২০১৬ সালে বিশ্বকে কাঁপিয়ে দেওয়া সেরা ১০ জঙ্গি হামলা

বাতাসে বিষ! কান্নার শব্দ থামেনি! স্বজন হারানোর আর্তনাদ সীমানা মানেনি৷ আমেরিকা থেকে সিরিয়া, কাশ্মীর থেকে লাহোর, ঢাকা থেকে ইস্তানবুল জঙ্গিদের বুলেট ছাড় দেয়নি কাউকেই৷ কেঁপে উঠেছে মানবসভ্যতা, মানুষরূপী কিছু হিংস্র জঙ্গিদের আঘাতে। বছরশেষে ফিরে দেখা সেই সকল জঙ্গি হামলা:

১. আইএসের নিধনযজ্ঞ: তখনও আইএস জঙ্গিদের কবলে ইরাকের মসুল৷ ৮ ফেব্রুয়ারি নৃশংস নিধনযজ্ঞের সাক্ষী থাকলো বিশ্ব৷ পুলিশ, সমাজকর্মী, সেনা- সবমিলিয়ে প্রায় ৩০০ জনকে হত্যা করল জঙ্গিরা৷ নিন্দার ঝড় উঠলো বিশ্ব জুড়ে৷ এর কয়েকদিন পর শিয়া মুসলিম অধ্যুষিত সিরিয়ার দু’টি শহরে আইএস জঙ্গিদের গাড়ি বোমা বিস্ফোরণে নিহত হলেন ২৭০ জন, আহত ৩০০-রও বেশি৷

২. গুলশান হামলা: পয়লা জুলাই, পাঁচ জঙ্গি ঢাকার গুলশানে হোলি আর্টিসান বেকারিতে ঢুকে বিদেশি ও বাংলাদেশি নাগরিকদের পণবন্দি করে৷ জঙ্গিদমন অভিযানে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের দুই আধিকারিক নিহত হন৷ এই হামলায় শেষ পর্যন্ত ২৯ জন প্রাণ হারান৷ যাঁদের মধ্যে ১৮ জন বিদেশি, ২ জন স্থানীয় বাসিন্দা, ২ পুলিশ কর্মী, ৫ জঙ্গি ও ২ জন বেকারির কর্মী৷

৩. পাঠানকোট হামলা: বছরের শুরুতেই ভারতের মাটিতে নৃশংস হামলা পাক জঙ্গিদের৷ ২ জানুয়ারি পাঠানকোট বিমানসেনা ঘাঁটিতে হামলা চালায় ৪ থেকে ৬ পাক জঙ্গি৷ জঙ্গি হামলায় নিহত হন ৭ জন নিরাপত্তাকর্মী, মারা যান এক ভারতীয় নাগরিক৷ আহত হন ২০ জন৷ প্রায় ১৭ ঘন্টা তীব্র গুলির লড়াইয়ের পর জঙ্গিমুক্ত হয় সেনাঘাঁটি৷ মেরে ফেলা হয় চার হামলাকারীকে৷ বাকি জঙ্গিদের খোঁজে শুরু হয় চিরুনি তল্লাশি৷ ৩ জানুয়ারিও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায় সেনাঘাঁটির ভিতর থেকে৷ ৪ জানুয়ারি আরেক জঙ্গিকে নিকেশ করা হয়৷ শেষ পর্যন্ত ৫ জানুয়ারি ষষ্ঠ জঙ্গি মারা যাওয়ার পর অপারেশন শেষ বলে ঘোষণা করে ভারতীয় সেনা৷

৪. ইস্তানবুল বিমানবন্দরে হামলা: ২৮ জুন, ইস্তানবুলের আতাতুর্ক বিমানবন্দরে স্ময়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র, বিস্ফোরক-সহ হামলা চালায় জঙ্গিরা৷ আন্তর্জাতিক টার্মিনালে জঙ্গি হানায় নিহত হন ৪৫ জন সাধারণ মানুষ৷ নিরাপত্তারক্ষীদের পাল্টা গুলিতে নিকেশ হয় ৩ জঙ্গি৷ হামলাকারী জঙ্গিরা রাশিয়া বা মধ্য এশিয়া থেকে এসেছিল বলে অনুমান তুরস্ক প্রশাসনের৷

