২৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৯, সেদিন কি ঘটেছিল পিলখানায় ?

পিলখানা হত্যা মামলার তদন্ত থেকে জানা যায়, ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি পিলখানার দরবার হলে মহাপরিচালকের (ডিজি) দরবারে মোট ৯৭ জন কর্মকর্তা ও দুই হাজার ৪৮৩ জন জওয়ান ও অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। পবিত্র কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে দরবার শুরু হওয়ার পর ডিজি মেজর জেনারেল শাকিল আহম্মেদ তার বক্তব্য দিতে থাকেন। তার বক্তব্যের প্রায় শেষ পর্যায়ে হঠাৎ একটা শব্দ হয়।

দরবার হলের পূর্ব-দক্ষিণে রান্নাঘরের দিক থেকে সিপাহি মাঈন, ১৩ রাইফেলস ব্যাটালিয়ন অস্ত্র নিয়ে দরবার হলের মঞ্চে ঢোকেন। পেছনে পেছনে ৪৪ রাইফেলস ব্যাটালিয়ন সিপাহি কাজল আলী একটি রাইফেল হাতে মঞ্চের দিকে আসেন। সিপাহি মাঈন ডিজির দিকে অস্ত্র তাক করে ধরেন। সঙ্গে সঙ্গে আশপাশে থাকা সেনা কর্মকর্তারা তাকে আটক করে ফেলেন। দরবার হলে হৈচৈ শুরু হয়ে যায়।

ওই সময় সিপাহি কাজল দরবার হল থেকে বের হয়ে এক রাউন্ড ফাঁকা গুলি করেন। মুহূর্তের মধ্যে বিডিআর সিপাহিদের দু’টি গ্রুপ দরবার হল ঘিরে ফেলে গুলি করে এবং গ্রেনেডের বিস্ফোরণ ঘটায়। কর্মকর্তারা জীবন রক্ষার জন্য দরবার হলের মঞ্চের পেছনে, টয়লেট ও বিভিন্ন জায়গায় নিজেদের আড়াল করে রাখার চেষ্টা করেন। অনেক কর্মকর্তা দরবার হল থেকে বের হয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। মেজর শাহ নেওয়াজ, মেজর খালিদ হোসেন ও মেজর ইদ্রিস দরবার হলের দক্ষিণ গেট দিয়ে বের হয়ে একটু যেতেই বিডিআর সদস্যরা তাদের গুলি করে হত্যা করে।

পিলখানার বিভিন্ন কোত থেকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ লুট করে বিদ্রোহীরা গোটা পিলখানায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। দরবার হল থেকে পশ্চিম গেট দিয়ে বের হয়ে রাস্তার পাশে পৌঁছলে ৮-১০ সেনা কর্মকর্তাকে প্রথমে হাঁটু গেড়ে বসিয়ে ও শুইয়ে রাখে বিদ্রোহীরা। এরই মধ্যে একটি পিকআপে সিপাহি রমজান ১৫ ব্যাটালিয়নের সঙ্গীদের নিয়ে সেখানে উপস্থিত হন এবং তার হাতে থাকা এসএমজি দিয়ে ব্রাশফায়ার করে তাদের হত্যা করেন।

সিপাহিদের নির্দেশ মেনে মহাপরিচালক শাকিল আহম্মেদ লাইনের আগে এবং অন্য সেনা কর্মকর্তারা তার পেছনে পেছনে দরবার হলের পশ্চিম গেটের দিকে যেতে থাকেন। দরবার হলের বাইরে দু-তিন পা অগ্রসর হওয়া মাত্র বিদ্রোহীরা ব্রাশফায়ার করে তাদের হত্যা করে। তাদের সঙ্গে থাকা জিনিসপত্র লুটপাট করে। হত্যার আগে বিদোহীরা সেনা কর্মকর্তাদের লাথি, ঘুষি মারে এবং বেয়নেট চার্জ করে।

তিন সেনা কর্মকর্তা দরবার হলের উত্তর দিকে কাচ ভাঙা অংশ দিয়ে পালিয়ে মাঠ ও মাঠের পরে রাস্তা পার হয়ে একটি পানির ট্যাংকের ঘরে ঢুকে আত্মরক্ষার চেষ্টা করেন; কিন্তু বিদ্রোহীরা সেখানে গিয়ে তাদের হত্যা করে। মেজর হুমায়ুন কবির দরবার হলের দক্ষিণে রাস্তার ওপর ডিজির গাড়িতে লুকিয়ে থাকার চেষ্টা করেন। তাকে সেখানেই গুলি করে হত্যা করা হয়।

বিদ্রোহীদের এলোপাতাড়ি গুলিতে সুবেদার কাশেম দরবার হলের দক্ষিণ পাশে মারা যান। বিদ্রোহীদের গুলি, বোমার বিস্ফোরণে পিলখানার আশপাশের কয়েকজন পথচারী, একজন রিকশাওয়ালাও নিহত হন। তারা একপর্যায়ে ডিজির স্ত্রী, বাসায় থাকা দুই মেহমান ও গৃহকর্মীকেও হত্যা করে। সেনা কর্মকর্তাদের বাসায় ব্যাপক লুটপাট হয়। সেনা পরিবারের সদস্যদের নির্যাতনও করা হয়। এভাবে বিদ্রোহীরা দরবার হল ও আশপাশের এলাকায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে হত্যা করে।

পরবর্তী সময়ে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটো মামলা হয়। হত্যা মামলার রায়ে ১৫২ জনের ফাসি ২৭৭ জন খালাস পায়। অন্য আসামিদের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ডের সাজা হয়।

আজ ২৫ ফেব্রুয়ারি বিডিআর বিদ্রোহের সাত বছর পূর্ণ হচ্ছে। এ উপলক্ষে বিজিবি নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে।



মন্তব্য চালু নেই