আওয়ার নিউজ বিডি ডটকম একটি তারুন্য উদ্দীপ্ত সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ। এক ঝাঁক তরুণ ও তাদের তারুণ্য এই প্রকাশানার প্রতি শব্দের সঙ্গে মিশে আছে। অনেক অনলাইন পত্রিকার ভীড়ে আওয়ার নিউজ কি করবে? আওয়ার নিউজ সবসময় সত্যকে প্রকাশ করবে, ভয়, ভীতি, করুনা কোন কিছুর কাছে কখনো মাথা নত করবে না। সত্য যত কঠিনই হোক আমরা সেটা প্রকাশ করতে চাই নির্ভীক চিত্তে।
গত বছর ১ লাখ ২১ হাজার পাঠক নিয়ে আওয়ার নিউজ বিডি তার বর্ষপূর্তি উৎযাপন করেছিল। কিন্তু মাত্র ১ বছরের ব্যবধানে আজ প্রায় সাড়ে ১১ লাখ (ফ্যান পেজ ও গ্রুপ পেজ) পাঠককে সাথে নিয়ে ২য় বর্ষপূর্তি উৎযাপন করছে। এই সাফল্যের বড় একটি অংশীদার সম্মানিত পাঠকমহল। বর্ষপূর্তির এই দিনে আওয়ার নিউজ বিডি বিশ্বের লাখো পাঠকের ভালবাসায় সিক্ত।
‘প্রযুক্তি ও তারুণ্যের সংবাদ মাধ্যম’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আওয়ার নিউজ বিডি সবসময় চেষ্টা করে প্রযুক্তি, বিজ্ঞান, তথ্য যোগাযোগ ও তারুণ্যের সৃজনশীলতাকে প্রাধান্য দিয়ে তুলে ধরতে। একটি জ্ঞানভিত্তিক বিজ্ঞানমুখী মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য আওয়ার নিউজ তরুণ প্রজন্মের সৃজনশীলতা বিকাশে সহায়ক ভূমিকা রাখতে চায়। তাইত আওয়ার নিউজে আমরা অন্য সংবাদের পাশাপাশি বিজ্ঞান, তথ্য – যোগাযোগ প্রযুক্তির সর্বশেষ সংবাদ সবার আগে প্রকাশ করার চেষ্টা করি।
আওয়ার নিউজের পথ চলায় আপনি, এই পাঠক সমাজ আমাদের সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরনা। আপনারা ভালবেসে আমাদের সঙ্গে থাকলেই কেবল আমরা টিকে থাকব। আমাদের সকল প্রচেষ্টা হবে আপনার সংবাদ চাহিদাকে কেন্দ্র করে। আপনার যে কোন মতামত আমরা সাদরে গ্রহণ করব। আপনার পরামর্শ আমরা অনুসরন করার চেষ্টা করব। আপনি আওয়ার নিউজ ও এর যে কোন বিষয়ে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।
আওয়ার নিউজ মানবতার কথা বলে, আওয়ার নিউজ দেশের কথা বলে। বিশ্বমানবতার কথা বলে আওয়ার নিউজ।
আমরা দেশপ্রেমের কথা বলি, আমরা মুক্তিযুদ্ধের কথা বলি, আমরা বলি বাংলা ভাষায়। একুশের শহীদেরা আমাদের অনুপ্রেরনা, আমরা সাহস পাই ৭১ রণাঙ্গনের সেই সব সূর্য সৈনিকদের কাছ থেকে যারা কখনো পরাজিত হয়নি। আমরাও পরাজিত হতে চাই না। আওয়ার নিউজ এদেশের ১৬ কোটি মানুষের ভরষার সংবাদ মাধ্যম হয়ে উঠতে চাই।
আমরা সবার কথা বলি, আমাদের কোন দল নেই। যা কিছু ভাল আমরা তার সঙ্গেই থাকতে চাই। আপনার সঙ্গে হাতে হাত রেখে আমরা এগিয়ে যেতে চাই।
আমরা রাষ্ট্রের আইন কানুন, রীতিনীতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল। দেশপ্রেম ও রাষ্ট্রীয় আইন বিরোধী এবং বাঙ্গালীর আবহমান কালের সামাজিক সহনশীলতার বিপক্ষে আওয়ার নিউজ কখনো সংবাদ প্রকাশ করে না। আমরা সকল ধর্মমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, কোন ধর্মমত বা তাদের অনুসারীদের অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে আমরা কিছু প্রকাশ করি না।
-আওয়ার নিউজ বিডি পরিবার
ঢাকা, বাংলাদেশ
সাহিত্য জাতির দর্পন। এই সাহিত্য আবার হতে পারে দিন বদলের হাতিয়ার। কিন্তু বর্তমানে সেই সাহিত্য রসে লেগে গেছে অস্বচ্ছতার ছোঁয়া। তারপরও স্বচ্ছ-অস্বচ্ছতার ভিতর দিয়েই চলছে সাহিত্য চর্চা। পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও বরাবর সাহিত্যে দখল করে নিয়েছে একটি বিশেষ স্থান। অন্যায় আর নির্যাতনের বিরুদ্ধে চলেছে তাদের কলম।
সম্প্রতি দেশের দক্ষিণাঞ্চলের একজন প্রতিভাবান লেখিকার সাথে সাক্ষাতকার মূলক একান্ত আলাপচারিতায় বসেন আওয়ার নিউজ বিডি’র বার্তা সম্পাদক আবু রায়হান মিকাইল। দীর্ঘ আলাচারিতায় উঠে এসেছে চমকপ্রদ কিছু কথামালা। তবে আলাপচারিতার পুরোটা সময়ই ছিল ছন্দময়। আওয়ার নিউজ বিডি’র ২য় বর্ষপূতি উপলক্ষ্যে এই চমকপ্রদ সাক্ষাতকারটি নেওয়া হয়েছিল। শুরুতে আমরা লেখিকার সংক্ষিত পরিচয় জেনে নিই।
লেখিকা: সাবিলা ইয়াসমিন (মিতা)। তিনি সাতক্ষীরা জেলার পারুলিয়া ইউনিয়নের সেকেন্দ্রা গ্রামের জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলা থেকেই তার সাহিত্য অঙ্গনে পদচারণ। তিনি একাধারে ছড়াকার, গীতিকার, কবি, সম্পাদিকা। তার সম্পাদিত পত্রিকা ‘স্বপ্নমুকুল’। পেশায় একজন ডাক্তার। সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি কবি সিকেন্দার আবু জাফর পদক (২০০৯) ও দৈনিক দৃষ্টিপাত সাহিত্য পদক (২০০৮) প্রাপ্ত হন। আওয়ার নিউজ বিডি’র পাঠকদের জন্য তার ছন্দময় সাক্ষাতকারটি এবার উপস্থাপন করা হলোঃ
আওয়ার নিউজ বিডি :
কেমন আছেন আপুমনি
যাচ্ছে কেমন দিন,
আওয়ার নিউজ বিডি থেকে
শুভেচ্ছা নিন।
ডা. সাবিলা ইয়াসমিন (মিতা) :
শুভেচ্ছাটা নিলাম তুলে
আছি ভাল বেশ,
মনের মাঝে স্বপ্ন আঁকা
সুশীল পরিবেশ।
আওয়ার নিউজ বিডি :
লেখালেখির এই জগতে
আপনি কেন এলেন?
বলেন দেখি বেশি বেশি
কার প্রেরণা পেলেন?
ডা. সাবিলা ইয়াসমিন (মিতা):
প্রেরণাটা পেলাম সবার
পেলাম ভালবাসা,
লেখক হওয়ার স্বপ্ন নিয়েই
এ জগতে আসা।
আওয়ার নিউজ বিডি :
লেখালেখি সম্পাদনা
এছাড়া কি করেন?
লেখালেখির হাতেখড়ি
কবে থেকে ধরেন?
ডা. সাবিলা ইয়াসমিন (মিতা) :
ডাক্তারী ও শিক্ষাকতা
এর মাঝেতে করি,
লেখালেখির হাতেখড়ি
ছোট থেকেই ধরি।
আওয়ার নিউজ বিডি :
প্রথম লেখা ছাপলো কবে
কোনসে পত্রিকাতে,
আওয়ার নিউজ পাঠক যারা
বলেন সবার সাথে।
ডা. সাবিলা ইয়াসমিন (মিতা) :
প্রথম লেখা ছাপলো আমার
দুই হাজার পাঁচে,
লোকসমাজ পত্রিকা সেটা
বললাম সবার কাছে।
আওয়ার নিউজ বিডি :
অনুভূতি ছিল কেমন সেদিন
আপনার মাঝে,
জানতে যে চাই সেই কথাটা
ছন্দ ছড়ার ভাঁজে।
ডা. সাবিলা ইয়াসমিন (মিতা) :
সেই দিনের সেই মহা খুশি
বুঝায় কেমন করে,
যার পরশে মনটা আমার
আজও আছে ভরে।
আওয়ার নিউজ বিডি :
আপুমনি এবার তবে আসল
কথায় আসেন,
গল্প নাকি ছড়া লেখা
কোনটা ভালবাসেন?
ডা. সাবিলা ইয়াসমিন (মিতা) :
গল্প ছড়া কাব্য কথা
সবই লাগে ভাল,
তবু যেন ছড়া আমার
জাগায় আশার আলো।
আওয়ার নিউজ বিডি :
ছড়া নাকি দিন বদলের
শ্রেষ্ঠ হাতিয়ার,
ভাবেন আপনি কতটুকু
বলেন দেখি সবার।
ডা. সাবিলা ইয়াসমিন (মিতা) :
ভাবাভাবির কিবা আছে
এই কথাটা ঠিক,
ছড়া একদিন সবার কাছে
বদলে দেবে দিক।
আওয়ার নিউজ বিডি :
ছড়ায় ছড়ায় এবার তবে
অন্যদিকে চলেন,
সবচেয়ে কি বড় আশা
একটু যদি বলেন?
ডা. সাবিলা ইয়াসমিন (মিতা) :
বড় আশা বলতে গেলে
মদিনাতে যাওয়া,
সফল হবো কতটুকু
জানিনা এই চাওয়া।
আওয়ার নিউজ বিডি :
কেবা আপনার প্রিয় মানুষ
কেবা প্রিয় কবি,
ভবিষ্যতে সামনে তলার
জানান কিছু হবি।
ডা. সাবিলা ইয়াসমিন (মিতা) :
রাসুল আমার প্রিয় মানুষ
নজরুল প্রিয় কবি,
ভাল কিছু রেখে যাওয়া
মনে জাগে হবি।
আওয়ার নিউজ বিডি :
আওয়ার নিউজ পাঠকদের কি
বলার কিছু আছে?
বলতে পারেন খোলা মনে
সবার কাছে কাছে।
ডা. সাবিলা ইয়াসমিন (মিতা) :
আমার লেখা পাঠক হৃদয়
একটু পেলে ঠাঁই,
পাঠকগণের কাছে আমি
আর কিছু না চাই।
আওয়ার নিউজ বিডি :
আপুমনি এবার তবে
বিদায় নেওয়া যাক,
আবার পরে বলব কথা
আজ এখানেই থাক।
ডা. সাবিলা ইয়াসমিন (মিতা) :
ভুল যদি বলে থাকি
ক্ষমা চেয়ে নিলাম,
বিদায় বেলা সবাইকে
আমার সালাম দিলাম।
বিঃদ্রঃ লেখিকার বিধি নিষেধের কারণে তার ছবিটি প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি।
আমাদের দেশে দুই যুগ আগেও এত এত মুদ্রিত পত্রিকা ছিল না। পাঁচ বছর আগেও ছিল না অনলাইন পত্রিকার এতটা চল। বর্তমানে অসংখ্য মুদ্রিত পত্রিকা, সম্পূর্ণ অনলাইন পত্রিকার সঙ্গে সঙ্গে ছাপা পত্রিকাগুলোর অনলাইন সংস্করণও পাঠকের চায়ের টেবিল থেকে ফেসবুক টাইম লাইনে পৌঁছে দিচ্ছে নগরীর আনাচেকানাচের খবর। সর্বাধিক কাটতি ধরে রেখেছে হাতেগোনা কিছু ছাপা পত্রিকা। অনলাইন পত্রিকাগুলোর মধ্যে দু’চারটি নামই মুখ্য। তথাপি অনলাইনের গলিতে প্রতিদিন ছড়িয়ে পড়ছে অসংখ্য অনলাইনভিত্তিক পত্রিকা। এগুলো কোনোটা জেলা খবরভিত্তিক। কোনোটা বিষয়ভিত্তিক। কোনোটা মিশ্র। কোনোটা দেশ থেকে পরিচালিত হচ্ছে। কোনোটা প্রবাসীরা পরিচালনা করছেন। প্রচারণার জন্য সহজপন্থা হিসেবে ফেসবুক পাতা, টুইটার পাতা ব্যবহার করে এসব পত্রিকার লিংক ছড়িয়ে পড়ছে অনলাইন চরাচরে সহজেই।
রাজনৈতিক খবর, আন্তর্জাতিক খবর, তারকা সংবাদ অথবা অপরাধ জগতের খবর- শীর্ষস্থানীয় পত্রিকাগুলোয় জায়গা করে নিতে পারেনি এমন অনেক খবরও পাওয়া যায় অনলাইন পত্রিকাগুলোয়। আশঙ্কার জায়গা হলো, কিছু অনলাইন পত্রিকা কেবল চটকদার শিরোনামই নয়, রীতিমতো রগরগে শিরোনামের খবর প্রকাশ করে একাধারে। পত্রিকাগুলোর ফেসবুক পাতা বা অন্য কোনো উৎস থেকে সংবাদ লিংক ফেসবুকে শেয়ার হলে সেটা এ-হাত সে-হাত হয়ে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিংয়ে বহুবার শেয়ার হতেই থাকে।
প্রসঙ্গটা এসব খবরের সত্যতা নিয়ে। প্রতিবেদনের মান নিয়ে। সংবাদ পরিবেশনে নৈতিকতার দায় নিয়ে। দুই যুগ আগে সংবাদপত্রে ধর্ষণ ঘটনার খবরে নারী ছিল মুখ্য উপজীব্য। ধর্ষিতার বয়স ১৪ হোক আর ২৪, তার একটা পাসপোর্ট সাইজের ছবি খবরের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া ছিল ধর্ষণ খবরের প্রধান ধর্ম। সঙ্গে ধর্ষিতার গ্রামের নাম, ধর্ষিতার পিতার নাম। বিপরীতে ধর্ষকের বিবরণ প্রকাশে ছিল ঔদাসীন্য। এক পর্যায়ে তীব্র সমালোচনা শুরু হলে ধর্ষিত নারীর ছবি আর অন্যান্য বিবরণ প্রকাশে সংবাদ পত্রিকাগুলো ক্রমান্বয়ে একটা নৈতিক সীমারেখা মেনে চলার চেষ্টা করে। কিন্তু আজকাল অসংখ্য পত্রিকার ভিড়ে সেই পরিমিত বোধের ক্ষয় ঘটেছে। ভিকটিমের নামের সঙ্গে ছবি, বাড়ির পূর্ণ ঠিকানা, বাবার নাম ইত্যাদি তথ্যজুড়ে প্রতিবেদন প্রকাশের চর্চা পুনরায় শুরু হয়েছে।
কিছুদিন আগে দুই তরুণীর মালাবদল নিয়ে একটি প্রতিবেদন আলোচিত হয়। প্রতিবেদনে দুই তরুণীর সমকামিতার কথা লেখা ছিল। সংবাদের লিংক ফেসবুকে শেয়ার হতেই সমকামিতার সামাজিক-ধর্মীয়-রাষ্ট্রীয়-ব্যক্তিক গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে নানা জনে নানা মত প্রকাশে দেরি করেনি। দুই তরুণীর সমকামিতার খবর একাধিক অনলাইন পত্রিকায় পুনরাবৃত্তি হতে থাকে। ফেসবুকে চলতে থাকে লিংক শেয়ার। প্রথম প্রতিবেদনটি প্রকাশ হয়েছিল দুই তরুণীর বড় আকারের ছবিসমেত। অপরাপর অনলাইন পত্রিকাতেও এ খবর ছবিসহ প্রকাশ হচ্ছিল।
দিনকয়েক নানা জল্পনা-কল্পনার পর আলোচনা যখন প্রায় স্তিমিত, তখন অন্য একটি প্রথম সারির অনলাইন পত্রিকা থেকে প্রথমবারের মতো জানা যায়, এ ঘটনার পেছনে মূলত পরিকল্পিতভাবে একটি অপহরণকারী চক্র কাজ করছিল। এক তরুণী অন্য তরুণীকে ফুসলিয়ে নিয়ে আসে। দুই তরুণীকে নিয়ে বড় বড় শিরোনামে যে রগরগে খবর প্রকাশ করেছিল কিছু অর্বাচীন অনলাইন পত্রিকা, শেষ পর্যন্ত তার যবনিকাপাত ঘটিয়ে প্রকৃত ঘটনায় আলোকপাত করল একটি দায়িত্বশীল প্রতিবেদন।
সমকামিতার স্বীকৃতি-অস্বীকৃতি এখন বৈশ্বিক পর্যায়ে বিশ্লেষিত হচ্ছে নানাভাবে। চিকিৎসাবিজ্ঞান, মনোবিজ্ঞান, ধর্ম, সমাজব্যবস্থা, রাষ্ট্রীয় এবং সর্বোপরি আইনগত প্রেক্ষাপট পর্যন্ত এ মত বিস্তৃত। একজন প্রতিবেদক ও পত্রিকা সম্পাদক ব্যক্তিমতের ঊধর্ে্ব উঠে একটি সংবাদকে উপস্থাপন করবেন, এটাই নৈতিকতা। ব্যক্তিগতভাবে প্রতিবেদকের বা পত্রিকা কর্তৃপক্ষের সমকামিতা নিয়ে, সমকামী নারী নিয়ে আমাদের সামাজিক প্রেক্ষাপটে আর আট-দশজনের মতো ভ্রূকুটি থাকতেই পারে, তবে তরুণীর বয়স বিবেচনা করে ও প্রকৃত ঘটনা যাচাই না করে যেভাবে এ ধরনের সচিত্র সংবাদ প্রকাশিত হলো একাধারে বেশ কয়েকটি অনলাইন পত্রিকায়, তা এলাকায়-পরিবারে-সমাজে এই তরুণীকে হেয় করার পথ উন্মুক্ত করে দেয়। যদি সমকামিতার ঘটনাটি সত্যিই হতো, তথাপি তরুণীর ছবি, বাড়ির পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা, পিতার নাম প্রকাশ কোনোভাবেই পেশাদারিত্বের আওতায় পড়ে না। কারণ এই তরুণীর স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ও সুস্থ ভবিষ্যৎকে ব্যাহত করবে ওইসব প্রতিবেদনগুলো।
অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, অনলাইনে একটা ওয়েবসাইট খুলে বসার প্রযুক্তিগত সুবিধা পত্রিকাগুলোর দায়িত্বের জায়গাটুকুকে শিথিল করে দিচ্ছে। এ ধরনের প্রতিবেদন প্রকাশের দায়ে মানহানির মামলা এবং সাংবাদিকতার নৈতিক বিধি লঙ্ঘনের দায়ে ওইসব পত্রিকার বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া আবশ্যক। আমাদের সংবাদমাধ্যমগুলোর আরও নৈতিক পেশাদারিত্ব প্রদর্শন জরুরি। বাংলাদেশ সংবাদ সমিতি, সাংবাদিক ফোরাম, গণমাধ্যম ফোরামগুলো পেশাদারিত্ব, ব্যক্তি ও সামাজিক নৈতিকতাবোধ থেকে সক্রিয় হয়ে একটি সচেতনতা-প্রতিবাদমূলক ক্যাম্পেইন করলে অনলাইনে গজিয়ে ওঠা পত্রিকাগুলো সংবাদচর্চায় মান বজায় রাখতে সচেষ্ট হবে এমনটাই প্রত্যাশা।
সাংবাদিকতা আসলেই কি কোন পেশা? যদি তাই হয়, তবে বেতন-বোনাস মেলে না কেন! এটা যদি সত্যি পেশা হতো তাহলে এ পেশায় রাষ্ট্রীয় এবং সামাজিক মর্যাদা থাকতো, কিন্তু সেটি তো বাস্তবে দেখা যায় না।
প্রায়ই দেখা যায়, সাংবাদিকদের ধরে কেউ পেটাচ্ছে। কেউ ‘কুকুর’ বলে গালি দিচ্ছে, সেই গালি আদৌ দিয়েছে কিনা সেটা জানতেই ফোন করছে কোন সাংবাদিক এবং সেই সাংবাদিক নিজেই বলছে, কোন কোন সাংবাদিককে ‘কুকুর’ বলাই যায়! শুনি আর অবাক হই – আমার স্বজাতি কাউকে ‘কুকুর’ বললে, আমি নিজে ‘কুকুর’ এর বাইরে হই কি করে?
আর সাংবাদিকতা কেন পেশা নয় এর জন্য এর সময় ঠিক না থাকা, কাজের ধরনের পরিবর্তন এবং এর পাশাপাশি বিডিনিউজ, একুশে টিভিতে যখন দেখি শিশু সাংবাদিক নিয়োগ দেয়া হচ্ছে, তখন প্রশ্নটা বেশি আসে মনে, কারণ যদি এটা পেশা হয় তাহলে শিশুরা সাংবাদিকতা করতে পারবে না।
কারণ, এই দেশে শিশু শ্রম নিষিদ্ধ- আর যদি নেশা হয় তাহলে যেকেউ করতে পারবে। তবে, আজ সেই তর্কে যেতে চাই না।
আজ অন্য প্রসঙ্গে আসি – সাংবাদিকরা যদি মানুষ হয়, সাংবাদিকতা যদি পেশা হয় ঈদের আগে সাংবাদিকদের বেতন-বোনাস মিলবে নিশ্চয়! এবার সব হাউসের সংবাদকর্মীদের বেতন-বোনাস মিলবে তো! ঈদ-উল-ফিতর মুসলমানদের বড় ধর্মীয় উৎসব। এই দেশে যেহেতু ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যাধিক্য তাই এই উৎসব ঘিরে উৎসাহ-উদ্দীপনা চোখে পড়ার মতোই। দেশের বৃহৎ সংখ্যক জনগোষ্ঠির ঈদ উৎসব কেমন হবে এনিয়ে মিডিয়া কর্মীদের বিভিন্ন সংবাদ সংগ্রহে উৎসাহ-উদ্দীপনার ঘাটতি নেই।
এর মধ্যে রয়েছে ঈদের কেনাকাটা, ঈদে শহুরে মানুষের গ্রামে ফেরা, ঈদ জামায়াত, ঈদের আগের ও পরের প্রতিটি মূহূর্ত গণমাধ্যম কর্মীরা দেশের মানুষের কাছে তুলে ধরছেন। কিন্তু যে সংবাদকর্মীরা ঈদ নিয়ে এত লিখছেন তাদের ভিতরের অবস্থাটা কি? যতদূর জানি, দেশে সাড়ে চারশ’র উপরে সংবাদপত্র রয়েছে। টিভি চ্যানেল রয়েছে প্রায় ৩০টি। রেডিওর সংখ্যা প্রায় ৩০টি, অনলাইনের সংখ্যা প্রায় চারশ। এই সব গণমাধ্যমের মধ্যে বেশিরভাগেরই বেতন নিয়মিত নয়। আর বেতন নিয়মিত না হওয়ার কারণে ঈদের আগে বোনাস মিলবে কিনা সেটা নিয়ে বেশির ভাগ হাউসের সাংবাদিকরাই সন্দিহান।
এক্ষেত্রে দেশের সাংবাদিক সমাজ ঠিক কি করছে? সে নিয়ে অনেকের মতো আমারও মনে অনেক প্রশ্ন রয়েছে। এইতো ১৯ জুলাই ছিল ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন এবং ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের ইফতার মাহফিল। এদিন এতে যোগ দেন দেশের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি ইফতারের আগে সাংবাদিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় যোগ দেন। এসময় সাংবাদিক নেতাদের কয়েকজন তার কাছে অভিযোগ করেন যে, সরকার অষ্টম ওয়েজবোর্ড ঘোষণা করলেও অধিকাংশ মালিক তা মানছেন না। অনেক মালিক সাংবাদিকদের চাকরিচ্যূত করছেন। ন্যায্য পাওনাও দিচ্ছেন না। আবার মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিজ্ঞাপন বেশি দামে ঠিকই নিচ্ছেন।
এসব শোনার পর প্রধানমন্ত্রী কি বলেছেন, তা অবশ্য গণমাধ্যম এবং ফেসবুকে পাওয়া পোষ্টে জানা যায়নি। তবে আশার কথা এই যে, প্রধানমন্ত্রীর কান পর্যন্ত কথাটি গেছে। তিনি যেহেতু অনেক বেশি মানবতাবাদী তিনি নিশ্চয় সাংবাদিক সমাজের এই বিষয়টি দেখার জন্য নিয়োজিতদের এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে বলবেন!
বয়সে সিনিয়র সাংবাদিকদের প্রায়ই বলতে শুনি, এই পেশায় তো বেতন ঠিকমতো হয়না এটা জেনে এসেছ, কাজেই এখানে এসে বেতন চাওয়া যাবে না। তাহলে কি এই দেশটা এগুবে না! এই দেশটা কি পিছিয়ে থাকবে! এই প্রশ্নের উত্তর পাই না। বেতন-বোনাস না পেলে সব শ্রমিকেরই কষ্ট হয়। এইদেশে শুধু গার্মেন্টস কর্মীদের না পাওয়ার খবর সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়। আর এই খবর প্রকাশ করে সংবাদকর্মীরাই। যাদের হাত দিয়ে এগুলো লেখা হয় এবং ছাপা হয় এর বেশিরভাগই আসে আমার-আমাদের মতো অর্ধভুখা, বেতন নিয়মিত না পাওয়া, সাংবাদিক-সংবাদকর্মীদের লেখার মধ্য দিয়েই। দুর্ভাগ্য এইটুকুই দেশের সব মিডিয়া পোশাক শ্রমিকদের সংগঠন (বিজিএমইএ) কি বলছে, সরকারের শ্রম মন্ত্রণালয় কি বলছে, শ্রমিক নেতারা কি বলছে, বিদেশী বায়াররা কি বলছে তা ফলাও করে ছাপায়, কিন্তু এই গণমাধ্যম কর্মীরাই যেসব গণমাধ্যমে বেতন-বোনাস ঠিকমতো হচ্ছে না তাদের কোন সংবাদ ছাপায় না! এইদেশের গণমাধ্যমে আসলে কোন ধরনের সুশাসন নেই। তাই এখানে কর্মরত সাংবাদিক-সংবাদকর্মীদের মালিকের তার ঘামে গড়ে উঠা প্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয়ের হিসাব জানা কোনভাবেই সম্ভব হয় না।
কোন কোন অফিসে বসের কাছে জুনিয়র সাংবাদিকরা বেতন কবে পাবে সেই সংবাদটাও সংগ্রহ করতে পারে না । তাদের সম্পূর্ণভাবে ভাগ্যের উপর নির্ভর করতে হয়! ভাগ্যে যেদিন টাকা পাওনা লেখা থাকবে সেদিনই টাকা মিলবে! তরুণ সাংবাদিকদের জন্য বড় কষ্টের বিষয় ঈদ শপিং এর সংবাদ। একদিকে সংবাদ সংগ্রহ করছে, কিন্তু নিজের ও পরিবারের সদস্যদের জন্য কেনাকাটা করতে পারছে না। এটা যে কত বড় কষ্টের বিষয় একমাত্র সেই জানে যে এই পরিস্থিতিতে পড়ে।
এই বিষয়টি মাথায় রেখে গত মঙ্গলবার ফেসবুকে একটা স্ট্যাটাস দেই এতে লিখি – ‘যে সব সাংবাদিকরা ঈদ শপিং এর সংবাদ করছেন, কিন্তু এখনো ঈদ বোনাস বা বেতন পাননি তাদের জন্য সহজ বুদ্ধি আপনারা দিনে নিউজ করবেন, আর সন্ধ্যার পর নীলক্ষেত মোড়ে ছিনতাই করবেন। যতই যাই বলুন না কেন ছিনতাইকারী একটা পেশা তো!’
