৫৫ রানে হারলো বাংলাদেশ

টি২০ বিশ্বকাপের বাছাইপর্বের ধারাবাহিকতা মূলপর্বে ধরে রাখবে বাংলাদেশ, টাইগারভক্তদের প্রত্যাশা ছিল এমনই। কিন্তু সুপার টেনে নিজেদের প্রথম ম্যাচে খেই হারিয়ে ফেলে মাশরাফি অ্যান্ড কোং। পাকিস্তানের বিপক্ষে নিজেদের মেলে ধরতে পারেননি তারা। কলকাতার ইডেন গার্ডেনে বুধবার গুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাচটিতে শহিদ আফ্রিদির দলের কাছে ৫৫ রানে পরাজয় বরণ করে বাংলাদেশ। আর তাতে বড় ব্যবধানের হারেই বিশ্বকাপ মিশন শুরু হয় টাইগারদের।

পাকিস্তানের বিপক্ষে নিয়ন্ত্রিত বোলিং করতে পারেননি বাংলাদেশের বোলাররা। যার খেসারত দিতে হয়ে ম্যাচটিতে। এই সুযোগে আগে ব্যাট করে পাকিস্তান সংগ্রহ করে ৫ উইকেটে ২০১ রান। জবাবে বাংলাদেশের ইনিংস থামে ৬ উইকেটে ১৪৬ রানে।

পাহাড়সম লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে বাংলাদেশের সূচনাটা হয়েছে বাজেভাবে। শুরুতেই সৌম্য সরকারের উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে মাশরাফির দল। টাইগারদের স্কোরশিটে ১ রান যোগ হতেই বাংলাদেশ শিবিরে আঘাত হানেন মোহাম্মদ আমির। দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে সরাসরি বোল্ড করেন সৌম্যকে। রানের খাতা না খুলেই দলকে বিপদের মুখে ঠেলে দিয়ে সাজঘরে ফেরেন বাংলাদেশের
ওপেনার!

দলীয় ৫.৪ ওভারে আফ্রিদির বলে ব্যাকফুটে স্কয়ার কাট করে বাউন্ডারি হাঁকান সাব্বির রহমান। ঠিক পরের বলটি ব্যাকফুটে খেলতে গিয়ে বোল্ড হন তিনি। ফের ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। ১৯ বলে পাঁচটি চারের সাহায্যে ২৫ রান করেন সাব্বির। দলীয় ৪৪ রানের মাথায় তিনিও সাজঘরের পথ ধরেন।

নিজেকে খুঁজে পাওয়ার ম্যাচে দারুণভাবেই ফিরলেন আফ্রিদি। সাব্বিরের পর তামিম ইকবালকেও প্যাভিলিয়নের পথ বাতলে দেন তিনি।ছক্কা মারতে গিয়ে ডিপ স্কয়ার লেগে তামিম ক্যাচ তুলে দেন ইমাদ ওয়াসিমের হাতে। ২০ বলে দুটি ছক্কায় ২৪ রান আসে তামিমের ব্যাট থেকে।

এরপর পাকিস্তানের বোলার ইমাদ ওয়াসিম মাঠে থাকতে দেননি দুর্দান্ত ফর্মে থাকা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকেও। ৫ বলে মাত্র ৪ রান করেন মাহমুদউল্লাহ। এদিন রানে ফেরার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন মুশফিকুর রহিম। কিন্তু ২১ বলে তিনটি চারে ১৮ রান দলের স্কোরশিটে যোগ করে আমিরের কাছে ধরাশায়ী হন বাংলাদেশের এই উইকেটরক্ষক। মোহাম্মদ মিঠুনও দ্রুতই ক্রিজ ছাড়েন মোহাম্মদ ইরফানের বলে আউট হয়ে। নামের পাশে যোগ করতে পেরেছেন মোটে ২ রান!

