২৮৯ রানেই থেমে গেলো বাংলাদেশের ইনিংস

মুশফিক নেই। ইমরুল এবং মুমিনুল হকও নেই। ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক তামিম ইকবালের হাতে ভাঙা-চোরা একটি দল। ক্রাইস্টচার্চের হ্যাগলি ওভালের সবুজ উইকেটে টস হেরে ব্যাট করারই আমন্ত্রণ পেলো বাংলাদেশ। কিউই পেস ব্যাটারির সামনে তবুও বলতে গেলে বুক চিতিয়ে লড়াই করার চেষ্টা করেছে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা।

তবুও কিউই পেসারদের তোপ সামলে প্রথম পুরোটা শেষ করতে পারলো না তামিম অ্যান্ড কোং। যার ফলশ্রুতিতে প্রথম দিন শেষ হওয়ার ৫ ওভার আগ পর্যন্ত ২৮৯ রান তুলতেই অলআউট হয়ে গেছে বাংলাদেশ। এরপরই দিনের খেলারও সমাপ্তি ঘোষণা করেন ম্যাচ রেফারি জাগভাল শ্রীনাথ।

ইমরুলের পরিবর্তে ওপেনিংয়ে সুযোগ পাওয়া সৌম্য সরকারের ব্যাটই (৮৬) কিছুটা হেসেছিল। এছাড়া প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে ডাবল সেঞ্চুরিয়ান সাকিব আল হাসানের ব্যাটও (৫৯) কথা বলেছে। সঙ্গে মুশফিকুর রহীমের পরিবর্তে টেস্টে অভিষিক্ত নুরুল হাসানের (৪৭) দৃঢ়তা। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের ইনিংসটা ছিল মোটামুটি আত্মবিশ্বাসে ভরপুর।

ওয়েলিংটন টেস্টেই বাংলাদেশ দল পরিণত হয়েছিল মিনি হাসপাতালে। ইনজুরির শিকার হয়েছেন মুশফিকুর রহীম, ইমরুল কায়েস এবং মুমিনুল হক। তিনজনই দলের খুব গুরুত্বপূর্ণ ব্যাটসম্যান। মুশফিক প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে করেন ১৫৯ রানে। দ্বিতীয় ইনিংসে মাথায় বলের আঘাত পেয়ে মাঠ থেকে বের হয়ে যেতে বাধ্য হন। ইমরুল ব্যাট হাতে ভালো করতে না পারলেও মুশফিকের পরিবর্তে উইকেটের পেছনে দাঁড়িয়ে বিশ্ব রেকর্ড গড়ে ফেলেন। তামিমের সঙ্গে ক্রাইস্টচার্চে ওপেন করতে নেমে জ্বলে উঠতে পারতেন তিনি।

মুমিনুল তো ওয়েলিংটনের প্রথম ইনিংসে কিউই পেসারদের বিপক্ষে দুর্দান্ত খেলেছিলেন। তার ৬৪ রানের ইনিংসটি ছিল সাহসে ভরপুর। বাংলাদেশের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান তিনি। ক্রাইস্টচার্চেও ছিলেন ভরসার অন্যতম প্রতীক। কিন্তু পাঁজরের হাঁড়ে বল লেগে তিনিও ইনজুরির শিকার।

এ তিনজনের পরিবর্তে অভিষেক হলো নাজমুল হোসেন শান্ত এবং নুরুল হাসান সোহানের। শান্ত দলের সঙ্গে ছিলেন ডেভেলপমেন্ট পারফরমার হিসেবে; কিন্তু কী ভাগ্য- একের পর এক অন্যদের ইনজুরি শান্তর মাথায় টেস্ট ক্যাপই পরিয়ে দিলো। সঙ্গে দলে ফিরেছেন সৌম্য সরকার এবং পেসার শুভাশিস রায়ের পরিবর্তে রুবেল হোসেন।

টস হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা মোটেও ভালো করতে পারেননি তামিম ইকবাল। দলীয় ৭ রানের মাথায় টিম সাউদির বলে উইকেটের পেছনে বিজে ওয়াটলিংয়ের হাতে ক্যাচ দিতে বাধ্য হন তিনি। তামিমের আউটের পর সৌম্য আর মাহমুদউল্লাহ মিলে ভালো একটা জুটি গড়ে তোলার চেষ্টা করেন; কিন্তু তাদের ৩১ রানের জুটিটা ভেঙে দেন ট্রেন্ট বোল্ট। উইকেটের পেছনেই ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তখন তার নামের পাশে লেখা ২৪ বলে ১৯ রান।

