১৪ বছর পর ঋতুপর্ণা-প্রসেনজিতের রোমান্স

প্রসেনজিৎ ও ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত নাম দুটিকে ঘিরে কত না রটনা ছিল একদিন। সেই দিন এখন শুধুই অতীত। মাঝে কেটে গেছে ১৪টি বছর। সেই দিনে ফেরা না গেলেও প্রসেনজিৎ ফিরছেন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত-এর কাছে। ফের তাদেরকে এক ফ্রেমে দেখা যাবে। দেখা মিলবে দারুণ জমাটি এই জুটির রোমান্সও।

প্রসেনজিৎ-ঋতুপর্ণা জুটি আবার বড় পর্দায়। সিনেমার নাম প্রাক্তন। ছবিটি তৈরি করছেন নন্দিতা আর শিবপ্রসাদ। এ বিষয়ে তারা বলছেন, ‘এটা সম্পর্কের গল্প। আসলে আমাদের সকলের জীবনেই প্রাক্তন প্রেমের একটা গুরুত্ব রয়েছে। কখনও সেই প্রেমের ওপর একটা দুর্বলতা থেকে যায়, কখনও আবার সেই প্রেম চাপা পড়ে যায়, বহু বছর পর হয়তো নতুন করে ফিরে আসে।’

শিবপ্রসাদ মুখার্জি আর নন্দিতা রায়ের শেষ ছবি বেলাশেষে কলকাতার বাংলা ছবির বক্সঅফিসে রেকর্ড গড়েছে আগে। ১০০ দিন পরও যে ছবি ছিল হাউজফুল। সেই নির্মাতারা শোনালেন আরো ভালো খবর। তাদের মতে, ‘আমাদের নতুন ছবিতে ১৪ বছরের বনবাস কাটিয়ে রাম ফিরছেন সীতার কাছে।’

সিনেমাটির গল্প সম্পর্কে শিবপ্রসাদ বলন, ‘নন্দিতাদি ২০০১ সাল নাগাদ গল্পটা লেখেন। যখন এটা লেখা হয় তখনই মনে হয়, এটা প্রসেনজিৎ-ঋতুপর্ণাকে নিয়ে করব। কিন্তু তখন দুজনে একসঙ্গে কাজ করতে রাজি ছিলেন না। তাই ধরে নিয়েছিলাম গল্পটাকে নিয়ে অন্য কিছু করব। তারপর কয়েকবছর আগে একটা ইভেন্ট করতে গিয়ে বুম্বাদার সঙ্গে আমার কথা হয়। একসঙ্গে কাজের প্রসঙ্গ উঠতেই বুম্বাদাকে বলি, আমি যে কাস্টিং বলবো তুমি রাজি হবে তো? আমার এই ছবিতে কিন্তু ঋতুপর্ণা থাকবে। বুম্বাদা বলেন, আমি তো ছবিটা করবো শিবপ্রসাদ-নন্দিতার সঙ্গে। সেখানে বাকি চরিত্রে যেই থাকুক, আমার কোনো সমস্যা নেই। এরপর বহুবার কথা এগিয়েছে। কখনও মনে হয়েছে ছবিটা হবে। আবার কখনও মনে হয়েছে ছবিটা হবে না। শেষ পর্যন্ত হচ্ছে। আর আমরা যতো ছবি করেছি, এটা তার মধ্যে সবচেয়ে বড়ো মাত্রার ছবি।’

তিনি বলেন, ‘বেলাশেষে’-র পর মনে হল, আরও এক ধাপ এগোনো যেতে পারে।’

বছর পনেরো আগে যখন প্রসেনজিত-ঋতুপর্ণা জুটি বেঁধে একের পর এক ছবি করছেন, তখন তাদের রোমান্স দারুণভাবে উপভোগ করেছে দর্শক। সেটা শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ-এর মতো বাণিজ্যিক ছবি হোক বা উৎসব-এর মতো অন্যধারার ছবি।

শিবপ্রসাদ আরো বলেন, ‘ঠিক এই জায়গাটাই ভাবায় আমাদের। বাংলায় কতোদিন একটা প্রেমের ছবি হয়নি! শেষ কয়েকবছর আমরা নানারকম এক্সপেরিমেন্টাল ছবি করছি। সফলও হচ্ছি। আবার একগুচ্ছ গোয়েন্দা ছবি হচ্ছে। কিন্তু প্রেমের ছবিও যে দর্শক দেখতে চান। নায়ক-নায়িকার মধ্যে যে তীব্র রোমান্স, সেটা কিন্তু ফিরিয়ে আনব এই ছবিতে।’