অনেকে এটা পড়ে ভুল ভাববেন যে আমি বোধহয় ছিনতাই করাকে সাপোর্ট করছি। আমি মোটেও তা করছিনা। শুধু এই ধরনের কমেন্ট করে নিজের ক্ষোভটা প্রকাশ করেছি মাত্র। আমাদের অফিসগুলো ধরেই নিলাম শেষ সপ্তাহে বোনাস দেবে, তারা যদি নিয়মিত বেতনটা দিয়ে যায় তাহলে আমরা সেই বেতনের টাকা থেকেও কেনাকাটা করতে পারি! কিন্তু অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি, সেটাও হয়না!
আমাদের দেশের পরিস্থিতি দেখলে মনে হয়, এই দেশে প্রশাসন নেই, আইন নেই, শাসন নেই, কোন ব্যবস্থা নেই – এমনি এমনি চলছে সবকিছু। এই যে সাংবাদিকদের এত এত হাহাকার, কষ্ট, অপ্রাপ্তি কিছুই ছুঁয়ে যায় না সাংবাদিক নেতাদের! কিন্তু কেন, এ উত্তর আমার জানা নেই। নেতারাই ভাল বলতে পারবেন। গার্মেন্টস কর্মীদের জন্য বেতন দেবার জন্য সময় বলা হয় – সংবাদ মাধ্যমের ক্ষেত্রে কোন বিবৃতি দেননা সাংবাদিক নেতৃবৃন্দরা। অথচ বাংলাদেশ ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) এবং ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) রয়েছে। এরই সঙ্গে প্রায় প্রতিটি জেলার ঢাকায় কর্মরত সাংবাদিকদের সাংবাদিক সমিতি, প্রতি বিটের কর্মীদের বিট সমিতি ছাড়াও রিপোর্টারদের নিজস্ব সংগঠন, রিপোর্টার্স ইউনিটি, সাব এডিটরদের সংগঠন, টেলিভিশনের রিপোর্টার ক্যামেরা পারসনদের সংগঠন, অভাব নেই সংগঠনের। অথচ এরা কেউই সাংবাদিকদের বেতন-বোনাস নিয়ে কোন ধরনের কথা বলে না। ঈদ চলে আসছে বেশির ভাগ অফিস বেতনই দেয়নি-আবার বোনাস দেবে কখন! এসব নিয়ে আমাদের নেতারা কোন ধরনের উচ্চবাচ্য করছেন না, কোন বিবৃতি দিচ্ছেন না! বড়ই অদ্ভূত ব্যাপার!
এরই মধ্যে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ), যার সদস্য সংখ্যা প্রায় ১৫শ। এরমধ্যে সবমিলিয়ে চারশ নারী সদস্য হবেন। এই নারী সদস্য এবং পুরুষ সদস্যদের স্ত্রী ও মেয়েদের জন্য আয়োজন করে বসলেন ‘মেহেদী উৎসব’। যখন রিপোর্টারদের মন ক্ষত-বিক্ষত, বেতন-বোনাস না পেয়ে অসহায়ত্বে ভুগছেন ঠিক এই সময় পেশার সঙ্গে কোনভাবেই যায়ও না এমন একটা উৎসব আয়োজন করে কি লাভ করলেন সেটা এই সংগঠনের নেতৃবৃন্দই ভাল বলতে পারবেন।
সাংবাদিকরা যে বেতন-বোনাস ঠিকমতো পাচ্ছে না তাদের হাহাকারের প্রকাশ দেখা যায়, ফেসবুক-টুইটারে! অনেকেই এখানে নিজেদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। পরিবর্তন ডটকম এর রিপোর্টার এ ইসলাম মিঠু তার কষ্টের সীমানা এঁকেছেন ফেসবুকের দেয়ালে। নিজের সেলফিতে তিনি প্ল্যাকার্ড ‘আমি একজন সাংবাদিক আমাকে বেতন দিন’ বলে নিজের কষ্ট তুলে ধরেছেন। মিঠু পারলেও বেশিরভাগ সাংবাদিকই চাকরি চলে যাবার ভয়ে নীরব। তারা শুধু একে অন্যের সঙ্গে কানাঘুষো করছেন আর সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা চাইছেন- যেন ঈদের আগেই বেতন-বোনাস হয়। দুটো না হলেও অন্তত একটা যেন হয়।
আমি দেশের গণমাধ্যমের একজন খুব সামান্য কর্মী হিসেবে সৃষ্টিকর্তার কাছে এই বলে প্রার্থনা করতে পারি যে, এদেশের গণমাধ্যম মালিকদের সুবুদ্ধি দাও যেন তারা শ্রমিকের ঘাম শুকানোর আগে মজুরি দিয়ে দেয়, সরকারকে সুবুদ্ধি দাও যেন তারা দেশে শ্রম আইনের পূর্ণ বাস্তবায়ন করে, সাংবাদিক নেতৃবৃন্দকে সুবুদ্ধি দাও যেন তারা অধিকার আদায়ের সংগঠনের সঙ্গে জড়িত থেকে অধিকার নিয়ে সোচ্চার কণ্ঠে কথা বলে, গণমাধ্যমের উচ্চ পদে আসীনদের সুবুদ্ধি দাও যেন তারা নিজ দায়িত্ব শুধু কর্মীর কাছে কাজ আদায় করে নেয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে তার নায্য পাওনা পাইয়ে দেয়া পর্যন্ত সীমাবদ্ধ রাখে এবং যে গণমাধ্যম কর্মী গণমাধ্যমে কাজ করছে সে যেন মুখ বুঁজে না থেকে সকল সহকর্মী মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে মাসের বেতন, উৎসব বোনাস এবং বাৎসরিক তার নায্য পাওনা নির্দিষ্ট সময়েই আদায় করে!
হাজারো পেশার মধ্যে সাংবাদিকতা একটি মহৎ ও সম্মানজনক পেশা। তবে এর সঙ্গে আর অন্য দশটি পেশার পার্থক্য অনেক।
একজন ভালো ও পেশাদার সাংবাদিক হওয়ার জন্য কি কি প্রয়োজন? আজকের প্রতিষ্ঠিত ও সম্মানিত সাংবাদিকদের অনেকেই বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশুনা করে এসেছেন। ভালো সাংবাদিক হওয়ার জন্য সাংবাদিকতাই পড়তে হবে এমনটা জরুরি নয়। তবে বিষয়টি পড়া থাকলে একজনকে ভালো সাংবাদিক হতে তা অবশ্যই সাহায্য করে।সাংবাদিকদের ‘সব কাজের কাজী’ হতে হয়। অর্থাৎ অনেক বিষয়ে মৌলিক জ্ঞান থাকা একজন সাংবাদিকের জন্য জরুরি। সেটা খেলা, অর্থনীতি ও বাণিজ্য, আইন-আদালত, সংবিধান, জ্বালানির মতো বিষয় হতে পারে।
সাংবাদিকতার ক্ষেত্রসমূহঃ
>প্রিন্ট মিডিয়া (পত্রিকা, ম্যাগাজিন, সাময়িকী ইত্যাদি) : সম্পাদকীয় বিভাগ, প্রশাসনিক বিভাগ, বার্তা বিভাগ, রিপোর্টিং বিভাগ, প্রুফ এডিটিং বিভাগ, ফটোগ্রাফি বিভাগ, অলংকরণ বিভাগ, বিজ্ঞাপন বিভাগ, প্রচার বিভাগ, রেফারেন্স লাইব্রেরি, প্রিন্টিং/ছাপা বিভাগ।
>ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া (রেডিও, টেলিভিশন) : নিউজ বিভাগ-রিপোর্টিং, নিউজ এডিটর, জয়েন্ট নিউজ এডিটর, ডেস্ক রিপোর্টার, নিউজ প্রডিউসার, নিউজ প্রেজেন্টার, অনলাইন এডিটর, প্রোগ্রাম প্রডিউসার, ভিডিও এডিটর, গ্রাফিক্স ডিজাইনার, এনিমেটর, সেট ডিজাইনার, চিত্রগ্রাহক, ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ব্রডকাস্টিং এক্সিকিউটিভসহ নানা ধরনের কর্মসংস্থান। ইলেক্ট্রনক মিডিয়ায় সাধারণত নিয়ম হলোথ যেকোনো বিভাগে আপনি কাজ করতে প্রথমেই জানতে হবে বেসিক জার্নালিজম।
>অনলাইন মিডিয়া : বাংলাদেশে পূর্বে প্রিন্ট মিডিয়া (সংবাদপত্র) ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় কাজের সুযোগ থাকলেও বর্তমানে ইন্টারনেটের কল্যাণে আরেকটি ক্ষেত্রে কাজের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। সেটি হলো- অনলাইন মিডিয়া।
সম্পাদকীয় বিভাগ, প্রশাসনিক বিভাগ, বার্তা বিভাগ, রিপোর্টিং বিভাগ, প্রুফ এডিটিং বিভাগ, ফটোগ্রাফি বিভাগ, অলংকরণ বিভাগ, বিজ্ঞাপন বিভাগ, রেফারেন্স লাইব্রেরি। এছাড়াও এর চেয়ে কমবেশি বিভাগ থাকতে পারে। এটি সম্পূর্ণ নির্ভর করবে ঐ প্রতিষ্ঠানের উপর।
সাংবাদিক হতে হলে :
>সাংবাদিক হলে যেসব গুণ থাকা দরকার : ১. সিদ্ধান্ত ২. সততা ৩. ব্যক্তিত্ব ৪. ব্যবহার ৫. সাহসিকতা ৬. বস্তুনিষ্ঠতা ৭. অধ্যবসায় ৮.নিয়মানুবর্তিতা ও যোগাযোগ ৯. দায়বদ্ধতা ১০. বিচক্ষণতা
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একথা স্বীকার করতেই হবে, এ পেশায় আজও সিংহভাগ জনশক্তিই অনাড়ি। তারা অপেক্ষাকৃত কম মেধাবী ও প্রশিক্ষণহীন। সাংবাদিকতায় পড়ালেখা করে এ পেশায় এসেছেন এমন লোকের সংখ্যা নিতান্ত নগন্য। পড়ালেখা করাতো দূরে থাক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন এমন লোকই বা কোথায়। অথচ একটি সম্ভাবনাময় ও চ্যালেঞ্জিং পেশা হিসেবে সাংবাদিকতা আজ দেশে-বিদেশে অনেক উঁচু মাপের পেশা। পৃথিবীতে যতগুলো পেশা আছে সাংবাদিকতা তার মধ্যে প্রথম সারিতে অবস্থান করছে। সাংবাদিকতায় অধ্যায়ন ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এ পেশায় প্রবেশ করতে পারলে একটি সম্ভাবনাময় ও উজ্জ্বল ক্যরিয়ার গড়া সম্ভব।
>সাংবাদিক হতে শিক্ষাগত যোগ্যতা: ১. জাতীয় পত্রিকা/অনলাইন/ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় কাজ করতে হলে তাকে কমপক্ষে অর্নাস অথবা সমমানের ডিগ্রিধারী হতে হবে। তবে শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা মফস্বলের ক্ষেত্রে শিথিলযোগ্য। সাংবাদিকতার উপর স্নাতক ও স্নাতকোত্তর থাকলে ভালো। সাংবাদিকতায় প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকলেও সাংবাদিকতার উপর যেকোনো কোর্স করলে সহজেই সাংবাদিকতার পেশায় হাতেখড়ি হতে পারে। একটি সফল সর্ট কোর্সের পর পিজিডি ও মাস্টার্স করতে পারলে সাংবাদিক হিসাবে একটি শক্ত ভিতের উপর দাঁড়ানো সম্ভব।
>কোথায় করবেন কোর্সঃ যাদের পক্ষে এখন আর সাংবাদিকতায় স্নাতক করা সম্ভব নয়, তারাও করে নিতে পারেন ৬মাস, একবছর বা ২ বছর মেয়াদী স্নাতকোত্তর বা ডিপ্লোমা অথবা সার্টিফিকেট কোর্স। দেশের সরকারি বে-সরাকারি বহু প্রতিষ্ঠানে এ ধরণের কোর্সকরার সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ তথ্য অধিদপ্তর, প্রেস ইনস্টিটিউট বা প্রেস কাউন্সিলসহ প্রথম আলো, নয়দিগন্তসহ অনেক বেসরকারি ইলেক্ট্রিক ও প্রিন্ট মিডিয়া এখন এসকল কোর্স চালু করেছে। ঢাবি, রাবি’সহ দেশের কয়েকটি পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিকতায় স্নাতক সম্মান ও স্নাতকোত্তর কোর্স রয়েছে। তাছাড়া রয়েছে ১ ও ২ বছর মেয়াদী ডিপ্লোমা কোর্স। কোর্স করে আপনি বিভিন্ন পত্রিকায় আপনার লেখা পাঠাতে থাকুন ও সেই সঙ্গে আপনার বায়োডাটাও পাঠাতে থাকুন।
>ভর্তির যোগ্যতাঃ স্নাতক পর্যায়ে ভর্তি হতে যে কোন বিভাগ থেকে এইচএসসি পাশ হতে হবে। আর স্নাতকোত্তর বা ডিপ্লোমা কোর্সে ভর্তি হতে স্নাতক পাশ হতে হবে।
>সম্মানী কেমনঃ এখানে প্রথমদিকে হয়তো আয়ের পরিমাণটা কম। তবে অভিজ্ঞতা অর্জনের সাথে সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে আয় রোজগার। দেশে আপনার অভিজ্ঞতা অনুযায়ী সম্মানী ১০-৫০ হাজার টাকা হয়ে থাকে। তবে ইলেকট্রনিক মিডিয়াতে এ অঙ্ক বাড়তে পারে। আর যদি সাংবাদিকতার মাধ্যমে কোনো আন্তর্জাতিক সংস্থার সাংবাদিক হওয়া যায় তাহলে সম্মানী এর দ্বিগুণও হতে পারে।
প্রযুক্তি যত অগ্রসর হচ্ছে মানুষ ততই খোলাসা মুক্ত হচ্ছে। আর খোলাসা থেকে বের হয়ে কিছু একটা করার প্রত্যয় নিয়ে ক্যারিয়ার কে গড়ে তোলার একটি মিছিল বয়ে যাচ্ছে। সত্যি এটা দেখার মত একটি বিষয়। তবে এখন পর্যন্ত অনেকে আছেন এই বিভ্রান্তির ভিতর। তাদের ভিতর শিক্ষিতরা আছে ৩০% আর বাকী ৭০% আছেন অশিক্ষিতরা।
বাংলাদেশ তরুন যুবকরা কিছু একটা করার জন্য প্রতিনিয়ত একের পর এক যোগ দিচ্ছে অনালাইন সাংবাদিকতার পেশাতে। এতে অনেক কর্ম সনস্থান বৃদ্ধি পাচ্ছে। আসলে এই অনালাইন সাংবাদিকতা টা নিয়ে আমাদের প্রজন্মের অনেক প্রযুক্তি প্রেমীরাও এখনও দ্বিধা-দন্দের ভিতর আছে। তারা হইত ভাবতে পেরেও পিছিয়ে যাচ্ছে। এর কিছু কারন আমি খুজে পেয়েছি।
প্রথমত আমরা ভাবি যে আমার মত অনেকেই এই পেশার সাথে সংযুক্ত। তাছাড়া তারা এখন অনেক উপরে উঠে গেছে। তাদের সাথে আমি কখনও পেরে উঠবো না। আবার অনেকে ভাবেন এইটা একটা পেশা হল। যার কোন নির্দিষ্ট পেশা নেই। অনেকে ভাবেন আমি এত উপরে লেবেলে উঠে এসেছি এখন এইসব করলে মানুষ কি বলবে। এইসব চিন্তা বেশি করে, তবে এছাড়া আরও অনেক কারন আছে যার ফলে তারা এটাকে মূল্যায়ন করছে না বা এটাকে পেশা হিসেবে বা ক্যারিয়ার হিসেবে গড়ে তুলতে ভয় পাচ্ছে।
এখন এইসব ভ্রান্তির উদ্দেশে আমার কিছু কথা আছে বলতে পারেন কেন করবেন এই সাংবাদিকতা
প্রথমে আসি একটা লজিকে, আপনার একটা মুদি খানার দোকান আছে। এখন আপনি এই দোকান টা কোথাই বসাইলে ভাল বেচা-কেনা হবে বলে মনে করেন? কাচা বাজারের ভিতর নাকি আর কয়েকটা মুদি খানার দোকানে পাশে ? অবশ্যই আপনার উত্তর হতে হবে আরও কয়েকটা মুদিখানার দোকানের পাশে। এখন প্রশ্ন কেন বেশি হবে আর কেন কম হবে?
হ্যাঁ যখন আপনি কাচা বাজার করতে যান তখন কি বাজারের ভিতরের কোন মুদি খানার দোকান থেকে সব পণ্য কিনেন? কিনেন না কারন আপনি জানেন যে, অমুক স্থানে অনেকগুলো দোকান আছে মুদিখানার আর সেখানে গেলে অবশ্যই আপনি যে পণ্য টা নিবেন সেটা যাচাই-বাচাই করে কিনতে পারবেন, তাছাড়া আপনি সেখানে গেলে আপনি সঠিক দামে কিনতে পারবেন সেই আশা রেখেই তবে যান।
এখন আমরা আসল কোথাই আসি। হাজারো অনালাইন পত্রিকা আছে আবার হাজারো অনলাইন সাংবাদিক আছেন । আপনিও তাই করবেন। আমরা এই কথা টা খুব ভাল করে জানি যে, যত মানুষ শিক্ষিত হবে ততই কর্ম সংস্থান বাড়বে। একই সাথে আমরা বলতে পারি যত পত্রিকা বাড়বে ততই পাঠক বাড়বে। এটাই স্বাভাবিকভাবে হওয়া উচিত। আজকে দেখুন কত পরিমান অনলাইন পত্রিকা প্রযুক্তি ব্লগ তৈরি হয়েছে পাঠক কি কমেছে? না বরং পাঠক আরও বারছে প্রতিনিয়ত। তবে এখন যেহেতু আপনি উঠতে চাচ্ছেন একটি উচ্চ তলিকাই তাই এখানে আপনাকে কিছু টিপস বা ট্রিকস কাজে লাগাতে হবে যাতে করে আপনি একটা অবস্থানে যেতে পারেন।
আপনাকে পুরা এই মার্কেট টা রিসার্চ করতে হবে। আপনাকে একজন সাধারন পাঠকের মত হয়ে ভাবতে হবে। একজন পাঠক কি ভাবছে তার চিন্তা থেকে। প্রথমত পাঠক আকৃষ্ট হয় এমন কিছু কাজে লাগাতে হবে। একজন পাঠক কেন ভালমানের উচ্চ পত্রিকা রেখে আপনার পত্রিকা পড়তে আসবে বা কেনই বা আপনার লেখা পড়বে। সর্ব প্রথম এই চিন্তা মাথাই রেখে পাঠক আকৃষ্ট কিছু পদ্ধতি আপনাকে প্রয়োগ করতে হবে। যখন একজন পাঠক আপনার লেখা পড়ে আকৃষ্ট হবে তখন সে আরও একজন পাঠক কে পড়তে উপদেশ দিবে। আর এর জন্য আপনাকে যদি ইনভেস্ট করতে হয় তবু করুন। তবে ফল একটা সময় আসবে। আর একটা কথা মাথাই রাখতে হবে ভাঙ্গন আসবেই, আপনি যদি সেই ভাঙ্গন টা কে ঠেকাতে পারেন তবেই আপনি সফলতার মুখ দেখবেন।
যাই হোক আমরা যেহেতু অনলাইন সাংবাদিকতা নিয়ে ভাবছিলাম। আপনি যদি এই পেশাতে যোগদান করেন তবে আমি মনে করে সোশ্যাল মিডিয়াগুলোতে আপনার নাম বা সন্মান পাবলিক সাংবাদিকদের থেকে কম হবে না। আপনি যখন একজন অনালাইন সাংবাদিক তখন আপনি সোশ্যাল মিডিয়ার গুষ্টির ভিতর অন্তর্ভুক্ত হবেন। এতে আপনার একই সাথে সন্মান এবং ক্যারিয়ার গড়ে উঠবে। আপনাকে জনপ্রিয় করে তোলার একটা অসাধারন মাধ্যম হচ্ছে এই সোশ্যাল মিডিয়া। তাই আমি মনে করি অনলাইন সাংবাদিকতা একটা ক্যারিয়ার গড়ার জন্য যথেষ্ট। এখন সিদ্ধান্ত আপনার, কারন ক্যারিয়ার গড়ার দায়িত্ব টা যে আপনার। অনালাইন সাংবাদিকতা করতে গেলে প্রচুর ধৈর্য ধয়া প্রয়োজন। তাই এই কথা মাথাই রেখে অনলাইন সাংবাদিকতা করা উচিত।
সংবাদপত্রকে বলায় হয় সমাজ বা জাতির দর্পণ। আর সাংবাদিকরা দেশ, জাতি ও সমাজের বিবেক। দর্পণে কারো চেহারা যেমন অবিকল প্রতিবিম্বিত হয়, তেমনি সংবাদপত্রের পাতায়ও চলমান ঘটনা, দেশ ও জাতির সবকিছু সম্যক চিত্র ফুটে ওঠে। সাধারণত প্রিন্ট মিডিয়া, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া ও অনলাইন মিডিয়া এসব চিত্র তুলে ধরে। উভয় মিডিয়ায় সাংবাদিকদের সততা, নিষ্ঠা ও নীতিবোধ সমান ভাবে গুরুত্বপূর্ণ। ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় সাংবাদিকতার সুযোগ কম। জেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি থাকলেও উপজেলা পর্যায়ে ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার প্রতিনিধি নাই বললে চলে। তবে প্রিন্ট ও অনলাইন মিডিয়ায় সাংবাদিকতার সুযোগ অনেক বেশি। শহর, মহানগর, জেলা শহর বা মফঃস্বল, উপজেলা বা গ্রামীণ পর্যায়ে প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিক রয়েছে। শহরের সাংবাদিকতায় যে গুরুত্ব পায় সে তুলনায় গ্রামীণ বা উপজেলা পর্যায়ে সুযোগ সুবিধা কম থাকলেও গুরুত্ব কোন অংশে কম নয়। দেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠী গ্রামে বসবাস করে। গ্রামে পাঠকের সংখ্যাও কম নয়। দেশ বিদেশ শহর বন্দরের পাশাপাশি গ্রামের সাংবাদিকতার গুরুত্বও অপরিসীম। প্রিন্ট ও অনলাইন মিডিয়ায় গ্রামীণ সাংবাদিকদের সংবাদপত্রের প্রাণ বলা যায়।
সাংবাদিকদের সাধারণ মানুষ সম্মান ও মান্য করে। কোন কিছু ঘটলে তাদের কাছে সত্য ঘটনাটা জানতে চায়। সাংবাদিকদের মূখ্য ও পবিত্র দায়িত্ব চলমান ঘটনা বা বাস্তবতাকে তুলে ধরা। সে জন্য সাংবাদিকরা সমাজে মহৎ পেশাজীবী হিসাবে পরিচিত। সাংবাদিকরা যদি পুরোপুরি সৎ থেকে নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করে তাহলে সমাজ থেকে দুর্নীতি অনেকাংশে কমে যাবে। কিন্তু সাংবাদিকরা এর মর্যাদা রক্ষা করতে ব্যর্থ হচ্ছে। সাংবাদিকতার সঙ্গে জড়িত অনেকেই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। তারা অনেক সময় সংবাদ পরিবেশনে ব্লাক মেইল করে থাকে। সংবাদকে বিকৃত করে পরিবেশন, সত্য সংবাদ গোপন করে নানা রূপে নীতি বর্হিভুত কাজে লিপ্ত হচ্ছে।
বিশেষ করে উপজেলা বা গ্রামীণ পর্যায়ে সাংবাদিকতার চিত্র আরো ভয়াভয়। যে সকল সাংবাদিক জাতীয়, আঞ্চলিক ও অনলাইন পত্রিকায় গ্রামীণ বা উপজেলায় সাংবাদিকতা করেন তারা বেতন ভাতা বলতে তেমন কিছুই পায় না। দু’একটি অনলাইন বা পত্রিকায় যৎসামান্য বেতন ভাতা পেলেও তা অনিয়মিত। উপজেলা পর্যায়ে সাংবাদিকদের আঞ্চলিক পত্রিকায় প্রতিনিধিত্ব করতে হলে তাদেরকে পত্রিকা অফিসে ৩ থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত জামানত রাখতে হয়। প্রতিমাসে পত্রিকার একটি নির্দিষ্ট সংখ্যার বিল তাকে নিয়মিত পরিশোধ করতে হয়। তারা পত্রিকা অফিস থেকে বেতন ভাতা কোন কিছুই পান না। বিজ্ঞাপনের উপরে তাদের কমিশন দেওয়া হয়। গ্রামীণ সাংবাদিকদের এজেন্টের দায়িত্ব নেওয়া পত্রিকা বিক্রি না হলেও নিয়মিত ভাবে অফিসে বিল পরিশোধ করতে হয়। তা-ছাড়া পত্রিকা অফিসের বিভিন্ন ফরমায়েশ মেনে চলতে হয়। অনেক পত্রিকা অফিস সৎ, ন্যায় নিষ্ঠাবান কোন ব্যক্তিকে নিয়োগ না দিয়ে যে ব্যক্তি জামানত ও বেশি পত্রিকা চালাতে পারবে তাদেরকে নিয়োগ দেয়। এতে করে অনেক সাংবাদিক পত্রিকার বিল পরিশোধ করতে পারে না। এ অবস্থায় এক সময় তারা অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে। প্রচলিত কথায় শুরু হয় হলুদ সাংবাদিকতা। এর জন্য কিছুটা হলেও পত্রিকায় মালিক সম্পাদকের উপর দায় বর্তায়।
দেশের সকল উপজেলায় নীতিবোধের কারণে একাধিক প্রেসক্লাব, রিপোটার্স ইউনিটি, সাংবাদিক সমিতি, অনলাইন প্রেস ক্লাব, নিউজ ক্লাবসহ বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন রয়েছে। এ সকল সংগঠন ১৫ থেকে ৩০ এর অধিক সংখ্যক সাংবাদিক রয়েছে। এর মধ্যে আবার সংবাদপত্রের সঙ্গে জড়িত না এমন সাংবাদিকের সংখ্যাও রয়েছে। এ সকল ক্লাবে সাংবাদিকদের মধ্যে রয়েছে অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও নীতি নৈতিকতার দ্বন্দ্ব।
এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য ও সুস্থধারার সাংবাদিকতা চর্চার পরিবেশ সৃষ্টির জন্য সমাজের শান্তি শৃঙ্খলা ও সৃজনশীল পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে সাংবাদিকদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন জরুরী। উপজেলা পর্যায়ে গ্রামীণ সাংবাদিকরা প্রশিক্ষণের কোন সুযোগ পায় না। তাই তাদের দুই থেকে তিনটি উপজেলার সাংবাদিকদের নিয়ে বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট থেকে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা অতিব জরুরী। উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ দেওয়ার সময় সৎ ও যোগ্য ব্যক্তিকে নিয়োগ দিকে হবে। প্রতিনিধিদের নূন্যতম ভাতা প্রদানের বিষয়টি পত্রিকা মালিকের ভেবে দেখা দরকার। অনলাইন বা পত্রিকার প্রতিনিধিদের মধ্যে সংবাদের উপর পুরস্কার প্রচলন করলে গুণগক দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে। সব কিছুর উর্ধে সাংবাদিকদের দায়িত্বশীল হওয়া ও প্রকাশিত রিপোর্ট দ্বারা যেন কারো ব্যক্তিস্বার্থ পূরণ এবং জাতীর স্বার্থ ক্ষুণœ না হয় সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখা জরুরী।
সাংবাদিকরা সমাজের বিবেক। এখনও কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত ও জুলুম নির্যাতনের শিকার হলে তারা সাংবাদিকদের স্মরণাপন্ন হন। সত্য ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদটি ছাপা হোক এমনটি তাদের প্রত্যাশা। সাংবাদিকদের মন মানসিকতা, নৈতিকতা ও দৃষ্টিভঙ্গির উপর সাংবাদিকতা প্রভাবিত হয়। সাংবাদিকের দায়িত্ব হলো সত্যকে তুলে ও অসত্যের মুখোশ উন্মোচন করা। দায়িত্বশীল সাংবাদিকতা মানুষকে সচেতন করে তোলে। সততা ও সাহসিকতার সাথে পেশাগত দায়িত্ব পালনে সৎ সাংবাদিকতাই সর্বদা কাম্য।
একটি শিশুর প্রথম স্কুল তার মা-বাবা। শিশুর ওপর শিক্ষার চাপ এবং পাঠ্য বইয়ের ভারে ক্লান্ত আমাদের অবুঝ শিশুরা। মা-বাবারা চাই ভালো রেজাল্টা করলেই হবে না, গোল্ডেন এ প্লাস যে ভাবে হোক পেতেই হবে। মাত্রাতিরিক্ত সিলেবাসের ভারে শিশুদের অসহায় কান্না শুনতে পাইনা অভিভাবক ও শিক্ষকরা। আদরের সন্তানকে মানুষ গড়ার নামে কী করছি আমরা? অনুপযোগী বয়সে তাকে স্কুলে দিচ্ছি।
পরীক্ষা নামক যুদ্ধক্ষেত্রটায় ঠেলে দিচ্ছি এতটুকুন শিশুকে। স্কুলে যাওয়া, বাড়ির কাজ, একটু আরবি পড়া, একটু গান শেখা, নাচ শেখা, ক্লাস টেস্ট, পরীক্ষা, প্রাইভেট, কোচিং, গাদা-গাদা ভারী ভারী বইয়ের বোঝাা ইস। পাঁচ-ছয় বছরের একটা শিশুর ওপর কত না মানসিক নির্যাতন। এতটুকুন শিশুর কতটুকু চাপ সইবার ক্ষমতা আছে, আমরা কি একবারও তা ভেবে দেখি।
পাঁচ-ছয় বছরের শিশুকে কাক-ভোরে ঘুম থেকে টেনে তোলা হয়, যখন তার ঘুমের চাহিদা পূরণ হয় নি। ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর-জবরদস্তি করে তাকে স্কুলের জন্য তৈরি করা হয়। কী অসম্ভব নির্মমতাবোধ আমাদের আচ্ছন্ন করে রেখেছে কোন উচ্চাশায় কে জানে। আমার মাঝে মাঝে মনে হয় অভিভাবকদের নিজের সঙ্গে বোঝাপড়া করা উচিত যে আমার সন্তানকে আমি কিভাবে গড়ে তুলতে চাই।
তাকে শিক্ষিত বোধহীন নাগরিক বানাতে চাই, নাকি মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন শিক্ষিত মানুষ বানাতে চাই। নিশ্চয়ই দ্বিতীয়টি সব বাবা-মায়ের চাওয়া, তাহলে আমরা অসম প্রতিযোগিতার পেছনে কেন দৌড়াচ্ছি। এসব করে করে নিজেদের মানসিক, আর্থিক বিনাশের পাশাপাশি সবচেয়ে বড় ক্ষতিটি করছি প্রিয় সন্তানের।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ রামেক হাসপাতালের শিশু বিভাগের অধ্যাপক ডা. ছানাউল হক মিঞা বলেন, শিশুদের জন্য উপযোগী এবং সঠিক জীবনচর্চাই হচ্ছে না। এখন আমাদের পরিবারগুলোয় শ্রদ্ধা, স্নেহ-মমতা, সহিষ্ণুতা ও শর্তহীন ভালোবাসার চর্চা নেই। সবাই স্বার্থপরের মতো নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ছি। কথা হচ্ছে শিশুদের শিক্ষাদানের নাম করে তাদের জীবন থেকে নির্মল শৈশবের আনন্দমুখরতা কেড়ে নিচ্ছি।
তিনি আরো বলেন, শিশুদের এতো চাপের কারণে বিভিন্ন সময় নানা সমস্যা নিয়ে আমাদের কাছে আসে। আসনে এতো ছোট বয়সে এতো চাপ তারা সামলাতে পারে না। ‘যেনো বোঝার ওপরে শাসের আটি’ শিক্ষাজীবনে পরীক্ষা থাকবে, পড়াশোনা থাকবে এতে দোষের কিছু নেই। কিন্তু আমাদের এখানে যা হচ্ছে তা রীতিমতো একটা অসম, অনুপযোগী ও বুদ্ধিবৃত্তিহীন অ-প্রতিযোগিতা চাপিয়ে দেয়া ছাড়া আর কিছুই নয়।
বিনোদপুর ইসলামী কলেজের মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক তাসলিম বলেন, দুঃখের বিষয় হলো, আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার পুরোটাই হয়ে পড়েছে পরীক্ষাকেন্দ্রিক। শিক্ষাব্যবস্থাটা টাকা কামানোর যন্ত্রে পরিণত হয়েছে। আর এর কবলে পড়ে কোচিংয়ের নামে ৩২ হাজার কোটি টাকা রীতিমতো পকেট কেটে নিয়ে যাচ্ছেন একশ্রেণির শিক্ষা ব্যবসায়ী। তাদের পাতা ফাঁদে পা দিয়ে সন্তানকে শিক্ষিত বানানোর নামে অসহায়ের মতো টাকা তুলে দিচ্ছেন অভিভাবকরা।
তিনি আরো বলেন, টিউটোরিয়াল, ক্লাস টেস্ট, মডেল টেস্ট, প্রথম সাময়িক, দ্বিতীয় সাময়িক আবার বার্ষিক কত নামের যে পরীক্ষা নামক নিরীক্ষা হচ্ছে এই কোমলমতি বাচ্চাদের ওপর; ভাবতেও গা শিউরে ওঠে। অবস্থাটা এমন হয়েছে যে, পরীক্ষার ফাঁকে পড়াশোনা করতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। অথচ হওয়া উচিত ছিল, পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে পরীক্ষা দিতে হবে।
বিসিএস আই আর ল্যাবরেটরী হাই স্কুলের ২য় শ্রেণির শিক্ষার্থীর মা সাবিনা আক্তার বলেন, আমরা বাচ্চাদের সব সময় পড়া শোনার ওপর রাখি। আমরা একবারো ভাবি না, আমার বাচ্চাটা এতো বেশি বই পড়তে পারবে কি না। শুধু পড়ো আর পড়ো এমন কথা বলি।
তিনি আরো বলেন, আমাদের বাচ্চাদের সঙ্গে ভালো ভাবে বসে সময় দেই না। তারা কি বলতে চাচ্ছে আমরা তা কখনোই শুনিনা। বাচ্চাদের পড়া-শোনা করতে হবে এটা ঠিক আছে, কিন্তু এতো চাপের মধ্যে না।
একটা ছোট্ট গল্প। কিছু মধুর স্মৃতি। কৈশর-যৌবনে আনন্দ-বেদনার দোলাচাল। স্বজন হারানোর কষ্ট, আর্থিক দৈন্যতায় সাফল্য-ব্যর্থতা নিয়ে কঠিন বাস্তবতা মিলিয়ে চালাতে হয় জীবনের চাকা। সকলের জীবনে সংকটময় মুহুর্তগুলো সারাজীবনের স্মৃতির পাতায় নাড়া দেয়, তেমনি সুখের দিনগুলোও স্মৃতির পাতায় ভারত্ব বহন করে। আমার জীবনের নানা সুখ-দুখের ঘটনাগুলো মিশে আছে সাংবাদিকতায়। আমি একজন সংবাদকর্মী। মফস্বল পর্যায়ে সংবাদের খোঁজে ঘুরেফিরি। সারাটা দিনে নানান সংবাদ সংগ্রহ করে ঢাকা অফিসে পাঠাই। পরদিন যখন পত্রিকার পাতায় আমার ঘাম ঝড়া পরিশ্রমে ফসল সংবাদটি পত্রিকায় প্রকাশ হয় তখন আনন্দের সীমা থাকেনা। নিজেকে অনেক বেশি ভাগ্যবান মনে হয়। কিন্তু, অনেক ক্ষেত্রে সৌভাগ্যের ভাগিদার হওয়া আমার পক্ষে সম্ভব হয়না। অনেক গুরুত্বপূর্ণ সংবাদই স্থান পায়না পত্রিকায় পাতায়। তখন, হৃদয়টা ভরে ওঠে ভারাক্রান্তে। এমন ঘটনা শুধু আমার নয়- গোটা দেশে মফস্বল পর্যায়ে সংবাদকর্মীদের চিত্র এটি।
মফস্বল পর্যায়ে সাংবাদিকতার সাথে জড়িত ব্যক্তিদের অনেক চড়াই-উৎড়াই পেরিয়ে ধিরে ধিরে প্রভাবশালী জাতীয় দৈনিক পত্রিকাগুলোতে কাজ করার সৌভাগ্য হয়। আমার ক্ষেত্রে এটি ব্যতিক্রম। আমার সাংবাদিকতা জীবনটা শুরু হয়েছে একটু ভিন্নভাবে। একটি প্রভাবশালী সংবাদপত্রের মাধ্যমে সংবাদকর্মী হওয়ার সুযোগ হয়েছে আমার। সংবাদের খোঁজে ঘুরে ফিরতে হয়েছে নানাস্থানে। প্রথম দিকে সংবাদ প্রকাশ হওয়া মাত্রই আরো উৎসাহ ও উদ্দিপনায় কাজের গতি বাড়িয়ে দিতাম। অপেক্ষা করতাম কালকে আমার পাঠানো সংবাদটি পত্রিকায় কোন পাতায় স্থান পাবে? অধির আগ্রহে সকালর দিকে পত্রিকা হাতে পাওয়া মাত্রই খুঁজতে শুরু করতাম আমার সংবাদটি। একটি সংবাদ ছাপানো মানে- একটি জয়ের আনন্দ। এভাবে সংবাদ ছাপানো, না ছাপানোর উপর ভিত্তি করে আমার কর্মপরিথি বাড়তে থাকে। কিন্তু, কমতে থাকে আমার কাজের গতি। সকালের দিককার ঘটনাগুলো বিভিন্ন মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করে বিকেলে মধ্যে পত্রিকা কার্যালয়ে পাঠালেই দায়িত্ব শেষ মনে হত। এতে করে মুল ধারার সাংবাদিকতা থেকে ধিরে ধিরে পিছু হটতে শুরু করি। শুন্যতা অনুভব করি- সাংবাদিকতার দায়িত্ব পালনে। তারপরেও ঠিকে থাকে আমার সাংবাদিকতা।
আজ থেকে ২০ বছর আগেও বাংলাদেশের সংবাদপত্রগুলো মফস্বলের সাধারন মানুষের হাতে পৌঁছাতো দু’দিন পরে। ধিরে ধিরে এর উন্নতি হয়েছে। প্রতিযোগীতার বাজারে সংবাদপত্রগুলো আগের দিনের সংবাদ পরদিন সকালেই পাঠকের দোড়গোড়ায় নিয়ে আসতে শুরু করে। আর এতেও শুন্যতা অনুভব করে পাঠকেরা। পাঠকের তাৎখনিক সংবাদ পেতে মড়িয়া হয়ে ওঠে। ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়ার গুরুত্ব বেড়ে যায়। ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়া সাংবাদিকতার মুল ধারা সাথে যুক্ত হয়ে সমৃদ্ধ করে পরিধি। ব্যাপকতা বেড়ে যায় সংবাদের। এরপরেও কোথায় যেন শুন্যতা। ইন্টারনেট এই শুন্যতা দুর করার ক্ষেত্রে প্রধান সোপান হয়ে দাড়ায়। শুরু হয় তুমুল প্রতিযোগীতা। ভীত দার হয় অনলাইন সাংবাদিকতার। পাঠকের কাছে সঠিক সংবাদ দ্রুততার সাথে পৌঁছাতে সৃস্টি হয় নিউজ পোর্টাল। অল্প দিনের মধ্যেই নিউজ পোর্টালগুলো জনপ্রিয়তা লাভ করে। নতুন করে কাজের গতি সৃষ্টি হয় সংবাদকর্মীদেরও। আজ থেকে বছরখানেক আগে আমি অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘আওয়ার নিউজ বিডি’-এ কাজ শুরু করি। প্রথমের দিকে তেমন গুরুত্ব মনে না হলেও কিছুদিনের মধ্যে এর গুরুত্ব অনুধাবন করি। প্রাণচাঞ্চলতা ফিরে আসে আমার সাংবাদিকতায়। ঘটনা ঘটা মাত্রই ছুটে চলি ঘটনাস্থলে। তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে পাঠাই পোর্টালের কর্তৃপক্ষের কাছে। তাঁরা সেই সংবাদ দ্রুততার পৌঁছে দেয় পাঠকের হাতের নাগালে। তাৎখনিক সংবাদ পড়তে পেরে ইতোমধ্যে আমার এলাকায় বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে আওয়ার নিউজ বিডি পোর্টালটি। ব্যক্তি আমি ও সাংবাদিকতার যেমন একে অপরের পরিপুরক, তেমনি আওয়ার নিউজ বিডিও আমার একটি স্বত্বা। আমি একটি প্রভাবশালী জাতীয় পত্রিকা হতে যে সমস্ত বিষয়ে উৎসাহ উদ্দিপনা অনুভব করেছি। অনেক ক্ষেত্রে তার চেয়েও বেশি আনন্দিত হয়েছি এই নিউজ পোর্টালটিতে কাজ করতে পেড়ে। তবে, পোর্টালটির উদ্ধর্ত্বন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন- আমাদের অর্থাৎ আমার মত মফস্বল পর্যায়ের সাংবাদিকদের অবহেলার চোখে দেখবেন না। আমার সাংবাদিকতার উন্নয়ন মানে আপনাদের উন্নয়ন, দেশের উন্নয়ন। এ জন্য আমাদের দিকে একটু লক্ষ্য রাখুন। প্রেষণা দিয়ে সহায়তা করুন কাজের গতি বৃদ্ধিতে। এতে, নতুন প্রাণের সঞ্চার হবে সাংবাদিকতায়। সহস্রাধীক বছর টিকে থাকবে আমার ও আপনার প্রাণেরস্পন্দন ‘আওয়ার নিউজ বিডি’।
সংবাদ, সাংবাদিক ও সংবাদপত্র- এই তিনটি বিষয় আলাদা হলেও একে অপরের সাথে সম্পর্কযুক্ত। ‘নানা ঘটনার সংক্ষিপ্ত প্রকাশই সংবাদ।’ ‘যে ব্যক্তি সংবাদ পরিবেশন করে, তিনিই সাংবাদিক।’ আর ‘সংবাদ যে কাগজে প্রকাশ হয় সেটি সংবাদপত্র।’ আমরা সাধারন ধারনায়- সংবাদ, সাংবাদিক ও সংবাদপত্র বলতে এই তিনটি সংজ্ঞাকে বুঝে থাকি। আসলে কি তাই? সম্মানিত পাঠক, আসুন চেষ্টা করি এ বিষয়গুলোর উপর সংক্ষেপে বিস্তারিত ধারনা লাভের। এজন্য ৩টি ঘটনা উল্লেখ করা হলঃ-
১। একজন চালক মদ পান করে তাঁর গাড়িটি দুর্ঘটনা ফেললেন। তবে, দুর্ঘটনায় কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। পাশে দাড়িয়ে ছিলেন ট্রাফিক পুলিশের একজন সার্জেন। তিনি দুর্ঘটনা কবলিত গাড়িটি উদ্ধারে এগিয়ে আসলেন না।
২। দরিদ্র রফিক উদ্দিনের ছেলে রহিম উদ্দিন বিএ (অনার্স) পাস করেছেন। ফলাফল দ্বিতীয় বিভাগ।
৩। ৭৫ বছর বয়সী রইচ উদ্দিন। তিনি হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান। পরে তাঁর লাশ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
এখানে এক, দুই ও তিন নম্বরে যে বিষয়গুলো উল্লেখ করা হয়েছে- প্রথমটা ক্ষোভ, দ্বিতীয় আনন্দ ও তৃতীয়টি শোক সংবাদ। তবে, একজন সাংবাদিকের কাছে এ ঘটনাগুলো সংবাদ নয়। সংবাদ হত তখনি- যখন দুর্ঘটনায় হতাহত ঘটনা ঘটত, রহিম পরীক্ষার ফলাফলে প্রথম স্থান লাভ করতো ও রইচ উদ্দিন একজন সমাজ সেবক হত। তাহলে ঘটনাগুলো হয়ে উঠতো একেকটি চমকপ্রদ সংবাদ। এখানে ঘটনা ও ব্যক্তি মুল্যের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এরূপে স্থান, কাল, পাত্র, মুল্যসহ আরও বেশকিছুর উপর ভিত্তি করে সংবাদ তৈরি হয়। এবার আসা যাক, বস্তুুনিষ্ট সংবাদের দিকে। আসুন আবারও প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় ঘটনার দিকে চোখ রাখি। মনেকরি প্রথম ঘটনায় হতাহতের ঘটনা ঘটল। সুতুরাং এই সংবাদটি পত্রিকায় প্রকাশের যোগ্য। ধরুন ঘটনার সময় সাংবাদিক ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন না। তখন সোর্সের উপর নির্ভর করতে হবে তাঁকে। কিংবা সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন। বস্তুনিষ্ট সংবাদের ক্ষেত্রে তখনও একজন দক্ষ সাংবাদিককে সোর্সের উপর নির্ভর করতে হবে। এঘটনায় সংবাদটির প্রধান সোর্স হচ্ছে- পুলিশ, আহত ব্যক্তি ও প্রত্যক্ষদর্শী। এই সোর্সের উপর নির্ভর করে সংবাদটি পরিবেশন করতে হবে। এখানে সাংবাদিকের নিজস্ব কোন মতমত থাকবে না। বস্তুনিষ্ট সংবাদের ক্ষেত্রে এখানেই হাত-পা বাধা সাংবাদিক। এভাবে শুধু দ্বিতীয় ও তৃতীয় ঘটনা নয়-প্রতিটি সংবাদের ক্ষেত্রে সোর্সের উপর নির্ভর করতে হয় সাংবাদিকদের। কোন সংবাদপত্র কিংবা বৈধ সংবাদ মাধ্যমের অনুমতি নিয়ে যে ব্যক্তি প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় ঘটনা প্রকাশের উদ্দেশ্যে কাজ করে যাচ্ছে তিনিই সাংবাদিক। এক্ষেত্রে বলে রাখি। ধরুন প্রথম ঘটনাটি একজন পথচারি দেখলেন। তিনি বিভিন্ন জনকে ঘটনাটি বললেন। তাহলে তিনি কি সাংবাদিক? না, তিনি সাংবাদিক নন। তিনি ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বা সংবাদ সোর্স। এর বেশিকিছু নয়। এর আরেকটু পরে। ধরাযাক, ঘটনাটি সংবাদ আকারে পত্রিকায় প্রকাশ হল। একজন ব্যক্তি সংবাদটি পড়ে আরও কয়েকজনকে ঘটনাটির কথা জানিয়ে দিলেন। তাহলে তিনি কি সাংবাদিক? না, তিনিও সাংবাদিক নন। এক্ষেত্রে তিনি পাঠক মাত্র। অতিউৎসাহি পাঠকও বলা চলে। এবার দ্বিতীয় ঘটনায় আসি। রহিমের ভাল ফলাফলে এক ব্যক্তি আরও কয়েকজনকে রহিমের সাফল্যের ঘটনাটি জানালেন। কিংবা পত্রিকায় দেখে সুনাম করলেন রহিমের। ওই ব্যক্তি কিন্তু সাংবাদিক নন। তৃতীয় ঘটনায় রউচ উদ্দিনের মৃত্যুর খবর মাইকে প্রচার করলেন এক ব্যক্তি। অনেক মানুষ শোক সংবাদটি জানলেন। তাহলে তিনি কি সাংবাদিক? না, তিনি সাংবাদিক নন। তিনি শোক সংবাদটি প্রচারক মাত্র। আশপাশের নানা ঘটনার সংবাদ আকারে নিয়োগপ্রাপ্ত সাংবাদিক লিখিত আকারে যে সংস্থায় প্রদান করে এবং ওই সংবাদটির কর্তৃপক্ষ প্রকাশের পর জনসম্মুখে ছড়িয়ে দেয়- তাই সাধারন ধারনায় সংবাদপত্র। এখন প্রথম ঘটনায় যাই। দুর্ঘটনার সংবাদটি কোন ব্যক্তি যদি হ্যান্ডবিল ও লিফলেটের মাধ্যমে লিখিতভাবে প্রচার করতো, তাহলে কি সেটি সংবাদপত্র? না, এটি সংবাদপত্র নয়। যেকোন ব্যক্তি এ ধরনের প্রচারের ব্যবস্থা করতে পারে। এটাকে সংবাদপত্র বলা যায় না। সংবাদপত্রকে নানাবিধ নিয়ম নিতি মেনে চলতে হয়। রয়েছে প্রকাশক সম্পাদক থেকে শুরু করে রয়েছে পেস্টিং ম্যান পর্যন্ত। নানাজনকে ভাগ করে দেওয়া হয় নানান কাজ। নিউজের সোর্স থেকে শুরু করে সার্কুলেশন পর্যন্ত প্রক্রিয়া চালিয়ে পাঠকদের দোরগোড়ায় পৌঁছানোর পুরো কাজটি করতে হয় সংবাদপত্রকে। সংবাদ, সাংবাদিক ও সংবাদপত্র পুরোটায় এক নিখুঁদ প্রক্রিয়ার বিষয়। দক্ষভাবে প্রক্রিয়া চালাতে পারলেই বিখ্যাত, না পারলেই ছিটকে পড়তে হয় অনেককে। আমাদের সমাজে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ বসবাস করে। কর্ম ও চরিত্রের উপর মুল্যায়িত হন তাঁরা। তেমনি সংবাদ, সাংবাদিক ও সংবাদপত্র কর্মদক্ষতার উপর নির্ভর করে অখ্যাত, কু-খ্যাত ও বিখ্যাত হয়।
আজ ২৬ মার্চ বাংলা কিংবা বাঙ্গালীদের ঠিক তেমন ইতিহাসের দিন যে দিন গুলোর বর্ননা আজও রয়েগেছে সমাপ্তহীন, যখন চীন,জাপান কিংবা আমেরিকান পর্তুগীজরা আমার বাংলার গড়ে উঠার অসমাপ্ত কাহীনি পড়েন বা বা জানেন তখন তারা হয়তো আদর করে এভাবেই বলেন “ছোট্ট বাবুটি তোর অনেক তেঁজরে,জানিস তুই একদিন অনেক বড় হবি” তাক লাগিয়ে দিবি বিশ্বকে, তোর বুকে যে জন্ম নিয়েছিল শেখ মুজিব,ভাসানী, রোকেয়া, নজরুলরা।
স্বাধীনতা দিবসের পাশাপাশি আজ দেশের অন্যতম অনলাইন নিউজ পোর্টাল আওয়ার নিউজ বিডির প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী। ২য় প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে আওয়ার নিউজ বিডি এমন জায়গায় পাঠকদের দাঁড় করিয়েছে যে মর্যাদায় পাঠক অন্য কোন গনমাধ্যমককে সেই স্থানে বসাতে পারবে না। হয়তো অনেকে ভাবছেন প্রশাংসা করতে গিয়ে ফাজলামি করছি? আসলেই কি তাই? একটু কষ্ট করে পুরো সাইটটা ভিজিট করুনতো……. আপনি দেখতে পেয়েছেন দেশের চতুর্দিক যা কিছু ঘটছে আমাদের একদল তরুন সাংবাদিক সব সময় সাধ্যমত চেষ্টা করে চলেছে জনগনের কাছে সে বার্তা পৌঁছে দেবার জন্য।এরাই আমাদের এগিয়ে দেবার দূত,এরাই আমাদের প্রান।আজকের এই দিনে তাদের সাথে থাকায় শুধু ধন্যবাদ নয় কৃতজ্ঞতা শিকার করছি,প্রার্থনা হোক এভাবেই সাথে থাকবেন।
আপনি জানেন কি আমাদের সকল রিপোর্টার সৎ ও নিষ্ঠার সাথে সাংবাদিকতায় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। শুধু তাই নয় সঠিক তথ্য,সম সাময়িক, প্রাকৃতিক,ভ্রমন,খেলাধুলা, রাজনৈতিক,ক্রাইম সকল ধাঁজের সংবাদ পরিবেশনে সদা তৎপর। আর হ্যাঁ আওয়ার নিউজ বিডি কোন মহল, রাজনৈতিক দল,কিংবা প্রভাবশালী ব্যাক্তিদয়ের কাছে দায়বদ্ধ নয়,আওয়ার নিউজ বিডি কোন মহল বা কোন ব্যাক্তির উপর অভিযোগ করেনা,প্রয়োজনীয় তথ্যে ভরপূর সংবাদই প্রকাশ হয়। আওয়ার নিউজ বিডি মুক্তি যুদ্ধের সপক্ষে এক বলিষ্ঠ কন্ঠস্বর। আওয়ার নিউজ বিডিতে রয়েছে একঝাঁক তরুন স্টাফ যারা সুবিন্যস্ত ভাবে সাজিয়ে আসছে তারুন্যের সংবাদ মাধ্যম।
