৭ বছরে বিদেশে কর্মী পাঠানো কমেছে ৩ লাখ ৭২ হাজার

দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম খাত প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স। দেশের অর্থনীতির গতিধারা সচল রাখতে বিদেশে কর্মী পাঠানোর ধারাবাহিকতা বাড়ার কথা থাকলেও উল্টো তা কমেছে। গত ৭ বছরে বিদেশে ৩ লাখ ৭২ হাজার কর্মী পাঠানো কমেছে।

২০০৭-০৮ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে মোট জনশক্তি প্রেরণের পরিমাণ ছিল ৮ লাখ ৭৫ হাজার। সর্বশেষ ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৩ হাজার। এই হিসাবে গত ৭ বছরে বিদেশে ৩ লাখ ৭২ হাজার কর্মী পাঠানো কমেছে।

শনিবার (১৬ জুলাই) রাজধানীর স্পেক্ট্রা কনভেনশন সেন্টারে ‘বাজট ও শ্রম-অভিবাসন’ শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনায় ডিবেটে ফর ডেমোক্রেসির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

আলোচনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডিবেটে ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমদে চৌধুরী কিরণ।

তিনি জানান, বিগত কয়েক বছরে জনশক্তি প্রেরণের ধারা হ্রাস পেয়েছে। ২০০৭-০৮ সালে মোট জনশক্তি প্রেরণের পরিমাণ ছিল ৮ লাখ ৭৫ হাজার। আর ২০১০-১১ অর্থবছরে জনশক্তি প্রেরণের পরিমাণ ছিল ৪ লাখ ৩৯ হাজার। ২০১২-১৩ অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ৪ লাখ ৪১ হাজার। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৪ লাখ ৯ হাজার লোক বিদেশে পাড়ি জমায়। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ৪ লাখ ৬১ হাজার লোক বিদেশ গমন করে। সর্বশেষ ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে শ্রম অভিবাসনের পরিমাণ ছিল ৫ লাখ ৩ হাজার।

তিনি বলেন, ‘জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখলেও বাজেটে পর্যাপ্ত বরাদ্দ নেই শ্রম অভিবাসন খাতে। গত ৪০ বছর ধরে জিডিপির প্রবৃদ্ধি, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ বৃদ্ধি, গ্রামীণ অর্থনীতিকে গতিশীল রাখাসহ নানা ক্ষেত্রে অবদান রেখে চলা এ খাতটি কখনোই গুরুত্ব পায়নি আমাদের জাতীয় বাজেটে।’

যথাযথ সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে এই খাতটি ঘুরে দাঁড়াতে বার বার হোচট খাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বিশ্ব শ্রমবাজারে এই খাত থেকে আরো বেশি উপার্জনের জন্য অধিক পরিমাণে প্রফেশনাল ও দক্ষ কর্মী পাঠানো প্রয়োজন। এজন্য সরকারিভাবে যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর মাধ্যমে এ খাতকে আরো বেশি গতিশীল করা দরকার।’

বেকারত্ব সমস্যার চাপ হ্রাস এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের মাধ্যমে অর্থনীতির চাকা গতিশীল রাখতে অভিবাসন খাতের ভূমিকা অসামান্য। তারপরও জাতীয় বাজেটে সব সময় অভিবাসন খাত অবহেলিত হয়ে আসছে বলে জানান চৌধুরী কিরণ।

তিনি বলেন, ‘২০১৪ সালের তথ্যানুযায়ী, পেশাজীবী জনশক্তি প্রেরণের হার ১ শতাংশেরও কম। দক্ষ জনশক্তি প্রেরণের হার ৩৬ শতাংশ, স্বল্প-দক্ষ জনশক্তি প্রেরণ করা হয়েছে ৪৭ শতাংশ এবং আধা-দক্ষ জনশক্তি প্রেরণের হার ১৭ শতাংশ। অর্থাৎ মোট জনশক্তি প্রেরণের অর্ধেকেরও বেশি লোক দক্ষ নয়। আর এ কারণে ফিলিপাইন আমাদের চেয়ে অর্ধেকের কম কর্মী পাঠিয়ে আমাদের দ্বিগুণ রেমিটেন্স আয় করে।’

জনশক্তি প্রেরণ খাতে সরকার নানামুখি পদক্ষেপ গ্রহণের কথা বললেও তা যথেষ্ট নয়। সরকারি হিসেবে বিশ্বের প্রায় ১৬০টি দেশে বাংলাদেশের শ্রমবাজার রয়েছে। এর মধ্যে ১৪০টির অবস্থা সন্তোষজনক নয়। মোট জনশক্তি প্রেরণের ৭০ শতাংশেরও বেশি যায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে। তাই আমাদের নতুন নতুন শ্রমবাজার তৈরি করতে হবে বলে জানান এই শ্রম অভিবাসন বিশ্লেষক।

এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. মুস্তাফিজুর রহমান ও জনশক্তি কর্মমসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) পরিচালক ড. মো. নুরুল ইসলাম প্রমুখ।

এদিকে গত ২৮ জুন এক বক্তব্যে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি বলেছেন, ‘গত ৬ মাসে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ বাংলাদেশি কর্মী বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাঠানো হয়েরেছ। চলতি বছরের মধ্যেই বিদেশে মোট সাড়ে ৭ লাখ কর্মী পাঠাতে আমরা সক্ষম হবো।’



মন্তব্য চালু নেই