৩ কোটি ২০ লাখ টাকার ইউরিয়া সার গায়েব!

শাহ্ আলম শাহী, দিনাজপুর থেকে : দিনাজপুরের পুলহাটস্থ বাফা’র গোডাউনে কয়েক হাজার বস্তা ইউরিয়া সার খোলা আকাশের নিচে পড়ে থাকায় বৃষ্টিতে ভিজে, রোদে শুকিয়ে শক্ত, জমাট বেধে নষ্ট হয়ে গেছে। আর এসব সার কিনে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষক।

অন্যদিকে নির্দিষ্ট মজুদের চেয়ে বাফার গোডাউন প্রায় ২ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া সার কম রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সরেজমিনে পরিমান নির্ধারণ চাক্ষুস যাচাইয়ের ভৌত প্রতিবেদন দিতে জেলা সার মনিটরিং কমিটি’র সভাপতি জেলা প্রশাসক তদন্ত কমিটি গঠন করলেও সংশ্লিষ্ট গোডাউন ইনচার্জ এর অসহযোগিতায় তা ভেস্তে গেছে।

প্রতি বস্তা ৮’শ টাকা দরে প্রায় ৩ কোটি ২০ লাখ টাকা মূল্যের সার গায়েব হয়ে যাওয়ার সাথে অনেক রাঘব-বোয়াল জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ব্যাপারে জেলা সার মনিটরিং কমিটি’র সভাপতি জেলা প্রশাসক নিশ্চুপ থাকার বিষয় নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র মতে, সার কেলেংকারী এ ঘটনা ধামা চাপা দিতে লাখ লাখ টাকা ছড়িয়ে ছিটিয়ে দেয়া হয়েছে।

এবড়ো-থেবড়ো ভাবে খোলা আকাশের নীচে ফেলে রাখা হয়েছে ইউরিয়া সার। সারের বস্তার লিখা আছে বস্তায় হুক লাগানো যাবেনা। কিন্তু তার পরেও সার মজুতের সময় ট্রাক থেকে সার নামাতে যেখানে সেখানে হুক লাগাতে ছিদ্র হচ্ছে বস্তা। রোদে সার গলে চুয়ে পড়ছে। বৃষ্টিতে ভিজে জমাট বেঁধে শক্ত হচ্ছে সার। কিন্তু এতে কর্তৃপক্ষের নেই কোন নজর। এ দৃশ্য দিনাজপুরের পুলহাটস্থ বিসিআইসি বাফা’র গোডাউনের। সার বিক্রেতা আকবর হোসেন জানিয়েছেন, পুলহাট গোডাউনের সার কৃষকরা নিতে চাচ্ছেনা। হাড্ডি’র মতো জমাট বাঁধা সার জমিতে ব্যবহার করতে কৃষকদের বেশ সমস্যা হয়। তাছাড়া এ সার বস্তা প্রতি ২ থেকে ৩ কেজি কম থাকে বলে অভিযোগ কৃষকের। তাই এসব সার বিক্রি করা দায় হয়ে পড়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে,এসব সার কিনে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষক। জমাট বাধা এসব নষ্ট ইউরিয়া সার জমিতে ব্যবহার করে ফসল বিনষ্ট হচ্ছে। বিবর্ণ আকার ধারন করছে গ্রীন্মকালীন ফসলের ক্ষেত। শুধু তাই নয়,৫০ কেজি’র বস্তা হলেও ইউনিয়া সারের বস্তা প্রতি ২/৩ কেজি কম পাওয়া যাচ্ছে। এমন অভিযোগ কৃষকের।