প্রিয় পাঠক আওয়ার নিউজ বিডি এমন একটি সংবাদ মাধ্যম যে সংবাদ মাধ্যমে আপনি এমন কিছু অজানা সংবাদ পাবেন যে সংবাদ গুলো অন্য কোন সংবাদ মাধ্যমে পাবেন না। আওয়ার নিউজ বিডি পারে আপনাকে বর্তমানের সাথে,অতীতের সাথে কিংবা ভবিষ্যৎ এর সাথে পরিচয় করে দিতে। আওয়ার নিউজ বিডি কোন ধর্মকেন্দ্রিক নিউজ পোর্টালও না,সব ধর্মের প্রতি যথেষ্ট শ্রদ্ধাবোধ এর পাশাপাশি কাউকে আক্রমনহীন ও যুক্তিসঙ্গত সংবাদ পরিবেশনে আওয়ার নিউজ বিডি বদ্ধ পরিপক্ব। যে পাঠক একবার আওয়ার নিউজ বিডি পড়ে,সে যেন প্রেমে পগে যায়। পাঠকের ভালবাসায় আমাদের প্রেরনার উৎস। বানিজ্য নয় পাঠকের ভাললাগায় আমাদের মূল লক্ষ্য, মূল উদ্দেশ্য। ফেসবুকে আমাদের পেজ লাইক যথেষ্ট প্রমান রাখে পাঠকের মন কাড়ার।
প্রিয় পাঠক, অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে আমাদের পেজে এত লাইক থাকা সত্যেও কেন নিউজ লিংক-এ লাইক বা কমেন্ট পড়ে না। সম্মানিত পাঠক, লাইক ভালবাসার এক প্রকার মিষ্টি প্রকাশ বা ভাললাগার বহিঃপ্রকাশ। আমাদের লাইক আসে কিন্তু পেজের লাইকের সাথে তা যথেষ্ট নয়,এর একটি কারন রয়েছে, আমরা অন্য পাঁচ, দশটা নিউজ পোর্টালেরর মতো টাকা দিয়ে পেজ প্রোমোট করে তারপর বোষ্ট পোষ্ট করে টাকায় লাইক কিংবা ভাললাগা কিংবা ভালবাসা ক্রয় করি না। আমরা কেবলই ভাললাগা বা ভালবাসাকে পন্য নয়,স্নেহ ও শ্রদ্ধাবোধেরর একাংশ ভাবি। পাঠকের কাছে আমরা আশাবাদী যে পেজের মাধ্যমে নিউজ তাদের কাছে না পৌঁছালেও তারা নিয়মিত ভাবেই আমাদের সাইট ভিজিট করেন। একটি কথা মনে করে দিতে চাই, আওয়ার নিউজ বিডি এককথায় ভিন্ন ধারার সংবাদ মাধ্যম। আপনাদের ভালবাসায়, ভাললাগায় যেন আমরা আমাদের সার্থকতার….. সবার সর্ব মঙ্গল ও সুস্থতায় দীর্ঘ জীবন কামনা করি। খোদা হাফেজ।
দেশের এক সময় যেসব সংবাদপত্র খুব প্রভাব ফেলেছিল তারমধ্যে দৈনিক আজাদ ছিল অন্যতম। আজাদ প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ব্রিটিশ আমলে ১৯৩৬ সালে। সেই থেকে আজাদ প্রকাশিত হয়েছিল টানা প্রায় ৪০ বছর।
পাকিস্তান আমলের পুরোটা ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত আজাদের অগ্রযাত্রা ছিল অপ্রতিহত। কিন্তু বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর আজাদ তার সেই যাত্রা আর অব্যাহত রাখতে পারেনি।
‘মর্নিং নিউজ’ নামে একটি ইংরেজি পত্রিকা। উন্নতমানের ছাপা এবং সংবাদ-সম্পাদনাও ছিল বৈশিষ্ট্য মন্ডিত। সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে আরো প্রকাশিত হতো পাক জমহুরিয়াত (বাংলা), পাক সমাচার (বাংলা)। তবে এগুলো জনপ্রিয়তা পায়নি। দৈনিক পাকিস্তান বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর দৈনিক বাংলা হিসেবে প্রকাশিত হয়েছিল। এ দৈনিক বিষয় মানে নাম করেছিল। দৈনিক বাংরা ভবন থেকে প্রকাশিত হতো ইংরেজি দৈনিক বাংরাদেশ টাইমস। কিন্তু গুণে মানে এর কোনোই সুনাম ছিল না। পাকিস্তান আমলে ‘দৈনিক পূর্বদেশ’ দৈনিক জনপদ’ও বেশ নাম করেছিল। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ‘বাংলার বাণী’ খুব উন্নতমানের ঝকঝকে ছাপা হয়ে প্রকাশিত হতো। উন্নতমানের না হলেও ‘গণকন্ঠ’ আলোচনায় ছিল গণ মানুষের পাঠকমহলে।
তথ্য প্রযুক্তিতে অনেক এগিয়েছে বাংলাদেশ। একথা সবাই জানে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষে আলোর মুখ দেখত শুরু করছে। ডিজিটাল বাংলঅদেশের সাথে যুক্ত হয়েছে সাংবাদিকতার চলমান প্রক্রিয়া। অনলাইন সাংবাদিকতা তাই ব্যাপক জনপ্রিয়। ‘যখনই ঘটনা তখনই সংবাদ’ হয়ে উঠেছে নিউজ পোর্টালের স্লোগান। ‘ব্রেকিং নিউজ’ হয়ে উঠেছে অনলাইন পত্রিকার নাম। চমৎকার চিন্তা-চেতনা আর মেধা ও মননের সমন্বয়।
দেশে বা দেশের বাইরে ঘটে যাওয়া সংবাদ দ্রুত পেতে আমরা ইন্টারনেটের সাহায্য নেই। বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও এখন ইন্টারনেট সেবা পৌছে গেছে। ফলে দেশের যে কোন প্রান্ত থেকেই ইন্টারনেটে সহজে খবরাখবর পাওয়া যায়। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যেই দেশে গড়ে উঠেছে অনেক অনলাইন নিউজ পোর্টাল। দ্রুত অগ্রসরমান বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে অনলাইন নিউজ পোর্টাল। কম খরচে এবং সহজলভ্য দ্রুতগতির ইন্টারনেটের কারণে এই মাধ্যমে উদ্যেক্তাদের আগ্রহও ক্রমশ বাড়ছে।
যুক্তরাষ্ট্রে ইলিনয়েস স্টেট ইউনিভর্সিটি থেকে ১৯৭৪ সালে ‘নিউজ রিপোর্ট’ নামে প্রথম অনলাই নিউজ পোর্টাল প্রকাশিত হয়। এরপর বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন সংবাদপত্র তাদের অনলাইন সংস্করণ চালু করে। তবে ২০০০ সালে যুক্তরাজ্যে থেকে প্রকাশিত সাউথপোর্ট রির্পোটার’ আধুনিক অনলাইন নিউজ পোর্টাল হিসেবে পরিচিতি পায়।
সে হিসেবে খুব কম সময়ের মধ্যেই বাংলাদেশে ২০০৪ সালে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশের প্রথম অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘বিডি নিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম’। বিশিষ্ট সাংবাদিক আলমগীর হোসেন ছিলেন এর প্রধান সম্পাদক ও অন্যতম উদ্যোক্ত। তবে আর্থিক সংকটের কারণে ২০০৬ সালের সেপ্টেম্বরে বিডি নিউজের মালিকানা কিনে নেন বিবিসি’র সাবেক সাংবাদিক তৌফিক ইমরোজ খালেদী। এর কিছু সময় পরেই যাত্রা শুরু করে আরেক অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘দ্যা এডিটর ডটনেট’। ২০০৭ সালে আলমগীর হোসেন আবারও শুরু করেন নতুন একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও বার্তা সংস্থা ‘একাত্তর নিউজ সার্ভিস (ইএনএস)’। তাবে যাত্রা শুরুর কয়েক মাসের মধ্যেই এটিও বন্ধ হয়ে যায়। বিডিনিউজের পরে অনলাইন সাংবাদিকতায় জনপ্রিয় হয়ে উছে অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘শীষ নিউজ ডটকম’। ২০০৯ সালের ১৯ আগষ্ট যাত্রা শুরু করা শীর্ষ নিউজের সম্পাদক একরামুর হক ২০১১ সালের শেষ দিকে গ্রেফতার হওয়ার পর পোর্টালটি দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল। পরবর্তীতে ২০১৩ সালের ১ জুন নতুনভাবে আপডেট শুরু করে শীর্ষ নিউজ।
২০১০ সালের ফেব্র“য়ারিতে আলমগীর’ হোসেন আবারও শুরু করেন নতুন অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘বাংলানিউ টোয়েন্টিফোর ডটকম। এর কয়েক মাস পরেই সাংবাদিক ফরিদ আহমেদও নেতৃত্ব যাত্রা শুরু করে ‘বার্তা টুয়েন্টিফোর ডটনেট’। গণমাধ্যম বিষয়ক সংবাদ প্রকাশের জন্য এই পোর্টাল বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল। আর্থিক সংকটের কারণে ২০১২ সালের শেষ দিকে বন্ধ হয়ে যায় বার্তা টুয়েন্টিফোর ডটনেট। এরপর তারই নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠা লাভ করে ‘নতুন বার্তা ডটকম’।
এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৩ সালে দেশে বেশ কিছু অনলাইন নিউজ পোর্টাল জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এর মধ্যে রয়েছে বাংলামেইল২৪ ডটকম, প্রিয় ডটকম, বিডি২৪লাইভ, দ্যা রিপোর্ট২৪ ডটকম, , পরিবর্তন ডটকম, রাইজিংবিডি ডটকম।
পাশাপাশি বাংলা ট্রিবিউন ডটকম, জাগোনিউজ২৪ ডটকম ও নিউজ বাংলাদেশ ডটকম নতুন উদ্যমে যাত্রা শুরু করছে।
২০১৪ সালের মার্চ মাসের দিকে মোঃ সাইফ রহমান এর পৃষ্ঠপোষকথায়, এ ডাব্লউ মামুন এর সভাপতিত্বে, মোঃ আরিফ মাহমুদ স্যারদের সম্পাদনায় যাত্রা শুরু করে অন্যধারার একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘আওয়ার নিউজ বিড ডটকম’। এর প্রায় জন্মলগ্ন থেকেই এ পত্রিকার সাথে জড়িত আছি আমি। বলতে গেলে এ পত্রিকা থেকে আমার সাংবাদিকতার হাতে খড়ি। নির্বাহী সম্পাদক মোঃ আরিফ মাহমুদএর অক্লান্ত পরিশ্রমে গত এক বছরেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্ধুতে চলে আসে পত্রিকাটি।
আর কথা বাড়াতে চাই না। পরিশেষে একটি কথাই বলবো আওয়ার নিউজ বিডি ডটকম নিঃসন্দেহে যুগের সাথে পাল্লা দিয়ে চল অশ্লীলমুক্ত একটি অনলাইন পত্রিকা। যে খবরের জন্য পাঠক সারদিন উন্মুখ হয়ে থাকে সেই খবর আমাদের তর্জনীব কাছে এসে উপস্থাপিত হয় শুদ্ধ মনন নিয়ে। প্রশান্তি আর একান্ত বার্তাটিই আমার নয়ন জুড়ে মেলে ধরে এই বা কম কি? কিছু মান সম্মত বিজ্ঞাপণ আর অর্থনৈতিক সহযোগিতা পেলে আমাদের দেশের জনপ্রিয় কিছু পত্রিকাকেউ হার মানাবে আমাদের এই আওয়ার নিউজ বিডি ডটকম। এই প্রত্যাশা থেকে চির ভাস্বরের কামনা আর যুগ যুগ বার্তা বহন করা সামগ্রিক স্বপ্ন চোখে লালন করে এগিয়ে যাবার শুভ কামনা নিরন্তর…….।
স্বাধীনতার পর আমরা আসলে কী পেয়েছি আর কী পাইনি এ নিয়ে নতুন প্রজন্মের কয়েকজন বন্ধু-বান্ধবকে নিয়ে সেদিন ক্লাসের ফাঁকে কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে আলোচনায় মেতেছিলেন সাভারের গণবিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের একদল তরুণ শিক্ষার্থী।
স্বাধীনতা আমাদের কোটি প্রাণের চাওয়া ছিল। ১৯৭১ সালে ত্রিশ লাখ প্রাণের বিনিময়ে এ কাঙ্ক্ষিত চাওয়ার বাস্তবায়ন ঘটেছে দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ করার মধ্য দিয়ে। তবে স্বাধীনতা পূর্ববর্তী সময়ে এই অধরা স্বাধীনতাকে ঘিরে ছিল বাংলার মানুষের নানা স্বপ্ন। এই স্বাধীনতার ৪৫বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। ৪৫বছর পর অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগতে পারে, আমরা আমাদের স্বপ্নের কতটা পূর্ণতা দিতে পেরেছি। এ নিয়ে নানা মতভেদও তৈরি হতে দেখা যায় নানা জনের মধ্যে।
বছর ঘুরে আবার এলো স্বাধীনতার মাস। ২৬ মার্চ, আমাদের মহান স্বাধীনতা দিবস। আর এ মাসে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে লক্ষ্য করা যাচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের আবেশ। নিয়মিত ক্লাস, ক্লাস-টেস্ট, অ্যাসাইনমেন্ট ইত্যাদির মাঝেও অবিরাম বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আড্ডা হয় প্রতিটি ক্যাম্পাসেই কিন্তু স্বাধীনতা নিয়ে আড্ডা খুব কমই চোখে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে।
স্বাধীনতার পর আমরা আসলে কী পেয়েছি আর কী পাইনি এ নিয়ে নতুন প্রজন্মের কয়েকজন বন্ধু-বান্ধবকে নিয়ে সেদিন ক্লাসের ফাঁকে কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে আলোচনায় মেতেছিলেন সাভারের গণবিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের একদল তরুণ শিক্ষার্থী।
আইন বিভাগ ১১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এনায়েতউল্লাহ কৌশিক বলেন, আমাদেরকে স্বাধীনতার মূলনীতিগুলো ধরে রেখে এগোতে হবে। তাহলেই স্বাধীনতার প্রকৃত সুফল আমরা পাবো। আর প্রত্যেকেই যদি নিজের অবস্থান থেকে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করি তাহলেই স্বাধীনতার মূল সৌন্দর্যে সাজাতে পারব আমাদের দেশ।
ফার্মেসি বিভাগের শিক্ষার্থী সারা বেনজীর জানান, আমি মনে করি আমরা সঠিক জায়গাতেই আছি। স্বাধীনতার পরবর্তী সুবিধাগুলো আমরা ঠিকভাবেই পেতে শুরু করেছি।
ফার্মেসি শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী সামিয়া ইসলাম উপমা বলেন, স্বাধীনতার পূর্ববর্তী সময়ে আমি ছিলাম না। তবে ইতিহাস থেকে যা জেনেছি তার ভিত্তিতে বলতে পারি আমরা তখনকার সময়ের চেয়ে এখন অনেক ভালো আছি।
একই বিভাগের শিক্ষার্থী দীপ সাহা জানান, আসলে স্বাধীনতার পর আমরা কিছুই পাইনি এই কথার পক্ষে আমি নই। সব কিছুর মধ্যেই কিছু না কিছু অসঙ্গতি থাকবে। পৃথিবীর কোনো কিছুই শতভাগ সফল হয় না। আর আমাদের স্বাধীনতা তো একটা বিশাল ব্যাপার। আমি মনে করি আমরা উন্নতির পথে এগোচ্ছি। আইন বিভাগের শিক্ষার্থী বিলকিস আক্তার ঐশী বলেন, আমরা যখন দেখি আমাদের ছাত্ররা অধ্যয়নের সঠিক পরিবেশ পাচ্ছে না, তখন আমি কিছুতেই ভাবতে পারি না আমরা কী সত্যিকারের স্বাধীনতা পেয়েছি?
একই বিভাগের শিক্ষার্থী ফারহানা দিলশাদ মৌ জানান, আফসোস! নামে আমরা স্বাধীন হলেও স্বাধীনতার সুফল আমরা অর্জন করতে ব্যর্থ হয়েছি। ফিজিওথেরাপী বিভাগের শিক্ষার্থী কায়েস আহমেদ জীবন বলেন, মার্চের দিনগুলোতে আমাদের অনেক অর্জন আছে, তার মধ্যে বঙ্গবন্ধু’র ঐতিহাসিক ভাষণ ও ২৬ মার্চে স্বাধীনতার ঘোষণার পর লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের এ দেশ। স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের জন্য প্রতি বছর স্বাধীনতা দিবস পালিত হয়। তাই স্বাধীনতা দিবসের গুরুত্ব সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে।
আইন বিভাগের শিক্ষার্থী মুন্নি আক্তার জানান, স্বাধীনতার ৪৫ বছর পেরিয়ে গেছি আমরা। তারপরও হয়তো সত্যিকারের স্বাধীনতার স্বাদ পেতে আমাদের আরও অনেকদিনের প্রয়োজন হবে। তবে যে যাই বলুক না কেন সবার প্রত্যাশার জায়গা একটাই। ‘একটি সোনার বাংলাদেশ।’
নানি সবে কাঠের চুলায় ভাত বসিয়েছেন। মা, খালারা তখন সবজি, তরকারি কেটে দুপুরের খাবার যোগাড়ে সাহায্য করছেন। গোসলও সারা হয়নি কারও। ঘরদোর গোছানোও বাকি। এমন সময় হঠাৎ গুলির শব্দ। অমনি সব ফেলে ছুট। খানেরা আসছে… খানেরা আসছে….পালা.. পালা…। তারপর গ্রামের কোনো জঙ্গলময় জায়গায় লুকিয়ে থাকা, নতুবা শহরে গিয়ে আশ্রয় নেওয়া।
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় এমন ঘটনা অনেকবার ঘটেছে বলে শুনেছি মায়ের মুখে। মায়েরা চার পাঁচ বোন ছিলেন। তাই পাকিস্তানি হায়েনাদের ভয়টা একটু বেশিই ছিলো তাদের।
সাতক্ষীরার টাকি, হেঙলগঞ্জ, বসিরহাট সংলগ্ন এলাকা ভাতশালা আমার নানাবাড়ি। মুক্তিযুদ্ধের সময় ৯ নম্বর সেক্টরের অধীনে থাকা এ এলাকাটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ ছিলো বলেই জানি। মায়ের শিক্ষক ক্যাপ্টেন শাজাহান ছিলেন মুক্তিযোদ্ধাদের অন্যতম শক্তি।
বাবার গল্পটা আবার আলাদা। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। লেখালেখি করেন, আঁকেন, প্রচ্ছদ করেন। সঙ্গে রাজনীতিও। অস্ত্র হাতে মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার জন্য টাকি ক্যাম্পে দিতে গিয়েছিলেন পরীক্ষা। বিএ পাস ছিলেন, তাই কমিশন ৠাংকে ভাইবা নেন সেক্টর কমান্ডার মেজর জলিল ও আ স ম রব। কিন্তু মেডিকেলে উত্তীর্ণ হলেও মেজর জলিল সম্মুখ যুদ্ধে যেতে বাধা দেন। বাবার বুকের বাঁপাশে একটি জন্মদাগ আছে। সেটি দেখে বলেন, তোমার অস্ত্র হাতে যুদ্ধে যাওয়ার দরকার নেই। তোমার ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। নিতান্ত যদি না শোনো তাহলে পলিটিক্যাল কোরে কাজ করো।
সে নির্দেশনা মেনেই শেষ পর্যন্ত কাজ করেছেন। বসিরহাট, টাকি অঞ্চলেই ছিলো তাদের বিচরণ। রাজাকাররা খবর পেয়ে দাদাবাড়ি গিয়ে ঘরবাবাড়ি জ্বালিয়ে দিতে চেয়েছে। বাবারা তিন ভাইয়ের দুজন তখন সরকারি চাকরি করতেন। বাবাকে নিয়ে নানা ধরনের মিথ্যাচারিতা করতে হয়েছে দাদাকে। তবু বাড়ি থেকে হাঁস, মুরগি ধরে নিয়ে যাওয়া, গাছের ফল পেড়ে নেওয়ার মতো ছোটলোকি করতে দ্বিধা করেনি পাকিস্তানি দোসররা।
বহুদিন বাড়ি ফিরতে না পেরে বাবা গোপনে একদিন দাদা-দাদির সঙ্গে দেখা করতে ইছামতি নদী ধরে পা বাড়িয়েছিলেন বাড়ির পথে। কিন্তু সে যাত্রা হতে চলেছিলো শেষ যাত্রা। পাকিস্তানি সেনাদের অতর্কিত গুলির ভেতর নদীর কর্দমাক্ত ভেড়িতে অন্ধকারে শুয়ে কাদা মেখে বেঁচে গিয়েছিলেন সেদিন। যার ফলস্বরূপ পরবর্তীতে শ্বাস নিতে পেরেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশে।
আমাদের প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি। দেখেনি স্বাধীনতার সময়কার সেই উত্তাল দিনগুলি। দেখেনি বিজয়ের পর সাত কোটি বাঙালির স্বাধীনতার বাঁধভাঙা আনন্দ-উচ্ছ্বাস। আমাদের চুলায় ভাত চাপিয়ে শঙ্কায় থাকতে হয় না রান্না শেষ হবে কিনা, বাড়ি ফেরার পথে পা বাড়িয়ে ভাবতে হয় না রাজাকাররা পথে ওত পেতেছে কিনা কিংবা কোনো খাকি পোশাকধারী হায়েনা তাক করে আছে কিনা বন্দুকের নল। পরাধীনতার শিকল ভাঙতে মায়ের অশ্রুভেজা আশীর্বাদে আমরা এখন স্বাধীন।
এখনও যখন দেখি পায়ে ও পিঠে গুলির দাগ নিয়ে বেঁচে থাকা আমার এক দূর সম্পর্কের নানা টিভিতে স্বাধীনতা বিরোধীদের দেখলে মুখ ঘুরিয়ে পেছন ফিরে বসছেন, তখন ভাবি কতটা ঘৃণা করা যায় পাকিস্তানি ও তাদের দোসর রাজাকার, আলবদর, আল শামসদের। তরুণ প্রজন্মের কাছে এটি শক্তিও বটে।
এতো কষ্টের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন এ দেশে এখনও যখন দেখি যে লোকটি জীবনে কোনোদিন খেলা দেখে না সেও টিভির সামনে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ-পাকিস্তানের খেলা দেখছে আর পাকিদের পক্ষে হাততালি দিচ্ছে তখনও ঘৃণা হয়। সে ঘৃণাও বোধহয় ঠিক ওই মুক্তিযোদ্ধা নানার মতোই। যখন শুনি পাকিস্তান ছিলো ভালো ছিলো, বাংলাদেশ হিন্দু রাষ্ট্র হয়ে যাবে, ভারত হয়ে যাবে তখনও ঘৃণা হয়- মুর্খতার। যখন কোনো একটি জেলাকে পাকিস্তানের লেজ ধরে টিকে থাকা জামায়াত-বিএনপি ‘মিনি পাকিস্তান’ বানানোর অপচেষ্টা করে তখন ক্রিকেটার মুস্তাফিজ-সৌম্যরা প্রমাণ করে দেয় এটা বাংলার মাটি, বাংলাদেশ- অপশক্তির কাছে মাথা নোয়াবার নয়।
স্বাধীনতা সেটাই যা শুধুই সামনে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখায়। ভালোবাসতে শেখায় নিজেকে, নিজের দেশের মানুষকে, মাটিকে। নিজেকে ভালো না বাসলে দেশকে ভালোবাসা যায় না। এগিয়ে যাওয়া যায় না উন্নতির পথে।
স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ আমরা দেখিনি শুনেছি, পড়েছি বাবার এগিয়ে দেওয়া বইয়ে। বই পড়েই জেনেছি শেখ মুজিবুর রহমানের বঙ্গবন্ধু হয়ে ওঠার গল্প, কবিতায়, গল্পে পড়েছি কষ্টার্জিত স্বাধীনতার প্রতিটি মাইলফলক, চেতনার কথা।
সেসময়ের প্রতিটি গান, ছবি, চরমপত্র, শোনা গল্প আজও রক্ত টগবগিয়ে তোলে। সেটাই এগিয়ে যাওয়া, বেঁচে থাকার শক্তি, প্রেরণা। এই শক্তিকে আঁকড়ে ধরেই এগিয়ে যাচ্ছে দেশ, প্রিয় মাতৃভূমি আমার।
চারদিকে নিস্তব্ধ। জনকোলাহল থেকে একটু দূরে অবস্থিত, ইতিহাসের স্মৃতিতে অম্লান হয়ে থাকা একটি জায়গা। নাম তার বধ্যভূমি স্মৃতিস্তম্ভ। প্রকৃতপক্ষে আমাদের স্বাধীনতার প্রতীক এ বধ্যভূমি স্মৃতিস্তম্ভ। যাতে জড়িয়ে আছে হাজার হাজার মানুষের ত্যাগ, নির্যাতিত মা-বোনের হাহাকার। আর স্বাক্ষী হয়ে আছে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ও এদেশীয় সহচরদের নারকীয় গণহত্যা,নারী নির্যাতন, লুঠতরাজ ও অন্যান্য ধংসযজ্ঞের বিবরণ হিসেবে। দূর থেকে দেখলে মনে হয় খোলা আকাশের নিচে বধ্যভূমি স্মৃতিস্তম্ভটি নির্ভিক প্রহরীর মতো মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ শামসুজ্জোহা হল থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে এই বধ্যভূমি স্মৃতিস্তম্ভটি অবস্থিত। ১৬.১২.২০০০ তারিখে উপাচার্য এম সাইদুর রহমান এ বধ্যভূমি স্মৃতিস্তম্ভের ভিত্তিপ্রস্তর করেন। বধ্যভূমি স্মৃতিস্তম্ভটি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালার অন্তর্ভুক্ত।
