হানিফ ফ্লাইওভার নির্মাণে ২৩৩৫ কোটি টাকার দুর্নীতি!

রাজধানীর মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার (গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভার) নির্মাণে ২ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এ ফ্লাইওভার নির্মাণ কিংবা বিনিয়োগের সঙ্গে ঢাকা সিটি করপোরেশনের (ডিসিসি) কোনো সংশ্লিষ্টতা না থাকা সত্বেও পাঁচ অর্থবছরে এই বিপুল পরিমাণ টাকা ব্যায় দেখানো হয়েছে বলে অভিযোগে বলা আছে।

ডিসিসি’র এই ‘ভৌতিক’ ব্যয় সংক্রান্ত অভিযোগটি যাচাই-বাছাই শেষে অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ জন্য দুদকের উপপরিচালক মোহাম্মাদ আব্দুস সোবহানকে অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। দুদক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

দুদকে আসা অভিযোগে বলা আছে, ফ্লাইওভার নির্মাণে বিনিয়োগের সঙ্গে কোনো সংশ্লিষ্টতা ছিল না অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের (ডিসিসি)। তারপরও পাঁচ অর্থবছরে তারা এ প্রকল্পে ব্যয় দেখিয়েছে ২ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা। যদিও এ ব্যয়ের কোনো তথ্য-প্রমাণ সংস্থাটির কাছে নেই। কোন খাতে কত ব্যয় হয়েছে, সে হিসাবও নেই তাদের কাছে। সম্পূর্ণ বেসরকারি বিনিয়োগে নির্মিত প্রায় ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ এ ফ্লাইওভারের সংশোধিত ব্যয় ধরা হয়েছিল ২ হাজার ১০৮ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। বিল্ড ওন অপারেট অ্যান্ড ট্রান্সফার (বিওওটি) পদ্ধতিতে এ প্রকল্পে পরামর্শক ব্যয় ছাড়া সিটি করপোরেশনের আর কোনো বিনিয়োগ নেই।

সেখানে ওই ফ্লাইওভার নির্মাণে ঢাকা সিটি করপোরেশন ২০০৯-১০ অর্থবছরে ব্যয় দেখায় ১০০ কোটি ও ২০১০-১১ অর্থবছরে ৩৩৫ কোটি টাকা। আর বিভক্ত হওয়ার পর ডিএসসিসি ২০১১-১২ অর্থবছরে এ প্রকল্পে ব্যয় দেখায় ৭০০ কোটি, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ৬০০ কোটি টাকা এবং ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৬০০ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে পাঁচ অর্থবছরে এ ফ্লাইওভার নির্মাণে সিটি করপোরেশনের ব্যয় দেখানো হয় ২ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা।

প্রকল্পের তথ্যের বরাত দিয়ে অভিযোগে বলা আছে, গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভারের মূল সুপার স্ট্রাকচার ও র‌্যাম্প নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৪৮১ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। অন্যান্য ব্যয়ের মধ্যে সড়ক নির্মাণে ২১৮ কোটি ৯৭ লাখ টাকা, টোল প্লাজা, টোল ব্যবস্থা ও লাইটিং খাতে ১০৫ কোটি ৩৭ লাখ, প্রকল্প ব্যবস্থাপনা ও গুণগত মান নিশ্চিত করতে ১৪৮ কোটি ৭৯ লাখ, পরিবেশগত প্রশমন (মিটিগেশন) খাতে ৫৫ কোটি ৮০ লাখ, ট্রাফিক ডাইভারশনে ২০ কোটি ও পরিসেবা সংযোগ লাইন স্থানান্তরে ২৪ কোটি টাকা। এ ব্যয়ের পুরোটাই বহন করছে ওরিয়ন গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান বেলহাসা-একম অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েট লিমিটেড। নির্মাণকাজ উদ্বোধনের পর ২০১০ সালের জুলাইয়ে ভারতের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিমপ্লেক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি করে বেলহাসা-একম।

অভিযোগে আরো বলা আছে, এ ফ্লাইওভারের সংশোধিত ব্যয় ২ হাজার ১০৮ কোটি ৫৫ লাখ টাকার সঙ্গে সিটি করপোরেশনের ব্যয় ২ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা যুক্ত হলে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের নির্মাণ ব্যয় দাঁড়াবে ৪ হাজার ৪৪৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ ফ্লাইওভারের কিলোমিটার প্রতি ব্যয় দাঁড়াবে ৪৪৪ কোটি টাকার বেশি। আর সিটি করপোরেশনের ব্যয় বাদ দিলে কিলোমিটার প্রতি ব্যয় দাঁড়ায় ২১০ কোটি ৮৫ লাখ টাকা, যা রাজধানীর অন্যান্য ফ্লাইওভারের চেয়ে দুই থেকে আড়াই গুণ বেশি।

অথচ রাজউকের তত্ত্বাবধানে প্রায় ২ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক ও ৩ দশমিক ১ কিলোমিটার দীর্ঘ কুড়িল ফ্লাইওভার নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৩০৬ কোটি টাকা। ফ্লাইওভারটি নির্মাণে কিলোমিটার প্রতি ব্যয় হয়েছে ৯০ কোটি টাকা। আর মিরপুর-বিমানবন্দর সড়ক ফ্লাইওভারের কিলোমিটার প্রতি ব্যয় ১০৫ কোটি টাকা। আবার ৮ দশমিক ২৫ কিলোমিটার দীর্ঘ মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৭২ কোটি ৭০ লাখ টাকা। এ হিসাবে কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় দাঁড়ায় ৯৪ কোটি টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)।

না প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদকের এক পদস্থ কর্মকর্তা বলেন, ‘মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার নির্মাণে বিনিয়োগের সঙ্গে ডিসিসি বর্তমানে ডিএসসিসির কোনো সংশ্লিষ্টতা না থাকা সত্বেও বিভিন্ন অর্থবছরে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় দেখানো হয়েছে বলে দুদকে একটি অভিযোগ আসে। অভিযোগটি আমলে নিয়ে যাচাই-বাছাই শেষে অনুসন্ধানে নামে দুদক। ডিসিসির বিভিন্ন দুর্নীতি ও অনিয়ম অনুসন্ধানে নিয়োজিত থাকা প্রাতিষ্ঠানিক টিম বিলুপ্ত হওয়ায়, ওই টিমের পরবর্তীতে অভিযোগটি অনুসন্ধানের জন্য দুদকের উপপরিচালক মোহাম্মদ আব্দুস সোবহানকে ও তদারকি করার জন্য দুদকের পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনকে দায়িত্ব দিয়েছে কমিশন।’বাংলামেইল



মন্তব্য চালু নেই