পরাজয়ের ম্যাচেও স্বস্তির খবর সাকিব আল হাসানের রানে ফেরা। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার তুলে নিয়েছেন টি২০ ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ ফিফটি। ৪০ বলে ৫টি চার ও একটি ছক্কায় ঠিক ৫০ রানের অপরাজিত ছিলেন সাকিব। অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়েন দলীয় অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। ৯ বলে দুটি চার একটি ছক্কায় করেন ১৫ রান।

এর আগে টসে জিতে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই বাংলাদেশ শিবিরে আতঙ্ক সৃষ্টি করেন পাকিস্তানের ওপেনার শারজিল খান। ক্রমশই ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা এই ব্যাটসম্যানকে সাজঘরের পথ দেখান আরাফাত সানি। দলীয় তৃতীয় ওভার ও ব্যক্তিগত প্রথম ওভারেই দুর্দান্ত এক ঘুর্ণিতে শারজিলকে সরাসরি বোল্ড করেন বাংলাদেশের এই স্পিনার। ১০ বলে একটি চার ও দুটি ছক্কায় ১৮ রান করেন শারজিল।

এশিয়া কাপের দলেই থাকার কথা ছিল না আহমেদ শেহজাদের। অনেক নাটকের পর দলে ফেরেন তিনি। অথচ সেই শেহজাদই দেখা দিলেন পাকিস্তানের ত্রতা হয়ে। বাংলাদেশের বিপক্ষে তুলে নিলেন ফিফটি। সাব্বির রহমানের বলে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের তালুবন্দী হন তিনি। ৩৯ বলে আটটি চারের মারে করেন ৫২ রান। দ্বিতীয় উইকেটে মোহাম্মদ হাফিজের সঙ্গে ৯৫ রানের জুটি গড়েন পাকিস্তানের এই ওপেনার। শেহজাদের পর ফিফটি তুলে নেন হাফিজও। ৪২ বলে করেন ৬৪ রান। মূল্যবান ইনিংসটি তিনি সাজান ৩টি চার ও দুটি ছক্কায়। ১৭তম ওভারে চতুর্থ বলে আরাফাত সানির বল উড়িয়ে মারেন তিনি। সৌম্য সরকারের দুর্দান্ত এক ক্যাচে কাটা পড়েন তিনি। তৃতীয় উইকেটে অধিনায়ক শহিদ আফ্রিদির সঙ্গে ৪২ রানের জুটি গড়েন হাফিজ।

এ ছাড়া সম্প্রতি ফর্মহীনতায় ভুগতে থাকা বুমবুম আফ্রিদিও জ্বলে উঠেন। ফর্মে ফিরতে বেছে নিলেন বাংলাদেশকে! ব্যাট হাতে মাঠে নেমেই ঝড় তোলেন পাকিস্তান দলপতি। তার ঝড় থামে ১৯ বলে চারটি করে চার ও ছক্কায় ৪৯ রানে। তাসকিন আহমেদের বলে মাহমুদউল্লাহর হাতে ক্যাচ তুলে দেন আফ্রিদি। এদিকে পাকিস্তানের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান উমর আকমল পারেননি নামের প্রতি সুবিচার করতে। রানের খাতা না খুলতেই তাসকিন আহমেদের শিকার হন তিনি। ৯ বলে দুটি চারের সাহায্যে ১৫ রান নিয়ে অপরাজিত ছিলেন শোয়েব মালিক। পাকিস্তানের অপর অপরাজিত ব্যাটসম্যান ইমাদ ওয়াসিম (০)।

বাংলাদেশের সেরা বোলার তাসকিন আহমেদ। ৪ ওভারে ৩২ রান দিয়ে তুলে নিয়েছেন দুটি উইকেট। আরাফাত সানিও পকেটে পুরেছেন দুটি উইকেট। তবে ৪ ওভারে তিনি খরচ করেছেন ৩৪ রান। ২ ওভারে ১১ রান দিয়ে একটি উইকেট দখলে নেন সাব্বির রহমান রুম্মান।



মন্তব্য চালু নেই