কুড়িগ্রামে পানিবন্দি সাড়ে ৬ লাখ মানুষ : দুর্ভোগ চরমে

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি : কুড়িগ্রামে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি নেই। ১২তম দিনে বানভাসির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে সাড়ে ৬ লাখে। পানিবন্দী মানুষের ভোগান্তি পৌঁছেছে চরমে। জেলার ৭৩টি ইউনিয়নের মধ্যে ৫৭টি ইউনিয়নের অধিকাংশ মানুষ বন্যার সাথে লড়াই করছে। খাদ্য ও পানির তীব্র সংকটের পাশাপাশি বন্যার্ত মানুষ পড়েছে চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে। নেই নিরাপদে সন্তান প্রসবের কোন ব্যবস্থা। শুক্রবার চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি ছিল বিপদসীমার ৯৭ সেন্টিমিটার উপরে এবং কুড়িগ্রাম সেতু পয়েন্টে ধরলা নদীর পানিছিল বিপদসীমার ৮৮ সেন্টিমিটার উপর।

রৌমারী ও রাজীবপুর উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রুপ ধারণ করেছে। ভারত থেকে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে শুক্রবার সীমান্ত এলাকায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। চরনতুন বন্দরে অবস্থিত রৌমারী স্থলবন্দর, গবাদি পশুর করিডর ও রাজিবপুরের বালিয়ামারী বর্ডার হাট ডুবে গেছে। সেই সীমান্তে পাঁচটি বিজিবি ক্যাম্পের চারপাশে পানি উঠেছে। ফলে বিজিবি জোয়ানরা এখন পানি বন্দি।

রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন তালুকদার জানান, কয়েকটি মিডিয়ায় রৌমারীকে দুর্যোগপূর্ণ এলাকা ঘোষনা করা হয়েছে মর্মে যে রিপোর্ট প্রকাশ করা হচ্ছে তা পুরোপুরি মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর। প্রকৃত পক্ষে প্রশাসনের পক্ষ থেকে এরকম কোন ঘোষনা দেয়া হয়নি। বন্যা পরিস্থতি সরকারের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

চিলমারী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শওকত আলী বীরবিক্রম জানান, চিলমারীতে বুরুজের পাড় নামক স্থানে শুক্রবার ভোরে কাঁচকোল বাজার সড়ক ভেঙ্গে প্রায় ১০টি গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হয়। পানির তোড়ে ভেঁসে গেছে ৮টি ঘর। এতে প্রায় দেড় হাজার হেক্টর জমির ফসল এবং নতুন করে ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বন্ধ হয়ে গেছে ব্যাপারীর বাজার এলাকার সাথে কাঁচকোল বাজার এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা। বাড়িঘর ভেসে যাওয়ায় খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন যাপন করছে ঐ পরিবার গুলো।

জেলা বন্যা কন্ট্রোল রুমের দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তা অব্দুল মোত্তালিব মোল্লা জানান, জেলার ৯ উপজেলার ৫৭টি ইউনিয়নের ৭২৮টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বন্যায় ১ হাজার ১৮৭ বর্গ কিলোমিটার এলাকা পানিতে ডুবে আছে। পানিবন্দী মানুষের সংখ্যা প্রায় ৬ লাখ। এছাড়াও নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ২২ হাজার ৬৭৫জন মানুষ। মৃত গবাদি পশুর সংখ্যা ৭৭টি। ক্ষতিগ্রস্ত ব্রীজ ও কার্লভাটের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৯টিতে। ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তার সংখ্যা ৫২৫ দশমিক ৮ কিলোমিটার।

এছাড়াও ২০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত এবং ২২৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আংশিক ক্ষতি হয়েছে। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ৫৩ দশমিক ৩০ কিঃ মিটার। বাঁধের ভাঙ্গা অংশ নিয়ে পানি ঢুকে প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। এ পর্যন্ত বন্যা দুর্গত এলাকায় ৯৭৫ মে. টন চাল, ২হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার ও ২৮ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১ লাখ ৭৮ হাজার ২৯৮ জন কৃষক।

সিভিল সার্জন ডা. জয়নাল আেিবদিন জিল্লুর জানান, দুর্গত এলাকায় ৮৫টি মেডিকেল টিম চিকিৎসা সেবা দেয়ার জন্য কাজ করছে। পর্যাপ্ত মজুদ আছে স্যালাইন ও পানি বিশুদ্ধ করণ ট্যাবলেট।



মন্তব্য চালু নেই