১০ টাকা কেজি চালের তালিকায় মৃত্যু ব্যক্তি, শিক্ষক, ও সম্পদশালীদের নাম

কামরুজ্জামান শাহীন, চরফ্যাসন, ভোলা প্রতিনিধি: ভোলার চরফ্যাসনে হতদরিদ্রদের চাল বিতরনে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। তালিকা প্রনয়ণে স্বজনপ্রীতি, আ’লীগ নেতাকর্মী, ধনাঢ্য ব্যাক্তি, ব্যবসায়ী , স্কুল শিক্ষক ও প্রভাবশালীদের কার্ডের বিনিময়ে টাকা নেওয়াসহ একাধিক অভিযোগ রয়েছে। এসব অনিয়মের কারণে হতদরিদ্রদের ১০টাকার চাল বিতরন কর্মসূচির সুফল ভেস্তে যেতে বসেছে। এ যেন এক হরিলুটের অবস্থা। হতাশ ও বঞ্চিত হতদরিদ্র পরিবারগুলো।

অভিযোগ ও অনুমোদিত তালিকা সূত্রে জানা গেছে, নীলকমল ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের সিরিয়াল নং ৪২২ আছমত আলী, ৩৭৯ নং আবুল কাশেম মৃত্যু হয়েও নামের তালিকাভূক্তি হয়েছে। ৫নং ওয়ার্ডের ইউপির সদস্য নুর মুহাম্মদ সিরিয়াল নং ২৬২, তার স্ত্রী সিরিয়াল নং ২৫৪ সাহিদা বেগম। ২নং ওয়ার্ডের ইউনাইটেড কলেজের শিক্ষক মাকসুদুর রহমান সিরিয়াল নং ২৭৬, মুন্সিরহাট মহিলা মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক ও নিকাহ রেজিস্টার আলহাজ্জ আবু ইকবাল ইলিয়াছ কাজী, তার স্ত্রী একই প্রতিষ্ঠানের সহকারী শিক্ষিকা হয়েও হতদরিদ্রদের ১০টাকা মূল্যের চাউলের তালিকায় নাম অর্ন্তভূক্ত করা হয়েছেন।

নীলকমল শ্রমীকলীগের সভাপতি ৩৩৩ সিরিয়ালে রফিক মিকার, জাতীয় পরিচয় পত্রে নাম নেই ঢাকায় থাকেন ৪নং ওয়ার্ডে আবুল কালাম, চরকুকরী-মুকরীর মৎস্য আড়ৎদার ৫নং ওয়ার্ডের ২০৯ সিরিয়ালের শাহে আলমসহ তার ছেলেসহ পরিবারের ৩ জনই কার্ড পেয়েছে। এ ছাড়াও যিনি চাল বিতরণ করবেন সামছুদ্দিন ডিলার ও তার ভাই শাহবুদ্দিন ৯নং ওয়ার্ডের নামের তালিকায় অর্ন্তভূক্তি হয়েছে। ১নং ওয়ার্ডের সাবেক ইউপির সদস্য সিরিয়াল নং ১২৫ আবদুল বারেক মুসলিম পরিবারের ৬ জনের তালিকায় নাম রয়েছে।

তারা হলেন, ভাই সিরিয়াল নং ১২৭ জয়নাল আবেদীন, ১২৮ ছেলে ফারুক, ১২৯ ভাতিজা রফিক, ১২৪ কমলা বিবি, ১৩৩ ছেলে নাসিম।

ইউনিয়ন পরিষদের তালিকা প্রণয়কারী কমিটির সদস্য ও নীলকমল ইউপির ১নং ওয়ার্ড সদস্য শাহবুদ্দিন জানেনা তার ওয়ার্ডের নামের তালিকা তৈরী করেন ২নং ওয়ার্ডের ইউপির সদস্য কর্তৃক স্বাক্ষর করে উপজেলা খাদ্য অফিসে জমা দেয়া হয়েছে।

তিনি আরো জানান, তাকে স্থানীয় চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন লিখন না জানিয়ে নিয়ম বর্হিভূত তালিকা প্রণয়ন করে উপজেলায় জমা দেয়া হয়েছে। নীলকমল ইউপির আনসার ভিডিপির টিম লিডার শাহাবুদ্দিন জানান, সরকারি প্রজ্ঞাপনে রয়েছে শতকরা ১৫ ভাগ আনসার ভিডিপির জন্যে নির্ধারিত রয়েছে।

মোট ১৬৬৪ জনের নামের মধ্যে আমরা ২৫২ নাম পাব। আমাদের কারো নাম রাখা হয়নি। আমিও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট অভিযোগ দায়ের করেছি। নীলকমল ইউপির আ’লীগ সভাপতি আলমগীর হোসেন হাওলাদার জানান, নীলকমলে হতদরিদ্রদের নামের তালিকা প্রণয়নে মৃত ব্যক্তি, শিক্ষক, ধন্যন্ট্য ব্যক্তিসহ অনেকের নাম রয়েছে । আমরা সংশিষ্ট দপ্তরে জানিয়েছে। তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানান তিনি।

