বাংলাদেশ-পাকিস্তান টেস্ট সিরিজ

৩য় দিন শেষে পাকিস্তান ৫৩৭/৫, লিড ২০৫ রানের

বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা এই উইকেটে রানের জন্য মাথা খুড়ে মরেছেন। বড় জুটি হয়নি। কোনো একজনের ব্যাট থেকে সেঞ্চুরিও আসেনি। শেষের দিকে হয়েছে দ্রুত পতন। সেই পিচেই পাকিস্তান যখন ব্যাট করে চিত্র ভোজবাজির মতো পাল্টে যায়। বোলারদের জন্য এই উইকেটে কিছুই থাকে না। কিন্তু ব্যাটসম্যানরা ঠিকই জুটির পর জুটি গড়েন। কেউ আবার পেয়ে যান ডাবল সেঞ্চুরিও! লোয়ার অর্ডারেও রানের ফোয়ারা ছোটে! খুলনার শেখ আবু নাসের স্টেডিয়াম তৃতীয় দিনে এসে পরিশ্রমী পাকিস্তানের সামনে তুলে ধরে রানের ডালা। সেই ডালা গ্রহণ করে পাকিস্তান উঠে যায় রানের পাহাড়ে। প্রথম ইনিংসে ২০৫ রানের লিড নিয়েছে পাকিস্তান। হাফিজের ২২৪ রান করার দিনে পাকিস্তান তৃতীয় দিন শেষ করেছে ৫ উইকেটে ৫৩৭ রান নিয়ে। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ করেছিল ৩৩২ রান।
টেস্ট ক্রিকেটে সব সময়ই দিনের প্রথম সেশনটা গুরুত্বপূর্ণ। গুরুত্ব রাখে তা দুই দলের জন্যই। আর সাকিব আল হাসান এই ম্যাচের আগে বলেছিলেন, তাদের বোলিং পাকিস্তানের চেয়ে ভালো। সেই ভালোটা পাকিস্তান দেখালেও বাংলাদেশের বোলারদের কাছ থেকে দেখা যায়নি। বাংলাদেশকে তো পাকিস্তান ৩৩২ রানে করে দিয়েছে অল আউট। কিন্তু পাকিস্তানের একেকটি উইকেট তুলে নিতে প্রাণান্ত চেষ্টাই করে যেতে হলো স্বাগতিক বোলারদের। আর এই দিনে বাংলাদেশের যা সাফল্য তার সবটাই ছাপিয়ে যায় মোহাম্মদ হাফিজের ডাবল সেঞ্চুরিতে। সারা দিনে ৪টি উইকেট নিতে পেরেছে স্বাগতিকরা।
টেস্ট ক্রিকেটের আসলে আলাদা একটা সৌন্দর্য আছে। সেই সৌন্দর্য দ্বিতীয় দিনে একবার বড় করে চোখে পড়েছে। প্রথম দিনটা ছিল বাংলাদেশের। কিন্তু দ্বিতীয় দিনের সবটাই আশ্চর্যরকমভাবে পাকিস্তানের দিকে ঘুরে যায়। তৃতীয় দিনেও সেই অবস্থা। এবং এদিনের হিরো দ্য প্রফেসর হাফিজ। সেই তিনি হিরো যে কিনা ৩ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে নিদারুণভাবে ব্যর্থ। ৮ রান করেছেন তিন ম্যাচে। অথচ টেস্ট তাকেই দিলো দু্ই হাত ভরে! অনেকটা উপচে পড়া সুখ হাফিজের।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১৯৬ রানে আউট হয়েছিলেন। গেল বছরের শেষটায় নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১৯৭ রানে আউট হওয়ার কষ্ট পুড়িয়েছিল। পুড়ে পুড়ে আরো খাটি হয়েছেন হাফিজ। আবেগময় এক ডাবল সেঞ্চুরি তুলে নেওয়ার পথে ১৯০ রানের ঘরে গিয়ে কিছুটা থমকে যান হাফিজ। ১৪ বল লাগে ১৯০ রান থেকে সরতে। ১৯৮ রানে গিয়ে সেঞ্চুরির জন্য দুই রানের শট খেলার আগে ১১ বল পেরিয়ে যায়। আরেকবার ডাবল সেঞ্চুরিটা মিস করার কষ্টের মাঝে পড়তে চাননি বলেই ছিলেন এতো সাবধানী। ২৮৬ বলে ২০০। ২১টি চার ও ৩টি ছক্কা দিয়ে সাজানো ইনিংস যেমন পরিশ্রমের, তেমন শিল্পেরও। হাফিজের জন্য অবশ্যই আবেগের ডাবল সেঞ্চুরি। কিন্তু আবেগের বহিঃপ্রকাশ নেই। সামান্য উদযাপন। তারপর সিজদা করে সৃষ্টিকর্তাকে সম্মান ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে আবার শুরু কাজ।