বধ্যভূমি স্মৃতিস্তম্ভটি সমতল ভূমি থেকে বেশ খানিকটা উঁচু করে বাঁধানো। চারদিকে হাজারো ফুলের অপরুপ শোভা আর গাছের পাতার সবুজ চাদরে মোড়ানো। তার ভেতরে একটি বড় কূপকে ঘিরে বানানো হয়েছে কংক্রিটের গোলাকার বেদি। কূপের গভীর থেকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে ৪২ ফুট উচ্চতার চৌকোনো ইটের স্তম্ভ। মনোরোম এই পরিবেশে দাঁড়িয়্ওে চোখের সামনে ফুঁটে উঠে মুক্তিযুদ্ধের এক টুকরো ইতিহাস। পাকিস্তানি মিলিটারি আর এদেশীয় দোসরদের নারকীয় হত্যাযজ্ঞের সেই ভয়াল স্মৃতি।
দীর্ঘ নয় মাস মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন রাজশাহীর বিভিন্ন এলাকা থেকে শত শত মানুষকে ধরে নিয়ে এসে এখানে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় এখানে। তাদের স্মৃতিকে অম্লান করে রাখার উদ্দেশ্যেই এই স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের নয়মাস পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী শহীদ শামসুজ্জোহা হলকে তাদের ক্যান্টনমেন্ট হিসেবে ব্যবহার করে। সেখানে রাজশাহীর বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সাধারণ মানুষদের ধরে নিয়ে এসে অমানুষিক নির্যাতন করে।এই নরপিশাচদের হাত থেকে রক্ষা পায়নি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, ছাত্র,কর্মচারী এমনকি তাদের পরিবারের সদস্যর্ওা । নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আবু সাঈদ, রাবির সংস্কৃত ভাষা বিভাগের সহকারী সহকারী অধ্যাপক সুখরঞ্জন সমাদ্দার এবং মনোবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক মীর আব্দুল কাইয়ুমকে। এছাড়্ওা গণিত বিভাগের মুজিবর রহমান দেবদাস কাজী সালেহ, ফলিত পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ড. রাকিব , পরিসংখ্যান বিভাগের কাজী সালেহ, এবং বাংলা বিভাগের প্রভাষক ড.আবু হেনা মোস্তফা কামালসহ অসংখ্য মানুষকে ধরে নিয়ে অমানুষিক নির্যাতন চালায়।তাদের লালসার শিকার হয় অসংখ্য নারী। এই হলের পেছনে এক বর্গমাইল এলাকাজুড়ে ছিলো বধ্যভূমি। এছাড়্ওা রাবি ্সংলগ্ন কাজলা এলাকা এবং রেল্ওয়ে স্টেশন এলাকায় প্ওায়া যায় আরো কয়েকটি গণকবর।
রাবির এই বধ্যভূমি স্মৃতিস্তম্ভে প্রতিদিন শতাধিক দর্শনার্থী ঘুরতে আসেন। শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা আর মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্ধুদ্ধ হয়ে ঘুরতে এসেছেন মসজিদ মিশন একাডেমির একঝাঁক তরুণ শিক্ষার্থী। কথা হলো ঘুরতে আসা আসিফ ইকবালের সাথে। তিনি বললেন, সুযোগ পেয়েই ঘুরতে এসেছি। এসে খুবই ভালো লাগছে। পাঠ্যপুস্তকের বাইওে লাখো শহীদদের এ আত্মত্যাগের কথা সরাসরি জানতে পারছি। ঘুরতে এসে মনের ভেতর দেশপ্রেম জন্ম নিচ্ছে।
কথা হলো আরেক দর্শনার্থী পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী কামরুল হাসানের সঙ্গে। তিনি বললেন ,মানসিক প্রশান্তির জন্য মাঝে মাঝেই এখানে ঘুরতে আসি। তবে এটা দেখে খারাপ লাগে যে অনেকেই জুতা পায়ে বেদিতে উঠে, অনেকে জন্মদিন পালন করতে এখানে আসে,হৈ হুল্লোর করে। মনে হয় তারা যেন শহীদদের আত্মত্যাগের কথা ভুলে গেছে। শহীদদের রক্তের বিনিময়ে আজ আমরা স্বাধীনতা লাভ করেছি। সত্যিই শহীদদের আত্মত্যাগ থেকে অনুপ্রেরণা পাচ্ছি।
ময়মনসিংহ জেলা ও তার পাশ্ববর্তী জেলার সাধারন মানুষের স্বপ্ন বুননের হাতিয়ার জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববদ্যালয় । দেশের অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এর তুলনায় আয়তনে ছোট পরিসরের হলেও এখানকার শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ গুলোর মধ্যে এটি একটি। সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া নানা ইতিবাচক ও নেতিবাচক ঘটনা প্রবাহের মধ্যে দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে আমাদের এই প্রাণের ক্যাম্পাস জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়। সবুজে ঘেরা ৪২ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত এই ছোট্ট ক্যাম্পাসটিতে অফুরন্ত প্রাণের মেলায় ছাত্র-শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী মিলেমিশে সবাই একাকার। এই সুন্দর মনোরম পরিবেশে আজ আমরা গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করি প্রেম,দ্রোহ,সাম্যের কবি কাজী নজরুল ইসলাম কে। যার নামে আজ আমাদের এই প্রিয় বিদ্যাপীঠ দেশের বুকে তথা বিশ্বের কাছে জাতীয় কবির একটি নামফলক হিসেবে মাথা তুলে দাড়িয়ে আছে।
কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১ বছরের পথচলা অগণিত সাফল্যে ভরপুর। আবার অনাকাঙ্ক্ষিত অসংখ্য দুর্ঘটনায়ও জর্জরিত।
সাম্প্রতিক সময়ের কিছু ইতিবাচক অর্জনের মধ্যে নতুন এই বছরের উজ্জ্বল অর্জন, আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় প্রতিযোগীতায় বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ৩৪টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক পুরষ্কার জিতে সেরা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে উল্লেখ করার মত। এবং সম্প্রতি নতুন এই বিভাগগুলো যেমনঃ ফিল্ম এন্ড মিডিয়া বিভাগ, আইন ও বিচার বিভাগ, ফকলোর বিভাগ, এনভায়ার্নমেন্টাল সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগগুলোর আগমনে তথা প্রযুক্তি এবং তথ্য নির্ভর আধুনিক পাঠদানের আরেক নতুন মাত্রা সৃষ্টি করেছে।
এছাড়াও শিক্ষাদানের মৌলিক ও ব্যবহারিক গুণাগুণ বর্ধনের জন্য শিক্ষকদের দেশ ও বিদেশে প্রশিক্ষণের সুযোগও করে দিচ্ছে বিস্তর। শিক্ষকদের পাশাপাশি মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীরা অনেকেই বর্তমানে নিজ ক্যাম্পাসে শিক্ষক হিসেবে যোগদানের সুযোগও পাচ্ছে।
এসব সুযোগ সুবিধার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মানসম্মত শিক্ষাদানে প্রত্যয়ী করে গড়ে তুলতে বিভাগীয়, অবকাঠামোগত, আবাসন, পরিবহন উন্নয়নের পাশাপাশি, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয়ভাবে আরো আধুনিক সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধিতে তৎপর অতিব জরুরী।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে আধুনিক ও মানসম্মত বই-পুস্তকের সমাগম ঘটাতে হবে দক্ষ মেধাবী শিক্ষার্থী তৈরী করতে। গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের জন্য অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগগুলোর জন্য উন্নত ল্যাব এবং অনলাইন প্রকাশনা সহ ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের আরো সুযোগ বৃদ্ধি করে যুগোপযোগী করে গড়তে হবে।বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিনিয়ত সভা, সেমিনার, ওয়ার্কশপ আয়োজন করে শিক্ষার্থীদের উৎসাহী করে কর্ম চঞ্চল করে তুলতে হবে।
এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে দ্রুত গতির ওয়াই-ফাই চালিত ইন্টারনেট সুবিধার ব্যবস্থা করে দিতে হবে যাতে করে আধুনিক শিক্ষণ পদ্ধতির দ্বারা নিজেদের কে আরো আধুনিক করে তোলার সুযোগ তৈরী করতে পারে।
ছাত্র-ছাত্রীদের বিষয়গত জ্ঞানার্জনের সঙ্গে সঙ্গে সামাজিকভাবে আন্তরিক করে তুলতে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য পর্যাপ্ত আবাসিক হল (বাসস্থান) তৈরী করতে হবে এতে করে ময়মনসিংহ ত্রিশালে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের দূরত্বটুকু অনেক নিকটবর্তী ও যোগাযোগ নির্ভর করে তুলতে এবং আমাদের এই প্রাণের ক্যাম্পাসকে চাঞ্চল্যে ও তারুণ্যে নির্ভর করে তুলতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করবে।
এছাড়াও একসঙ্গে থাকার মাধ্যমে ছাত্র-শিক্ষকের সম্পর্কোন্নয়ন ও তাদের নিকটবর্তী করে বন্ধু হিসেবে গড়ে তুলতে অনস্বীকার্য ভূমিকা পালন করবে ।
এসব কাংখিত উন্নয়নের পাশাপাশি আসংখ্য হৃদয়বিদারক দুর্ঘটনাও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্জন কে করছে নির্লিপ্ত । এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের তারণ্যে এবং আনন্দঘন মূহুর্তে অনাকাংখিত দুর্ঘটনাগুলো একেবারেই বেমানান। তারপরও আমাদের জানা দরকার আসলে দুর্বলতা কোথায়…? কোন কোন নেতিবাচিক দিকগুলো আমাদের পরাজয় ডেকে আনছে…!
অন্যদিকে জানা যায়, শুধু রাজনৈতিক পরিচয় বহন করে কিছু ছাত্র-শিক্ষক সুবিধাভোগী হয়ে উঠেছে এবং একই কাজে নতুনদেরও প্ররোচিত করছে। সবচেয়ে ক্ষতিকর দিক হলো, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় অনেকেই এমনটি ভাবা শুরু করেছে যে, রাজনীতি ও রাজনৈতিক পরিচয় ছাড়া কোন কিছু হয় না । অর্থাৎ একাডেমিক কর্মকান্ডে করো বা না করো রাজনৈতিক পরিচয় অটুট থাকলে সব হবে।
শুধু এই কারণে শিক্ষক সহ ছাত্র সমাজ নানা খণ্ডে বিভক্ত হতে চলেছে আর এই বিভক্তির সুযোগেই স্থানীয় এবং কেন্দ্রীয় রাজনীতির অনুপ্রবেশের রাস্তাটা সহজ করে দিতে পারে । যা পরবর্তীতে জন্ম দিতে পারে অসংখ্য অপ্রতাশিত ও অনাকাংখিত ঘটনা ।
আর এরই মধ্যে দিয়ে বেড়ে উঠা নতুন প্রজন্ম মেধায় ও মননের কতটুকু প্রয়োগ করতে পারবে তা প্রশ্ন থেকে যায়?
তাই একমাত্র শিক্ষকরাই পারেন বিশ্ববিদ্যালয় এবং ছাত্র-ছাত্রীদের ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে সহায়ক শক্তি হতে। একজন শিক্ষকের ক্ষণিক বন্ধুসুলভ আচরণ অনেক ছাত্র ছাত্রীর জীবন পরিবর্তন করে দিতে পারে ।
আর তাই এখানকার প্রতিটি শিক্ষার্থী আশাবাদী যে, আমাদের ছাত্র-ছাত্রী এবং শিক্ষকরাই শিক্ষা ও নতুন নতুন গবেষণায়, সৃষ্টিশীলতায় যৌথ অবদানের মাধ্যমে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় কে পরিচিত করে তুলবে । এবং সবাই একত্রে ব্যক্তি ও রাজনৈতিক স্বার্থের ঊর্ধ্বে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়, দেশ ও জাতির জন্য কাজ করে যাবো।
আকাশের মেঘগুলো যেন উড়ে উড়ে এসে বসেছে পাহাড়ের এক একটা কোলে। আর সকাল-সন্ধ্যা প্রায় সময়ই মেঘের খেলা যা সাজেকের সবচেয়ে অন্যতম আকর্ষণ। আপনার চোখ যেদিকে যাবে, দেখবেন শুধুই মেঘ আর রংয়ের খেলা। আর আপনি যদি সর্বোচ্চ চূড়া থেকে নিচে দূরের গ্রামগুলোর দিকে তাকান তাহলে মনে হবে পটে আঁকা যেন এক আধুনিক কোনো ছোট্ট শহর!
বদলে যাওয়া সাজেকের মানুষের মাঝেও এসেছে এক অনন্য পরিবর্তন। এই বদলে যাওয়াকে অনেক স্থানীয় লুসাই ও ত্রিপুরাদের ইতিবাচক হিসেবে দেখলেও কারও কারও আছে ভিন্ন ভিন্ন মত। সবচেয়ে যা দেখবেন রাতের সাজেক যা আপনাকে অনেক সুন্দর একটা দৃশ্য দিবে। বিদ্যুৎ নেই তবুও সোলারের মাধ্যমে এখানে চলে সবকিছু।
সকালে ঘুম থেকে উঠে চোখ খুললেই মনে হবে, মেঘের চাদরে ঢাকা রয়েছে এই সাজেক। এই মধুর পাহাড়ের উঁচু থেকে মেঘে মেঘে লাফ দিতে ইচ্ছা করতে পারে যে কারোর! প্রাকৃতিক নিসর্গ সাজেক পর্যটকদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে। পর্যটনবান্ধব সাজেক প্রতিষ্ঠায় সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে গত কয়েক বছরের প্রচেষ্টার ফসল আজকের সাজেক।সাম্প্রতিক সময়ে ভ্রমণ পিপাসু মানুষদের কাছে যে কয়টি ভ্রমণ গন্তব্য সবচেয়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে তার মধ্যে অন্যতম হল রাঙামাটি জেলায় অবস্থিত সাজেক ভ্যালী।
প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য্যের এক অনন্য আঁধার আমাদের মাতৃভূমি রূপসী বাংলা । আমরা বিভিন্ন দেশের গ্রীন ভ্যালী দেখতে যাই বা দেখার স্বপ্ন দেখি। কিন্তু আমাদের দেশেও আছে তেমনই এক অপরূপা গ্রীন ভ্যালী, যার নাম সাজেক ভ্যালী। আকাঁবাকা পাহাড়ী পথ বেয়ে মেঘের রাজ্যের ভিতর দিয়ে সাজেক যাওয়া সত্যিই অসাধারন। সাজেক রাঙ্গামাটি জেলার সর্ববৃহৎ ইউনিয়ন। সাজেক যদিও রাঙ্গামাটি জেলায় অবস্থিত তবে যাতায়াতের সহজ পথ খাগড়াছড়ি-দিঘিনালা রোড। রাঙামাটির অনেকটা অংশই দেখা যায় সাজেক ভ্যালি থেকে। খাগড়াছড়ি থেকে ৬৯ কি.মি. এবং বাঘাইছড়ি উপজেলা থেকে ৩০ কি.মি. দুরের সাজেকের পুরোটাই পাহাড়ে মোড়ানো পথ। প্রকৃতির এই রুপ যেন রাঙামাটির ছাদ! নয়নাভিরাম অরণ্যভূমি আর পাহাড়ের বন্ধনে যেখানে মেঘের দল প্রেমে মেতে থাকে।
খাগড়াছড়ি থেকে সাজেক যেতে পরবে বেশ কিছু পাহাড়ী বাজার যেখানে সকালের নাস্তা খাওয়া যাবে। এর মধ্যে বাঘাইহাট বাজার, মাছালং বাজার অন্যতম। মাছালং বাজার এলাকা সাজেক ইউনিয়নের প্রধান কেন্দ্রস্থল। এখান থেকে সাজেকের দূরত্ব ১৮ কি.মি.। পাশের সীমান্ত ঘেঁষা ভারত থেকে আসা মাছালং নদীর অববাহিকায় গড়ে উঠেছে এই বাজার।
যাওয়ার পথে দেখা যাবে পাহাড়ী লোকালয়, ঝুম চাষ, বিভিন্ন নদী, আর্মি ও পুলিশ ক্যাম্প। এর বাইরে পুরোটা পথ জুড়ে সবুজ পাহাড়, যা নিজেকে আবৃত করে রাখে কুয়াশার নরম চাদরে। কুয়াশার ঘনত্ব ভেদ করে মাঝে মাঝে গাড়ি চালানো বেশ কষ্টকর হয়। যাওয়ার পথে মোট চারটি আর্মি ও পুলিশ ক্যাম্প এ রিপোর্ট করতে হবে।
রুইলুই পাড়া সাজেক উপত্যকার মূল কেন্দ্র। সাজেক ভ্যালীর বিজিবি ক্যাম্প থেকে ১ কি.মি. আগে রুইলুই পাড়ায় লুসাই, পাংখোয়া, ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর বসবাস। পাড়ার সবগুলো বাড়ির রং লাল-সবুজ। এছাড়া সাজেক থেকে ২০/২৫ মিনিটের হাঁটা পথ কংলাক পাড়া। পাংখোয়াদের বসবাস এখানে। সব মিলিয়ে ১০ টি পরিবারের ১০০ সদস্যের বসবাস হবে। বিশাল পাথরখণ্ডের পাদদেশেই কংলাক পাড়ার অবস্থান। কংলাকের পাথরচূড়ায় দাঁড়িয়ে পুরো সাজেক উপত্যকা চমৎকারভাবে এক নজরে দেখা যায়। কংলাক পাড়া রাঙ্গামাটি জেলার অন্যতম উচ্চতম স্থান, যার উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২০০০ ফিট উপরে। কংলাক পাড়া থেকে আকাশ পরিষ্কার থাকলে ভারতের লুসাই পাহাড় দেখা যায়। এই লুসাই পাহাড় থেকে বাংলাদেশের কর্ণফুলী নদীর উৎপত্তি হয়েছে যা রাঙ্গামাটি হয়ে চট্টগ্রামের ভিতর দিয়ে এসে বঙ্গোপসাগড়ের সাথে মিলেছে।
এই সাজেকে একসময় যেখানে বিশ্রামের ব্যবস্থা ছিল না, ছিল পানির কষ্ট। এখন সবকিছুই হাতের নাগালে। আর পর্যটকদের ভিড়ও রয়েছে চোখে পরার মতো। সাজেকের মূল কেন্দ্র রুইলুইতে পানির সংকট দূর করতে নির্মিত হয়েছে জলাধার। চালু করা হয়েছে ‘পাহাড়ি রেস্তোরাঁ’।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী সাজেক সফরে এসে মুগ্ধ হয়ে এ স্থানটিকে আরো বেশী দৃষ্টিনন্দন ও সর্বসাধারণের জন্য সহজতর করতে গ্রহণ করেছেন নতুন প্যাকেজ। রাষ্ট্র প্রধানদের সে প্যাকেজ’কে বাস্তবে রূপ দিতে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চট্টগ্রামস্থ ২৪ পদাতিক ডিভিশনের সদস্যরা।
মনোমুঙ্কর অত্যাধুনিক দুটি রিসোর্ট নির্মাণ করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। এই দুটিতেই রয়েছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের বিশেষ সুবিধা। এছাড়াও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) আলোর উদ্যোগে ‘আলো রিসোর্ট’ ইতোমধ্যে চালু।
ইতিমধ্যে আবার অনেক ভ্রমণ পিপাসু মানুষ বলছেন ‘বাংলাদেশের সাজেক নাকি ভারতের দার্জিলিং’।
খাগড়াছড়ি জেলা শহর থেকে দীঘিনালা হয়ে যেতে হয় সাজেকে। পার্বত্য জেলা রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার হচ্ছে এই সাজেক ইউনিয়ন যাকে দেশের বৃহত্তম ইউনিয়নও বলা হয়ে থাকে। এটি দীর্ঘ ৬৭ কিলোমিটার পাহাড়ি সড়কে যেতে যেতে লাগবে এক অন্যরকম আনন্দ। মুক্ত বাতাস আর প্রকৃতির নিদর্শন আর আঁকাবাঁকা মসৃণ সড়কের দুই ধারে তাকাতেই যেন এমন ভরে যায় সব মানুষের। আর ঐতিহ্যবাহী চাঁদের গাড়িতে ঝুলে সাজেক যেতে তো মজায় আলাদা। কাচালং নদী অতিক্রম করে দীর্ঘ ভ্রমণে মুহূর্তের জন্যও খারাপ লাগে না। ২/৩ ঘণ্টার এই ভ্রমণে সাজেক উপত্যকা উঠার আগে ঝরনায় গা ভিজিয়ে নেওয়া যায়। এক সময়ের কমলার জন্য বিখ্যাত সাজেকে এখনো মিষ্টি কমলা পাওয়া।সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এর উচ্চতা ১৮০০ ফুট।সাজেকে মূলত লুসাই,পাংখোয়া এবং ত্রিপুরা আদিবাসী বসবাস করে।সাজেক থেকে ভারতের মিজোরাম সীমান্তের দুরত্ব ১০ কি.মি.।কমলা চাষের জন্য বিখ্যাত সাজেক।
সাজেক এমন একটি জায়গা যেখানে ভাগ্য ভাল হলে ২৪ ঘণ্টায় আপনি প্রকৃতির তিনটা রূপই দেখতে পারবেন । কখনো খুবই গরম একটু পরেই হটাৎ বৃষ্টি এবং তার কিছু পরেই হয়তো চারদিকে ঢেকে যাবে কুয়াশার চাদরে । রাতে এই দুর্গম পাহাড়ের চুড়ায় যখন সোলারের কল্যাণে বাতি জ্বলে উঠে তখন সৃষ্টি হয় অসাধারণ এক পরিস্থিতি । অনেক বাচ্চারা রোড লাইটের নিচে বই নিয়ে বসে পড়ে অথবা ঐ টুকু আলোর ভিতরেই খেলায় মেতে উঠে । সাজেকে ৩টা হ্যালি প্যাড আছে ৩টার সৌন্দর্য তিন রকম । এছাড়া রুইলুই পারা হতে হেটে আপনি কমলং পারা পর্যন্ত যেতে পারেন এই পারাটিও অনেক সুন্দর এবং অনেক উচুতে অবস্থিত । কমলার সিজনে কমলা খেতে ভুলবেন না । সাজেকের কমলা বাংলাদেশের সেরা কমলা । বাংলাদেশ আর্মিদের দারা রুইলুই পারার অধিবাসীদের জন্য একটা ছোট তাত শিল্প গরে তোলা হয়েছে । সুন্দর সুন্দর গামছা ,লুঙ্গী পাওয়া এখানে। দার্জিলিং এর প্রতিচ্ছবি রাঙামাটির’র এ সাজেক ভ্যালী। বাংলাদেশ ও ভারতের মিজোরাম সীমান্তের কূল ঘেঁষা অপার সম্ভাবনার জনপদ সাজেক ভ্যালীতে বসে নিজেকে উজাড় করে দিয়ে প্রকৃতির খুব কাছাকাছি থেকে এক খণ্ড সময় কাটায় প্রকৃতি প্রেমিকরা। তাদের হৃদয় ও মন ছুঁয়ে যায় নৈসর্গিক এ স্থানটির রূপ-লাবণ্যে। মেঘাচ্ছন্ন দিনে সাজেক আরো বেশী দৃষ্টিনন্দন ও অপরূপ হয়ে উঠে। সাজেকের সৌন্দর্য্যতা ভ্রমণ পিপাসু যে কাউকেই মুগ্ধ করবে অনায়াশে।
কিভাবে যাবেন:
চট্টগ্রাম টু সাজেকঃ চট্টগ্রাম থেকে শান্তি পরিবহনে দীঘিনালা। সেখান থেকে মোটর সাইকেল কিংবা জীপে করে ৪৫ কিলোমিটার দূরে সাজেক। ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ি পর্যন্ত শ্যামলী, শান্তি, ইউনিক, সৌদিয়া ও এসআলম পরিবহনের বাসও রয়েছে।
