৩৫ পদের ভর্তা দিয়ে পাগলা পিঠা : গরিবের জন্য ‘ফ্রি’

নাম তার অলি পাগলা। রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকা ফার্মগেটে (১১১ গ্রিনরোড) জমিয়ে বসেছেন পিঠার ব্যবসা। গরম গরম ভাপা পিঠা, সঙ্গে নিতে পারেন বাহারি ভর্তা, মাংস, আচার। মুখরোচক এইসব খাবার বিক্রিও হচ্ছে দেদারছে। তবে প্রতিদিন রাত সাড়ে ৯টায় দোকানের সামনে দেখা যায় দীর্ঘ লাইন, চলে হুড়োহুড়ি। তবে লাইনে দাঁড়ানো লোকগুলো কিন্তু ক্রেতা নন।

গতকাল সোমবার অলি পাগলার দোকানের সামনে গিয়ে দেখা গেল, একটি হ্যান্ডমাইকে ঘোষণা দিচ্ছেন, ‘আজকের শেষ সুযোগ। আজকের শেষ সুযোগ। যার ভাগ্য আছে, সে পাচ্ছেন। যার ভাগ্য নেই সে পাচ্ছেন না।’

লম্বা লাইনে দাঁড়ানো মানুষ। নিজে গিয়ে সবার হাতে ধরিয়ে দেন নিজের একটি করে ভিজিডিং কার্ড। এরপর এই কার্ড নিয়ে একজন একজন করে সামনে আসতে থাকেন আর তাদেরকে দেয়া হয় পিঠাভর্তি একটি প্যাকেট। ওই প্যাকেটে দুইটি করে পিঠা, নানা পদের ভর্তা। আর যদি বেশি ঝালে কারো কান গরম হয়, সেই জন্য দেয়া হয় একটি করে ক্যান্ডি। এভাবেই সাধারণ মানুষের মধ্যে বিনামূল্যে পিঠা বিতরণ করেন অলি পাগলা।

নামের সঙ্গে ‘পাগলা’ পদবি বলেই কি পিঠার নাম ‘পাগলা পিঠা’? আর এই পদবিই বা কোথায় পেলেন তিনি? এর পেছনেও আছে এক ভক্তির গল্প। অলি পাগলা নিজেই জানালেন, তিনি মংলা বন্দরের চাঁদপাই গ্রামের বাবা মেছো শাহ মাজারের ভক্ত। এই মাজারকে সবাই পাগলা বাবার মাজার বলে। তারপর থেকেই তিনি ‘পাগলা’ পদবি নিয়েছেন, পিঠার নামও দিয়েছেন।

2015_11_10_22_38_51_6rG8zNvUnWVU375pDBIvnm3ikid5XB_original

তবে তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘আমি কিন্তু পাগল না। পাগলা আমার নামও না। আমার নাম অলি শেখ। আমার বাড়ি বাড়ের হাট। খুলনা মংলা।’

জানালেন, এই ফার্মগেট এলাকায় ১৪ বছর ধরে আছেন। তবে পিঠার ব্যবসা করছেন এই দশ বছর বা তার কিছু বেশি সময় ধরে। ‘সিজেনে’ আনারসের ব্যবসা করেন। শীতের সময় পিঠা। অলি শেখ আরো বলেন, ‘এখন আমার তিনটি পাগলা পিঠা এবং দুইটি পাগলা হালিমের দোকান আছে। পিঠা এবং হালিমের দোকানে ২০ জন কর্মচারী আছে।’

বিনামূল্যে পিঠা বিতরণের প্রসঙ্গে অলি শেখ বলেন,‘ প্রতিদিন কমপক্ষে ৫ হাজার পিঠা বিক্রি করি। আমার অনেক লাভ হয়। লাভ হওয়ার কারণেই গরিবের টাকা, গরিব লোকজন এখানে এসে দাঁড়িয়ে থাকে। চিন্তা করলাম গরিব লোকজনকে আমার খাওয়ানো দায়িত্ব। গরিবের ন্যায্য অধিকার। এই থেকে পিঠা দিচ্ছি। এটা দিতে পেরে মনে খুব শান্তি লাগছে।’

অলি শেখের গ্রামের বাড়ি বাগেরহাটের মংলা বন্দরের মিঠাখালী গ্রামে। স্ত্রী, দুই ছেলে ও দুই মেয়েসহ গ্রিনরোড এলাকায়ই থাকেন।

জীবনসংগ্রামের গল্প বলেন অলি : ঢাকায় প্রথম যখন আসি তখন অনেক কষ্টে দিন পার করছি। কষ্ট করেছি। তিন বেলা খেতেও পারি নাই। প্রথমে রিকশা চালাই। বিভিন্ন কাজ করছি। পরে এই ব্যবসা শুরু করি।

কথা বলতে বলতে দু’চোখ ছলছল করে ওঠে অলি শেখের। কিছু সময় চুপ করে থেকে নিজেকে ধাতস্থ করেন নেন। এরপর আস্তে আস্তে বলেন, ‘পরে আল্লাহপাক আমাকে এই অবস্থায় নিয়ে আসে। এখন মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারছি।’

তিনি বলেন, ‘আমি এখানে চিতই পিঠা, ভাপা পিঠা এবং তেলের পিঠা বিক্রি করি। পিঠার সঙ্গে ৩৫ পদের ভর্তা ফ্রি খাওয়ানো হয়। ভর্তার মধ্যে রয়েছে ইলিশ মাছ, চ্যাপা শুঁটকি, কাঁচা মরিচ, শুকনা মরিচ, ধনিয়া পাতা, সরিষা।’

এখানে রাস্তার পাশে দোকান বসিয়ে পিঠা বিক্রি করতে গিয়ে পুলিশের সঙ্গেও বেশ সখ্য হয়েছে অলি শেখের। পুলিশের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তিনি পিঠা সরবরাহ করেন। এমনকি ঈদের দিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসায়ও দিয়েছেন।



মন্তব্য চালু নেই