অচল পয়সা থেকে কোটি টাকার হিরে!

ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের দল সোয়ানসি সিটির সমর্থকেরা যেন বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না। এই কি সেই এডার? ছয় মাস আগেও যাঁকে দুয়ো দিয়েছেন ক্রমাগত, সেই এদেরই পর্তুগালকে বসালেন ইউরোর সিংহাসনে! ইংলিশ লিগে নিজেকে হারিয়ে খুঁজে ফেরা এডারই তো এখন পাদপ্রদীপের আলোয়।

এডার নিজেও কি ভেবেছিলেন? গত বছর স্পোর্টিং ব্রাহা থেকে ৫০ লাখ পাউন্ডে সোয়ানসিতে এসেছিলেন অনেক আশা নিয়েই। কিন্তু যাঁর মূল কাজ গোল করা, হঠাৎ করে তিনিই যেন গোল করা ভুলে গেলেন। সোয়ানসির হয়ে ১৫ ম্যাচ খেলেছেন, ১৩টিই ইংলিশ লিগে, একটিতেও গোল করতে পারেননি। অমার্জনীয় কিছু সুযোগ নষ্ট করেছেন, গোলে শটই নিতে পেরেছেন মাত্র চারটি। এর মধ্যে মাত্র একটা ছিল লক্ষ্যে! একজন স্ট্রাইকারের জন্য রীতিমতো ‘লজ্জাজনক’ পরিসংখ্যান!

সোয়ানসি তাই এডারকে আর ধরে রাখতে চায়নি। এই বছরের শুরুতে পর্তুগিজ স্ট্রাইকার ধারে পাড়ি জমিয়েছেন ফ্রেঞ্চ ক্লাব লিলে। ভাগ্যিস এসেছিলেন, সেখানেই ভাগ্যের চাকা একটু একটু করে উল্টো দিকে ঘুরতে শুরু করেছে। ১৩ ম্যাচে ৬ গোল করেছেন লিলের হয়ে, মৌসুমের শেষ দিকে ক্লাবটি পাকাপাকি চুক্তিও করেছে ২৮ বছর বয়সী এই স্ট্রাইকারের সঙ্গে। ফ্রান্স তো তাঁর জন্য সবচেয়ে বড় সৌভাগ্য বয়ে আনল কাল। অতিরিক্ত সময়ে করা তাঁর একমাত্র গোলেই তো ফ্রান্সকে হারিয়ে জিতল পর্তুগাল!

কয়েক মাস আগেও ইউরোতে দলে ডাক পাওয়ার আশা হয়তো ছেড়েই দিয়েছিলেন। কিন্তু ছয় মাস আগে ফ্রান্সে আসার পর থেকেই এডারের দিগন্তে আবার আশার উজ্জ্বল সূর্য। ইউরো শুরুর আগে দুটি প্রীতি ম্যাচে গোল করে আভাস দিয়েছিলেন, সোয়ানসির দুঃস্বপ্ন পেছনে ফেলে এসেছেন।

তারপরও মূল একাদশে সেভাবে খেলারই সুযোগ পাননি। ফার্নান্দো সান্তোসের দলে নানি ও ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোই ছিলেন আক্রমণের প্রথম পছন্দ। কালও যখন রোনালদো চোট পেয়ে মাঠ ছাড়লেন, এডারের ডাক পড়েনি। কারেসমাই বদলি হিসেবে নামলেন। এডার তখনো বেঞ্চে গুনছেন অপেক্ষার প্রহর। রেনাতো সানচেজের জায়গায় যখন ৭৯ মিনিটে এডার নামলেন, অনেকেরই ভ্রু কুঁচকে গিয়েছিল। আগের চার ম্যাচে বদলি হিসেবে উপেক্ষিত এডার আর কীই–বা করতে পারবেন?

আইসল্যান্ড ও অস্ট্রিয়ার সঙ্গে পর্তুগালের গ্রুপ পর্বের প্রথম দুই ম্যাচে বদলি হয়ে নেমেছিলেন, কিন্তু চোখে পড়ার মতো কিছু করতে পারেননি। কে জানত, এডার সবকিছু জমিয়ে রেখেছিলেন সবচেয়ে বড় মঞ্চের জন্য। এডার নিজেই জানিয়েছেন, ‘ইউরোর প্রথম মিনিট থেকেই এই গোলটার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম।’

অপেক্ষা যদি এমন মধুময় হয়, তাহলে করতে ক্ষতি কী! একসময় স্ট্রাইকার হিসেবে যিনি প্রায় হয়ে গিয়েছিলেন অচল পয়সা, সেখান থেকেই এখন কোটি টাকার হিরের সমান দামি! অন্তত পর্তুগালের কাছে তো বটেই!



মন্তব্য চালু নেই