১/১১’র পর খালেদার ৪ স্বজন, সর্বশেষ কোকো

গুলশানে রাজনৈতিক কার্যালয়ে অবস্থানকালেই বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া শনিবার (২৪ জানুয়ারি) শুনলেন ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুসংবাদ। ১/১১ এর পর থেকে স্বজন হারানোর বিপর্যয়ে পড়েছেন তিনি। মৃত্যুর মিছিলে একে একে যুক্ত হয়েছে খালেদার মা, ভাই, সন্তানসহ চারজন।

সরকারবিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বর্তমানে গুলশানে রাজনৈতিক কার্যালয়ে অবস্থান করছেন। কার্যালয়ের দ্বিতীয় তলার দুই কক্ষেই ছোট পরিসরে এখন তার বিচরণ। এর মধ্যে একটি কক্ষে রাত্রিযাপন। এভাবেই রাজনৈতিক সংগ্রামের মধ্যে সর্বশেষ খালেদা জিয়ার সঙ্গে যুক্ত হলো সন্তান হারানোর শোক। পুত্র হারানোর শোকে খালেদা জিয়া এখন মূহ্যমান।

১/১১ এর সরকার ক্ষমতায় থাকার সময় ২০০৮ সালের ১৮ জানুয়ারি খালেদা জিয়ার মা তৈয়বা মজুমদার মারা যান। ওই সময় তিনি দুর্নীতি মামলায় কারাগারে ছিলেন। পরদিন প্যারোলে মুক্তি পেয়ে তিনি মায়ের লাশ দেখতে যান।

মায়ের শোক কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই ২০১০ সালের ১৩ নভেম্বর বিকেলে খালেদা জিয়াকে তার ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে বের করে দেয় এবং এরপর ওই বাড়িটির নিয়ন্ত্রণ নেয় ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড। দীর্ঘ ৩৮ বছরের স্মৃতিবিজড়িত ক্যান্টমেন্টের শহীদ মইনুল রোডের বাড়ি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়াকে ফুঁপিয়ে কাঁদতে দেখা যায়।

স্বামীর স্মৃতিবিজড়িত বাড়ি হারানোর ব্যথা কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার মারা যান। ২০১২ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ সময় রাত সোয়া ১০টায় নিউইয়ার্কের ব্রুকডেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
এ ছাড়া গত বছর ২৭ ডিসেম্বর মারা যান খালেদা জিয়ার স্বামী জিয়াউর রহমানের চাচাতো ভাই ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মহিতুর রহমান চৌধুরী।

গত ৫ জানুয়ারি গুলশান কার্যালয়ের ভিতরে গাড়িতে দাঁড়িয়ে বক্তব্য দেওয়ার পর ওই দিনই প্রথম প্রকাশ্যে এবং সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন খালেদা জিয়া। অব-হোয়াইটের মধ্যে মেরুন কালারের শাড়ির ওপর খয়েরি রংয়ের শাল পরে সংবাদ সম্মেলনে আসেন তিনি। এ সময় তাকে বেশ হাস্যোজ্বল দেখাচ্ছিল। গত ৩ জানুয়ারি রাত থেকে ১৯ জানুয়ারি রাত আড়াইটার আগ পর্যন্ত কার্যালয়ে অবরুদ্ধ থাকলেও তাতে মানসিকভাবে তিনি দমে যাননি।

কিন্তু ছোট ছেলে কোকোকে হারিয়ে একদমই মুচড়ে পড়েছেন তিনি। অনেক স্বজনই এখন খালেদা জিয়ার পাশে থাকলেও কোনোভাবেই তাকে সান্ত্বনা দেওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছে গুলশান কার্যালয় সূত্র।

আরাফাত রহমান কোকো শনিবার দুপুরে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মালয়েশিয়ায় মারা যান। বাংলাদেশ সময় দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে হৃদরোগে আক্রান্ত হলে মালয়েশিয়া ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি হসপিটালে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান। ওই দিনই বিকেলে মৃত্যুসংবাদ পান মা খালেদা জিয়া।

মৃত্যুসংবাদ পাওয়ার পর থেকে তিনি শোকে স্তব্ধ হয়ে পড়েন। একেবারেই নিকট আত্মীয় ছাড়া আর কেউ তার কাছে যেতে পারেননি। সমবেদনা জানাতে যাওয়া স্বজন কিংবা দলীয় নেতা কারো সঙ্গেই কথা বলেননি তিনি। ওই দিন থেকে খালেদা জিয়া নীরবে অনেক কাঁদছেন, তার চোখ দিয়ে অনবরত পানি ঝরছে এমনটি জানিয়েছেন স্বজনরা।

শনিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. সিরাজ উদ্দিন আহমেদ তাকে ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে যান। এর পর থেকে তিনি অনেকটা নিদ্রাচ্ছন্ন।

দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ রবিবার রাতে জানান, দেশনেত্রী (খালেদা জিয়া) এখনো প্রায় অচেতন অবস্থায় আছেন।

একে একে স্বজন হারানোর শোক খালেদার জিয়ার মনে বেশী দিন প্রভাব ফেলতে পারবে না বলে মনে করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান।

দ্য রিপোর্টকে রবিবার রাতে তিনি বলেন, ‘ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) মনের দিক দিয়ে অনেক শক্তি রাখেন। শোককে তিনি শক্তিতে রূপান্তরিত করবেন।’

তিনি বলেন, ‘এর আগে ম্যাডাম অনেক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছেন। সব কাটিয়ে উঠেছেন। এবার সন্তান হারানোর শোক, আশা করি এটাও তিনি কাটিয়ে উঠবেন।’ দ্য রিপোর্ট



মন্তব্য চালু নেই