ঢাকা টু খাগড়াছড়িঃ বাসে করে ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ি যেতে হবে। নন-এসি বাস ৫২০ টাকা (শ্যামলী, শান্তি পরিবহন, ঈগল, ইকোনো, এস আলম ইত্যাদি), এসি বাস ৮০০ টাকা (একমাত্র সেন্টমার্টিন পরিবহন)। ঢাকা থেকে বাস ছাড়ে সকালে ও রাতে (১১.০০ টায়) এবং খাগড়াছড়ি থেকে বাস ছাড়ে সকালে ও রাতে (৯.০০ টায়)। ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ি যেতে সময় লাগবে রাতে ৭/৮ ঘন্টা এবং দিনে ৮/১০ ঘন্টা।
খাগড়াছড়ি টু সাজেকঃ খাগড়াছড়ি শহড়ের শাপলা মোড় থেকে চান্দের গাড়ী/ সিএনজি রিজার্ভ করে সাজেক যাওয়া যাবে। এছাড়াও নিজস্ব মাইক্রো বা কার নিয়েও যাওয়া যাবে। সময় লাগবে সবমিলিয়ে ৩ ঘন্টা। চান্দের গাড়ী ভাড়া ৫০০০/৬০০০ টাকা (দরদাম করতে হবে), সিএনজি ভাড়া ৩০০০/৪০০০ টাকা (সিএনজিতে না যাওয়াই ভাল কারন প্রকৃতি ভালভাবে দেখা যাবে না)। যাওয়ার পথের সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে হলে চান্দের গাড়ীর ছাদে বসে যেতে হবে। সেই ক্ষেত্রে সাবধানে ধরে বসতে হবে। একটি চান্দের গাড়ীতে অনায়াসে ১২ জন যেতে পারবেন।
রাস্তার দু’ধারে-চোখে পড়বে উপজাতীয়দের বসত বাড়ী, মাচাং ঘর ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী জাতিসত্তার বিচিত্রময় জীবন ধারাসহ আরো কত কি! চড়াই উতরাই পেরিয়ে আপনি যখন রুইলুই এ পৌঁছাবেন ততক্ষণে আপনি সাজেক ভ্যালীতে পৌছে যাবেন। সাজেকে প্রবেশের সাথে সাথে আপনার চারপাশ যেন মুর্হুতে পরিবর্তন হয়ে যাবে।
কোথায় থাকবেন:
সাজেকে সেনাবাহিনী ও বিজিবি পরিচালিত দুইটি রিসোর্ট রয়েছে। এছাড়া বেসরকারি সংস্থা আলো’র একটি রিসোর্ট আছে। কম টাকায় কটেজেও রাতযাপন করা যাবে।
সাজেকে রাতে থাকতে চাইলেঃ-
সাজেকে রাতে থাকতে হলে ঢাকা থেকে থাকার জায়গা বুকিং দিয়ে যেতে হবে নতুবা থাকার জন্য ভাল যায়গা নাও পেতে পারেন। অন্তত মাস খানেক আগে বুকিং দিলে ভাল রুম পেতে পারেন। থাকার জন্য যেসব রিসোর্ট বা জায়গা আছে তা হলোঃ
১) সাজেক রিসোর্ট (রুইলুই পাড়া): যোগাযোগ ০১৭৮৩৯৬৯২০০। মোট ৪ টি রুম আছে। আর্মি অফিসারদের জন্য ভাড়া ২৫০০-৫০০০, সরকারী কর্মকর্তাদের জন্য ভাড়া ৪০০০-৭০০০, সাধারন জনগনের জন্য ভাড়া ১০০০০-১৫০০০ টাকা প্রতি রাতের জন্য।
২) রুনময় রিসোর্ট (সাজেক ভ্যালী): যোগাযোগ ০১৮৬৫৬৮৮৭৭। মোট ৫ টি রুম আছে। আর্মি অফিসারদের জন্য ভাড়া ১২৫০-১৬৫০, সরকারী কর্মকর্তাদের জন্য ভাড়া ২৫৫০-৩১৫০, সাধারন জনগনের জন্য ভাড়া ৪৪৫০-৪৯৫০ টাকা প্রতি রাতের জন্য।
৩) রুইলুই পাড়া ক্লাব হাউসঃ যোগাযোগ ০১৮৩৮৪৯৭৬১২, ০১৮৬০১০৩৪০২। ১৫ জন থাকতে পারবেন। ভাড়া ১০০ টাকা জনপ্রতি (কম-বেশী হতে পারে)।
৪) আলো রিসোর্টঃ যোগাযোগ ০১৮৬৩৬০৬৯০৬। মোট ৬ টি রুম। ভাড়া ৭০০-১০০০ টাকা প্রতি রাতের জন্য।
৫) রুইলুই পাড়াতে যে কোন কারবারীর ঘরে জনপ্রতি ১০০ টাকা দিয়ে থাকা যাবে (যদি ফাকা থাকে)।
রিসোর্টে খাবার ব্যবস্থা আছে তবে যারা দিনে গিয়ে দিনে চলে আসবেন তারা বাইরে ১৫০-৫০০ টাকা দিয়ে দুপুরের খাবার খেতে পারবেন।
যারা দিনে গিয়ে চলে আসবেনঃ
প্রথম দিন খাগড়াছড়িতে থেকে পরেরদিন ভোর ৪.৩০ / ৪.৪৫ মিনিটে সাজেক রওনা হবেন। গাড়ী আগের দিন শাপলা মোড় থেকে ঠিক করে রাখবেন। দেরী করলে মেঘ দেখা মিস করবেন। প্রথম দিন খাগড়াছড়িতে আলুটিলা গুহা, রিসাং ঝর্না, অপু ঝর্ণা, শান্তিপুর অরন্যকুটির, নিউজিল্যান্ড, শহড়ে ঝুলন্ত ব্রিজ ইত্যাদি দেখে আসতে পারেন। রাতে সিস্টেম রেস্তোরাতে পাহাড়ীদের খাবার খাওয়া হবে বাড়তি পাওনা।
খাগড়াছড়িতে থাকার ব্যবস্থাঃ
১) পর্যটন মোটেলঃ যোগাযোগ ০৩৭১-৬২০৮৪, ০৩৭১-৬২০৮৫, ০১৫৫৬৫৬৪৩৭৫, এসি রুম ২১০০ টাকা এবং নন-এসি ১৩০০ টাকা প্রতি রাত। এটি শহড়ে ঢুকার ২ কি.মি. আগে চেঙ্গী নদীর পাশে অবস্থিত।
২) হোটেল ইকোছড়ি ইনঃ যোগাযোগ ০৩৭১-৬১৬২৫, ০৩৭১-৬১৬২৬, ০১৮২৮-৮৭৪০১৪। রুম ভাড়া ১০০০-২৫০০ টাকা প্রতি রাত।
৩) শৈল সুবর্ণঃ যোগাযোগ ০৩৭১-৬১৪৩৬। ভাড়া ৬০০-১০০০ টাকা প্রতি রাত।
এছাড়াও শাপলা মোড়ে অবস্থিত অন্যান্য হোটেলে ৩০০-৭০০ টাকাতে থাকা যাবে।
উল্লেখযোগ্য হোটেলঃ হোটেল জিরান ০৩৭১-৬১০৭১, ফোর স্টার ০৩৭১-৬২২৪০, থ্রি স্টার ০৩৭১-৬২০৫৭, লবিয়ত ০৩৭১-৬১২২০, চেঙ্গী ০৩৭১-৬১২৫৪, উপহার ০৩৭১-৬১৯৮০, রাজু বোর্ডিং ০৩৭১-৬১১৬১, চৌধুরী বোর্ডিং ০৩৭১-৬১১৭৬, ভাই ভাই বোর্ডিং ০৩৭১-৬১৪৬১ ইত্যাদি।
খেয়াল রাখবেন:
সাজেকে পানির খুবই সংকট। এখানে পাহাড়িদের দেওয়া পানি নষ্ট করবেন না। তাছাড়া পানির বোতল, পলিথিন, প্লাস্টিক নির্দিষ্ট স্থানে ফেলবেন। যত্রতত্র ফেলে প্রকৃতিকে ধ্বংস করবেন না।
শত বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও ইউরোপে ভ্রমণে আসা দর্শনার্থীদের আকর্ষণের প্রধান স্থান দখল করে আছে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে অবস্থিত আইফেল টাওয়ার । বিশ্বসৌন্দর্যের নিদর্শণ, সুউচ্চ লৌহ কাঠামো আইফেল টাওয়ার ১২৭ বছর ফ্রান্সের অন্যতম প্রতিক হিসেবে বিশ্বজুড়ে দ্যুতি ছড়াচ্ছে। সুবিশাল এই লৌহ স্তম্ভটি এক নজর দেখতে পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে হাজার-হাজার দর্শনার্থী লাখ-লাখ টাকা খরচ করে প্যারিস ভ্রমণে আসে। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখর থাকে আইফেল টাওয়ার চত্ত্বর। এসময় নানা আঙ্গিকে দর্শনার্থীরা টাওয়ারের সঙ্গে নিজের ছবিটি ক্যামেরার ফ্রেমে বন্দি করে। দর্শনার্থীদের ঘুরে বেড়ানোর সুবিধার্থে আছে ট্যাক্সি, রিকশা আর গাধার গাড়ি। ছোট-ছোট দলে বিভক্ত হয়ে সর্বোক্ষণ চলে আড্ডা, খোশগল্প তার সঙ্গে গানবাজনা। দর্শনার্থীদের মনযোগ আকর্ষণে চলে ভিনদেশি ফেরিওয়ালাদের বিভিন্ন আকৃতি ও ডিজাইনের টাওয়ার বিক্রির হাক-ডাক। টাওয়ারের ঠিক পাশদিয়ে বয়ে চলা নীল পানির দৃষ্টিনন্দন সীন নদী আশপাশের পরিবেশকে করেছে মনমুগ্ধকর। নদীর স্বচ্ছ পানিতে চলমান রকমারি যানবাহন দর্শনার্থীদের আনন্দের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। মনোরম ওয়াটার বাসে চড়ে দূর দূরান্ত থেকে দর্শনার্থী আসছে এখানে। সামনেই আছে আকর্ষণীয় ফোয়ারা। আছে খেলার মাঠ। কাছেই প্রিন্সেস ডাইনা স্মৃতিস্তম্ভ।
১৯৯৭ সালের ৩১ আগস্ট পন্ট ডি লা আলমা নামের এই ট্যানেলে প্রিন্সেস ডাইনা এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেন। সাধারণ মনুষের দাবি আদায়ের জন্য আছে মনবাধিকার চত্ত্বর। দিনভর এই চত্তরে চলে ফ্রান্সে বসবাসকারী বিভিন্ন দেশ ও জাতি গোষ্ঠির মানুষের সভা সমাবেশ ও মানববন্ধন। কথা হয় মানবাধিকার চত্ত্বরে মানব বন্ধনে আসা আফ্রিকার স্নেগালের বংশদ্ভূত ফরাসি নাগরিক হাওয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, দেশটিতে বর্তমানে ব্যাপকভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। তার প্রতিবাদেই আজকের মানববন্ধন।
পরিবার নিয়ে ভারত থেকে আইফেল টাওয়ার দেখতে প্যারিসে এসেছেন স্বপন মণ্ডল। তিনি বলেন, ছোট থেকেই এখানে আসার স্বপ্ন ছিল। আজ সে স্বপ্ন পূরণ হলো। পরিবারের সবাইকে নিয়ে এখানে আসতে পেরে খুব ভালো লাগছে। আইফেল টাওয়ারের নির্মাতা গুস্তাভো আইফেল পেশাগতভাবে রেলের সেতুর নকশা তৈরি করতেন । সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ১৮ হাজার ৩৮ খণ্ড বিভিন্ন আকৄতির লোহার কাঠামো জোড়া দিয়ে আইফেল টাওয়ার তৈরি করেন। ৩০০ শ্রমিকের কঠোর পরিশ্রমে ১৮৮৭ সালে নির্মাণ কাজ শুরু হয়ে ১৮৮৯ এর ৩০ মার্চ শেষ হয়। ৩২০ মিটার উঁচু এই স্থপত্যটি পরবর্তী ৪০ বছর বিশ্বের সর্বোচ্চ স্থ্যাপত্য ছিল। বর্তমানে এর চুড়াই রেডিও ও টেলিভিশনের এ্যান্টেনা বসানো হয়েছে। আইফেল টাওয়ার নির্মাণের শুরুর দিকে প্যারিসের সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে— এ অভিযোগ তুলে ফ্রান্সের বুদ্ধিজীবী, রাজনৈতিক নেতা, বিভিন্ন সামাজি ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে এর বিরোধিতা করে আন্দোলন করা হয়।কিন্তু বর্তমানে এই টাওয়ারের সৌন্দর্য প্যারিসের গন্ডি পেরিয়ে পৌঁছে গেছে বিশ্বের শত কোটি মানুষের হৃদয়ে।
যে বয়সে অন্য শিশুদের সাথে দৌড়-ঝাপ করে খেলার কথা ছিল সেটা বন্ধ হয়ে গেছে শিশু আনিসার। চার বছর বয়সী ছোট্ট ফুটফুটে এই শিশুটি এক বছর আগে আশুলিয়ার কুঁড়গাও এলাকার জনৈক শাহবুদ্দিনের বাড়ির ছাদে খেলতে গিয়ে এক হৃদয় বিদারক দূর্ঘটনার শিকার হয়। ঝুঁকিপূর্ণ ভাবে টানা বৈদ্যুতিক লাইনের তারে জড়িয়ে হারায় তার দুটি হাত। খেলার সামগ্রী মনে করে ছাদ ঘেঁষে থাকা বৈদ্যুতিক খুঁটিতে লাগানো চীনা মাটির তৈরি বাটি ধরতে গিয়েছিলো সে। কিন্তু কিছু বুঝে ওঠার আগেই এগার হাজার ভোল্টের উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন বৈদ্যুতিক তারে স্পৃষ্ট হয়ে গুরুতর আহত হয় আনিসা। প্রথমে তাকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হলেও পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজে রেফার্ড করা হয়। সেখানে এক মাস চিকিৎসার পর কেটে ফেলতে হয় আনিসার কোমল দুটি হাত।
কিন্তু শরীরের মূল্যবান অঙ্গ দুইটি হারানোর পরও যেন সেই চাঁপা কষ্টটাকে ভুলতে শিখেছে ছোট্ট আনিসা। হাত ছাড়া কিভাবে পড়াশুনা ও নিজের প্রয়োজনীয় কাজ করবে সেই চেষ্টাই সর্বদা তার। স্কুলে ভর্তি হওয়ার জন্য পা দিয়েই লেখা ও ছবি আঁকতে শিখেছে সে। পাশাপাশি অন্যসব দরকারি কাজও করতে পারার চেষ্টা করে অবুঝ আনিসা। উঠনের এদিক থেকে ওদিক হাত ছাড়াই ছুটোছুটি করে মেয়েটি। দেখে মনে হয় কোন প্রতিবন্ধকতাই আনিসার শৈশবকে থামিয়ে রাখতে পারবেনা। কে বা কারা তার এই করুণ অবস্থার জন্য দায়ী যা সে জানেনা। শুধুই সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চায় অদম্য এই মেয়েটি। হঠাৎ পত্রিকায় আসা কোন প্রতিবন্ধীর সফলতার কাহিনী শুনে চোখ আনন্দে জ্বলে উঠে তার। সে ভাসতে চায় উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্নে। আর অকালে পঙ্গুত্ব বরণ করে নেওয়া ছোট্ট শিশুটির বেঁচে থাকার এই অদম্য সাহসিকতা দেখে আশার আলো পায় পরিবার। তাই সাভারের পক্ষাঘাত গ্রস্থদের পুনর্বাসন কেন্দ্র (সিআরপি)-তে প্লে শ্রেণীতে ভর্তি পরীক্ষায়ও অংশ গ্রহণ করানো হয় আনিসাকে। সেখানে অন্য শারিরীক প্রতিবন্ধীদের কৃত্রিম হাত দেখে বাবা-মা’র কাছে বায়না ধরে মেয়েটি। তারও একটি এরকম হাত লাগিয়ে দিতে হবে। তাইতো লাজ ভুলে মেয়ের কৃত্রিম হাত সংযোজনে আর্থিক সহায়তার জন্য হাত বাড়িয়েছেন সমাজের বিত্তবানদের কাছে। কেননা কৃত্রিম হাত সংযোজনে যে কমপক্ষে ২০লাখ টাকা লাগার কথা জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। যা গার্মেন্ট শ্রমিকের এই পরিবারটির পক্ষে ব্যয় অসম্ভব।
কিন্তু সেদিন ঠিক কি হয়েছিল আনিসার সাথে? এমন প্রশ্নের জবাবে কেঁদে ফেলেন তার মা রিতা বেগম। আনিসার জায়গা থেকে নিজেকে কল্পণা করে কন্ঠরোধ হয়ে আসে তার। কিভাবে তার ছোট্ট আনিসা এই কষ্ট সহ্য করে আছে, সেই প্রশ্নের উত্তর এখনও জানেনা তিনি। মেয়ের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে অঝোরে কেঁদে ফেলেন তিনি। আর মা’র মুখপানে অপলক নয়নে তাকিয়ে থাকে ছোট্ট আনিসা। হয়ত বা বোঝেনা সমাজের কোন নিষ্ঠুর পাশবিকতার শিকার হতে হয়েছে তাকে? যার কারণে তাকে বলি দিতে হয়েছে শরীরের কোমল মূল্যবান অঙ্গ। অবশেষে চোখের পানি আঁচলে মুছে সেই দিনের ভয়াল দূর্ঘটনার বর্ণনা দেন আনিসার মা।
২০১৫ সালের ৪ জানুয়ারী বিকেলে কুঁড়গাও এলাকার জনৈক শাহাবুদ্দিনের মেয়ের সাথে তাদেরই বাড়ির ছাদে খেলতে গিয়েছিলো তার দুরন্ত মেয়ে। এসময় ছাদের কিনারে থাকা উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন বৈদ্যুতিক তারের খুঁটিতে ব্যবহৃত চীনা মাটির তৈরি গোল বাটির দিকে নজর যায় আনিসার। অবুঝ দুরন্তপনা আনিসা এটিকেই খেলার সামগ্রী ভেবে বসে। ছুটে সেই বাটির নিকটে যেতেই এগারো হাজার ভোল্টের তার টেনে নেয়ে তার মেয়ের কঁচি দুটি হাত। ছিটকে পরে সঙ্গা হারিয়ে ফেলে সে। এসময় আনিসার দুটি হাত স্পৃষ্ট হয়, ভেঙ্গে যায় ডান পা। পরে বাড়ির অন্য ভারাটিয়াদের সহায়তায় তাকে উদ্ধার করে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে ৮ দিন চিকিৎসার পর তাকে ভর্তি করা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। পরে চিকিৎসকদের পরামর্শে তার মেয়ের দুটি হাত কেটে ফেলা হয়।
আনিসার বাবা আলহাজ্ব আলী আওয়ার নিউজকে বলেন, এঘটনার জন্য এলাকাবাসীসহ তারা আনিসার এই অকাল পঙ্গুত্বের জন্য বাড়ির মালিককে দ্বায়ী করেন। কেননা বাড়ির মালিক শাহাবুদ্দিনের অবৈধ পন্থায় ভবন নির্মাণসহ চরম অসাবধানতাই আনিসার এমন অবস্থার জন্য দ্বায়ী। সেসময় থানায় কোন অভিযোগ করা যাবেনা এমন শর্তে কিছু টাকা ক্ষতিপূরণ দেয় শাহাবুদ্দিন। সেই সাথে মৌখিকভাবে আনিসার ভবিষ্যতের যাবতীয় খরচ বহন করারও মিথ্যা অঙ্গীকার করেন বাড়ির মালিক শাহাবুদ্দিন। এরপর এত দিন কেটে গেলেও সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী শাহাবুদ্দিন প্রভাবশালী হওয়ায় তার পঙ্গু মেয়ের দিকে আর চোখ মেলেও তাকান না। এমনকি রাস্তায় দেখা হলেও না দেখার ভান করে চলে যান তিনি ও তার স্ত্রী।
তাহলে কি তার ছোট্ট এই মেয়েটির অকাল পঙ্গুত্বের জন্য কেউ দ্বায়ী নন? নাকি যাদের অসাবধানতা ও অপরিকল্পিত ভাবে বৈদ্যুতিক খুঁটি ঘেষে বহুতল ভবন নির্মাণ করেছেন তারা দ্বায়ী। যাদের ব্যক্তি স্বার্থের জন্য উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন বৈদ্যুতিক লাইনের তার নিয়ে যাওয়া হয়েছে ছাদের একাংশের উপর দিয়ে। বাড়ির যে অংশ দিয়ে বৈদ্যুতিক তার গেছে সেখানে কি কক্ষ না বানালে হতোনা। তা না করুক, ওই জায়গাটা কি আড়াল করে রাখা যেত না। হ্যাঁ, হয়ত বা যেত। আর সেটি করলে আজ তার মেয়েকে এভাবে শরীরের অঙ্গ হারাতে হতনা। কেন করবে? করলে তো স্বার্থে ব্যঘাত ঘটবে ও আর্থিক ক্ষতি হবে। তবে সেই ক্ষতির মূল্য কি তার ছোট্ট আনিসার দুটি হাতের চেয়েও বেশী? এত সব প্রশ্ন ও তার উত্তর নিজেই দিয়ে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি আনিসার বাবা আলহাজ্জ আলী।
কিন্তু কেনই বা আনিসার মত ছোট্ট শিশুরা অকালে পঙ্গু হবে? কেনইবা সমাজের শিক্ষিত মুখশধারী এসব স্বার্থকাঙ্গাল মানুষের ভুলের কারণে তাদের সারা জীবন এমন ভাবে অন্যর করুনায় বেঁচে থাকতে হবে এই প্রশ্ন বিবেকের কাছেই থাক…!
আমাদের গর্ব ও অহংকার চাঁদপুর। ঐতিহাসিক জে.এন. সেনগুপ্তের মতে, ইতিহাসখ্যাত বিক্রমপুরের জমিদার চাঁদরায়ের নাম থেকেই এ অঞ্চলের নাম হয়েছে চাঁদপুর। আবার কেউ কেউ বলে, শহর সংলগ্ন কোড়ালিয়া গ্রামের দরবেশ চাঁদ ফকিরের নাম থেকেই চাঁদপুরের নামকরণ হয়েছে।
প্রশাসন : চাঁদপুর এককালে অবিভক্ত ভারতের ত্রিপুরা জেলার অন্তর্গত ছিল। ভারত ভোগের পর এটি কুমিল্লা জেলার আওয়াতাধীনে আসে। ১৮৭৮ সালে চাঁদপুর মহকুমা গঠন করা হয়। পৌরসভা সৃষ্টি হয় ১৮৯৭ সালে। তারও অনেক আগে নরসিংহপুর নামক স্থানে সৃষ্টি হয় থানা। প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের ফলে ১৯৮৪ সলে চাঁদপুর আলাদা জেলার মর্যাদা লাভ করে। বর্তমানে ৮টি উপজেলা, ৬টি পৌরসভা, ৮৭টি ইউনিয়ন এবং ১২৪৭টি গ্রাম নিয়ে চাঁদপুর জেলা গঠিত।
অবস্থান, আয়তন ও লোকসংখ্যা : চাঁদপুর চট্টগ্রাম বিভাগের একটি জেলা। জেলার আয়তন ১৭০৪ দশমিক ০৬ বর্গমিটার। জেলার উত্তরে মুন্সিগঞ্জ ও কুমিল্লা, দক্ষিণে নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও বরিশাল, পূর্বে কুমিল্লা এবং পশ্চিমে মেঘনা নদী, শরিয়তপুর ও মুন্সিগঞ্জ জেলা। ভৌগোলিকভাবে জেলাটি ২৩০০০/ উত্তর অক্ষাংশে এবং ৯০০৩৫/ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ থেকে ৯১০০৫/ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত। জেলার লোকসংখ্যা ২২,৭১,০২০ জন পুরুষ ১১,১২,১৮০ জন (৪৯.৬৩%) এবং মহিলা ১১,২৮,৮৪০ জন (৫০.৩৭%)। জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গকিলোমিটারে ১৩১৫ জন। ঘনত্বের বিচারে অবস্থান ৬ষ্ঠ। থানার সংখ্যা ৪,২২,৭৪০টি।
নদনদী : মেঘনা মোট জমির পরিমাণ ১,৬৭,০০৯ হেক্টর। আবাদি জমির পরিমাণ ১,১২,২১০ হেক্টর। ভূমিহীন ২২ শতাংশ। মাথাপিছু জমির পরিমাণ ০.০৮ হেক্টর।
ব্যবসা ও শিল্প : চাঁদপুর বাংলাদেশের বৃহত্তম নদীবন্দর। এটি পাট ব্যবসার অন্যতম বাণিজ্যকেন্দ্র। মৎস্য আহরণ ও অবতরণ কেন্দ্রের জন্যও চাঁদপুর বিখ্যাত। চাঁদপুরে রয়েছে জুট মিল, বরফ কল, হিমাগার, কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি, এ্যালুমিনিয়াম কারখানা, ম্যাচ ফ্যাক্টরি ইত্যাদি। কুটির শিল্পের মধ্যে রয়েছে তাঁত, শীতল পাটি, মৃৎশিল্প, বাঁশ ও বেতের জিনিস, জাল তৈরির কাজ, নৌযান তৈরি, লবণ রিফাইনারি ইত্যাদি কারখানা।
শিক্ষা : জেলায় রয়েছে সরকারি কলেজ ৩টি, বেসরকারি কলেজ ৩৬টি, সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৬টি, বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ২১৪টি, মাদ্রাসা ১১৭৫টি, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৭৮৬টি, বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৬৮৪টি, প্রাইমারি ট্রেনিং ইনষ্টিটিউট ১টি, ভিটিআই ১টি। জেলায় শিক্ষার হার ৪৯ দশমিক ৬১ ভাগ।
এক শর্তে করতে পারি বিয়ে। বলেই মেয়ে মুখ ঝামটা দেয়। পাত্রী দেখতে এসেছে পাত্র পক্ষ। আলাপ চারিতার জন্য ছেলে মেয়েকে সুযোগ দেওয়া হয়েছে। মেয়ে সব দিক দিয়েই রাজি, কিন্তু হটাত আবার শর্ত দিচ্ছে।
মেয়ে একটু ঘাড় ত্যাড়া প্রকৃতির। কিন্তু, ছেলের একটু বেশী পছন্দ হয়েছে। এই মেয়েকেই তার বিয়ে করা চাই। তাই,যেই শর্তই দিচ্ছে হ্যা হু করে মেনে নিচ্ছে ছেলে। এখন আবার বিশেষ একটা শর্ত দিতে চাইছে। ছেলে জানতে চায়
– কি শর্ত!
– বিয়ে করতে পারি, কিন্তু অন্তত বিয়ের ২ বছর পর্যন্ত প্রেম করতে হবে। আমার কাছে ধারে আসতে পারবেন না। দূরে দূরে থাকবেন। রাজি থাকলে বলেন।
ছেলের মাথায় হাত। এই সিস্টেম সে কোথা থেকে আবিষ্কার করলো সেটা জানতে চাইলো ছেলে
– এটা আবার কেমন কথা! দূরে দূরে থাকলে বিয়ে করবো কেন?
– ও আপনি বুঝি অমুক হিন্দি সিরিয়াল দেখেন নি! ওরা বিয়ের ২ বছর পর্যন্ত একজন আরেকজনকে বুঝেছে। অমুক সিরিয়ালে ৫ বছর ও ছিল। সারাজীবনের জন্য এতো টুকু ত্যাগ তো করাই যায় তাইনা? নাইলে একজন আরেক জনকে বুঝবো কীভাবে?
পাঠক, এটা একটা সত্য ঘটনা। হিন্দি সিরিয়াল যে শুধু বস্তা পচা তাই ই না, হিন্দি সিরিয়াল চরম অবাস্তব একটা আবহ তৈরি করে নারীর মনে। যা মেয়েদের মধ্যে এই ধরনের মানসিকতা ও তৈরি করে দিচ্ছে। অবাক হচ্ছেন!
