২২ দিন ধরে খেতে দেয়নি মা-বাবা! তবুও পরীক্ষা দেবে জুলেখা খাতুন

মেয়েটির অপরাধ সে বাড়ির পছন্দ করা পাত্রের সঙ্গে বিয়ে করতে না চেয়ে পড়তে চেয়েছিল। আর তার জন্যই তাকে ২২ দিন খেতে দেওয়া হয়নি, ছিঁড়ে দেওয়া হয়েছিল তার বইপত্র, জামাকাপড়। শুধু পড়তে চেয়ে বাড়ি ছেড়েছিল জুলেখা খাতুন।

সেই থেকে তার ঠাই হয়েছে স্কুলেরই জীবনবিজ্ঞানের পরীক্ষাগার। পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদের নবগ্রামের মহরুল গ্রাম পঞ্চায়েতের সিঙ্গার হাইস্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্রী জুলেখা। রাজমিস্ত্রি পাত্র কে ফিরিয়ে দিয়ে এখন নিজের পরিবারেরই চক্ষুশূল হয়ে উঠেছে সে। দিনমজুর বাবা রফিকুল শেখ আর মা সুলেখা বিবি গত নভেম্বরে মেয়ের বিয়ে ঠিক করেছিলেন। কিন্তু মেয়ে গিয়ে হাজির স্কুলের প্রধান শিক্ষক সঞ্জয় মণ্ডলের কাছে। নবগ্রামের যুগ্ম বিডিও বিপ্লব বসাককে খবর দেন প্রধান শিক্ষক।

ওই ছাত্রীর বাবা মা রফিকুল-সুলেখাকে ডেকে বোঝানো হয়, নাবালিকা ছাত্রীর পড়া বন্ধ করিয়ে বিয়ে দেওয়া আইনত অপরাধ। চাপে পড়ে তখনকার মতো পিছু হটেন জুলেখার বাবা-মা। কিন্তু অন্য বিপত্তি তৈরি হয়। জুলেখার হাতখরচ দেওয়া বন্ধ করে দেন তার বাবা মা, বই পত্র ছিঁড়ে দেওয়া হয়। না খাইয়ে রাখা হয় বলেও  অভিযোগ। সামনে মাধ্যমিক, এভাবে তার পড়াশোনার ক্ষতি হতে পারে এই আশঙ্কায় ঘর ছাড়তে চেয়ে ফের স্কুলের দ্বারস্থ হয় ওই ছাত্রী। এবারেও এগিয়ে আসে স্কুল আর প্রশাসন।

স্কুলে ছাত্রদের হোস্টেল থাকলেও ছাত্রীদের থাকার কোনও ব্যবস্থা নেই। অগত্যা স্কুলেরই জীবন বিজ্ঞানের পরীক্ষাগারে জুলেখার থাকার ব্যবস্থা করা হয়। চৌকি, তোষক, বালিশ, মশারি কেনা হয়। দিন-রাতে তার দেখভালের জন্য তিন হাজার টাকা দিয়ে দুই মহিলাকে রাখা হয়েছে। তাদের খরচ অবশ্য স্থানীয় বিডিও অফিস থেকে দেওয়া হচ্ছে। ছাত্রদের হোস্টেলে যে রান্না হয়, তা-ই খায় জুলেখা। তেল-সাবান, টুকিটাকি, দু’বেলা টিফিনের খরচ জোগান শিক্ষক-শিক্ষিকারা।

গত দুমাসে রফিকুল-সুলেখা এক দিনের জন্যও মেয়ের খোঁজ নেননি। সুলেখা বলেন, ‘ওর জন্য পাত্রপক্ষের কাছে আমাদের মুখ পুড়েছে।’ রফিকুলের দাবি, ‘চাইলে ও বিয়ে করেও পড়া চালিয়ে যেতে পারত। যে বাবা-মায়ের সম্মানের কথা ভাবে না, সেই মেয়ের সঙ্গে আমরা আর কোনও সম্পর্ক রাখতে চাই না।’

প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘শান্ত-নরম স্বভাবের হলেও জুলেখার মধ্যে তীব্র জেদ রয়েছে। মাধ্যমিকের টেস্ট পরীক্ষায় ভাল ফল করেছে। ও যাতে নির্বিঘ্নে যাতে পড়া চালিয়ে যেতে পারে, তার জন্য শিক্ষক-শিক্ষিকারা সকলেই সহায়তা করছেন। আলাদা-আলাদা আর্থিক পুরস্কার দিয়ে ইতিমধ্যেই জুলেখার সাহসকে কুর্নিশ জানিয়েছে জেলা ও রাজ্য প্রশাসন। মাধ্যমিকের পরে সে পড়া চালিয়ে যেতে চাইলে বহরমপুরে সরকারি হোমে থেকে সে পড়াশোনা করতে পারবে।’

জুলেখা জানায়, ‘আমার পাখির চোখ এখন মাধ্যমিকের দিকে। হাতে আর এক সপ্তাহও নেই। বাড়ির কথা মনে করে সময় নেই। বাড়িতে থাকলে বিয়ের কথা বলে মনোযোগ নষ্ট করে দিত। এখানেই ভাল আছি।’ এবেলা



মন্তব্য চালু নেই