হিন্দু-মুসলমান ভাগ করলে দেশটা শেষ হয়ে যাবে : মমতা

টেররিস্টরা একটা আলাদা শ্রেণি। তাদের সঙ্গে একটা গোটা সম্প্রদায়ের তুলনা করবেন না।’ রাজ্য বিধানসভায় এমনই মন্তব্য করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি আরো বলেছেন, ‘রাজ্যের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও  মাদ্রাসাগুলো শিক্ষার কাজেই ব্যবহৃত হয়।  কে বাংলা পড়বে, কে হিন্দি পড়বে, কে আরবি পড়বে, তা তাদের নিজস্ব ব্যাপার।’এসইউসি বিধায়ক তরুণ নস্করের এক প্রশ্নের উত্তরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ কথা বলেন। বিধায়ক তরুণ নস্কর মুখ্যমন্ত্রীর কাছে জানতে চান, ‘শোনা যাচ্ছে রাজ্যে অনুমোদনহীন মাদ্রাসাগুলোতে জঙ্গি প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। এ নিয়ে প্রচারে একটা বিপজ্জনক প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। তাই মাদ্রাসাগুলোতে জঙ্গি প্রশিক্ষণের সম্পর্ক কী?’শুক্রবার বিধানসভায় এই প্রশ্নটির জবাব দিতে গিয়ে হিন্দুত্ববাদী বিজেপির কঠোর সমালোচনা করেন। গেরুয়া শিবিরকে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, ‘আগে শুনতাম ধর্মগুরু, এখন আছেন দাঙ্গা গুরু।’  মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সংখ্যালঘুদের মধ্যে শিক্ষার প্রসার ঘটাতেই মাদ্রাসা গঠনের বিধিনিয়ম শিথিল করেছে রাজ্য সরকার। আগে নিয়ম ছিল, পাঁচ একর জমির ওপর তৈরি না হলে কোনো মাদ্রাসাকে স্বীকৃতি দেয়া যাবে না। কিন্তু পাঁচ একর জমি কোথা থেকে পাবে? আমরা রিল্যাক্স করে দিয়েছি।’

সংখ্যালঘুদের সমর্থনে তাঁর মন্তব্য, ‘সংখ্যালঘুরা তো উর্দু, আরবি এসব শিখবেই। আমিও তো উর্দু ভালোবাসি। উর্দুতে আমার কবিতার বইও বেরোচ্ছে।’

যারা অনুমোদনহীন মাদ্রাসা নিয়ে রাজ্যসরকারকে কাঠগড়ায় তুলতে চান, তাদের উদ্দেশ্যে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ভাগাভাগির রাজনীতি করতে যাবেন না। যেদিন হিন্দু-মুসলমান করব আমরা, সেদিন দেশটা শেষ হয়ে যাবে।’

বিজেপি’র নাম না করে তাদের উদ্দ্যেশ্যে মমতা বলেন, ‘খোঁজ নিয়ে দেখে আসুন, রামকৃষ্ণ মিশনেও কত সংখ্যালঘু ছাত্র পড়াশোনা করে। এটাই আমাদের রাজ্যের সংস্কৃতি।’

লেখাপড়া করলে সংখ্যালঘুরা কোন উচ্চতায় যেতে পারেন, তাঁর উদাহরণ দিতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান নুরুল হকের উদাহরণ দেন। তিনি বলেন, ‘মাথায় রাখবেন, এটা রাজ্যের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট।’

উল্লেখ্য, বর্ধমানে বিস্ফোরণের পরে বিভিন্ন মাদ্রাসায় জঙ্গি প্রশিক্ষণের অভিযোগ তুলে কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এনআইএ ইতোমধ্যেই বেশ কয়েকটি জায়গায় তল্লাশি চালিয়েছে। এ নিয়ে বিজেপি নানা অপপ্রচার শুরু করেছে রাজ্যজুড়ে। রাজ্য রাজনীতিতে ধর্মীয় মেরুকরণেরও চেষ্টা চালাচ্ছে তারা। এসব অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সংখ্যালঘুদের নানা সংগঠন প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছে। এসবের পরিপ্রেক্ষিতেই বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্যের পাশাপাশি বিভেদকামীদের বিরুদ্ধে মমতার স্পষ্ট বার্তা সংখ্যালঘুদের মধ্যে কিছুটা হলেও অস্বস্তি দূর করতে সহায়ক হবে বলে ওয়াকিবহাল মহল মনে করছেন।সূত্র: আইআরআইবি



মন্তব্য চালু নেই