উত্তরে ঐক্য, দক্ষিণে খোকা ফ্যাক্টর

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন (উত্তর-দক্ষিণে) নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত একক প্রার্থী হিসেবে ভোটের লড়াইয়ে মাঠে নেমেছেন মির্জা আব্বাস ও তাবিথ আউয়াল। ইতিমধ্যে শুরু করেছেন নির্বাচনী প্রচারণাও।

তবে উত্তরে তাবিথ আউয়ালের জন্য নেতা-কর্মীদের ঐক্য থাকলেও দক্ষিণে বড় হয়ে দেখা দিয়েছে ‘খোকা ফ্যাক্টর’। নির্বাচনকে সামনে রেখে আব্বাস-খোকার পুরোনো দ্বন্দ্বটি আবারো মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। যদিও বিষয়টিকে শীতল করার জন্য দলের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে বিষয়টি জানা গেছে।

বিএনপির একাধিক সূত্র জানিয়েছে, আব্বাস-খোকার পুরোনো দ্বন্দ্বটি আবারো উঠে আসে আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থীতাকে কেন্দ্র করে। প্রথম দিকে সিটি নির্বাচন নিয়ে বিএনপির কোনো আগ্রহ না থাকলেও খোকার পরামর্শে মনোনয়ন ফরম কেনেন তার অনুসারী হিসেবে পরিচিত দলের অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক আবদুস সালাম। এর পরেই ঢাকা দক্ষিণে মেয়র পদে মনোনয়ন কেনেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসও। শেষ পর্যন্ত দক্ষিণে বিএনপির সমর্থন পান মির্জা আব্বাস।

এদিকে উত্তরে আবদুল আউয়াল মিন্টু মেয়র পদে লড়বেন, তাই দলের কাউকে মনোনয়ন ফরম না তোলার জন্য বলা হয়। কিন্তু তার ভুলের কারনে শেষ পর্যন্ত প্রার্থীতা বাতিল হলে দলের সমর্থন পান তার ছেলে তাবিথ আউয়াল। মিন্টু আব্বাস একই সিন্ডিকেট হিসেবে পরিচিত। তাই দুই সিটিতে খোকা সমর্থিত কেউ না থাকায় মহানগরে খোকার আধিপত্যের শেষ দেখে ফেলছেন সমর্থকদের কেউ কেউ।

সূত্র জানায়, দীর্ঘ বছর ধরে ঢাকা মহানগর বিএনপির নেতৃত্বে ছিলেন সাদেক হোসেন খোকা। পাশাপাশি প্রায় ৯ বছর তিনি ঢাকা সিটি মেয়রের দায়িত্ব পালন করেন। সব মিলিয়ে দলের ভেতরে ও বাইরে খোকার ব্যাপক অনুসারী ও সমর্থকগোষ্ঠী রয়েছে। আন্দোলনে ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে গত বছরের ১৮ জুলাই খোকাকে সরিয়ে তাঁর বদলে মহানগর কমিটির আহ্বায়ক করা হয় মির্জা আব্বাসকে। আবদুল আউয়াল মিন্টুকে করা হয় ওই কমিটির এক নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক। মহানগর বিএনপির নেতৃত্ব এবং সিটি কর্পোরেশনের নেতৃত্ব-সবদিক দিয়ে খোকার ‘প্রতিদ্বন্দ্বি’ মির্জা আব্বাস টাইম লাইনে চলে আসায় এটি মেনে নিতে পারছেননা খোকার অনুসারীরা।

