ত রাখা হয়েছে সবার জন্য। তার স্মৃতি বিজড়িত বিভিন্ন পেইন্টিং, ছবি, আসবাব রাখা আছে প্রদর্শনের জন্য।
অবস্থান- ৫ টিস জানুয়ারি মার্গ, মধ্য দিল্লি
প্রবেশমূল্য- ফ্রি
সময়- সকাল ১০ টা থেকে বিকেল ৫ টা। মঙ্গলবার থেকে রবিবার।

ইন্ডিয়া গেট:
ব্রিটিশদের হয়ে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে প্রাণ হারানো শহীদদের স্মরণে এই স্থাপনাটি নির্মিত হয়। রাতে এখনে আলোর বন্যা বয়ে যায়। গেটের আশপাশের এলাকা একটি গ্রীশ্মকালীন বিকেল কাটানোর জন্য আদর্শ। দিল্লি বেড়াতে গেলে এই অনন্য স্মৃতি স্থাপনা দেখতে যান না এমন পর্যটক মেলা ভার।

অবস্থান- মধ্য দিল্লি
প্রবেশমূল্য- ফ্রি
সময়- সবসময় খোলা

বাহাই বা Lotus Temple-
বাহাই মন্দিরটি পদ্ম মন্দির হিসেবেও পরিচিত। কারণ এটির আকৃতি পদ্ম ফুলের মত। রাতের আলোতে এটি দেখতে বেশ ভাল লাগে। মন্দিরটি সাদা মার্বেলের তৈরি। বাহাই ধর্মাবলম্বীদের মন্দির এটি। তারা সমস্ত মানুষের মাঝে ভালোবাসা, সৌহার্দ্রে বিশ্বাস করেন। যে কেও এখানে এসে প্রার্থনা করতে পারেন। মন্দির ঘিরে থাকা পুকুর আর বাগানও বেশ চমৎকার।

অবস্থান- দক্ষিণ নতুন দিল্লি
প্রবেশমূল্য- ফ্রি
সময়- সকাল ৯ টা থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত।



মন্তব্য চালু নেই