আর যারা সারাক্ষন সিরিয়াল দেখে তারা বাস্তব জগতে কমই বিচরন করে। কেউ কেউ নাকি জামার ডিজাইন শিখার জন্য ও সিরিয়াল দেখে, যদিও প্রতিদিন এতো এতো নতুন কাপড় বানিয়ে পড়া সম্ভব ও না।
জীবনটা আসলে সিরিয়াল ও না, সিনেমার গান ও না। গানে যেই আবেগ, সিরিয়ালের দূরে থাকায় যেই রোমান্স , বাস্তব জীবনে তা সুদূর পরাহত। এখানে , দূরে থাকলে, রাগ করলে, ঝগড়া ঝাটি হলে কেউ দুঃখের গান ছেড়ে দিবে না।
একটা কথা ভালোবাসার মানুষ বললে কেউ ষ্টীল পিকের মতো ৫ মিনিট তাকিয়েও থাকবে না। বিভিন্ন এঙ্গেলে ক্যামেরা আকিয়ে বাকিয়ে কেউ বিশেষ আবেগের উত্থানের প্রয়াস ও ঘটাবে না।
এটা বাস্তব জীবন, এখানে দিনে ৩ বেলা ভাত খাওয়ার জন্য মানুষকে কাজে যেতে হয়, রান্না বান্না করতে হয়, আর জীবনের প্রয়োজনেই এক সাথে থাকতে হয়।
সিরিয়ালের মতো সারাদিন একজন আরেকজনের চিন্তায় আকুল হয়ে থাকলে পেটে ভাত জুটবে না। আর সিরিয়ালের মতো বেশির ভাগ মানুষেরই নিশ্চয়ই নবাব জাদার সাথে বিয়ে হবেনা! যে সকালে অফিসে যেতে হবেনা, রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমাতে হবেনা।
বস্তায় বস্তায় টাকা লাগবে এমন লাইফ স্টাইলের জন্য। কিন্তু আপনার পারিবারিক জীবন সম্পর্কে যে জঘন্য আউট লুক, ঝগড়া ঝাটি, কানাকানি, চোগল খুরী ফ্রি শিখাচ্ছে, এমন অসভ্য সংস্কৃতি পৃথিবীতে কমই আছে। এরচেয়ে , একটা গল্পের পড়লেও সময়টা অপচয়ের হাত থেকে বেঁচে যায়।
বিশেষ করে অবিবাহিত মেয়েরা, যারা টুকটাক সিরিয়াল দেখা ছাড়তে পারছেন না, তাদের মানসিকতা বদলে দিতে পারে সিরিয়াল যে কোন সময়ই।
–তুমি আমার জীবন থেকে সরে দাড়াও তাহলে আমি খুশি হব””(নাহিদা)
–হ্যা,আমি তোমার জীবন থেকে সত্যি সরে যাবো। আজকের পর আর কখনো তোমাকে বলবো না ভালবাসি…….. . .
আজ থেকে পাচ (৫) বছর আগে রিলেশনে এক হয়েছিল ওরা মানে ফারাবি আর নাহিদা। . . প্রতিদিন ফারাবি রাস্তার পাশে একই সময়ে দাড়িয়ে থাকতো নাহিদার অপেক্ষায়। কখনো অনুপস্থিত ছিল না ফারাবি। হাজার ঝড়ের মাঝে দেখা যেত ফারাবি কে। ফারাবি যখন প্রথম নাহিদাকে দেখে ছিল ঠিক তখন থেকেই ভালোলাগা শুরু হয়ে গিয়ে ছিল,,,,, ফারাবি মনে করতো নাহিদাকে দেখলে তার সারাদিন ভালো কাটবে। নাহিদা কখনো ফারাবির দিকে ফিরেও তাকাইতো না। কারন, নাহিদা জানে রাস্তায় বের হলে অনেক বাজে ছেলে বিরক্ত করবেই। কিন্তু,ফারাবি ছিল অন্যরকম টাইপের একটা ছেলে। কখনো কারো সাথে মিশতো না, কিন্তু নাহিদাকে সেদিন দেখার পর থেকে কেমন যেন হয়ে গেছে,,,, .
ফারাবি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র। ফারাবি ক্লসের সেরা ছাত্র, সবাই তাকে পছন্দ করতো; কারন, ভাল ছাত্র ও অসাধারণ ব্যবহারের জন্য।ফারাবি কারো সাথে মিশতো না অবশ্যই কিন্তু সবার সাথে ভদ্র আচরণ করতো।
নাহিদা ক্লাস টেন (১০) এর ছাএী। অনেক টাই ভদ্র। মাঝে মাঝে রেগে গেলে রাক্ষুসী হয়ে যায়, এক কথায় বলা যায় বদমেজাজি। নাহিদা প্রতিদিন সকালে প্রাইভেট পড়তে যেত তার স্যারের বাসায়। পড়া শেষ করে যখন রাস্তা দিয়ে আসে তখন সেই আবুল মানে ফারাবি দাড়িয়ে থাকে রাস্তার পাশে এক দোকানে। প্রায় দুই তিন মাস দরে ফারাবি রাস্তায় দাড়াতো নাহিদার জন্য কিন্তু কখনো ইচ্ছা করে নাহিদার কাছে যেতে সাহস পায়নি। নাহিদা ওর ওখানে উপস্থিত হওয়াটা বুঝতে পেরেছিল। নাহিদা এক পর্যায়ে অসহ্য বোধ করতে শুরু করছিল।
একদিন সাহস করে ফারাবি তার সামনে গেল——
–এইযে একটু শুনবেন? ফারাবি না শুনার বান করে চলে যাচ্ছে।
–প্লিজ একটু দাড়ান
—কাকে বলছেন আমাকে
–হ্যা, আপনাকেই,
–আচ্ছা আপনার নাম কি? ফারাবি জিজ্ঞাসা করল
কেন বলব আপনাকে? কে আপনি???
–আমি ফারাবি, আপনার নামটা যদি বলতেন!
–নাম জেনে আপনি কি করবেন? রাস্তা থেকে সরে যান সবাই দেখছে। এই বলেই চলে যায় নাহিদা। ফারাবি অবশ্য নাহিদার নামটা জানতো তবুও ওর মুখ থেকে শুনলে হয়তো ফারাবির আরো অনেক ভাল লাগতো।
ফারাবি নাহিদার জন্য একপ্রকার দেওয়ানা অনুভব করতে শুরু করল। রাতে ঘুমুতে পারে না ফারাবি। নিস্তব্ধ রাত কেটে যায় নাহিদাকে ভেবে। নাহিদার মায়াবী চেহারা টা ফারাবির সামনে সব সময় ভেসে উঠতো। কোন ভাবেই যেন নাহিদা কে ছাড়া থাকতে পারতো না। ফারাবি নিজে নিজে ভাবতে থাকে এ কেমন অনুভূতি আমাকে এক মুহুর্ত একা থাকতে দেয় না শান্তিতে থাকতে দেয় না।এভাবে থাকলে হয়তো আমার জীবন অনায়াসে ধ্বংস হয়ে যাবে। যেভাবেই হোক আমার ভালোবাসার কথা নাহিদা কে বলতেই হবে। পরের দিন সকালে! . নাহিদার জন্য অপেক্ষা করতে ছিল ফারাবি। নাহিদাকে দেখতে পেয়ে ফারাবি মনে সাহস নিয়ে নাহিদার সামনে গেল ফারাবি…….
নাহিদা একটু দাড়াবে প্লিজ?
–আরে, আজকেউ বিরক্ত করতে আসছেন?
–না, আপনাকে আমি বিরক্ত করতে আসি নাই। আপনাকে কিছু কথা বলতে এসেছি।
–মানে আপনার কথা কেন শুনতে হবে আমার হ্যা?
–আমি আপনাকে কিছু কথা বলেই চলে যাবো। প্লিজ শুনুন?
–আচ্ছা দাড়ান। এই যে শুনছেন আপনারা (রাস্তার সব মানুষকে উদ্দেশ্য করে বলছে) এই ছেলে টা আমাকে প্রতিদিন বিরক্ত করে। কথা গুলো শুনে সব মানুষ এসে ফারাবিকে ইচ্ছা মতো ধুলাই দিল। খুব মেরেছে ছেলে টাকে নাক ফেটে রক্ত বের হচ্ছে। ফারাবিকে দেখে নাহিদার মনে একটু ও মায়া হল না। সেই দিনের ঘটনার পর পুরো এক সপ্তাহ পর সেই রাস্তায় দেখা যেত না ফারাবিকে। নাহিদা ছেলেটা অনুপস্থিতি কিছুটা অনুভব করল। নাহিদা মনে মনে ভাবলো ছেলেটার কোন বড় সমস্যা হয় নি তো।
১০ দিন পর……… ফারাবি আবার এসেছে নাহিদাকে দেখতে নাহিদা ফারাবি কে দেখে অবাক হয়ে গেল তারপরেও ছেলেটা আমাকে দেখতে এসেছে।
–এই যে, এদিকে আসুন (নাহিদা) –ফারাবি আজকে খুশি না হয়ে সেদিনের কথা মনে করলো এর আগে যে অবস্থা হয়েছিল আজকেউ যদি সেই রকম কিছু করে বসে। তবুও নাহিদার সামনে গেল ফারাবি।
–হ্যা, বলুন….(ফারাবি)
–আপনার লজ্জা করে না এই ঘটনার এর পরেও আপনি এসেছেন?(নাহিদা)
–কি করবো বলুন! সত্যি বলতে আজ কোন বাধা নেই, আমি আপনাকে ভালবাসি (ফারাবি)
–হা হা হা এই কথা বলতে এত সময় নিয়ে নিলেন আপনি?
–কি করবো বলুন আমি আপনার সামনে যেতে ভয় পায় তো।
–আচ্ছা আজকে যান ফোন নাম্বারটা দিয়ে যান রাতে কথা হবে।
–আচ্ছা, ঠিক আছে। দুজন দুদিকে চলে গেল।
ফারাবি বুঝতেই পারল না যে নাহিদা কি করে ওর ভালবাসা এক্সেপ্ট করলো। হঠাৎ এই পরির্বতন কি করে হল এই ভেবেই সারাদিন কেটে গেল ফারাবির। নাহিদা ওই দিকে ফারাবিকে পছন্দ না করলেও সেই ঘটনার পর ফারাবির প্রতি দূর্বল হতে থাকে। নাহিদা ভেবেছিল ওই দিনের পর যদি আবার আসে ফারাবি তাহলে তাকে আর ফিরিয়ে দিবে না নাহিদা। তারপর রাতে নাহিদা ফারাবিকে ফোন করলো…… ফোনটা বেজে উঠতেই ফারাবি খুশিতে আত্বহারা হয়ে তাড়াহুড়ো করর ফোন কানে নিয়ে”””””
–হ্যালো(ফারাবি)
–হ্যা,সরি ফারাবি?(নাহিদা)
–কিন্তু কেন?
–ওই যে সেইদিন আপনাকে রাস্তা তে অপমান করেছিলাম সেই জন্য…
–আরে ঠিক আছে বাদ দেন তো…
–এই তুমি আমাকে কি আপনি করেই বলবে সবসময়?(নাহিদা)
–না মানে, হ্যা তুমি…(ফারাবি)
–কি কর?(নাহিদা)
–কিছু না,শুধু তোমাকে ভাবছি,,,,
–ও তাই তোমার আর কোন কাজ নেই বুঝি…..
–হুম,তোমাকে খুব ভালবাসি তো
–থাক,আর বলতে হবে না, আমিও তোমাকে খুব ভালোবাসি….
–তুমি আগে বল নি কেন হ্যা তুমি আমার লক্ষিসোনা……
এভাবেই তাদের কথা হল অনেক টাই রাতধরে……. বেশ কিছুদিন এভাবে কথা হল ফারাবি আর নাহিদার….. .
–এই তুমি কোথায়?
–হ্যা,বাসায় আছি কেন?
–আজ দেখা করতে পারবে বিকাল ৫ টাই?
–হ্যা পারবো তুমি এসো।
এই শুনেই ফোন কেটে দিল নাহিদা। বিকাল যথাসময়ে ফারাবি পার্কে এসে বসে আছে।কিন্তু নাহিদা আসার কোন নাম নেই। কিছুক্ষণ পর নাহিদার আবির্ভাব ফারাবি নাহিদা কে দেখে হা করে তাকাই আছে কি বলবে বুঝতে পারছিল না। নাহিদা এমনেই দেখতেই সুন্দর এরমধ্যে আবার হলুদ শাড়ী পড়ে এসেছে, চুল গুলো মিচমিচে কালো বাতাসে যেন দুলছে,এই কারনে ফারাবি চোখ ফিরাতেই পারছিল না।
–এই ফারাবি এভাবে কি দেখছো? –উয়াও তুমি এত সুন্দর কেন? –এই যা এমন বলো না……. –সত্যি বলছি তুমি পৃথিবীর শ্রেষ্ট সুন্দরী। — এই এবার থামো? আমাকে বসতে বলবা না?? –না তুমি দাড়িয়ে থাকো তোমাকে সারা জীবন দরে এভাবেই অপলক দৃষ্টি তে তাকিয়ে দেখতে চাই….. এবার নিজের ইচ্ছায় ফারাবির পাশে গিয়ে বসলো নাহিদা। এই কিছু বল…. . একসাথে বসে থেকে অনেক হাসাহাসি করে,ভালবাসার কথা বলে,বাদাম খেয়ে তারা দুজন সময় পার করে দেয়।
এভাবে কেটে যায় তিন (৩) টা বছর। তাদের সমর্পক টা অনেক মধুময় হয়ে উঠে। কেউ কাউ কে ছাড়া এখন কিছুই বুঝেনা। প্রত্যেক টা মুহুর্ত তাদের স্মৃতি হয়ে থাকবে সারা জীবন। নাহিদার বাবা নাহিদা ছোট থাকতেই তার বন্ধুর ছেলের সাথে বিয়ে ঠিক করে রেখেছে সেটা নাহিদা একটুও জানে না। নাহিদা জানলে হয়তো মন ভেঙে যাবে সেজন্য কথা টা লুকিয়ে রেখেছে। নাহিদার বাবা নাহিদাকে ডেকে বলছে: দেখ মা তর তো পড়াশোনা শেষ এবার আমার পছন্দের পাএের সাথে বিয়ে দিয়ে আমি তোকে ওর হাতে তোকে তুলে দিতে চায়! নাহিদা এই কথা শুনে অবাক হয়ে গেল ফারাবির কথা ভেবে আমি চলে গেলে ফারাবির কি হবে? ফারাবি যে আমাকে ছাড়া বাচতে পারবে না তাহলে কি করবো… ফারাবি এখন কোন চাকরি বাকরি করে না তাহলে বেকার ছেলের হাতে মেয়ে কে কোন বাবায় চাইবে না তুলে দিতে এই ভেবেই অস্থির হয়ে গেল নাহিদা….. . নাহিদা সবকিছু ভেবে চিন্তে ফারাবি কে দেখা করতে বললো। . . –এই কি হয়েছে? (ফারাবি) –মুখে কোন হাসি নেই নাহিদা বলছে তুমি আমাকে ভুলে যাও ফারাবি। (নাহিদা) –এক মুহুর্তেই অম্লিন হয়ে গেল ফারাবি নিশ্চুপ হয়ে গেল, কিছুক্ষণ পর বললো তুমি এসব কি বলছো?(ফারাবি) –হ্যা,যা বলছি সত্যি বলছি তুমি আমাকে ভুলে যাও তোমার সাথে সমর্পক রাখা আমার পক্ষে সম্ভব না- এই বলেই চলে গেল নাহিদা।
ফারাবি কি করবে কিছুই বুঝতে পারছিল না।শুধু ভাবতে থাকলো হঠাৎ এরকম করলো কেন নাহিদা??? ভাবতে ভাবতে ওদিকে নাহিদার বিয়ে এগিয়ে আসলো। নাহিদার সাথে যোগাযোগ করার জন্য অনেক চ্রেষ্টা করল কিন্তু কোন কাজে আসলো না সেইদিনের পর থেকে ওর ফোন টাও অফফ…. . ফারাবি নিজেকে দুষি ভেবে অনায়াসে জীবন কে নষ্ট করতে শুরু করলো। যে জীবনে নাহিদা নেই সেইজীবন ভাল রেখেই কি করবে ! ! যথাসময়ে নাহিদার বিয়ে হয়ে গেল। ফারাবির আর করার কিছুই নেই। ফারাবি ভাবলো তাহলে কি নাহিদা মন থেকে ওকে কখনো ভালবাসে নাই? ফারাবি এখন নষ্ট ছেলে সব সময় মদ,গাজা,সিগারেট ইত্যাদি খেয়ে টাল হয়ে থাকে. . মানুষ না পেয়ে হারানোর বেদনা সয়তে পারে কিন্তু, পেয়ে হারানো ব্যাথা’ কেউ সয়তে পারে না।ভালবাসা আজজ নিশ্ব করে চলে গেল ফারাবি কে। ফারাবি মনে করে নাহিদা যখন ওর জিবনেই নেই তাহলে ক্যারিয়ার দিয়ে কি করবে। নাহিদা বিয়ের পর আর কখনো ফারাবির খোজ খবর নেই নি। . আরো দুই (২) বছর পর,,,,, হঠাৎ নাহিদা ওর ফোন টা কেন যেন খুললো খুলার সাথে সাথে ফারাবির ফোন ফারাবি কাদো কাদো শুরে…. –হ্যালো নাহিদা কেমন আছো? –চুপ করে নাহিদাও কানছে নাহিদা ভাবছে পাগল টা এখনো আমাকে ভালবাসে –জানি তুমি কথা বলবা না তবুও বলি তুমি সুখে থাকলেও আমি সুখে নেই!! –তুমি আমাকে ভুলে যাও (নাহিদা) –হা হা হা এরপরেও তুমি ভাব আমি তোমাকে ভালোবাসি? আর কখনো তোমাকে বলবো না ***আমি তোমাকে ভালোবাসি *** . গল্প শেষ হলেও ফারাবির জীবন শেষ হয়নি যতদিন বেচে থাকবে নাহিদাকে ভালোবেসে যাবে,,,, . সত্যিকারের ভালোবাসা কখনো শেষ হয়ে যায়না!!!
অভি সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে । ও অন্য ছেলেদের থেকে একটু আলাদা, মেয়েদের কাছ থেকে যতটা সম্ভব দূরে থাকার চেষ্টা করে । অজানা কারনেই ও মেয়েদের সামনে যেতে একটু বেশিই লজ্জাবোধ করে । এর জন্যই ওর এখনো পর্যন্ত কোন জিএফ নেই । কিন্তু ইদানিং ওর একটা মেয়েকে খুব ভালো লাগে, সেম ক্লাসেই পড়ে । তবে সে নতুন ভর্তি হয়েছে, ক্লাসের নোট আদান-প্রদানের মাধ্যমে যা পরিচয় — তার থেকে বেশি কিছু নেই । মেয়েটির নাম যুথী । দেখতে অনেকটা সুন্দরী, চেহারার ভেতর মায়াবী একটা ছাপ আছে ।। – অভির মেয়েটার ওপর আস্তে আস্তে দূর্বলতা কাজ করতে লাগলো।
২ মাস হয়ে গেছে মেয়েটার সাথে ওর পরিচয়, এরই মধ্যে দুজনে খুবই ক্লোজ ফ্রেন্ড হয়ে গেছে । একে অপরের কাছে টপ সিক্রেট বিষয়গুলোও শেয়ার করা শুরু করেছে । – ধীরে ধীরে যুথীর ওপর অভির মুগ্ধতা বাড়তেই থাকে । সারাদিন একসাথেই থাকে দুজনে, কলেজ-কোচিং, ঘুরতে যাওয়া সবকিছুই হয় একসাথে । অভির ওপর খুবই কেয়ারিং করে যুথী, সকালে ঘুম থেকে ওঠা দিয়ে শুরু করে ব্রেকফাস্ট-লাঞ্চ সবকিছুর দায়িত্ব যেন যুথীর । এইটা না করা — ওইটা না করা, একটু ভুলের জন্য শাসন — এ সবকিছুই যেন অভির খুব ভাল লাগে । কিছু হলেই একটুতেই রেগে যায় যুথী, কথা বলা বন্ধ করে দিয়ে মুখ ফুলিয়ে বসে থাকে একা একা । অভি গিয়ে স্যরি বলে ওর অভিমান ভাঙিয়ে আবার পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে।
যুথীর অভিমান ভাঙাতে অভির খুব ভালোই লাগে, সেইজন্যই তো ইচ্ছা করেই যুথীকে রাগিয়ে দেয় মাঝে মাঝে । এভাবেই প্রায় আরো ৩মাস পার হয়ে গেলো, অভি ভাবলো আজকেই প্রপোস করবে । এইটা ভেবেই যুথীকে ফোন করলো অভিঃ – অভিঃ এই শোন না, আজকে তোর কোন কাজ আছে বিকালে ? যুথীঃ না তো, কোন কাজ নেই । কেনো ? অভিঃ একটু বিকালে পার্কে দেখা করতে পারবি ? যুথীঃ আচ্ছা ঠিক আছে, কিন্তু হঠাৎ করেই… কি ব্যাপার ? অভিঃ আয় না একটু, কথা আছে । যুথীঃ আচ্ছা আপনার যখন ইচ্ছা, দেখা তো করতেই হবে । অভিঃ আচ্ছা, সময়মত চলে আসবি কিন্তু, দেরি করবিনা একদম । টাটাই… যুথীঃ আচ্ছা বাবা আসবো… টাটাই ।। – ফোনের পর্ব শেষ করেই অভি ছুটলো কেনাকাটা করতে । বিকাল হতে আর বেশি দেরি নেই । সবথেকে বড় সাইজের গোলাপটাই বেছে নিলো অভি, সাথে একটা লাল রঙের টেডি বিয়ার । সবকিছু নিয়েই জায়গামত অপেক্ষা করতে লাগলো অভি ।
প্রায় ২ ঘন্টা হয়ে গেছে অপেক্ষা করছে, কিন্তু যুথীর কোন দেখা নেই । অভি একের পর এক ফোন করছে কিন্তু যুথী ধরছে না, অভির টেনশন বাড়তেই লাগলো । – একসময় ফোনটা রিসিভ করা হল, কিন্তু এটা তো যুথীর গলা নয় । ফোনটা মূলত রিসিভ করেছে হসপিটালেরই এক নার্স ।। – নার্সঃ কে আপনি ? অভিঃ আমি অভি, যুথী কোথায় ? নার্সঃ আপনি কে হন ওনার ? অভিঃ আমি ওর বেস্ট ফ্রেন্ড, বাট ও কোথায় ? নার্সঃ ওহ আচ্ছা, সে একটু আগে কার এক্সিডেন্ট করেছে । ওনার অবস্থা খুবই সিরিয়াস, আপনি যত তাড়াতাড়ি পারেন হসপিটালে চলে আসুন । (হসপিটালের লোকেশনটাও বলে দিলেন তিনি) – কথাগুলো শুনেই যেনো জমে গেছে অভি, নড়তেই পারছে না । কিন্তু ওর হসপিটালে যাওয়াটা খুবই জরুরী, যুথীর সাথে দেখা করতেই হবে । অভি হসপিটালে গিয়ে দেখলো যুথীর অবস্থা খুবই সিরিয়াস । তবে এখনো জ্ঞান আছে, হয়তোবা অভির সাথে কথা বলানোর জন্যই বিধাতা এটা করেছিল ।
অভিকে দেখে কিছু না ভেবেই যুথী বলে উঠলো “দোস্ত, i love you”… অভি কান্নাজড়িত কন্ঠেই বলে ফেললো “i love u too” – কথাটা বলার প্রায় ১০ সেকেন্ডের ভেতর যুথী অভিকে ছেড়ে চিরদিনের জন্য চলে গেলো না ফেরার দেশে ! এই শোকেই অভি পাথর হয়ে গেল, কথা বলার মত কোন শক্তিই যেন নেই । এরপর থেকে আর আগের মত হৈ-হুল্লোর করেনা ছেলেটা । আগের মত সবার সাথে আড্ডা দেয় না, একেবারেই যেন একা হয়ে গেছে সে । যে ছেলেটা একদিন অন্ধকারকেই সবথেকে বেশি অপছন্দ করতো, আজ সেই ছেলেটি নিজেই রুমের লাইট অফ করে বসে থাকে চুপচাপ, সবসময় নিজেকে আড়াল করে রাখতে চায় সবার থেকে । এক সময় যে ছেলেটার মুখ সর্বদা হাসি-খুশিতে ভরপুর থাকতো, আজ সেই ছেলেটিই যেন হাসতে ভুলে গেছে।
এক সময় যে ছেলেটি শত চেষ্টা করেও চোখে এক ফোটা পানি আনতে পারতো না, আজ কোন কারন ছাড়াই ছেলেটির চোখে সর্বদাই পানি জমে থাকে । – আজ ৭ বছর পরেও অভি ঠিক আগের মতোই ভালবাসে যুথীকে । যুথী নেই তো কি হয়েছে, যুথীর স্মৃতিটুকু নিয়েই বাকি জীবন কাটিয়ে দিবে বলেই ঠিক করেছে সে । এই পৃথিবীতে ভালবাসার মানুষটাকে কাছে পাওয়ার মত ভাগ্য সৃষ্টিকর্তা সবার জন্য লেখেন না কারো মাঝে ভালবাসা টা থাকে কিন্তু ভালবাসার মানুষ টা থাকে না.. – এখনো সেই পার্কের আশপাশ দিয়ে ঘোরাঘুরি করে অভি, যদি কখনো দেখা পেয়ে যায় যুথীর । এখনো অভি ওই পার্কে বসে অপেক্ষা করতে থাকে, কখন যুথী এসে বলবে — দোস্ত, বল কি জন্য ডেকেছিলি আমায় ! সেদিনের সেই টেডি বিয়ারটাকে যুথী মনে করেই আজও রাতে একা একাই কথা বলে ওটার সাথে, অন্ধকারে এখনো ওটাকে জড়িয়ে ধরেই কাঁদে অভি..
