২৩ বছর পর মায়ের কোলে গোলাম

রাজশাহী : রাজশাহীর বাঘা উপজেলার পাকুড়িয়ার কলিগ্রামে গোলাম রহমান। জন্মের পর সুস্থ স্বাভাবিক থাকলেও ১৬ বছর বয়সে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে গোলাম রহমান। পিতা ফকির মন্ডল জীবিত থাকা অবস্থায় খেজুরের রস জ্বাল দেওয়ার জন্য সকালে মাঠে পাঠিয়েছিলেন খড়ি (লকড়ি) আনতে মাঠে গিয়ে ভয় পেয়ে মানষিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে গোলাম। এ ভাবেই বাড়িতে কেটেছে ৭ বছর। ডাক্তার, কবিরাজকে দেখিয়েও তেমন ফলাফল পাওয়া যায় নি। ২৩ বছর বয়সে হঠাৎ করেই হারিয়ে যাওয়ার এক পর্যায়ে ৪৬ বছর বয়সে গতকাল শনিবার আবার মায়ের কাছে ফিরে এসেছে গোলাম।

এত বছর পরে ফিরে পাওয়ার আনন্দে ছেলেকে জড়িয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন মা রাজিয়াসহ ভাই বোন ও নিকট আতœীয়রা। তবে ফিরে আসার ৬ বছর আগে মারা গেছেন পিতা। ৬ ভাই বোনের মধ্যে গোলাম বড়।

জানা গেছে, ২৩ বছর আগে সাতক্ষিরা চিংড়ি ঘের এলাকায় ঘোরা ফেরা করাকালিন সময়ে পাগল বলে এলাকার কতিপয় যুবকরা মারপিট করছিল।

মানষিক ভারসাম্য হারিয়ে চলে গিয়ে ছিলেন সাতক্ষিরা জেলার কালিগঞ্জ থানার তারালি ইউনিয়নের তেথুলি পূর্ব পাড়া গ্রামে। আব্দুল বারি গাজির তাকে রাস্তা থেকে নিয়ে যান তার বাড়িতে। নিজের নাম ও গ্রামের নাম চারঘাটের পাইকড়ি ছাড়া আর কিছুই বলতে পাারে নি কুড়িয়ে পাওয়া মানসিক ভারসাম্যহীন ছেলেটি।

সন্ধানের জন্য এসব ঠিকানায় চিঠি দিয়েও ফেরৎ এসেছে অনেকবার। এরপর থেকে সন্তানের মতো লালন পালন করেছেন আব্দুল বারি।

আব্দুল বারির স্ত্রীও মনে করেন নি বাড়তি ঝামেলা। ২৩ বছর পর এই ছেলেটিকে ফিরে দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন গাজি ও তার পরিবারের লোকজন।

k-p123

এদিকে হারানোর বেদনা অন্য দিকে পাওয়ার আনন্দ। সব মিলিয়ে অনন্দ-বেদনায় কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন দুই পরিবারের মানুষ।
মা রাজিয়া জানান, বিভিন্নস্থানে তার খোঁজ না পেয়ে, ফিরে পাওয়ার আশা ছেড়েই দিয়েছিলেন। হঠাৎ করেই বাঘা ও চারঘাটের স্থানীয় সাংবাদিকরা তার বাড়িতে এসে ছেলে হারানোর বিষয়ে জানতে চান। পরে তাদের মাধ্যমে খবর পেয়ে এলাকার নজরুল ইসলামকে সাথে নিয়ে সাতক্ষিরা জেলার কালিগঞ্জ থানার তারালি ইউনিয়নের তেথুলি পূর্ব পাড়া গ্রামের আব্দুল বারি গাজির বাড়ি থেকে নিয়ে আসেন।

koligram-212021

এ নজরুল ইসলাম জানান, ২মাস আগে ওই থানার শ্যামনগর ব্রাক ম্যানেজার তুলশি সরকার এবং ওই গ্রামের নজরুল ইসলাম নামের অপর এক ব্যাক্তি মোবাইল ফোনে খবরটি জানায়। তাদের দেওয়া তথ্য মতে গোলাম তার নিজের নাম ও গ্রামের নাম চারঘাটের পাইকড়ি ছাড়া আর বলতে পারেনি।

নিজ এলাকা চারঘাটে খবর না পেয়ে সেলিমের মাধ্যমে নিখোঁজের বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে তাদের অভিভাবকদের সাথে সেখানে গিয়ে গোলামের মা ছেলেকে দেখেই সনাক্ত করেন।

সেখানকার স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান এনামুল হোসেন মুচলেকা নিয়ে আশ্রিত পিতার কাছ থেকে মায়ের হাতে তুলে দেন।



মন্তব্য চালু নেই