২০১৮ সালের মধ্যে অতিদারিদ্র্য নিরসন

২০১৮ সালের মধ্যে দেশে অতিদারিদ্র্য নিরসন হবে বলে আশা ব্যক্ত করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এ লক্ষ্যে প্রস্তাবিত বাজেটে বিভিন্ন খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।

বাজেট-বক্তৃতায় তিনি বলেন, ২০১৬ সালের মার্চ মাসের মধ্যে ১০ লাখ অতিদরিদ্র জনগোষ্ঠীর দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য বাস্তবায়ন করা হচ্ছে ‘ইকোনমিক এমপাওয়ারমেন্ট অব দ্য পুওরেস্ট ইন বাংলাদেশ’ প্রকল্প।

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক নামে একটি ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ৬৪টি জেলার ৪৮৫টি উপজেলায় ৪ কোটি দরিদ্র মানুষকে অনলাইন ব্যাংকিং সেবা দেওয়া হচ্ছে। প্রতিটি বাড়িতে কৃষিভিত্তিক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র খামার গড়ে তোলার জন্য ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষায় দেশের সব উপজেলায় সমবায় বাজার স্থাপনের কার্যক্রম ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। দরিদ্র নারীদের জন্য বাস্তবায়ন করা হচ্ছে সমন্বিত পল্লী কর্মসংস্থান সহায়তা প্রকল্প। একই সঙ্গে গ্রামীণ ব্যাংকের কার্যক্রমে গতি সঞ্চারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’

মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের অগ্রযাত্রার নির্দেশক হলো দারিদ্র্য দূরীকরণ। জাতি হিসেবে জন্মলগ্ন থেকেই আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত লক্ষ্য হচ্ছে দারিদ্র্য দূরীকরণ। মুক্তিযুদ্ধে যেভাবে আমাদের জাতীয় সম্পদ ও দক্ষ জনশক্তি পাকিস্তানি ধ্বংসলীলার শিকার হয় এবং যেভাবে আমাদের দেশে জ্বালাও-পোড়াও ও লুটতরাজ চলে, তাতে দেশের ৭০ শতাংশের বেশি জনগণ দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যায়। দারিদ্র্য দূরীকরণ এখনো আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।’

তিনি আরো বলেন, ‘এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য আমরা ব্যাপকভাবে আমাদের দেশে মানুষের চাহিদা বাড়াতে এবং তা মেটাতে সচেষ্ট আছি। গত দেড় থেকে দুই দশক ধরে আমাদের প্রবৃদ্ধির হার ৬ শতাংশের কিছু বেশি। আমাদের অকল্পনীয় কৃতিত্ব হলো, একদিকে আমরা প্রবৃদ্ধির হার বাড়িয়েছি, অন্যদিকে বৈষম্য বাড়তে দিইনি। এই কৌশলের ফলেই আমরা দারিদ্র্য দূরীকরণে যথেষ্ট সাফল্য অর্জন করেছি। ৭০ শতাংশ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পরিবর্তে বর্তমানে ২৪ শতাংশ জনগোষ্ঠী দারিদ্র্যসীমার নিচে আছে।’

‘আমরা আমাদের স্বপ্নের দিগন্ত আরো প্রসারিত করেছি। ৬ শতাংশের বৃত্ত ভেঙে উচ্চ প্রবৃদ্ধির সোপানে আরোহণ এবং মাথাপিছু আয়ের ধারাবাহিক উত্তরণ ঘটিয়ে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত ও সমৃদ্ধিশালী দেশের কাতারে সামিল হওয়া আমাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য। তবে এর জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। আমি আশা করব, জনগণের জীবনমানের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় দেশপ্রেমিক সব রাজনৈতিক দল স্বতঃস্ফূর্ত সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবে, বিরত থাকবে সহিংসতা ও নাশকতার মতো সব জনবিরোধী কর্মকাণ্ড থেকে। দায়িত্বপূর্ণ আচার-আচরণ এবং পরস্পরের প্রতি সহনশীলতার মাধ্যমে প্রসার ঘটাবে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির, নিশ্চিত করবে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর কল্যাণ, যাদের শ্রমে-ঘামে ক্রমশ মজবুত হয়ে উঠছে আমাদের অর্থনীতি।’

কর্মসংস্থান ও মজুরি সম্পর্কে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘২০০৮ সালের পর থেকে বিশ্বের অনেক দেশই কর্মসংস্থানহীন প্রবৃদ্ধির সংকটে নিপতিত হয়েছে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার হিসাবমতে, মন্দাপূর্ব সময়ের তুলনায় বিশ্বে বেকার লোকের সংখ্যা ৩১ মিলিয়ন বেড়ে ২০১৪ সালে ২০১ মিলিয়নে দাঁড়িয়েছে। অথচ আমরা ২০১০ সাল থেকে ২০১৩ পর্যন্ত প্রতিবছর গড়ে দেশের অভ্যন্তরে ১.৩ মিলিয়ন এবং দেশের বাইরে ০.৫ মিলিয়ন নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছি। জি টু জি পদ্ধতিতে যৌক্তিক অভিবাসন ব্যয়ে মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, জর্ডান ও দক্ষিণ কোরিয়ায় কর্মী পাঠাচ্ছি। আমাদের সরকারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বিভিন্ন দেশে অবৈধভাবে কর্মরত প্রায় ১১ লক্ষ বাংলাদেশি কর্মী বৈধভাবে কাজ করার অনুমতি পেয়েছেন। কর্মসংস্থান বৃদ্ধির পাশাপাশি এ সময়ে প্রকৃত মজুরি বেড়েছে অনেকখানি, যা দারিদ্র্য ও অসমতা হ্রাসে ভূমিকা রাখছে।’

তিনি জানান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, স্যানিটেশন ব্যবস্থাসহ সামাজিক সূচকসমূহে হয়েছে ব্যাপক উন্নয়ন। ১৩ হাজার ৮৬১টি কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন বর্তমানে শেষ পর্যায়ে। এর সুফল হলো শিশুমৃত্যু ও মাতৃমৃত্যু হারে ব্যাপক হ্রাস এবং শিশু জন্মে প্রশিক্ষিত ধাত্রী বা নার্সের উপস্থিতি। বর্তমানে মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যুর হার প্রতি হাজারে যথাক্রমে ১.৭ ও ৩৩ জনে নেমে এসেছে। গড় আয়ু ২০০৫-২০০৬ এর ৬৬.৫ বছর থেকে বেড়ে হয়েছে ৭০.৭ বছর। দারিদ্র্য হার কমেছে ৪০.০ শতাংশ থেকে ২৪.৩ শতাংশে। আর অতিদারিদ্র্য ২৪.২ শতাংশ থেকে কমে হয়েছে ৯.৯ শতাংশ। বেড়েছে নারীর ক্ষমতায়ন ও সামাজিক গতিশীলতা।



মন্তব্য চালু নেই