মুখ ভার করে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো বৃষ্টি। আমাকে চমকে দিয়ে হঠাৎ আমাকে জড়িয়ে ধরে বলেই ফেললো , ” আমি তোমাকে ভালোবাসি”। ঘটনার আকস্মিকতায় আমি ততক্ষনে বোকা বনে গেছি। চারিদিকে তাকিয়ে দেখলাম কেউ দেখছে নাকি। কোনভাবে বৃষ্টির বাহুবন্ধন ছারিয়ে দৌড়ে পাশের ঘরে আম্মুর কাছে গেলাম। সেখানে আম্মু আর বৃষ্টির মা গল্প করছিলেন। আমি আম্মুর কোলে যেয়ে কাঁদো কাদোঁ হয়ে বলে দিলাম, “আম্মু বৃষ্টি বলে ও নাকি আমাকে ভালোবাসে। আমাকে ছারা নাকি বাঁচবে না। আমার এখন কি হবে আম্মু। ও কত পঁচা মেয়ে।” আমি হাউ মাউ করে কেঁদেই ফেললাম। আমার কান্না না থামিয়ে দুই মহিয়সী নারী তখন আমার কথা শুনে অট্টহাসিতে ব্যাস্ত।
আমার বয়স তখন সাত কি আট বছর আর বৃষ্টি পাঁচের আশেপাশে। সেই বয়সে আমি সুকুমার রায় কিংবা তিন গোয়েন্দা পড়ে বিশাল জ্ঞানী আর বৃষ্টি সারাদিন বাংলা আর হিন্দি সিনেমা দেখে ভীষন রোমান্টিক মেয়ে। আমাকে দেখলেই গান শুরু করতো, ” তুম পাস আয়ে, ইউ মুজকো রায়ে…” বৃষ্টির আচার আচরন তেমন পছন্দ না করলেও বৃষ্টিকে ছারা আমার কোন উপায় ছিল না। চারদেয়ালের বন্দী জীবনে বৃষ্টিই ছিল আমার খেলার সাথী অথবা বলা যেতে পারে সবথেকে ভালো বন্ধু। আমি যখন ওকে হারকিউলিসের অভিযানের গল্প শোনাতে চাইতাম ও উল্টা আমাকে হিন্দী মুভির রিভিউ শুনিয়ে দিতো। খুব ভালো নাচতে পারতো, হাত পা কোমড় দুলিয়ে নেচেও দেখাতো। মাঝে মাঝে গলার ওড়না ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে কি একরকমের নাচ দিত যা সেই বয়সে আমার জ্ঞানের বাইরে ছিল। দু একবার সর্প নাগিনের নাচ দেখার সৌভাগ্যও আমার হয়েছিল।
আমার সুহৃদয় সম্পন্না আম্মাজান বৃষ্টিকে অতিশয় পছন্দ করতেন। বৃষ্টিকে ঘরে তোলার বেশ ইচ্ছেও তার মাঝে দেখা যেতো। হয়ত নিজের মেয়ে ছিলনা বিধায় এই দুষ্ট মেয়েটিকে অনেক বেশি আদর করতেন। ছোট বেলা থেকে দেখেছি বৃষ্টি ওদের বাসায় না থেকে আমাদের বাসাতেই থাকতো বেশি। বৃষ্টির বাবা মাঝে মাঝে রসিকতা করে বলতেন, “এখন থেকেই এই বাড়িতে ঘর সংসার বেঁধে ফেলেছো, যখন একেবারে তোমাকে এই বাড়িতে পাঠিয়ে দেব তখনতো বাবা মা কে চিনবে না।” এই কথায় বৃষ্টি লজ্জিত হওয়ার পরিবর্তে আমার দিকে তাকিয়ে হাফ ইঞ্চির ঠোট দুই ইঞ্চি করে একটা হাসি দিতো। ওর সেই হাসির রহস্য উদঘাটনের কোন আভাস আমি তখনো টিনটিন সিরিজে পাইনি।
এভাবেই দেখতে দেখতে বেশ কিছু বছর কেটে যায়। আমি তখন দশম শ্রেনীতে পড়ি আর ও ক্লাস সেভেনে। তখনো আমাকে জ্বালাতন করা থামেনি। ও যখন আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতো, ওকে দেখতে আমার কেমন যেন কার্টুন কার্টুন মনে হতো। হাতে পায়ে লম্বা হলেও দুষ্টামি কমেনি ওর। একদিন পরীক্ষার আগে আমি কোচিং এ। ও কখন যে একটা লাভলেটার লিখে আমার টেবিলে রেখে গেছে আমি জানতামই না। আমার বাবা কখনো আমার খোঁজ খবর না নিলেও সেদিন কি মনে করে আমার ঘরে যেয়ে এই ভয়ংকর মেয়ের লাভলেটার উদ্ধার করে। আমি যখন বাসায় ফিরলাম দেখি যে দুই ফ্যামিলি একত্র হয়ে বসে আছে। আম্মু আমার দিকে লাভলেটারটা বাড়িয়ে দিলেন। চিঠির শেষে ছোট্ট করে প্যাচের হাতে লেখা, “ ইতি , তোমার ভালোবাসার বৃষ্টি।” আমি এবারও ঘটনার কিছু বুঝতে না পেরে কেঁদেই ফেললাম, একটু পরে দেখি বৃষ্টিও আমার সাথে কান্নাকাটি জুরে দিয়েছে। দুজনকে কান্না করতে দেখে দুজন বাবা আর দুজন মা কিভাবে এত হাসতে পারে সেটাও আমি এখনো বুঝতে পারি না।
এরই মাঝে বছর দুয়েক পেরিয়ে যায়। আমি কলেজে তখন ভবিষ্যত গড়ায় ব্যাস্ত। নিক্তি আর ক্যালভিন স্কেলের সুক্ষ রিড খাতায় টুকে স্যারকে দেখিয়ে মার্ক বাড়ানো ছারা তখন আর কোন লক্ষ্য স্থির করতে পারছিলাম না। হঠাৎ করেই একদিন আমার জন্মদিনে বৃষ্টির দেয়া গিফট দেখে ওর কথা মনে পরে গেলো। কিছুদিন থেকে যে ও আমাকে জ্বালাতন করছে না সেটা আমি বুঝতেই পারিনি। কেন যেন ওকে দেখতে খুব ইচ্ছে হলো সেদিন। আর সেদিন বিকেলেই আমার জীবনের সব থেকে বড় হৃদকম্প হয়েছিল, রিকটার স্কেলে পরিমাপ করলে যার মাত্রা নয় ছারিয়ে যাবে।
সেদিন বিকেলে ছাদে বসে আমি ভাবছিলাম বৃষ্টির আবার অসুখ করলো নাকি। নইলে যে মেয়ে সারাদিন আমার পাশে ঘুর ঘুর করে সে হঠাৎ করে কোথায় চলে যাবে? হঠাৎ করেই দেখি কোন একটা মেয়ে একটু দূরে দাঁড়িয়ে আমি যেদিকটায় তাকিয়ে ছিলাম সেদিকে তাকিয়ে আছে। পড়নে লাল পারের শাড়ি, ঠোঁটে হালকা লাল লিপস্টিক, চোখে বেশ করে কাজল দেয়া, চুল ছেরে দেয়াতে মেয়েটাকে অন্যরকম সুন্দর লাগছিলো। ভালো করে লক্ষ্য করে দেখলাম এইটা বৃষ্টি। আমি পুরাই আহাম্মক হয়ে গেলাম। এই কয়দিনে বৃষ্টি কত বড় হয়ে গেছে,আবার তার উপরে পুরাই অপ্সরী ছারিয়ে গেছে! আমি কাছে যেয়ে আস্তে করে বললাম,” বৃষ্টি, তোকে আজ দেখতে খুব সুন্দর লাগছেরে, মনে হচ্ছে আধোনীল আর আধো গোধূলীর আকাশ থেকে কোন রাজকন্যা নেমে এসেছে” ; লজ্জায় টমেটোর মত মুখ করে দৌড়ে পালিয়ে যায় বৃষ্টি।
এরপর আমার ধারে কাছেও ভিরতো না বৃষ্টি। কোন কারনে ভুল করে যদি আমি ওর সামনে পরে যেতাম লজ্জায় মাথা নীচু করে রাখতো। আমি এক সময় অনুভব করলাম এই মেয়েটার সাথে আমার হৃদয়ের কোন সম্পর্ক আছে। আমি ঘুমাতে গেলে ঘুমাতে পারি না, রাস্তায় হাটার সময় বিরবির করে কি যেন বলতে থাকি, বাসা থেকে বের হওয়ার সময় বৃষ্টিদের বাসায় উঁকিঝুকি মারি ওকে একটু দেখার আশায়। বুঝলাম আমি শ্যাষ।
এরই মধ্যে আমি চুয়েটে চান্স পেয়ে যাই। ঢাকায় হয়নি বলে মনে তখন বিশাল ক্ষত। সবচেয়ে বেশি কস্ট হচ্ছিল বৃষ্টিকে দেখতে পারব না ভেবে। ইচ্ছে ছিলো যাওয়ার আগে বৃষ্টিকে ভালোবাসার কথা বলবো, কিন্তু আমার হৃদয়ের অপারেটিং সিস্টেম থেকে বলতে লাগলো, “ আপনার বুকে যথেষ্ঠ পরিমান সাহস জমা নেই, অনুগ্রহ পূর্বক রিচার্জ করে আবার আসুন, ধন্যবাদ।”
প্রতি সেমিস্টার শেষ করে সোজা ঢাকায় চলে যেতাম, কিন্তু তখনো আমি সাহসের ফার্স্ট লেভেল পার করতে পারিনি। টুকটাক কথা চলতো আমাদের, কিন্তু সাহস করে ভালোবাসি শব্দটা বলতে পারতাম না। আমি তখন বুঝতে পারি যারা সত্যিকারের ভালোবাসে , ভালোবাসার মানুষের কাছে প্রথমবার এই শব্দটি বলা কতবড় দুষ্কর কাজ। কনকনে শীতের মাঝেও ওকে দেখলে আমি ঘামিয়ে যেতাম। এভাবেই লুকোচুরিতে চলতে থাকে দুটি মনের নিরন্তর ভালো লাগার খেলা। কিন্তু হঠাৎ করেই সব কিছু কেমন যেন এলোমেলো হয়ে গেলো।
আমি তখন ফাইনাল দিয়েছি। দুইদিন পরে রেজাল্ট আসবে। আর মাত্র দুইদিন পরে আমি গ্রাজুয়েট হতে যাচ্ছি ভাবতেই কেমন যেন শিহরন জাগে গায়ে। এরই মধ্যে আমার মোবাইলে একটা মেসেজ আসে। মেসেজে লিখা ছিলো, “কাল আমার বিয়ের কথাবার্তা পাকা করবে। যদি ভালোবাসো ফিরে এসো; বৃষ্টি।” আমি স্তদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। পাশে থেকে বন্ধু ইমন ঝুকে পরে দিয়ে জিজ্ঞাসা করলো,” কিরে খিজ খাইলি কেন? কি হইছে?” আমি অস্ফুস্ট স্বরে শুধু বললাম ,”বৃষ্টির বিয়ে।”
বন্ধু যে কত মহান হতে পারে আমি সেদিন হারেহারে বুঝতে পেরেছিলাম। রাত সাড়ে চারটায় ইমন আমাকে নিয়ে মোটরসাইকেল হাকিয়ে রওনা দিলো বাস কাউন্টারে। যেয়ে দেখি লাস্ট বাস ছেরে গেছে। সকাল ছারা উপায় নাই। কি আর করা, দুই বন্ধু মোটর সাইকেল নিয়েই রওনা দিলাম ঢাকায়। আমি কিছুতেই বৃষ্টিকে হারাতে চাই না। ছোট বেলার ছোট ছোট সব স্মৃতি মনে পরে যাচ্ছিল। কেউ যদি আমাকে রচনা লিখতে বলে চাইল্ডহুড মেমরী নিয়ে তাহলে সাত পৃষ্টা জুড়েই থাকবে বৃষ্টির কথা। সেই বৃষ্টিকে আমি হারাতে বসেছি !
সন্ধ্যায় ঠিক আগে আগে আমার বাসার কাছেই পৌছলাম। দৌড়ে আমাদের বাসায় না যেয়ে সোজা বৃষ্টিদের বাসায় ঢুকলাম। বাসা ভর্তি মেহমান। কিছু অচেনা লোক। আমি তখন হিতাহিত জ্ঞানশূন্য। হাপাতে হাপাতে মুরব্বিদের সামনে যেয়ে পাগলপ্রায় হয়ে সিনেমার স্টাইলে বলে ফেললাম,”এই বিয়ে হতে পারে না। I Love Her From Childhood !”
পাশে তাকিয়ে দেখি আমার বাবাও বসে আছে। মুরুব্বিরা সব একে অপরের দিকে তাকাতে শুরু করেছে। আমি পাগলের মত কিসব বলে ফেলেছি। আজ এখানে নির্ঘাত কোন লঙ্কাকান্ড না হয়ে যায় না। কিন্তু হঠাৎ করেই ঘরে হাসির রোল পরে গেলো। কেউ হাসি থামাতে পারছে না। আমি ভাবলাম লং জার্নিতে গায়ে মুখে কালি লেগেছে তাই হয়ত হাসছে, হাত দিয়ে গাল ঘষতে লাগলাম। পরে যেয়ে জানতে পারলাম সেদিন বৃষ্টির সাথে আমারই বিয়ের কথা হচ্ছিল।
পাশের ঘরের জানালায় বৃষ্টি তাকিয়ে ছিল। পা টিপে পেছন থেকে যেয়ে ওর ঘাড়ে হাত রাখলাম। বৃষ্টি মৃদু কেঁপে উঠলো। আজ ওকে অপ্সরীর মত দেখাচ্ছে। ওর গাল টিপে দিয়ে বললাম,” এখনো দুষ্টুমী কমেনি তোমার?” লজ্জা রাঙা মুখ ঢাকতে আমার বাহুডোরে এসে ধরা দিলো আমার স্বপ্নের অপ্সরী। দুহাতে জরিয়ে নিলাম সারা জীবনের জন্য। আজও দুষ্টুমী কমেনি ওর বরং ভালোবাসা বেড়েছে।
বন্ধু শব্দটা অতি ক্ষুদ্র কিন্তু এর মর্ম বিশাল।বন্ধুত্ব জীবনের অমর বন্ধন, যা কখনও নষ্ট হয় না।ছাত্রজীবনে অনেক বন্ধু পেয়েছি, কিন্তু শৈশবের বন্ধুদের তুলনা হয় না।শৈশবের বন্ধুত্বকে আমি মনে করি জীবনের সবচেয়ে বড় ও শ্রেষ্ঠ বন্ধুত্ব।ঐ সময়টা মানুষ তার স্বার্থের উর্ধ্বে থাকে।কৈশোরে ও তারপরে বন্ধু অনেকেই হয় তবে বেশীরভাগ ক্ষেত্রে কিছুনা কিছু স্বার্থের গন্ধ সম্পর্কের সাথে লেগে থাকে।ছোটবেলায় (স্কুল জীবন শুরুর আগে)যারা বন্ধু ছিল তারা আজও আছে মনের নীড়ে, তাদের সাথে নিয়মিত না হলেও মাঝে মধ্যেই যোগাযোগ হয়।প্রাইমারি স্কুলের অনেক বন্ধুকে হারিয়ে ফেলেছি যাদের আজও খুঁজে ফিরি।মাধ্যমিকে এসে আআমার কিছু বন্ধুর সাথে পরিচিত হয়,এদের মধ্যে কয়েকজন এখনো সাথে রয়েছে,আবার অনেককে হারিয়েও ফেলেছি।হারিয়ে ফেলা বন্ধুদের সাথে জড়িত স্মৃতি এখনো মনে পড়লে দুচোখ দিয়ে জল প্রবাহিত হয়।কেনইবা বন্ধুরা জীবনে আসে, স্মৃতির যন্ত্রণা উপহার দিয়ে কাঁদিয়ে অনেক দূরে চলে যায়।আমি বন্ধুত্বের গভীরতা স্পর্শ করি মাধ্যমিকের শেষ বেলায়।বন্ধুদের হারালে মনে কি যে রক্তক্ষরণ হয়,যারা প্রকৃত বন্ধু তারাই তা উপলব্ধি করতে পারে।আমরা অনেকেই বন্ধুত্বের মর্ম উপলব্ধি করতে পারিনা।হাসি-কান্না আনন্দ-বেদনা কিংবা সুখ-দুঃখে ভরা আমাদের জীবন। কিন্তু এসবের কোনটাই কখনও স্থায়ী হয় না। তাই কান্না বা দুঃখের পর সুখের দিন আসে। সুখময় দিনগুলো যখন আমরা শুধু নিজে ভোগ করতে পারে কিংবা সবাইকে নিয়ে উপভোগ করে ঠিক তেমনি দুঃখের দিনেও আমরা অন্যকে কাছে চাই বা তার সাহায্য কামনা করে। আমারা এ বিচিত্র জীবনে অন্যের সঙ্গে আনন্দের অংশীদার হতে চাই কিন্তু দুঃখের বা কষ্টের সময় সঙ্গ ত্যাগ করি। তাই এই পৃথিবীর অধিকাংশ বন্ধুই স্বার্থপর ও সুযোগ সন্ধানী। স্বার্থ সিদ্ধির আশায় বন্ধুর মুখোশ এঁটে সুসময়ের সঙ্গী হয়। কিন্তু দুঃসময় আসলেই এই বন্ধুই আবার দূরে চলে যায়। প্রকৃতিতে যখন ফুলের মেলা বসে, গাছে গাছে যখন সবুজ পাতার ছড়াছড়ি তখনই কোকিল আসে। শীতের মাঝে এই কোকিলকে আর পাওয়া যায় না। এদেরকে বলে বসন্তের কোকিল। ঠিক এমন সুসময়ের বন্ধু যারা তারাও বসন্তের কোকিলের মতোই সুযোগ সন্ধানী। স্বার্থপর বন্ধুরা তাই আনন্দময় দিনের ভাগ নিতে আসে কিন্তু দুঃখের দিনে বিদায় নেয়। এ শ্রেণীর বন্ধুরা প্রকৃত বন্ধু নয়। কেননা প্রকৃত বন্ধুরা কখনো সুসময়ে যার সাথে ছিলো বিপদকালে তাকে ত্যাগ করে না। বরং বিপদেই বন্ধুর সাহায্যার্থে পাশে এসে দাঁড়ায়। সত্যিকার বন্ধুর সুসময় বলে কোন নির্দিষ্ট সময় নেই। সে সব সময়ই বন্ধুর পাশে বন্ধুত্বের মহিমায় চির অম্লান। ভ্রমরের মতো ফুলের মধু শেষ হলেই এর কাজ শেষ হয়ে যায় না। কৃত্রিম বন্ধুত্বের বন্ধনে নিজেকে শুধু স্বার্থ উদ্ধারের আশায় জড়িয়ে রাখে না। বন্ধুর বিপদে নিজের বিপদ মনে করেই তার পাশে থাকে সবসময় এবং সব ধরনের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়। এরাই প্রকৃত বন্ধু অসময়ে বা অভাবের সময় বন্ধুর কাছে থাকে। সুসময়ে বা প্রাচুর্যের সময় যারা ভীড় জমায় তারা কেউ প্রকৃত বন্ধু নয়।এরকম সম্পর্ক বন্ধুত্ব নয়,হতেও পারেনা।প্রকৃত বন্ধু যে,সে তার বন্ধুর পাশে নি:স্বার্থ ভাবে আজীবন থাকবে।আমরা নিজেরাই চাইলে হতে পারি আরেক বন্ধুর প্রকৃত বন্ধু।আজো আমি প্রকৃত বন্ধুত্বের খোঁজে।
গণতন্ত্র না রাজতন্ত্র
দেশের মুখে যন্ত্র
ঠেকিয়েছে ঠেকিয়েছে
রাজনীতিরই মন্ত্র।
রাজনীতির এই ক্বষাঘাতে
জর্জরিত বাংলাদেশ
গণতন্ত্রের হাতে মূলা
রাজতন্ত্র বাহ্-বেশ।
নীতি বাদে রাজ নিয়ে
তন্ত্র-মন্ত্র করে
মন্ত্র দিয়েই যাচ্ছে তারা
রাজতন্ত্র গড়ে।
আমার মেয়ে, আমার ছেলে
আমার বিবি সন্তান
তারাই হলে দেশের মাথা
ভেস্তে যাবে দেশের মান।
এসো সবাই এক হই
রাজতন্ত্রের পতন চাই
গণতন্ত্রের বাংলাদেশে
রাজতন্ত্রের মূল্য নাই।
না-হয় এসো দেশটা ছেড়ে
অন্যত্র চলে যাই
কিংবা জীবন বাজি রেখে
গণতন্ত্রের যুদ্ধে যাই।
গণতন্ত্রের বাংলাদেশে
রাজতন্ত্রের পতন চাই
এই মন্ত্র-তন্ত্র ধ্বংস করতে
গণতন্ত্রের বিজয় চাই।
এসো আমরা বৃষ্টিতে ভিজি।
খরায় খরায় কেটেছে অনেক দিন
ফসলের ক্ষেতে ফসল পুড়েছে
খোলা মাঠের বুক চিরে গেছে
ছোট্ট নদীগুলো শুকিয়ে গেছে প্রায়
এতটুকু পানি পাওয়া যায়নি কোথাও।
বৃষ্টির প্রয়োজন ছিলো আমাদের
আজ বছরের প্রথম বৃষ্টি হচেছ
এসো আমরা সবাই বৃষ্টিতে ভিজি।
নারী-পুরুষ নির্বিশেষে
অট্টালিকা ছাদে না ভিজে
রাজপথে মিছিলে মিছিলে
বৃষ্টিতে ভিজি। সর্দি, জ্বর উপেক্ষা করে।
সেই তুমি-এই তুমি!
একদিন খুব ছোট ছিলে,
আজ তুমি খুব বড় হয়েছ
প্রয়োজন নেই আপনের?
সেই তুমি-এই তুমি!
আজকাল অনেক মানুষ-
তোমাকে চিনে-জানে,
তুমি অনেক টাকাওয়ালা?
সেই তুমি-এই তুমি!
টাকা কামাও দু’হাতে,
একবারও কি পড়ে মনে
তোমার নাড়ির বন্ধন?
সেই তুমি-এই তুমি!
চলছো তোমার মত তুমি,
ফিরে কি আসবে কখনও
চিরচেনা মায়ার ভূবনে?
বাঘের সাথে হরিণছানার
গলায় গলায় মিল,
সেই দুঃখেতে শিয়াল নিজের
পিঠে মারে কিল।
অনেক দিনের লোভ খাবে সে
ছানাটাকে গিলে,
বাঘের হালুম শুনেই সবার
চমকে ওঠে পিলে।
হাতি, ঘোড়া, সিংহ,গরু
আজকে সবাই খুশি।
বাঘের দারুন হাসি দেখে
ডিগবাজী খায় পুষি
মনের মাঝে ব্যথার পাহাড়
কান্না চোখের নদী,
দুখ সাগরে ভেসে ভেসে
চলছি নিরবধি।
হাসি আমার হারিয়ে গেছে
কোন সে নিরুদ্দেশে,
সুখ গুলো তাই ঝড়ো হাওয়ায়
বেড়ায় ভেসে ভেসে।
জীবন খাতা শুন্য আমার
তাই কিছু না আঁকি,
কাব্য ছড়া গল্প লিখে
কষ্ট গুলো ঢাকি।
আপনজনও হয় না আপন
সবাই যেন পর
নিরাশাতে বাধলাম আমি
স্বপ্ন সুখের ঘর।
যে কলি মুকুলেই ঝরে যায়
কেউ খবরও রাখেনা তাঁর,
যে কথা শুরুতেই থেমে যায়
কখনও যে হয়না বলা আর ।
যে শিশু কোনোদিনও দেখবেনা পৃথিবীর আলো
তাকে শুধু একজনই নীরবে অনুভব করেছিলো,
সে মা কতোই যে অসহায়,
নীরবে কেঁদে মরে যাতনায় ।
মা আমারে তোমারে দিয়েছে জনম যতন করে,
গর্ভে বিলীন অকালে হলে নীরবে মা কেঁদে মরে ।
যে মাতা গর্তপাতে শুধু একলা কষ্টই পেয়ে যায়,
রাখে হিসাব তাঁর জীবনের প্রতি পাতায় পাতায় ।
সে মায়ের কষ্টযে যায়না,
কেউ তার খবরও পায়না ।
যারা ছিলেন বাংলার আকাশে
উজ্জল নক্ষত্র তারা
সেই তারাগুলো নিভিয়ে দিল
দেশের বেঈমান যারা।
তারা ছিলেন বাংলাদেশের
অমুল্য এক রত্ন
হতভাগা সব করতে পারেনি
রত্নগুলোর যত্ন।
কি জবাব আজ দিতে পারবেন
এই প্রজন্মের কাছে
নির্লজ্বের মত তাকিয়ে থাকবেন
কি’ইবা বলার আছে।
যারা ছিলেন বাংলাদেশের
অবিসংবাদিত নেতা
মুক্তিযুদ্ধকে পরিচালিত করে
এনেছেন স্বাধীনতা।
চার দেয়ালে ঝাঝড়া করল
খুচিয়ে দিল বুক
নিশ্চিত করে মৃত্যু তাদের
কি’ইবা পাইলি সুখ।
কত চিৎকার করেছে তারা
পানি পানি বলে
হায়েনার দল তবুও দেয়নি
একফোঁটা জল তুলে।
আজকে আবার শোনা যাচ্ছে
ডেকেছে হরতাল
চিন্তা করি ওরা আবার
কোন মুক্তিযোদ্ধার দল?
জেল হত্যা দিবস আজ
নেইকি ওদের স্মরন
দু দিন পরে হরতাল ডাকলেও
কেউ করত না বারণ।
মুক্তিযোদ্ধার শ্লোগান দেয়
সকাল দুপুর সাঁঝ
কেমন করে পারল ওরা
হরতাল দিতে আজ।
পরিশেষে দোয়া করি
সেই বীরদের জন্য
সোনার বাংলা দিয়ে মোদের
করেছে যারা ধন্য
আমি লিখছি-
আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা দিয়ে;
একটি আজম্ম স্বাধীকার প্রতিষ্ঠায়
সবটুকু ভারবাসার আলিঙ্গনে।
আমি লিখছি-
সত্য প্রতিষ্ঠায়- একটি সংগ্রামী চেতনায়
স্ব-স্বস্ত্বায় জাতীয় চেতনা নিয়ে,
জেগে উঠতে চাই; আমি-
গৌরবে নির্ভিক বীরের মত
নিষ্কলঙ্কে।
আমি লিখছি-
কিছু জানাবো বলে,
মা-মাটি গন্ধ স্পর্শে গাঁথা কিছু স্মৃতির
অভিব্যক্তি।
নির্ভয়ে নির্ভিক উচ্চারণে যে বীর
ডেকেছে ঘর হতে বাহিরে,
আমি শ্রদ্ধা জানাই তাকেঁ:
হাজার বছরের শেষ্ঠ বাঙালী
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবরের।
আমি লিখছি-
কিছু লিখবো বলে
শেষ ইচ্ছা টুকু জানাতে।
সত্য ন্যায়ের নির্ভিক রথে
২৬ মার্চের চেতনায়
অনলাইন প্রকাশনার ঊষার আলোয়
জেগে উঠি আবারো পারবো বলে,
একটি জয়ের জন্য;
সত্য, সুন্দর, বস্তুনিষ্ঠ সংবাদের প্রত্যাশায়
আমার প্রাণের প্রকাশনা তুমি,
আওয়ার নিউজ বিডি।
কবিঃ উপদেষ্টা, আওয়ার নিউজ বিডি ডট কম।