৬৭৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ৯টি ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন

সরকারি খাদ্য গুদামগুলোতে ১৫ লাখ টন চাল ও গম নিয়ে বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে থাকলেও আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে ৫০ হাজার টন গম আমদানির একটি প্রস্তাবসহ ৬৭৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নয়টি ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি।

বুধবার দুপুরে কমিটির চেয়ারম্যান ও অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের অনুপস্থিতিতে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমুর সভাপতিত্বে এসব প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়।

বৈঠকে ক্রয় কমিটির সদস্য, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব ও উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে অনুমোদিত প্রকল্পগুলোর বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোস্তাফিজুর রহমান।

সূত্র জানায়, বর্তমানে দেশের বিভিন্ন খাদ্যগুদামে প্রায় ১৫ লাখ টন চাল ও গম মজুদ রয়েছে। আর এসব চাল ও গমের মান খারাপ হওয়ায় সরকার এসব খাদ্য নিয়ে বেকায়দায় পড়েছে। সামনে বোরো ধানের মওসুম। নতুন ধান যখন কৃষকের ঘরে উঠবে তখন এসব চাল-গম নিতে কেউ আগ্রহ প্রকাশ করবে না।

সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সভাপতিত্বে খাদ্য মজুদ সংক্রান্ত এক জরুরী বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে খাদ্য মজুদের অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।

সূত্র জানায়, এ মূহুর্তে মজুদকৃত খাদ্য ছাড় করা না হলে সেগুলো খাবার অনুপোযোগি হয়ে পড়তে পারে। ফলে সরকারকে বিপুল অর্থ লোকসান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ অবস্থায় কম দামে মজুদকরা চাল-গম ছেড়ে দেওয়া হলে সে ক্ষেত্রেও সরকারের প্রায় ৩০০ কোটি টাকা লোকসান হবে।

এ অবস্থায় খাদ্য মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব অনুযায়ী প্রতি টন গমের দাম ২১১ দশমিক ৪৫ ডলার হিসেবে ৫০ হাজার টন গম ক্রয় করতে সরকারের ৮৪ কোটি ৫৮ লাখ টাকা ব্যয হবে বলে জানান অতিরিক্ত সচিব মোস্তাফিজুর রহমান।

তিনি বলেন, অন্তর্জাতিক কোটেশনের মাধ্যমে চট্রগ্রাম ও মংলা বন্দরের মাধ্যমে এ গম আমদানি করা হবে। সুইজারল্যান্ডভিত্তিক এজিএম ইন্টারন্যাশনাল এসএ আরসি সরবরাহ করবে।

অতিরিক্ত সচিব বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে মেঘনা ও গোমতী সেতুর টোল আদায়ে সার্ভিস প্রোভাইডার হিসেবে ‘কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সিস্টেম লিমিটেড’-কে পাঁচ বছরের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী আদায়কৃত টোলের ১৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ সার্ভিস চার্জ হিসাবে প্রদান করা হবে এ কোম্পানিকে।

তিনি বলেন, বৈঠকে দেশের পশ্চিমাঞ্চলের সেতু উন্নয়ন প্রকল্পের ডিটেইলড ডিজাইন ও সুপারভিশন কাজের জন্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ‘ওরিয়েন্টাল কনসালটেন্ট গ্লোবাল কোম্পানি লিমিটেড-জেভি’-কে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এতে ব্যয় হবে ২২০ কোটি ২৩ লাখ টাকা। গোড়ান চটবাড়ী পাম্প হাউজ নির্মাণ (৩য় পর্যায়) বাস্তবায়নে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে সেনাবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত ‘বাংলাদেশ ডিজেল প্ল্যান্টকে (বিডিপি) নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এতে ব্যয় হবে ১০৫ কোটি ৮৭ লাখ টাকা।

