’৬৫-র পাক-ভারত যুদ্ধ নিয়ে মার্কিন গোপন নথি

১৯৬৫ সালের ভারত-পাক যুদ্ধে মার্কিন ভূমিকার অত্যন্ত গোপন নথি সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, ওই সময় মার্কিন প্রশাসন ভারতেরই পাশে দাঁড়িয়েছিল এবং কাশ্মীরে গণভোটের প্রশ্নও খারিজ করে দিয়েছিল।

এই নথি বলছে, পাক-ভারত যুদ্ধ যখন তুঙ্গে তখন ভারতের তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রী আমেরিকার প্রেসিডেন্ট লিন্ডন জনসনকে একটি চিঠি লেখেন। তাতে শাস্ত্রী জানান, নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতিতে ভারতের কোনও আপত্তি নেই। তবে কাশ্মীরে গণভোটের দাবি কোনও মতেই মানা সম্ভব নয়।

১৯৬৫ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর লেখা এই চিঠিতে লাল বাহাদুর শাস্ত্রী একথাও জোরের সঙ্গে জানিয়ে দেন যে, যা পরিস্থিতি তাতে ১৯৪৮ সালের এই সংক্রান্ত জাতিসংঘের প্রস্তাব আর খাটে না।

শাস্ত্রীর এই চিঠি পাঠানোর একটা কারণ ছিল। তার আগেই পাকিস্তানের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জুলফিকর আলি ভুট্টো আমেরিকার কর্তাব্যক্তিদের বলেছিলেন, পাকিস্তান দেশ হিসাবে যে কোনও লাঞ্ছনা সইতে রাজি আছে। কিন্তু কোনও ভাবেই তারা কাশ্মীরের দাবি ছাড়বে না।

মার্কিন নথি থেকে জানা যাচ্ছে, ১৯৬৫ সালের যুদ্ধে ভারতের সেনাবাহিনী যেদিন পাক ভূখণ্ডে পা রেখেছিল সেই দিনই পাক প্রেসিডেন্ট আয়ুব খান এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভুট্টোর সঙ্গে দেখা করেছিলেন ইসলামাবাদের মার্কিন রাষ্ট্রদূত ওয়াল্টার প্যাট্রিক ম্যাককোনাটি। পাক কর্তারা তাঁর কাছে কাশ্মীরের গণভোটের ব্যাপারে আমেরিকা, জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিকগোষ্ঠীর হস্তক্ষেপ চেয়ে বারংবার অনুরোধ জানাচ্ছিলেন।

যদিও ম্যাককোনাটি এ ব্যাপারে এতটুকু নরম মনোভাব দেখাননি। কথাপ্রসঙ্গে তিনি সরাসরি জানিয়ে দেন, এই যুদ্ধের জন্য পাকিস্তানই দায়ী। তারাই কাশ্মীরে সেনা ঢুকিয়েছে এবং আমেরিকার দেওয়া অস্ত্রশস্ত্র ভারতের বিরুদ্ধে ব্যবহার করেছে। অথচ এইসব অস্ত্র আমেরিকা পাকিস্তানকে দিয়েছিল কমিউনিস্ট চীনকে মোকাবিলা করার জন্য।

একই দিনে জনসন প্রশাসন ম্যাককোনাটিকে একটি টেলিগ্রাম পাঠায়। তাতে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়, পাকিস্তানকে যেন কোনও ভাবেই না প্রশ্রয় দেওয়া হয়। ইসলামাবাদ যেন নিজেকে আক্রান্ত হিসাবে দেখানোর চেষ্টা না করে। কারণ এই যুদ্ধের জন্য তারাই দায়ী।

ম্যাককোনাটিকে ওই বার্তায় জনসন প্রশাসন বলেছিল, “বিগত কয়েক সপ্তাহের ঘটনাবলী থেকে আমরা পাক সীমান্ত পেরিয়ে ভারতের আক্রমণকে বিচার করেছি। জাতিসংঘের মহাসচিবের রিপোর্ট থেকে পরিষ্কার, পাকিস্তানের দিক থেকে সশস্ত্র দঙ্গলের ক্রমাগত অনুপ্রবেশ সাম্প্রতিক সংকট সৃষ্টি করেছে।”

ওই নথিতে এ কথাও বলা হয়, “আমরা জানি, ভারত ঘোষিত সীমান্ত বরাবর সেনা মোতায়েন করেছিল বটে, কিন্তু পাকিস্তান চাম্ব এলাকায় যে পরিস্থিতি তৈরি করেছিল ভারতের দিক থেকে তা নিয়ে উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছিল।

ভারত বার বারই বলেছিল, প্রথমত তারা পাকিস্তানের দিক থেকে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাওয়া আক্রমণাত্মক গতিবিধি সহ্য করবে না। এবং দ্বিতীয়ত, পাকিস্তান যদি ভারতের গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানগুলিতে আঘাত হানে, তাহলে ভারতও তার নিজের সুবিধামতো অবস্থানগুলিতে পালটা আক্রমণ হানতে বাধ্য হবে। সুতরাং পাক সরকার যেন জম্মু-কাশ্মীরে তার হানাদারি চালানোর বিপদ সম্পর্কে হুঁশিয়ার থাকে।”

যদিও এই নথি বলছে, লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর কড়া চিঠি এবং মার্কিন প্রশাসনের কঠোর মনোভাবও পাকিস্তানকে সহজে দমাতে পারেনি। তার পরেও জনসন ও তাঁর সহযোগীদের আঙুল অনেকটাই বাঁকাতে হয়েছিল। আর তাতেই জব্দ হয়েছিলেন জেনারেল আয়ুব খান ও তাঁর পররাষ্ট্রমন্ত্রী জুলফিকর আলি ভুট্টো। নইলে হয়তো সেই যুদ্ধেই ভারতের সেনাবাহিনী ইসলামাবাদ দখল করে নিত।



মন্তব্য চালু নেই