হাফিজ কি আরো বড় কিছু করবেন? এই প্রশ্ন যখন ঘুরছে তখন হাফিজকে ২২৪ রানে তুলে নিয়েছেন শুভাগত হোম। তাকে সুইপ করতে গিয়ে বল শুন্যে উঠিয়েছেন হাফিজ। বাঁ দিকে ঝাপিয়ে পড়ে চমৎকার ক্যাচ নিয়েছেন মাহমুদ উল্লাহ। এমন ইনিংস খেলার পর হাফিজের নিশ্চয়ই আক্ষেপ থাকার কথা নয়।
দিনটা শুরু হয়েছিলো হাফিজেরই ব্যাটে। সঙ্গী ছিলেন আগের দিনের পার্টনার আজহার আলী। দুজনে যেভাবে শট খেলছিলেন তাতে বাংলাদেশের বোলারদের কেউ কেউ একটু হলেও ঘাবড়ে গেছেন। নিজেদের গুছিয়ে নিয়েছেন তারপর। তবু একটু শর্ট বল, আলগা বল দিলেই তার ঠিকানা হয়েছে সীমানার বাইরে। সীমানা পার হওয়ার খেলাই খেলছিলেন হাফিজ ও তার পার্টনার। বাংলাদেশ যখন হতাশার মাঝে তখন মনে হচ্ছিলো এই উইকেটে ব্যাটসম্যানদের আউট হওয়ার বুঝি নিয়ম নেই! শুভাগত হোম সেই হাতাশার মধ্য থেকে বের করে আনেন দলকে। এই অফ স্পিনারের বলের লাইনে না আসতে পেরে বোল্ড হয়েছেন আজহার। ফেরার সময় দীর্ঘশ্বাস তার সেঞ্চুরির কাছ থেকে ফিরে আসার। ৮৩ রান করেছেন তিনি।
ইউনিস খান পাকিস্তানের ইতিহাসের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান। তিনি এসে হাফিজের সাথে গড়েছেন সাবলীল এক জুটি। ২ উইকেটে ৩৩ রান নিয়ে লাঞ্চে যায় পাকিস্তান। এই বিরতি ইউনিসের মনসংযোগে চিড় ধরিয়ে থাকবে। তাইজুল ইসলামের সামান্য টার্ন করা বলটিতে আলতো পুশ করতে চেয়েছিলেন ইউনিস। ঠিক ঠাক না হয়ে বল ভেঙ্গে দিয়েছে উইকেট। ৬২ রানের জুটি ভেঙ্গেছে। ৩৩ রানে ফিরেছেন ইউনিস।
দ্বিতীয় সেশনটায় দুটি উইকেট নিয়েছে বাংলাদেশ। ইউনিস ও হাফিজ ফিরেছেন। অধিনায়ক মিসবাহ উল হক ও হাফিজের মধ্যেও চমৎকার এক জুটি হয়েছে। ছক্কা দিয়ে খেলা শুরু করা মিসবাহের ওপর বড় নির্ভরতা সবসময়ই পাকিস্তানের। হাফিজের সাথে ৬৩ রানের জুটি গড়ার পথে ৪০০ রান পেরিয়ে গেছে এই জুটি। হাফিজকে হারানোর পর ৪ উইকেটে ৪২১ রান নিয়ে চা বিরতিতে যায় পাকিস্তান। এই বিরতির ফলও পেয়েছে বাংলাদেশ। ৫৯ রান করে মিসবাহ হয়েছেন তাইজুলের তৃতীয় শিকার। ফেরার আগে আসাদ শফিকের সাথে ৬৬ রানের জুটি গড়ে গেছেন মিসবাহ।
তবে দিনের চমক ষষ্ঠ উইকেটে সরফরাজ আহমেদ ও আসাদ শফিকের ৬৯ রানের অবিচ্ছিন্ন উইকেট জুটি। দুজনেই সমান ৫১ রান করে অপরাজিত। ৪.৩৫ গড়ে রান তুলেছেন। পাকিস্তানের ব্যাটিং ইনিংসকে চতুর্থ দিনে নিয়ে যাওয়ার কৃতিত্ব তাদের। বাংলাদেশের জন্য তাই আরেক রাশ হতাশাই রইলো।



মন্তব্য চালু নেই