মোবাইল ফোনের প্রজন্ম কী? মোবাইল ফোনের বিভিন্ন প্রজন্মের বৈশিষ্ট্যগুলো

মোবাইল ফোনের প্রজন্ম কী? মোবাইল ফোনের বিভিন্ন প্রজন্মের বৈশিষ্ট্যগুলো

বর্তমানে আমরা যে মোবাইল ফোন ব্যবহার করি, তা মোবাইল ফোনের সৃষ্টিলগ্নে এরূপ ছিল না। সময়ের পরিবর্তনে, প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে মোবাইল ফোন বর্তমান রূপ লাভ করেছে। মোবাইল ফোনের ব্যবহার ও উন্নয়নের এক একটি পর্যায় বা ধাপকে মোবাইল ফোনের প্রজন্ম বলা হয়। একটি নতুন প্রজন্ম আসার সময় পুরোনো প্রজন্মের কিছু বৈশিষ্ট্য বিলুপ্তি ঘটে এবং নতুন প্রজন্মে কিছু নতুন বৈশিষ্ট্য সংযোজিত হয়। মোবাইল ফোনের প্রজন্মকে চারটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা:
১. প্রথম প্রজন্ম (1st Generation-1G)
২. দ্বিতীয় প্রজন্ম (2nd Generation-2G)
৩. তৃতীয় প্রজন্ম (3rd Generation r-3G)
৪. চতুর্থ প্রজন্ম (4th Generation-4G)

নিচে এসব প্রজন্মের বৈশিষ্ট্যগুলো দেওয়া হলো:

প্রথম প্রজন্মের বৈশিষ্ট্য: (১৯৮০-১৯৮৯): ১. প্রথম প্রজন্মের মোবাইলে অ্যানালগ পদ্ধতির রেডিও সিগন্যাল ব্যবহূত হতো। ২. সিগন্যাল ফ্রিকোয়েন্সি তুলনামূলকভাবে কম ছিল। ৩. চ্যানেল অ্যাক্সেস পদ্ধতি ছিল FDMA (Frequency Division Multiple Access) ৪. ব্যবহারকারী কথা বলা অবস্থায় স্থান পরিবর্তন করলে কল বিচ্ছিন্ন হয়ে যেত। ৫. প্রথম দিকের ফোনগুলো ওজনে বেশি এবং আকারে বড় হলেও ধীরে ধীরে তা হালকা এবং আকারে ছোট হতে থাকে। ৬. অর্ধপরিবাহী মেমরি ও মাইক্রোপ্রসেসরের ব্যবহার। ৭. সেলুলার নেটওয়ার্কের প্রবর্তন ঘটে। ৮. একই সেলে বা একই এলাকার অন্য মোবাইল ট্রান্সমিটার দ্বারা সৃষ্ট বাধা বা রেডিও ইন্টারফিয়ারেন্স নেই।

উদাহরণ: AMPS-Advanced Mobile Phone System. NMT- Nordic Mobile Telephone ইত্যাদি।

দ্বিতীয় প্রজন্মের বৈশিষ্ট্য: (১৯৯০-২০০০): ১. দ্বিতীয় প্রজন্মে ডিজিটাল পদ্ধতিতে রেডিও সিগন্যাল ব্যবহূত হতো। ২. চ্যানেল অ্যাক্সেস পদ্ধতি ছিলো FDMA (Frequency Division Multiple Acccess), TDMA (Time Division Multiple Access) ও CDMA (Code Division Multiple Access)। ৩. প্রথম Short Message Service বা SMS এর প্রচলন শুরু হয়। ৪. প্রথম Multimedia Message Service বা MMS এর প্রচলন শুরু হয়। ৫. Handoff সুবিধা চালু হয়। অর্থাত্ মোবাইল ব্যবহারকারী কথা বলা অবস্থায় স্থান পরিবর্তন করলেও কল বিচ্ছিন্ন হয় না। ৬. সীমিত মাত্রায় আন্তর্জাতিক রোমিং সুবিধা চালু হয়। ৭. 2G প্রযুক্তি হলো GSM ও CDMA। ৮. ফোনের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করার সুযোগ। ৯. ইন্টারনেটের জন্য প্রথমে GPRS এবং পরে EDGE প্রযুক্তি চালু হয়। ১০. GPRS এর স্পিড 50Kbit/s এবং EDGE এর স্পিড 250Kbit/s। ১১. প্রথম প্রিপেইড পদ্ধতি চালু হয়। ১২. ডেটা স্থানান্তরের গতি প্রথম প্রজন্মের চেয়ে অনেক বেশি। ১৩. ডেটা এনক্রিপশন করা হয় ডেটার নিরাপত্তার জন্য। ১৪. ডেটা আদান-প্রদানে ত্রুটি নির্ণয় এবং সংশোধন করা হয়। ১৫. ডেটা আদান-প্রদানের জন্য প্রয়োজনে চ্যানেল সংখ্যা বাড়ানো যায়।

উদাহরণ: GSM 900, GSM 1800, GSM R, CDMA 450, CDMA 2000 ইত্যাদি।

তৃতীয় প্রজন্মের বৈশিষ্ট্য: (২০০১-০৯): ১. মোবাইল প্রযুক্তি হলো WCDMA ২. ডেটা ট্রান্সমিশনের জন্য প্যাকেট সুইচিং ও সার্কিট সুইচিংয়ের ব্যবহার।
৩. ব্যাপকভাবে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। ৪. ইন্টারনেটের জন্য দ্রুতগতির EDGE (Enhanced Data Rates for Global Evoluation) প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। ৫. তৃতীয় প্রজন্মের মোবাইলের সাহায্যে মোবাইল টিভি, ভিডিও কলিং, ভিডিও অন ডিমান্ড, ভিডিও কনফারেন্স, টেলিমেডিসিন সার্ভিস, গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম (GPS) ইত্যাদি সুবিধা রয়েছে। ৬. ব্যাপকভাবে আন্তর্জাতিক রোমিং সুবিধা চালু। ৭. ভয়েস এবং ডেটা ট্রান্সমিশনে ডিজিটাল সিস্টেমের ব্যবহার। ৮. বিকল্প পদ্ধতিতে বিল প্রদান-সংক্রান্ত সেবা চালু। ৯. গান শোনা, টিভি ও সিনেমা দেখা এবং চাহিদা অনুযায়ী ডাউনলোড করা যায়।

চতুর্থ প্রজন্মের বৈশিষ্ট্য: (২০০৯-বর্তমান): ১. ডেটা ট্রান্সমিশন স্পিড 3G এর চেয়ে প্রায় ৫০ গুণ বেশি। ২. চতুর্থ প্রজন্মের ইন্টারনেট প্রটোকল প্যাকেট সুইচড নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে, যা আলট্রা ব্রডব্যান্ড অ্যাক্সেস নামে পরিচিত। ৩. মোবাইল ওয়েব অ্যাক্সেস, IP টেলিফোনিং, হাই ডেফিনেশন মোবাইল টিভি, 3D টেলিভিশন এবং ক্লাউড কম্পিউটিং ব্যবহারের সুবিধা রয়েছে। ৪. চতুর্থ প্রজন্মের মোবাইলে স্মার্ট অ্যান্টেনা ব্যবহার করা হয়। ৫. 3D ছবি প্রদর্শনের ব্যবস্থা।

উদাহরণ: LTE Advanced (LTE-A), Mobile WiMax2।

মডেলঃ ফাহিম ও জেসিকা



মন্তব্য চালু নেই