চরফ্যাসন উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে স্থানীয়দের সাথে আলাপ করে এসব অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া যায়। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, মেম্বার, গন্যমান্য ব্যক্তি ও দলীয় কিছু নেতাকর্মীরা ১০টাকার হতদরিদ্রের চালের তালিকা প্রনয়ণে অনিয়ম,স্বজনপ্রীতি,টাকার বিনিময়ে কার্ড দেওয়া এবং সম্পদশালীদের নাম দেওয়া হয়েছে। এতে বাদ পরেছেন কপাল পোড়া হতদরিদ্রদের নাম। ফলে সরকারের এ কর্মসূচীর কার্যক্রমের মূল উদ্দেশ্য ভেস্তে যেতে বসেছে। উপজেলার রসুলপুর ইউনিয়নের হতদরিদ্র বিধবা নুরবানুর সাথে কথা হয়।

দুংখের সাথে তিনি বলেন,হামরা গরিব সরকারী সাহায্য কি হামরা পাব যাদের হনেক টাহা আছে তিনারা পাবে সরকারী সাহায্য। একই অভিযোগ করেন হতদরিদ্র মো.মফিজ ও আঃ রহিম।

সরজমিন রসুলপুর ইউনিয়নে গিয়ে খোজঁ নিয়ে জানা যায়, হতদরিদ্রেদের ১০ টাকার চাল বিত্তশালীরা নিচ্ছে। তাদেরকে জিজ্ঞাসা করা হলে বলেন আমাদের কার্ড আছে। রসুলপুর ৩ নং ওয়ার্ডের বাকের নামের এক হতদরিদ্র বলেন, সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার লাইজু বেগম তিন জনের কার্ড দিবে বলে ৩শত টাকা নিয়েছে। এখন কার্ডও দিচ্ছে না টাকাও দিচ্ছে না।

এভাবে কারো কারো কাাছ থেকে ৩শত, ৫শত টাকা নিয়ে তালিকায় নাম বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। এছারা ওজনে কম দেওয়া ও ১০টাকার চাল ১২টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। কিছু অনিয়মের কথা স্বীকার করে দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা বলেন, কিছু প্রভাবশালীর নাম বা স্বামী-স্ত্রী দুজনেই নাম রয়েছে তালিকায়।

এমন চিত্র চরফ্যাসন উপজেলার এওয়াজপুর ইউনিয়ন, জাহানপুর ইউনিয়ন, হাজারীগঞ্জ ইউনিয়ন, আসলামপুর ইউনিয়ন, চরমাদ্রাজ ইউনিয়ন, ওসমানগঞ্জ ইউনিয়ন, আবদুল্লাহপুর ইউনিয়ন, আবুবকরপুর ইউনিয়ন, নুরাবাদ ইউনিয়ন, কুকরী-মুকরী ইউনিয়ন, চরমানিকা ইউনিয়ন, ঢালচর ইউনিয়ন, চরকলমী ইউনিয়ন, নজরুল নগর ইউনিয়ন, মুজিব নগর ইউনিয়ন, আমিনাবাদ ইউনিয়নে। চ

রফ্যাসন উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এ উপজেলায় ১৯টি ইউনিয়নে হতদরিদ্রদের মধ্যে ১০টাকা কেজি চাল বিক্রির জন্য ২৪হাজার ৪শত ১৩জনের তালিকা করা হয়েছে।

৫০জন নতুন ডিলার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। প্রতিকেজি চাল গোডাউন থেকে ৮.৫০টাকায় ক্রয় করে কার্ডধারীদের মধ্যে ১০টাকা ধরে বিক্রির জন্য নতুন ৫০জন ডিলার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তবে বিভিন্ন ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিরা তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, সঠিক ভাবে তালিকা করা হয়েছে। কোন অনিয়ম হয়নি।

চরফ্যাসনে হতদরিদ্রদের চাল বিক্রির জন্য ডিলারশিপ নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ উঠছে। এক্ষেত্রে কোন নীতিমালা অনুসরণ করা হয়নি। বিজ্ঞপ্তি দিয়ে যাচাই-বাচাই করার বিধান থাকলেও এ ক্ষেত্রে তা করা হয়নি। নীতিমালা অনুয়ায়ী নিযুক্ত ডিলারদের অধিকাংশের চাল সংরক্ষণের উপযোগী দোকান বা গুদাম নেই।

চরফ্যাসন উপজেলা নিবার্হী অফিসার মো.মনোয়ার হোসেন বলেন, আমরা কিছু অনিয়মের অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগগুলো তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সরকারী বিধি মেনেই সকল ডিলার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলেও তিনি জানন।



মন্তব্য চালু নেই