৪০ কিলোমিটার হেঁটে হাসপাতালে নার্স

গত রবিবার এহেন পরিস্থিতিতে কাজে বেরিয়েছিলেন শ্রীনগরের এসএমএইচএস হাসপাতালের সেবিকা ফিরদৌসা রশিদ। পায়ে হেঁটে ৪০ কিলোমিটার রাস্তা পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে যান! ডিউটি সেরে বাড়িও ফেরেন হেঁটে!

রাস্তাঘাট থমথমে, শুন্‌শান। সেই স্তব্ধতা খানখান হচ্ছে সেনা-পুলিশের ভারী বুটের শব্দে।
গত রবিবার এহেন পরিস্থিতিতে কাজে বেরিয়েছিলেন শ্রীনগরের এসএমএইচএস হাসপাতালের সেবিকা ফিরদৌসা রশিদ। পায়ে হেঁটে ৪০ কিলোমিটার রাস্তা পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে যান! ডিউটি সেরে বাড়িও ফেরেন হেঁটে! খবরটা জানাজানি হতে ফিরদৌসকে এ নিয়ে প্রশ্ন করেছিলেন সাংবাদিকেরা। সেবিকার জবাব, ‘‘হাসপাতালে সেদিন কর্মীদের সংখ্যা কম ছিল। আমার কাজ হাসপাতালের সার্জিকাল আইসিইউ’য়ে রোগীদের প্রাণ বাঁচানো। গুরুত্বপূর্ণ ডিউটি, তাই যেতে হয়েছিল।’’

বুরহান ওয়ানি’র হত্যার জেরে উপত্যকায় গত কয়েকদিনের সংঘর্ষে আহতদের একটি বড় অংশেরই চিকিৎসা চলছে শ্রীনগরের ওই একমাত্র জেনারেল স্পেশালিটি হাসপাতালে। সেখানে কয়েকজন আহতের মৃত্যুও হয়। গত সোমবার স্থানীয় একটি সংবাদপত্র দাবি করেছিল, ওই হাসপাতালে তার আগের দিন যে কোনও সময়ে একসঙ্গে পাঁচটি করে গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্রোপচার হয়েছে। যা ওই হাসপাতালে ‘অভূতপূর্ব’।

ফিরদৌসার বাড়ি উত্তর কাশ্মীরের তনমার্গে। গত রবিবার সকাল পৌনে ৮টায় বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন তিনি। হাসপাতালে পৌঁছন দুপুর সওয়া ২টোয়। স্থানীয় একটি সংবাদপত্রকে তিনি এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘সেদিন বাড়ির সকলেই আমাকে বেরোতে বারণ করেছিল। বলেছিল, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজে যাচ্ছো। আমি অবশ্য কারও কথা শুনিনি।’’ রাস্তায় তাঁকে একলা হাঁটতে দেখে প্রশ্ন করেছিলেন আন্দোলনকারীদের অনেকেই। ফিরদৌসার কথায়, ‘‘কতজনকে আর উত্তর দেব! শেষমেশ কারও দিকে না-তাকিয়ে হাঁটতে শুরু করি।’’ ওই সেবিকা জানিয়েছেন, সেদিন তাঁর যাওয়ার দরকার ছিল সহকর্মীদের বিশ্রাম দিতেও! তিনি বলেছেন, ‘‘আমার সহকর্মীরা তার আগের দু’দিন টানা কাজ করেছেন। আমরা না গেলে ওঁরা ছুটি পেতেন না।’’

ভূস্বর্গের এই নিজস্ব ‘ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলে’র মানবিকতা, সহমর্মিতার কাহিনিতে অবশ্য কাশ্মীর সমস্যার নিষ্পত্তি হয় না।

কাশ্মীরে নিহত হিজবুল জঙ্গি বুরহান ওয়ানির প্রসঙ্গ গতকাল রাষ্ট্রপুঞ্জে তুলেছিলেন পাকিস্তানের দূত মলীহা লোধি। ওয়ানিকে ‘কাশ্মীরি নেতা’ বলে দাবি করে ভারতের মানবাধিকার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। আজ তার জবাব দিয়েছে নয়াদিল্লি। রাষ্ট্রপুঞ্জে ভারতের দূত সৈয়দ আকবরউদ্দিন জানিয়েছেন, পাকিস্তান জঙ্গিদের গুণপনার প্রশংসা করে সন্ত্রাসকে রাষ্ট্রীয় নীতি হিসাবে ব্যবহার করে। তাঁর কথায়, ‘‘পাকিস্তান রাষ্ট্রপুঞ্জের মতো মঞ্চেরও অপব্যবহার করতে চাইছে। ওরা অন্যের এলাকা দখলের কথা ভাবে, জঙ্গিদের গুণের প্রশংসা করে, ভুল উদ্দেশ্যে সন্ত্রাসকে রাষ্ট্রীয় নীতির অংশ করে তোলে, জঙ্গিদের নিজেদের দেশে আশ্রয় দেয়।’’ সক্রিয় হয়ে উঠেছেন বেনজির ভুট্টোর পুত্র তথা পাকিস্তান পিপলস পার্টির নেতা বিলাবলও। তিনি আজ হুরিয়ত কনফারেন্সের নেতা মিরওয়াইজ উমর ফারুককে ফোন করে সহমর্মিতা ও সমর্থন জানান।



মন্তব্য চালু নেই