ছবির প্রযোজনা সংস্থা হিসেবে যেমন থাকছে উইন্ডোজ, তেমনই থাকছেন অতনু রায়চৌধুরী। এরই সঙ্গে যোগ হতে পারে ‘ইরেজ’-এর নাম।

অতনু রায়চৌধুরী বলছেন, ‘পনোরো বছর পর প্রসেনজিত-ঋতুপর্ণা জুটির কামব্যাকে সবচেয়ে খুশি হবেন দর্শক। সেটাই একটা ভালোলাগার জায়গা।’

 

এ দিকে এ বিষয়ে মুখ খুলেছেন প্রসেনজিৎ-ও। তার অভিমত, ‘আমি বেশি ছবি করি না এখন। শিবপ্রসাদের সঙ্গে অন্য একটা কনসেপ্ট নিয়েও অনেকদিন ধরেই কথা চলছে। কিন্তু এই গল্পটা যখন শুনলাম, তখন মনে হলো এটা আমার আর ঋতুপর্ণার কামব্যাক ছবি হতে পারে। কারণ যে সময়টা থেকে আমরা একসঙ্গে কাজ করিনি, সে সময়ে অভিনেতা-অভিনেত্রী হিসেবে আমরাও অনেক গ্রো করেছি। ঋতুপর্ণাও অনেক সিরিয়াস ছবিতে কাজ করেছে। আমিও করেছি। নন্দিতা-শিবপ্রসাদের এই ছবিতে অভিনেতা প্রসেনজিৎ আর অভিনেত্রী ঋতুপর্ণার কাজ করার জায়গা রয়েছে। আর এমন একটা ছবি করতে চাইছিলাম, যেটা দেখে দর্শক বলবেন, এটা প্রসেনজিত-ঋতুপর্ণা ছাড়া হতোই না। দর্শক এই ছবিতে আমাদের যেমন জুটি হিসেবে দেখতে পাবেন, সেইসঙ্গে একটা ভালো গল্পও দেখতে পাবেন। টলিউডে আমার থেকে বয়সে ছোটোরা যারাই খবরটা শুনছে, সবাই দেখছি খুব খুশি!’

indexqqw

এমন খবর সামনে আসার দিনে চুপ থাকেননি ঋতুপর্ণাও। তার কাছে প্রশ্ন রাখা হয়, কেন এই ছবি। তিনি উত্তরে জানান, ‘অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরী, কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায় অনেকেই বলেছিলেন। সে সময় রাজি হইনি। কারণ আমার কোনও তাড়া ছিল না, জুটি হিসেবে ফেরার। কিন্তু এই গল্পটা যখন শুনলাম, মনে হল প্রসেনজিৎ-ঋতুপর্ণা জুটির কামব্যাকের জন্য এটা সঠিক ছবি। আমি বরাবরই বলেছি, বাণিজ্যিক ছবির মাধ্যমেই আমি ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত হয়েছি। তাই আমার জন্য একটা ছবি বাণিজ্যিকভাবে সফল হওয়া ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। শিবপ্রসাদ আর নন্দিতার মধ্যে সেই ক্ষমতাটা দেখতে পাই, যা অন্য অনেক পরিচালকের মধ্যেই হয়তো নেই। ওদের ছবির সঙ্গে সাধারণ মানুষ রিলেট করতে পারে, আর এন্টারটেইনডও হয়। ছবির বিষয়টা যাই হোক না কেন! ছবির বিষয়টায় খুব নতুনত্ব আছে, আমি সেটা বলবো না। কিন্তু বিষয়টার সঙ্গে খুব সহজেই, অনেক মানুষ একাত্মবোধ করতে পারবে।’

এখন প্রসেনজিৎ ও ঋতুপর্ণা ভক্তদের অপেক্ষার পালা। কবে আসবে সেদির যেদিন পর্দায় দেখা মিলবে ভারতের পশ্চিম বঙ্গের এই সীতা-রামকে।

তথ্যসূত্র : টাইমস অব ইন্ডিয়া



মন্তব্য চালু নেই