দক্ষিন কোতয়ালীর উলিপুরের কৃষক আমজাদ হোসেন জানান, ইউরিয়া সার বোরো ধান ক্ষেতে ব্যবহার করায় তার অনেক ধান ক্ষেত নষ্ট হয়েছে। বস্তার ভেতর লোহার মত শক্ত সার ব্যবহার করতেও তাদের হিমসিম খেতে হচ্ছে। একই কথা জানালেন, বিরল উপজেলার পলাশবাড়ী এলাকার কৃষক আজাহার আলী। আজাহার আলী’র অভিযোগ,ইউরিয়া সার দিয়ে ফসল চাষাবাদ করলে সেই ফসল উৎপাদন অর্ধেকে নেমে যায়। সার উপকারের পরিবর্তে ক্ষতি ডেকে আনছে। এ সাব ব্যবহারে অনুপযোগি হয়ে পড়েছে। আগামী আমন চাষাবাদ নিয়ে দুঃচিন্তায় পড়েছেন তিনি।

এদিকে নির্দিষ্ট মজুদের চেয়ে বাফার গোডাউন প্রায় ২ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া সার কম রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ জন্যে সরেজমিনে পরিমান নির্ধারণ চাক্ষুস যাচাইয়ের ভৌত প্রতিবেদন দিতে জেলা সার মনিটরিং কমিটি’র সভাপতি জেলা প্রশাসক তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অসহযোগিতায় ভেস্তে গেছে সেই তদন্ত। সেই তদন্ত কমিটি’র প্রধান দিনাজপুর বিএডিসি (সার) এর যুগ্ম পরিচালক আ.ফ.ম.আফরোজ আলম জানান, আমরা সারের পরিমান নির্ধারণ চাক্ষুস যাচাইয়ের বিষয়ে তদন্ত করতে গিয়েও তা করতে পারিনি। দু’দফা সময় নিয়েও আমাদের ব্যর্থ হতে হয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অসহযোগিতার কারণে। সারের লড সারিবদ্ধ ভাবে সাজানো নেই। এবড়ো থেবড়ো ভাবে সার মজুর করে রাখা হয়েছে। যার কারণে পরিমান নির্ধারণ চাক্ষুস যাচাইয়ের সম্ভব হয়নি। আমরা এ বিয়ষে জেলা সার মনিটরিং কমিটি’র সভাপতি জেলা প্রশাসক মহোদয়ের কাছে প্রতিবেদন দিয়েছি। এখন করণীয় তার ব্যাপার। তবে আমরা শুনেছি, প্রায় ২ হাজার মে.টন ইউরিয়া সার কম রয়েছে। যে সারের আনুমানিক মূল্য প্রতি বস্তা ৮ ’শ টাকা দরে প্রায় ৩ কোটি ২০ লাখ টাকা।

জেলা সার মনিটরিং কমিটি’র সভাপতি জেলা প্রশাসকের গঠন করা তদন্ত কমিটি’কে অসহযোগিতা করা এবং সার মজুদের স্তুপ সাজিয়ে না রাখার কথা অস্বীকার করেছেন পুলহাট বিসিআইসি বাফা’র ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও উপ ব্যবস্থাপক মাসুদ রানা। তিনি বলেন, তার গোডাউনে সার ঠিকই রয়েছে। তবে এ মূহুর্তে পরিমান নির্ধারণ চাক্ষুস যাচাইয়ের বিষয়টি সম্ভব নয়। কেননা, লড সারিবদ্ধ ভাবে সাজাতে অনেক শ্রমিক ও টাকার প্রয়োজন।

দিনাজপুরের পুলহাটস্থ বাফা’র গোডাউনে সাড়ে ৭ বছর ধরে একই স্থানে অবস্থান করছেন গোডাউনের উপ-ব্যবস্থাপক ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাসুদ রানা। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র এক কেন্দ্রীয় নেতার ভাগ্নে মাসুদ রানার খুটি’র জোর কোথায় ? তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। তার গাফিলতির কারণে সুষ্ঠু সংরক্ষণের অভাবে এই সার গোডাউনে শুধু সার বিনষ্টই নয়, মজুদের চাইতে ২ হাজার মে.টন সার কম রয়েছে এমন অভিযোগ উঠেছে। এ ব্যাপারে উবধর্তন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণসহ সুষ্ঠু তদন্তের দাবী জানিয়েছে,সচেতন মহল।



মন্তব্য চালু নেই