পাহাড়ি দুর্গম এলাকায় আবাসিক স্কুল হবে

‘২০৪১ সালে বাংলাদেশ হবে উন্নত দেশ’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘২০৪১ সালে বাংলাদেশ হবে উন্নত, সমৃদ্ধ দেশ। সেভাবেই আমরা বাংলাদেশকে এগিয়ে নেব। আমাদের দেশে দারিদ্র্য থাকবে না, অশিক্ষা থাকবে না।’

রোববার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে শিক্ষাবৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠান ২০১৬-তে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদের স্থান হবে না। আমরা অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাংলাদেশ চাই। ধর্ম নিয়ে বিভেদ থাকলে এটি সম্ভব না। তাই আমাদেরকে বিভিন্ন ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে কাজ করে যেতে হবে।’

সমাজের তৃণমূলে বসবাসকারী মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন করার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তৃণমূল সমাজে বসবাসকারী মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন আনা দরকার। এটি হলে দারিদ্র্য দূর হবে, জাতি উন্নত হবে। তৃণমূলের উন্নয়নের জন্য বর্তমান সরকার কাজ করে যাচ্ছে। রাঙ্গামাটিতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় করা হবে। পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে অনেক স্কুল, কলেজ করা হয়েছে। সেসব এলাকায় রাস্তাঘাটের ব্যাপক উন্নয়ন করা হয়েছে। উপজাতিদের এগিয়ে আনার জন্য শিক্ষাবৃত্তি দেওয়া হচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। পার্বত্য চট্টগ্রামে ১৯৭৫ সাল পরবর্তী সময়ে সহিংসতা মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। আমি ১৯৮১ সালে বাংলাদেশে ফিরি। ১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পর পার্বত্য শান্তি চুক্তি করি। সে অঞ্চলের জন্য আলাদা মন্ত্রণালয় গঠন করি। সেখানে একজন মন্ত্রী আছে। তা ছাড়া, আঞ্চলিক পরিষদও গঠন করে দিয়েছি। পার্বত্য অঞ্চলের সার্বিক উন্নয়নে ব্যাপক পদক্ষেপ নিয়েছি।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা অবহেলিত মানুষদের উন্নয়ন করতে চাই। আমরা হিজড়াদের স্বীকৃতি দিয়েছি। তাদের সামাজিক পরিচয় দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। আমরা চাই সকলের উন্নয়ন সমানভাবে হোক।’

গত বছর নতুন পে-স্কেল দেওয়ার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন ১২৩ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অবসরের বয়ঃসীমা ৬৫ বছর পর্যন্ত করা হয়েছে। আমরা গবেষণার ওপর গুরুত্ব দিয়েছি। ১৯৯৬ সালে আমরা যখন সরকার গঠন করেছিলাম, তখন গবেষণার জন্য একটি টাকাও ছিল না। আমরা সেখানে এখন থোক বরাদ্দ দিয়েছি।’

শিক্ষাবৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তোমাদের আন্তরিক অভিনন্দন। তোমাদের ভালভাবে পড়াশোনা করতে হবে। নিজস্ব স্বকীয়তা থাকতে হবে। দেশের উন্নয়নের জন্য কাজ করে যেতে হবে।’

পাহাড়ি দুর্গম এলাকায় আবাসিক স্কুল হবে

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় আবাসিক স্কুল স্থাপন করা হবে। কোন এলাকার কোন পয়েন্টে স্কুল করলে ওইসব এলাকার শিশুরা (পাহাড়ি) পড়তে পারবে, সে বিবেচনায় আরো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে।

পাহাড়ে আবাসিক স্কুলের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বাচ্চাদের যেন হেঁটে হেঁটে অনেক দূরের পথ পাড়ি দিতে না হয়। এ ছাড়া সমতল ভূমির ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী যারা আছেন, তাদের উন্নয়ন করা দরকার। পাশাপাশি উত্তরের বিভিন্ন অঞ্চল ও সিলেটের নৃগোষ্ঠীরও উন্নয়ন হবে। সমাজে সব শ্রেণির মানুষের জন্য চাই উন্নয়ন, উন্নত জীবন।’

রোববার (৩ জানুয়ারি) দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আয়োজিত সমতলের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীভুক্ত মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠান তিনি এ কথা বলেন। পার্বত্য শান্তি চুক্তির ৮০ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

‘সরকার ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীসহ সবার উন্নয়নে কাজ করছে। মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করে দেশকে এগিয়ে নেয়া হবে। উন্নত দেশ গড়তে হলে কাউকে অবহেলা করা যাবে না’, বলেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘শিক্ষা ছাড়া কোনো জাতি দারিদ্র থেকে মুক্তি পায় না। আর আমাদের সরকার ক্ষমতায় এসে শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিয়েছে। শিক্ষার উন্নয়নে নানামুখি পদক্ষেপ নিয়েছে। প্রান্তিক পর্যায়ে শিক্ষা নিশ্চিত করতে পারলেই সামগ্রিক উন্নয়ন হবে।’

‘১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় আসে তখন দেশে স্বাক্ষরতার হার ছিল ৪৫ শতাংশ। আওয়ামী লীগ সে হার বাড়িয়ে ৬২ দশমিক ৫ এ উন্নীত করেছে। এজন্য ইউনেস্কো বাংলাদেশকে পুরস্কারও দিয়েছে’, বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘হিজড়া সম্প্রদায়কে আমরা স্বীকৃতি দিয়েছি। হরিজনও রয়েছেন। বাংলাদেশ সবার। সব ধর্মের জন্য এই দেশ। সবার ধর্ম পালনের অধিকার রয়েছে। সমাজে প্রতিটি শ্রেণির মানুষের জন্য উন্নত জীবনই আমাদের লক্ষ্য, সে জন্য সবার দিকেই দৃষ্টি দিচ্ছি আমরা।’

অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ‘প্রধানমন্ত্রী শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট’। বক্তব্যের আগে প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন জেলা থেকে আগত মেধাবী শিক্ষার্থীদের হাতে শিক্ষাবৃত্তিপত্র তুলে দেন।



মন্তব্য চালু নেই