৪৩ বছর পর নিজস্ব ভবনে উঠল নির্বাচন কমিশন

দীর্ঘ ৪৩ বছর পর ভাড়া করা ভবন ছেড়ে নিজস্ব ভবনে যাত্রা শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ফলে মেয়াদের শেষ ১৮ দিন পরিকল্পনা কমিশনের ৫ ও ৬ নম্বর ব্লকের অফিস ছেড়ে আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশনের নতুন ভবনেই অফিস করবেন কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ বলেন, ‘কমিশনের সব তথ্য-উপাত্ত ও মালামাল নতুন ভবনে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। ২২ জানুয়ারি থেকে সেখানে অফিস করব আমরা। দীর্ঘ ৪৩ বছর পর ইসির নিজস্ব ভবনে অফিস করতে পারা ভাগ্যের বিষয়। বিদায় নেয়ার পর বলতে পারব নতুন ভবনের প্রথম কমিশনার ছিলাম আমরা।’

কর্মকর্তারা জানান, স্বাধীনতার আগে পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক নির্বাচন কমিশনের দফতর ছিল ঢাকার মোমেনবাগে। মুক্তিযুদ্ধের সময় ১৯৭১ সালে মে মাসের শেষ দিকে ইসির একজন কর্মচারীর সহায়তায় মুক্তিসেনারা ওই কার্যালয়টিতে বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। এরপর নির্বাচন কমিশন প্রথমে সচিবালয়ে এবং পরে ১৯৭৩ সালে বর্তমান ঠিকানায় স্থানান্তরিত হয়। এখন জেলা নির্বাচন, থানা নির্বাচন ও জাতীয় পরিচয়পত্র সংক্রান্ত উইংয়ের কাজ চলছে ভাড়া বাড়িতে। আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। এরপর নবগঠিত নির্বাচন কমিশনের সদস্যদেরও ৪৩ বছর ধরে ইসির পরিচিত ঠিকানার বদলে নতুন ঠিকানায় যোগ দিতে হবে। এ ছাড়া পরিবর্তন এসেছে কমিশন সচিবালয়ের জনবলেও। ইতিমধ্যেই অভিজ্ঞ বেশ কিছু কর্মকর্তা চাকরির মেয়াদ শেষে অবসরে গেছেন। পদোন্নতি পেয়ে ইসি সচিবালয় থেকে ঢাকার বাইরে বদলি হয়ে গেছেন অনেকে।

নির্বাচন কমিশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা এস এম আসাদুজ্জামান তার ফেসবুকে কমিশন চত্বরের দুটি ছবি দিয়ে স্ট্যাটাস লেখেন- প্লানিং কমিশন অফিস ক্যাম্পাস আমার প্রিয় অফিস ক্যাম্পাস। স্মৃতিবিজড়িত এ ক্যাম্পাসে আজ বৃহস্পতিবার ১৯ জানুয়ারি ২০১৭ শেষ অফিস। রাজনীতিবিদসহ অনেক সাংবাদিকেরও স্মৃতিবিজড়িত এ ক্যাম্পাস। দীর্ঘ ৪৩ বছর পর নির্বাচন কমিশনের অফিস আগামীকাল তার নতুন ঠিকানায় পৌঁছে যাবে। হারিয়ে যাবে ইতিহাসের সাক্ষী সেই সিঁড়িটি।

সূত্র জানায়, ২০০৭ সালে পশ্চিম আগারগাঁওয়ের ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পাশে নিজস্ব ভবন নির্মাণের জন্য ২ একর ৩৬ শতাংশ জমি নির্বাচন কমিশনকে বরাদ্দ দেয় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। প্রায় ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে এ ভবন নির্মাণের কাজ ২০১১ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা ছিল। সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ড. এ টি এম শামসুল হুদার ইচ্ছা ছিল নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব ভবন ইলেকশন রিসোর্স সেন্টারের (ইআরসি) নির্মাণ কাজ শুরু করে যাওয়া। ২০১১ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর এ প্রকল্পটি অনুমোদন পায়। কিন্তু প্রকল্প পরিচালকসহ জনবল নিয়োগ টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতেই তার মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। সে সময় ড. এ টি এম শামসুল হুদা বলেছিলেন, এ ভবন নির্মাণের মাধ্যমে আমাদের বড় ধরনের প্রত্যাশা পূরণ হবে। ইসিকে আর ভাড়া করা অপরিসর ভবনে নানা সমস্যার মধ্যে কাজ করতে হবে না। গত ৩১ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ইসির নতুন ভবনের উদ্বোধন করেন।

কর্মকর্তারা জানান, ১১ তলাবিশিষ্ট ভবনটির চত্বরে ভাস্কর মৃণাল হকের তৈরি ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের দুটি ভাস্কর্য রয়েছে। দুই ভাগে বিভক্ত ভবনটির পূর্ব অংশে কমিশন অফিস এবং পশ্চিম অংশে ইসি সচিবালয় থাকবে। মাঝখানে থাকছে সুদৃশ্য ফোয়ারা। দ্বিতলবিশিষ্ট বেজমেন্টে ‘অ্যাকোয়াস্টিক ট্রিটমেন্ট’ সমৃদ্ধ আধুনিক মিলনায়তন ও নিজস্ব পানি সরবরাহ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। রয়েছে সোলার এনার্জি ও রেইন ওয়াটার হারভেস্টিংয়ের ব্যবস্থা। তবে নতুন ভবনের নির্মাণ কাজ নিয়ে সন্তুষ্ট নন কমিশন সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

তারা জানান, ভবন নির্মাণে নানা অনিয়ম হয়েছে। ভবনটি সম্পূর্ণ করপোরেট স্ট্রাকচারে তৈরির কথা থাকলেও তা হয়নি। ভবনের স্ট্রাকচার অনুযায়ী কেন্দ্রীয়ভাবে এসি বাধ্যতামূলক হলেও তা অনুসরণ করা হয়নি। এসি থাকছে বিশেষ বিশেষ কক্ষে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্য কমিশনারদের কক্ষে এসির ব্যবস্থা থাকলেও সচিবালয়ের অন্য কর্মকর্তাদের কক্ষে এসি থাকছে না। নতুন ভবন এলাকায় তেমন গাছপালা না থাকায় সামান্য রোদেই এলাকাটি উত্তপ্ত হয়ে উঠবে। ফলে চৈত্র-বৈশাখ মাসে নতুন ভবনে অফিস করা সমস্যা হবে।

ভবন নির্মাণ কাজে নিয়োজিত শেরেবাংলা গণপূর্ত অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আতাউর রহমান সিদ্দিকী বলেন, ২০১৪ সালের মার্চ থেকে আমরা কাজে হাত দিয়েছি। আগামী জুনের মধ্যে দুই ভবনের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল।



মন্তব্য চালু নেই