চার লেনেই হচ্ছে বাংলাদেশ-মিয়ানমার মৈত্রী সড়ক

বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সীমান্তে মৈত্রী সড়ক নির্মাণের খবরে স্থানীয়ভাবে প্রাণ চাঞ্চল্যে দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি একনেকের সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুই কিলোমিটারের এ সড়কটি দুই লেনের স্থলে চার লেন করাসহ দ্রুত বাস্তবায়নের নির্দেশ দেয়ায় এলাকাবাসীরা আনন্দে আত্মহারা হয়ে উঠেছে।

প্রকল্পটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রকৌশল নির্মাণ ব্যুরো বা ইসিবি বাস্তবায়ন করবে বলে জানা গেছে। “বাংলাদেশ-মিয়ানমার মৈত্রী সড়ক (বালুখালী-ঘুমধুম) বর্ডার রোড নির্মাণ” শীর্ষ প্রকল্পটি সম্প্রতি পরিকল্পনা কমিশন থেকে অনুমোদন লাভ করে। উখিয়ার বালুখালী কাস্টম্স ঘাট থেকে পার্বত্য বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি ঘুমধুম সীমান্ত দিয়ে এ সড়কটি মিয়ানমারের সাথে সংযুক্ত হবে। এতে প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৫৫ কোটি টাকা।

চলতি ২০১৫-১৬ অর্থ সাল থেকে শুরু হওয়া এ প্রকল্পটি ২০১৭ সালের জুন নাগাদ বাস্তবায়ন করা হবে। প্রকল্পটি গত ২৫ আগষ্ট জাতীয় অর্থনৈতিক নির্বাহী পরিষদ বা একনেক এর সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়। পরবর্তীতে এটি বাংলাদেশ, ভারত, চীনও মিয়ানমারের মধ্যকার প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক করিডোর (বিসিআইএম) এর সাথে এবং এশিয়ান হাইওয়ের সাথে সংযুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে সংশিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

গত বছরের ডিসেম্বরে উল্লিখিত চার দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীগণ এ ব্যাপারে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেন। বাংলাদেশ, মিয়ানমার ছাড়াও চীন ও থাইল্যান্ডসহ দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলোর সঙ্গে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপনে বালুখালী-ঘুমধুম বর্ডার রোড নির্মাণে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সরজমিনে স্থানীয় লোকজন সরকারের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে।

স্থানীয় ঘুমধুম ইউনিয়নের সাবেক সদস্য আবদুস সোবহান, প্রবীণ সমাজ সেবক আলী চান্দ মেম্বার বলেন, ৫০ এর দশক পর্যন্ত বালুখালী ও ঘুমধুম ছিল বার্মাসহ হ্নীলা-টেকনাফের সাথে নদী পথে যাতায়াতের কেন্দ্রবিন্দু। বালুখালী পর্যন্ত এবং ঘুমধুম হয়ে মিয়ানমার মংডু-আকিয়াব পর্যন্ত বৃটিশ ট্রাংক রোড থাকলেও সেতু, কালভার্টের অভাবে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ ছিল না। তারা বলেন, প্রায় অকেজো হয়ে পড়া প্রাচীন যাতায়াত ও যোগাযোগ ব্যবস্থা পুনঃস্থাপন করার সরকারি উদ্যোগ দেশের স্বার্থে খুবই সময়োপযোগী।

উল্লেখ্য, বিগত ২০০৪ সালে তৎকালীন সরকার পূর্বমূখী সম্পর্ক জোরদারের লক্ষ্যে ১৩৩ কিঃমিঃ দৈর্ঘ্যরে দুই লেনের বাংলাদেশ-মিয়ানমার মৈত্রী সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছিল এবং বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিরা উভয় দেশের সীমান্তে যৌথ ভিত্তি ফলকও স্থাপন করেছিলেন। মিয়ানমারের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জেনারেল খিন নিউন্ট ৪০ সদস্যের প্রতিনিধি দল নিয়ে ২০০৪ সালের ৩-৫ এপ্রিল ৩ দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে বাংলাদেশে এসেছিলেন। সফরকালে উভয় দেশের মধ্যে (১) কৃষি ক্ষেত্র, (২) দুই দেশের মধ্যে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপনের উদ্দেশ্যে জরিপ পরিচালনা করতে যৌথ আর্থিক ও কারিগরি টাস্কফোর্স গঠন সংক্রান্ত ও (৩) বাংলাদেশী কূটনীতিক ও সরকারি পাসপোর্টধারীদের বিনা ভিসায় মিয়ানমার সফর সংক্রান্ত তিনটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল।