জানা গেছে, এর আগের সিটি নির্বাচনে বিএনপির মোট কাউন্সিলরের প্রায় ৯০ শতাংশই খোকার অনুসারী। এমনকি এই নির্বাচনেও কাউন্সিলর প্রার্থীতে খোকার অনুসারীদের প্রধান্য রয়েছে। এ অবস্থায় খোকা সমর্থকরা মেয়র পদে মির্জা আব্বাসকে সহযোগিতা না করলে এবং ঐক্যের জায়গায় না আসলে নেতিবাচক ফলাফল আসতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। সেজন্য সিটি নির্বাচনে বিএনপির নির্বাচন পরিচালনাকারী নাগরিক ব্যানার ‘আদর্শ ঢাকা আন্দোলনের’ স্টিয়ারিং কমিটির আহ্বায়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমাউদ্দীন আহমেদ দু’দিন আগে চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করা সাদেক হোসেন খোকাকে ফোন দিয়েছেন। তিনি খোকাকে অনুরোধ করেছেন, শিগগিরই যেন তিনি (খোকা) সংবাদ সম্মেলন করে মির্জা আব্বাসকে সমর্থন এবং কর্মীদের ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানান। যদিও খোকা এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে নীরব রয়েছেন।

খোকার অনুসারী হিসেবে পরিচিত ঢাকা দক্ষিণের একজন কাউন্সিলর প্রার্থী দাবি করেন, ‘মির্জা আব্বাসের নির্বাচন করার কোনো ইচ্ছে ছিলোনা। আবদুস সালাম মনোনয়ন ফরম তোলায় পরবর্তীতে তিনিও মনোনয়ন ফরম কেনেন। এর কারন খোকা ভাইয়ের কোনো ম্যান এখানে আসুক, তা তিনি চাননি। তিনি মহানগরের তার একক রাজনীতি আর আধিপত্য চান।’

বিভিন্ন মামলায় আত্মগোপনে থাকা বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী মির্জা আব্বাস এখন পর্যন্ত প্রচারণা নামেননি, যদিও তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী সাঈদ খোকন পুরোদমে নির্বাচনী প্রচারণায় রয়েছেন। তবে আব্বাসের স্থলে তার স্ত্রী আফরোজা আব্বাসই প্রচারণা চালাচ্ছেন। আফরোজা আব্বাস বলেন, বিএনপিতে সাদেক হোসেন খোকা-মির্জা আব্বাস গ্রুপ বলে কিছু নেই। এ দলে তাদের আলাদা কোনো অনুসারীও নেই। এ দলে সবাই শহীদ জিয়ার অনুসারী।

সিটি নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ‘ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে জয়ের ব্যাপারে আমরা শতভাগ নিশ্চিত। যেখানেই যাচ্ছি, আলহামদুলিল্লাহ জনগণের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। জনগণ ভোট দিতে পারলে আমি মির্জা আব্বাসের বিজয়ের ব্যাপারে শতভাগ নিশ্চিত।’

এদিকে ঢাকা উত্তরে তাবিথ আউয়াল প্রশ্নে মোটামুটি ঐক্যবদ্ধ আছে বিএনপির নেতা-কর্মীরা। যদিও তিনি নিজেই এখন পর্যন্ত প্রচারণা চালাচ্ছেন। তবে রোববার থেকে তার মা নাসরিন আউয়ালও প্রচারণায় নেমেছেন। বাবা আবদুল আউয়াল মিন্টুর বিরুদ্ধে মামলা থাকায় এই মুহূর্তে তিনি আত্মগোপনে আছেন। শিগগিরই জামিন নিয়ে তারও প্রচারণায় মানার কথা রয়েছে।

এদিকে বিএনপি সমর্থিত দুই প্রার্থী মির্জা আব্বাস ও তাবিথ আউয়াল ‘আদর্শ ঢাকা আন্দোলনে’র ব্যানারে নির্বাচনে অংশ নেবেন। ১৪ এপ্রিলের পর যে কোনো দিন রমনার ইঞ্জিনিয়ারস ইনস্টিটিউটে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে তাদের পরিচয় করিয়ে দেওয়া হবে বলে সূত্রে জানা গেছে। আর স্বল্প সময়ের মধ্যে নির্বাচনী ইশতেহারও নিয়ে আসবেন ঢাকার এই দুই মেয়র প্রার্থী।রাইজিংবিডি



মন্তব্য চালু নেই