১১ ঘণ্টা ভূমধ্যসাগরে ভেসেছিলেন সপরিবারে…

লিবিয়ার সমুদ্র উপকূলে নৌকা ডুবে যাওয়ার পর বাংলাদেশি একটি পরিবারের সবাইকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। সেই পরিবারের প্রধান নারায়ণগঞ্জের মোহাম্মদ আলী, গত দশ বছর ধরে সপরিবারে ত্রিপলিতে থাকেন। স্ত্রী ও চার সন্তানকে নিয়ে ইউরোপগামী একটি নৌকায় উঠেছিলেন তিনি।

বৃহস্পতিবার সেখানকার স্থানীয় সময় রাত ৮টায় স্ত্রী ও চার সন্তানকে নিয়ে ইতালিগামী একটি নৌকায় চেপে বসেন। আফ্রিকা, সিরিয়া, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের আরো চার শতাধিক মানুষ ছিল নৌকাটিতে। এর মধ্যে বেশকিছু পরিবারও ছিল। যাদের মধ্যে বাংলাদেশি আরো তিনটি পরিবার আলীর পূর্ব পরিচিত।

তিনি বলেন, ‘সমুদ্রযাত্রার ঘণ্টাখানেক পরই নৌকাটির তলা ফুটো হয়ে যায়। কয়েক মিনিট পর ডুবে যায় নৌকাটি। আর এতে ভেসে যায় বেশিরভাগ যাত্রীই। তবে লাইফ জ্যাকেট পরে থাকায় তৎক্ষণাৎ ডুবে যায়নি কেউ। তখন শুরু হয় পরস্পরের হাত ধরে সমুদ্রে ভেসে থাকার নিরন্তর চেষ্টা।

দীর্ঘ সময় সমুদ্রে ভাসমান থাকায় মোহাম্মদ আলীর গলা ভেঙে গেছে। ভাঙা গলায় তিনি বলেন, ‘রাত ২টা থেকে পরদিন দুপুর ১টা পর্যন্ত আমরা পানিতে ভেসেছিলাম।’

তিনি জানান, তার পরিবারের সবাই জীবিত উদ্ধার হয়েছে। চার সন্তানের বড়টি ১১ বছরের ছোটটির বয়স আড়াই। তারা এখন সারারাত সাগরে ভাসার দুঃসহ স্মৃতি কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করছে।

তবে মারা গেছে তাদের সঙ্গে থাকা নারায়ণগঞ্জের মো. রমজান ও তার পরিবারের সবাই। পরিবারগুলোর সবাই অনেক বছর ধরে লিবিয়ায় বাস করছেন। সবাই কমবেশি শিক্ষিত এবং ত্রিপলিতে বেশ ভালোভাবেই জীবিকা নির্বাহ করতেন।

মোহাম্মদ আলী একজন প্রকৌশলী। ত্রিপলিতে ভালো একটি বাড়িতে থাকেন তিনি। নিজের গাড়িও আছে। তারপরও এই বিপদসংকুল পথে ইউরোপ যেতে চেয়েছিলেন।

তাদের ইউরোপে পৌঁছে দেয়ার জন্য প্রত্যেকের কাছ থেকে জনপ্রতি অর্ধলাখ বাংলাদেশি টাকার সমপরিমাণ লিবিয়ান মুদ্রা নিয়েছিল পাচারকারীরা।

তিনি বলেন, ‘ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া ও চিকিৎসার কথা ভেবেই নিরাপত্তাহীন লিবিয়া ছেড়ে ইউরোপে চলে যেতে চেয়েছিলাম। প্রায়ইতো যাচ্ছে। যাত্রাপথে বছরে একটা দুটো নৌকা অবশ্য দুর্ঘটনায় পড়ে। আমাদের ভাগ্যে এটা ছিল তাই আমরাই দুর্ঘটনায় পড়েছি।’

সূত্র: বিবিসি বাংলা



মন্তব্য চালু নেই