তামিম-মাহমুদউল্লাহ ফিরে গেলেও সাকিব আল হাসান ও সৌম্য সরকারের ব্যাটে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল বাংলাদেশ। দু’জন মিলে তৃতীয় উইকেটে ১২৭ রানের দারুণ এক জুটি গড়ে তোলেন। দু’জনই তুলে নিয়েছিলেন হাফ সেঞ্চুরি। তবে দলীয় ১৬৫ রানের মাথায় আউট হয়ে যান সৌম্য সরকার।

যদিও নান্দনিক সব শট আর দারুণ আত্মবিশ্বাসে মনে হচ্ছিল ক্যারিয়ারের প্রথম হাফ সেঞ্চুরির পর সেঞ্চুরিটাও পেয়ে যাবেন সৌম্য। শেষ পর্যন্ত তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগারে যাওয়ার অনেক আগেই ফিরে গেছেন এ ড্যাসিং ওপেনার। ট্রেন্ট বোল্টের ফুল লেন্থের বল ঠিকভাবে খেলতে না পেরে শর্ট কভারে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান তিনি। তবে আউট হওয়ার আগে টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন তিনি। খেলেছেন ৮৬ রানের ঝকঝকে ইনিংস। ১০৪ বল মোকাবেলা করে এ রান করতে চার মেরেছেন ১১টি।

সৌম্য সরকারের বিদায়ের পরই উল্টে যায় সবকিছু। মাত্র ১৭ বলের ব্যবধানে ধ্বস নামে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে। দ্রুতই আউট হয়ে যান প্রথম টেস্টে দুই ইনিংসে হাফ সেঞ্চুরি করা সাব্বির রহমান। এমনকি বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি আগের টেস্টের ডাবল সেঞ্চুরিয়ান সাকিব আল হাসানও। ফলে দারুণ বিপর্যয়ে পড়ে বাংলাদেশ।

ট্রেন্ট বোল্টের পরের ওভারেই দলীয় ১৭৭ রানের মাথায় স্লিপে ক্যাচ দিয়ে সাউদির হাতে ধরা পড়েন সাব্বির রহমান। ব্যাটিং অর্ডারে দুই ধাপ উন্নতিকে কোনো কাজেই লাগাতে পারেননি তিনি। আউট হলেন মাত্র ৭ রান করে। দলীয় ১৭৯ রানে টিম সউদির লেগ স্ট্যাম্পে থাকা বল ফ্লিক করতে গিয়েছিলেন সাকিব। বল ব্যাটের কানা ছুঁয়ে চলে যায় উইকেটরক্ষকের হাতে। আউট হওয়ার আগে ৭৮ বলে ৯টি চারের সাহায্যে ৫৯ রান করেছেন তিনি।

সাকিবের বিদায়ের পর কিউই পেসারদের বেশ কিছুক্ষণ রুখে দাঁড়াতে পেরেছিলেন দুই অভিষিক্ত নাজমুল হোসেন শান্ত এবং নুরুল হাসান সোহান। প্রায় ২০ ওভার মোকাবেলা করেছে এ দু’জনের জুটি। রান করেছে ৫৩টি। তবে কিউই পেসারদের একের পর এক বাউন্সার আর শট বলের সামনে এক পর্যায়ে হার মানতে বাধ্য হন সদ্যই কৈশোর শেষ করা শান্ত। ৫৬ বল মোকাবেলায় ১৮ রান করে ফিরে যান তিনি।

শান্তর তুলনায় উইকেটে অনেক বেশি দৃঢ়তা দেখাতে সক্ষম হন নুরুল হাসান সোহান। ৯৮ বলে তিনি খেলেন ৪৭ রানের ইনিংস। সোহানের জন্য আফসোস অভিষেকেই হাফ সেঞ্চুরির একেবারে দোরগোড়ায় গিয়ে পেলেন না। ট্রেন্ট বোল্টের ক্রমাগত শট বলেই ধরা খেলেন তিনি। মাথা বরাবর আসা বলকে পুল করতে গিয়েছিলেন সোহান। ফল ব্যাটের কানায় লেগে উইকেটের পেছনে।

তার আগেই অবশ্য মেহেদী হাসান মিরাজ ওয়েগনারের বলে বোল্ড হয়ে ফিরে গিয়েছিলেন ১০ রান করে। ২৬ বল খেলে ৮ রান করে আউট হন তাসকিন আহমেদ। তাসকিনের পরই আউট হন সোহান। এরপর কামরুল ইসলাম রাব্বি আর রুবেল হোসেন মিলে ইনিংসের সঙ্গে যোগ করেন আরও ১৬ রান। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে রাব্বি আউট হলে ১৬ রানে অপরাজিত থেকে যান রুবেল হোসেন।

বাংলাদেশের ১০টি উইকেটই নেন কিউই পেসাররা। টিম সাউদি নেন ৫টি। ৪টি নেন ট্রেন্ট বোল্ট। বাকি উইকেটটি নিলেন নিল ওয়েগনার।



মন্তব্য চালু নেই