৪০০ টাকার ভাড়া ১৪০০ টাকা

সদরঘাটের ৪ নম্বর টার্মিনালের সামনে সাত মাসের সন্তান কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন মুনিরা বেগম। যাবেন উত্তরা। কোনো গাড়ি পাচ্ছেন না। টার্মিনালের সামনে অটোচালকরা ভাড়া চেয়েছেন ১৪০০ টাকা। ১০০০ টাকাতেও রাজি না হওয়ায় স্ত্রী-সন্তানকে রেখে অটো খুঁজতে বের হয়েছেন তার স্বামী।

আরেক যাত্রী নজরুল ইসলামও পরিবার নিয়ে টার্মিনালে অপেক্ষা করছেন। যাবেন ধানমণ্ডির শঙ্করে। ঘণ্টাখানেক দাঁড়িয়ে থেকে একটি অটো পেলেও ভাড়া অনেক বেশি। উপায় না দেখে ৮০০ টাকা ভাড়ায় গন্তব্যে রওনা দেন তিনি।

ঈদের ছুটি শেষে ঢাকায় ফিরতে মুনিরা, নজরুলদের মতো হাজার হাজার যাত্রী ভোগান্তিতে পড়ছেন। দক্ষিণাঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে লঞ্চে আসা যাত্রীরা সদরঘাট নেমেই পড়ছেন বিপাকে। যানবাহন সঙ্কটের কারণে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তাদের। সেই সঙ্গে বাড়তি ভাড়াও গুনতে হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা সদরঘাট টার্মিনালে এলাকায় গিয়ে এমন দৃশ্যই দেখা গেছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ঈদ শেষে জীবিকার টানে দক্ষিণাঞ্চল থেকে হাজার হাজার মানুষ রাজধানী ঢাকায় ফিরছে। কিন্তু সদরঘাটে লঞ্চ থেকে নেমে গন্তব্যস্থলে যাওয়ার জন্য কোনো গাড়ি পাচ্ছেন না। হাজার হাজার যাত্রী বাসের জন্য অপেক্ষা করছেন। যানবাহন সঙ্কটের কারণে রাস্তায় সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। টার্মিনাল এলাকায় কিছু বাস এবং সিএনজিচালিত অটো দেখা গেলেও ভাড়া অনেক বেশি। ভিক্টেরিয়া পার্ক এলাকায় অবস্থানরত গাড়িগুলোতেও নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে দুই থেকে তিন গুন বেশি।

যাত্রীদের অভিযোগ, মানুষের তুলনায় যানবাহনের সংখ্যা ছিল খবুই কম। সেই সঙ্গে ২৫ টাকার বাস ভাড়া ১০০ টাকা, ৪০ টাকার বাস ভাড়া ১৫০ টাকা, ৩০০ টাকার অটো ভাড়া ১২০০ টাকা দিয়ে যাত্রীদের গন্তব্যে যেতে হয়েছে।

মিরপুরের বেনারশি পল্লীর ব্যবসায়ী হুমায়ুন কবির বলেন, ঈদ করতে বরিশালের হিজলা উপজেলায় গিয়েছিলাম পরিবার নিয়ে। লঞ্চে যাওয়া আসায় দুর্ভোগ না পেলেও সদরঘাটে এসে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে। দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে দুইটি অটো ভাড়া করেছি ১৮০০ টাকায়।

তিনি বলেন, আমরা সবসময় মিরপুর সি ব্লক থেকে সদরঘাট যাওয়া আসা করি ২৫০ থেকে সর্বোচ্চ ৩৫০ টাকায়। এখন কী করবো ছেলে মেয়েরা আছে, এজন্য এই ভাড়া দিয়ে যাচ্ছি।

সিএনজিচালিত অটোরিকশার ভাড়া বেশি হওয়ায় অনেককে বাসেও গন্তব্যস্থলে যেতে দেখা গেছে। শ্যামলী এলাকার বাসিন্দা রমজান আলী স্ত্রী-ছেলে-মেয়ে নিয়ে গ্রামের বাড়ি ভোলার লালমোহন থেকে এসেছেন। ঘাটে এসেই অটোর ভাড়া শুনে হতবাক হয়ে যান। পরে তারা জগ্ননাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বাসে করেই রওনা দেন।

এদিকে বাসগুলোতে দ্বিগুন থেকে তিন গুন ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। সদরঘাট থেকে গাজীপুরের চন্দ্রা, টঙ্গী পর্যন্ত ১৫০ থেকে ২০০ টাকা নেয়া হচ্ছে। সদরঘাট থেকে মিরপুর ১০, ১১, ১২ নম্বর রোড়ে চলাচলকারী বাসগুলো ১০০ টাকা ভাড়া নিচ্ছে। গাবতলী রুটের গাড়িগুলো নিচ্ছে ১০০ টাকা করে।

সুপ্রভাত বাসের যাত্রী টঙ্গী মনিরুল ইসলাম বলেন, মানুষের চাপ অনেক বেশি। তাই এই সুযোগে বাস মালিকরা অনেক বেশি ভাড়া নিচ্ছে। কারো কিছু বলার সাহস নেই। বললেও কাজ হবে না।

বিহঙ্গ পরিবহনের এক হেলপার বলেন, ঘাটে আসলেই কয়েক জায়গায় ৫০০-৬০০ টাকা চাঁদা দিতে হয়। টাকা কি বাসা থেকে নিয়ে আসবো। এটা যাত্রীদের কাছ থেকেই নিতে হবে। টাকা না দিয়ে কেউ ঘাটে আসতে পারে না। এই কারণেই বাস ভাড়া এখানে একটু বেশি।

একই কথা বলেন, আয়নাল নামের এক অটোচালক। তিনি জানান, ভোর সাড়ে ৫টায় ঘাটে আসছি। টাকা দিয়ে আসছি। কত টাকা দিয়েছেন- জানতে চাইলে ওই চালক অদূরে দাঁড়িয়ে থাকা এক পুলিশ সদস্যকে দেখিয়ে বলেন, ওনার পাশে দাঁড়ান তাহলেই টাকার পরিমাণ জানতে পারবেন।



মন্তব্য চালু নেই