‘হিংসা প্রতিহিংসা’ এবং একজন মনু মিয়ার গল্প

বাংলাদেশ চলচ্চিত্রের নিয়ম অনুযায়ী প্রতি শুক্রবার ছবি মুক্তি পায়। এ সময়টায় সিনেমা হলের ব্যবসা মোটামুটি স্থবির হয়ে যায়, কারণ এখন রমজান মাস। ছবি মুক্তি নয় বরং ঈদের ছবি নিয়েই ব্যস্ত পরিচালক-প্রযোজকরা।

এরপরেও অবশ্য সিনেমা হলে ছবি চলে, কারণ সিনেমা হলকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয় অনেক মানুষের জীবন। তাদের অনেকে ভিন্ন পেশার, কিন্তু জীবন এই সিনেমা হলকে ঘিরেই। এমনই একজন মনু মিয়া।

মনু মিয়া সিনেমা হলের কর্মচারী নন। পেশাটি বিচিত্র, তিনি মানুষের কান পরিষ্কার করার কাজ করেন। কিন্তু অন্য কোথাও ঘুরে বেড়ান না, থাকেন সব সময় পূর্ণিমা সিনেমা হলের আঙিনায়। হলে ঝিমিয়ে ঝিমিয়ে পুরোনো ছবি চলছে, কিন্তু মনু মিয়া ব্যস্ত থাকেন। আজ অবশ্য কথা বলার ফুরসত মিলল। রোজার সময় শুক্রবার সিনেমা হলে একেবারেই দর্শক আসে না। অন্য লোকজনও পাওয়া যায় না এ দিকটায়।

পূর্ণিমা সিনেমা হলের এখানে কত বছর কাজ করেন? এই পেশায় কীভাবে? সিনেমা হলের সামনেই কেন থাকেন? এ রকম অনেক প্রশ্নের জবাব দিয়ে গেলেন অনেকটা নির্লিপ্তভাবেই। ‘চাঁদপুরের গ্রামের বাড়ি থেকে ৩০ বছর আগে ঢাকায় আসি বড় ভাইয়ের সাথে। ভাই কারওয়ান বাজারে মাছের ব্যবসা করত। সেখান থেকেই পূর্ণিমা হলের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় প্রচুর লোক দেখে আমারও এখানে আসতে ইচ্ছা করত। একদিন হলের সামনে এসে পরিচয় হয় দেওয়ান ভাইয়ের সাথে। তিনি বম্বে থেকে কান পরিষ্কারের কাজ শিখে এসেছিলেন। তার সাথে আমিও কাজ শুরু করলাম। আজ ২৬ বছর হয়ে গেছে এখানেই কাজ করি।’ গল্পগুলো এভাবেই বলছিলেন তিনি।

ছবির দিনকাল মন্দ গেলেও মনু মিয়ার দিনকাল মন্দ যায় না। আয়-রোজগার নিয়েও অসন্তুষ্টি নেই তাঁর। ‘আমার ওস্তাদ দেওয়ান ভাই বলতেন, যারা সিনেমা হলে ছবি দেখতে আসে তারা শৌখিন মানুষ। তারা টাকার দিকে তাকায় না। আসলেই তাই। এই ২৬ বছরে আমার কোনো দিন না খেয়ে থাকতে হয়নি। প্রতিদিন ৩০০, ৪০০, শুক্রবারে ৫০০ ইনকাম, খারাপ না। দুইটা মেয়ে বিয়ে দিলাম, একটা ছেলে নাইনে পড়ে। ছোট একটা বাসা নিয়ে কাজীপাড়া থাকি। সুখে আছি, দোয়া করবেন।’

সিনেমা হলের সামনে এতদিন কাজ করলেও মজার বিষয়, এতদিনেও কোনো ছবি নাকি তিনি পুরো দেখেননি। ‘ভাই, আমার কোনো বাজে স্বভাব নাই। এই ২৬ বছরে আমি কোনোদিন ছবি দেখি নাই বললেই চলে। কাজের ফাঁকে এই ধরেন ১০ মিনিট দাঁড়িয়ে আবার চলে আসি। কোনো ছবি পুরা দেখা হয় নাই। সিগারেট খাই না। কাজ করি, ভাত খাই।’

মনু মিয়ার কথা শুনে সামনের দিকে এগিয়ে দেখা গেল, হলের গেটে লোক ঢুকছে। টিকিট চেকার কানাই বাবু দর্শকদের টিকিট চেক করছেন। ছবির নাম ‘হিংসা প্রতিহিংসা’। কানাই বাবু বলেন, ‘রোজার দিনে লোকজন ছবি দেখে না। পাঁচ-সাত বছরের আগের ছবি চালিয়ে হল চালু রাখা আর কি।’

‘হিংসা প্রতিহিংসা’ ছবির নায়ক-নায়িকা শাকিব খান আর ময়ূরী। কয়েকজন এর মধ্যেও হলে ঢুকছেন। মনু মিয়ার সেদিকে তেমন খেয়াল নেই। সিনেমা দেখার অভ্যাস তাঁর নাই তো!



মন্তব্য চালু নেই