৫. লাহোর বিস্ফোরণ: সন্ত্রাস সীমানা মানে না৷ ২৭ মার্চ, পাকিস্তানের লাহোরের সবচেয়ে বড় পার্কে আত্মঘাতী বিস্ফোরণে মৃত্যু হয় ৭২ জনের৷ যাদের মধ্যে ২৯ জন শিশুও শামিল ছিল৷

৬. ব্রাসেলস বিমানবন্দরে হামলা: ২২ মার্চ, পরপর তিনটি ফিদায়েঁ বিস্ফোরণে কেঁপে উঠলো বেলজিয়াম৷ দু’টি ব্রাসেলসের জাভেনতেম বিমানবন্দরে, একটি মালবিক মেট্রো স্টেশনে৷ নিহত হন ৩২ জন সাধারণ নাগরিক, হত তিন জঙ্গিও৷ অন্তত ৩০০ জন আহত হন ওই হামলায়৷ ২০১৫-তে প্যারিস হামলার সঙ্গে যুক্ত জঙ্গিরাই এই হামলা চালায় বলে সন্দেহ৷

৭. অরল্যান্ডো শুটিং: ১২ জুন, আমেরিকার অরল্যান্ডোর সমকামীদের একটি নাইটক্লাবে বন্দুকবাজের হামলায় ৪৯ জনের মৃত্যু হয়, আহত হন ৫৩ জন৷ পরে পুলিশের গুলিতে ওই বন্দুকবাজেরও মৃত্যু হয়৷ এই হামলাকে ৯/১১-র পর আমেরিকায় সবচেয়ে বড় হামলা বলা হচ্ছে৷ এর কয়েকদিন পর, ৭ জুলাই ডালাসে পুলিশি অত্যাচারের প্রতিবাদে এক স্নাইপার অন্তত ৫ জন পুলিশকর্মীকে খুন করে৷

৮. বাগদাদ কাররাদা বম্বিং:বিস্ফোরণের শব্দে ঘুম ভাঙে বাগদাদের! ৩ জুলাই বাগদাদে ধারাবাহিক বিস্ফোরণে ৩৪১ জনের মৃত্যু হয়, আহত হন ১০০ জনেরও বেশি৷ শিয়া অধ্যুষিত এলাকায় রমজানের কেনাকাটার মধ্যেই আইএস জঙ্গিরা গাড়িবোমা বিস্ফোরণ ঘটায়৷

৯. নিস হামলা: ১৪ জুলাই রাতে বাস্তিল দিবসের সেলিব্রেশনের ভিড়ে ঢুকে পড়ে ১৯ টন ওজনের কার্গো ট্রাক৷ ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে নিহত হন ৮৬ জন, আহতের সংখ্যা ৪৩৪৷ হামলাকারী ফ্রান্সে কর্মরত তিউনিশিয়ান নাগরিক মহম্মদ লাউয়েজ বুলে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়৷

১০. উরি হামলা: ১৮ সেপ্টেম্বর, ভোরবেলা ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরের উরিতে সেনাবাহিনীর সাব-কোয়ার্টারে হামলা চালায় ভারী অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত জৈশ-এ-মোহাম্মদ জঙ্গিরা৷ গত দু’দশকে ভারতে এর চেয়ে ভয়ঙ্কর হামলা আর হয়নি৷ জঙ্গিদের তীব্র গুলিবর্ষণে ১৯ জন সেনা শহিদ হন৷ প্রত্যক্ষদর্শীরা সেই আতঙ্কের ভোরবেলার প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে জানিয়েছেন, ঘুমন্ত ভারতীয় সেনা ছাউনিতে ৩ মিনিটে ১৭টি গ্রেনেড নিক্ষেপ করেছিল জঙ্গিরা৷ তবু একজন সেনাও তার জায়গা ছেড়ে পালাননি৷ টানা ছয় ঘন্টা ধরে চলে সেনা-জঙ্গি গুলির লড়াই৷ ৪ হামলাকারীরই মৃত্যু হয়৷



মন্তব্য চালু নেই