বৈঠকে ‘পল্লী বিদ্যুতায়ন সম্প্রসারণ খুলনা বিভাগীয় কার্যক্রম-২’-এর প্যাকেজ নং- কেডিপি-২-জি-২৩-এর আওতায় ৬ হাজার ৯৭৪টি ডিস্ট্রিবিউশন ট্রান্সফরমার ক্রয়ের একটি প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে মোট ব্যয় হবে ৫৩ কোটি ২০ লাখ টাকা। দুটি সাব-প্যাকেজে ৩ হাজার ৪৮৭টি করে এই ডিস্ট্রিবিউশন ট্রান্সফরমারগুলো সরবরাহ করবে মেসার্স ট্রান্সফরমার লিমিটেড (২৬ কোটি ৫৯ লাখ টাকা) এবং টেকনো ভেঞ্চার লিমিটেড (২৬ কোটি ৬১ লাখ টাকা)।

এছাড়াও বৈঠকে, সিলেট ১৫০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য স্পেয়ার্স ও অন্যান্য সম্পর্কিত কাজের জন্য দীর্ঘ মেয়াদী সরবরাহ চুক্তি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এ কাজ পেয়েছে ‘এনসারডো এনার্জি অ্যান্ড ইতালি’। ট্যাক্স-ভ্যাটসহ এতে ব্যয় হবে ৭২ কোটি ১৯ লাখ টাকা।

মাতারবাড়ি আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের এক্সেস রোডের ডিটেইলড ডিজাইন ও সুপারভিশনে ‘এসএমইসি-জেভি’-কে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এতে ব্যয় হবে ৪৪ কোটি ৫১ লাখ টাকা।

‘সোনাগাজী-ওলামা বাজার-চর দরবেশপুর-কোম্পানীগঞ্জ সড়কে ছোট ফেনী নদীর ওপর ৪৭৮ দশমিক ১৭ মিটার পিসি গার্ডার সেতু নির্মাণ’ প্রকল্পের প্যাকেজ-০১-এর ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। যৌথভাবে এ কাজ পেয়েছে রানা বিল্ডার্স ও স্পেক্ট্রা লিমিটেড। এতে ব্যয় হবে হবে ৫৭ কোটি ৯০ লাখ টাকা।

অতিরিক্ত সচিব বলেন, ‘চট্টগ্রাম-হাটহাজারী-রাঙ্গামাটি জাতীয় মহাসড়কের (এন-১০৬) চট্টগ্রাম (অক্সিজেন মোড়) থেকে হাটহাজারী অংশে ডিভাইডারসহ সড়ক প্রশস্তকরণ (১ম সংশোধিত)’ প্রকল্পের প্যাকে ডব্লিউ-২-এর অবশিষ্ট নির্মাণকাজের ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এ কাজ পেয়েছে টিবিএল-এমএসি-জেভি। এতে ব্যয় হবে ৩৭ কোটি ৫৬ লাখ টাকা।

তিনি বলেন, ক্রয় কমিটি বৈঠকের আগে ‘অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি’র বৈঠকে ‘বুড়ীগঙ্গা নদী পুনরূদ্ধার (নিউ ধলেশ্বরী-পুংলি-বংশাই-তুরাগ-বুড়ীগঙ্গা রিভার সিস্টেম)’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে নিউ ধলেশ্বরী নদীর দুটি স্থানে ও পুংলি নদীর একটি স্থানে সর্বমোট ৪০ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার খনন কাজ সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে ‘খুলনা শিপইয়ার্ড লিমিটেড’-এর মাধ্যমে বাস্তবায়নের একটি প্রস্তাব নীতিগত অনুমোদন হয়েছে।

এর আওতায় ‘অফটেক রিভার ড্রেজিং’-এর আওতায় নিউ ধলেশ্বরী নদীর অফটেক (-) দশমিক ৩৫০ কিলোমিটার থেকে শূন্য (০) কিলোমিটার পর্যন্ত; ‘মেইনটেন্যান্স ড্রেজিং’-এর আওতায় নিউ ধলেশ্বরী নদীর শূন্য (০) কিলোমিটার থেকে ২ দশমিক ২০ কিলোমিটার এবং পুলিং নদীর ২ দশমিক ২০ কিলোমিটার থেকে ৪০ কিলোমিটার পর্যন্ত খনন করা হবে।



মন্তব্য চালু নেই