উক্ত চুক্তির প্রস্তাব অনুযায়ী বাংলাদেশ-মিয়ানমার মৈত্রী সড়কের দৈর্ঘ্য ১৩৩ কি:মি:, ২ লেনের। এতে বাংলাদেশ অংশে (রামু- ঘুমধুম) ৩৬ কি:মি:। মিয়ানমার অংশে (ঘুমধুম ঢেকিবনিয়া সীমান্ত থেকে বলিবাজার) ৯৭ কি:মি:। বাংলাদেশ সরকার শুভেচ্ছার নিদর্শন হিসাবে পুরো সড়কটি ৬০৫.৩২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করে দেওয়ার কথা ছিল। অথচ সেটি হয়নি। সে সময় ৫ এপ্রিল ২০০৪ সালে মিয়ানমার প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশের যোগাযোগমন্ত্রী রামু এবং ঘুমধুম সীমান্তের উভয় পাড়ে যৌথ ভিত্তি ফলকও স্থাপন করেছিলেন।

কক্সবাজার সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রানা প্রিয় বড়ুয়া বলেন, উখিয়ার “বালুখালী থেকে সীমান্তে ঘুমধুম পর্যন্ত বাংলাদেশ-মিয়ানমার মৈত্রী বর্ডার রোড নির্মাণ” প্রকল্পটি সম্প্রতি একনেক এর বৈঠকে পাশ হয়েছে। অর্থ বরাদ্দ সাপেক্ষে প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ দ্রুত সড়ক ও জনপথ বা সওজের তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৬ ইসিবি বাস্তবায়ন করবে।

বাংলাদেশ সেনা বাহিনীর নির্মাণ প্রকৌশল ব্যুরোর সদর দপ্তরের এস ডব্লিউ ও কর্ণেল আরিফ বলেন, ‘সকলে জানেন সম্প্রতি একনেকের সভায় প্রধানমন্ত্রী অধিক আগ্রহ সহকারে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, ভবিষ্যৎ গুরুত্বের কথা বিবেচনা করে সভায় উত্থাপিত দুই লেনের স্থলে চার লেনে উন্নীত করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

ইতিপূর্বে সেনা বাহিনীর প্রস্তাবিত সড়কের সরজমিনে সবকিছু যাচাই বাছাই করে চার লেন ধরে প্রাককলন, ডিজাইন সহ সার্বিক নির্মাণ প্রস্তাবনা পরিকল্পনা কমিশনে পেশ করা হয়। প্রস্তাবনাটি পরিকল্পনা কমিশন সংশোধিত আকারে চার লেনের স্থলে দুই লেন করার জন্য একনেক সভায় উপস্থাপন করে।’ তিনি বলেন, একনেকের সভায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রকল্পটি অনুমোদন দেন এবং দুই লেনের স্থলে চার লেনের সড়ক বাস্তবায়নের নির্দেশ দেন। বর্তমানে আবার সেনাবাহিনীর প্রকৌশল কোর থেকে প্রকল্পের নকশা, ডিজাইন, প্রাক্কলন ইত্যাদি সংশোধন করে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হবে। সেখান থেকে অনুমোদনের পর অর্থ বরাদ্দ সাপেক্ষে প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু করা হবে। তিনি আরো বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় সামান্য কিছু জমি অধিগ্রহণের পর চার লেন সড়কের উভয় পাশে ছোট গাড়ি চলাচলের জন্য আলাদা লেনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। আশা করছি, সড়কটি নির্মাণ শেষ হলে এটি আর্কষণীয় ও দৃষ্টিনন্দন সড়ক হবে।



মন্তব্য চালু নেই