হাত, পা ও মুখের রোগ (HFMD) সম্পর্কে যা জানা প্রয়োজন

হাত, পা ও মুখের রোগ (HFMD) অত্যন্ত সংক্রামক একটি ব্যাধি। এন্টেরোভাইরাস পরিবারের কক্সাকি ভাইরাসের আক্রমণ এই রোগ সৃষ্টির জন্য দায়ী। এই ভাইরাস ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে সরাসরি ছড়িয়ে পরে অপরিষ্কার হাতের মাধ্যমে। এছাড়াও আক্রান্ত ব্যক্তির লালা, মল ও নিঃশ্বাসের মাধ্যমেও ছড়াতে পারে। HFMD হলে মুখে ফুসকুড়ি বা ঘা হয় এবং হাত পায়ে র‍্যাশ হয়। যেকোন বয়সের মানুষেরই এই রোগ হতে পারে তবে ৫ বছরের কম বয়সের শিশুদের বেশি হয়। এটি সাধারণত ৭ দিনের মধ্যে নিজে নিজেই ভালো হয়ে যায়।
লক্ষণ

HFMD এর লক্ষণগুলো প্রকাশ পেতে ৩-৭দিন সময় নেয়। এই সময়টাকে ইনকিউবেশন পিরিয়ড বলে। লক্ষণগুলো যখন স্পষ্ট হয়ে দেখা দেয় তখন শিশুর যে অভিজ্ঞতাগুলো হতে পারে তা হল- জ্বর, খাওয়ার রুচি কমে যাওয়া, গলা ব্যথা, মাথা ব্যথা, মুখে লাল ও ব্যথাযুক্ত ফুসকুড়ি হওয়া, হাতের তালু ও পায়ের পাতার নীচে লাল র‍্যাশ হওয়া। HFMD এর প্রাথমিক লক্ষণ জ্বর ও গলাব্যথা আগে প্রকাশ পায়। ১/২ দিন পর ফুসকুড়ি ও র‍্যাশ দেখা দেয়।
শনাক্তকরণ

প্রায়ই শারীরিক লক্ষণ পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে এই রোগটি শনাক্ত করে থাকেন ডাক্তার। এছাড়াও গলা থেকে নমুনা নিয়ে পরীক্ষা করে বা স্টুল পরীক্ষার মাধ্যমে ভাইরাস শনাক্ত করা যায়।
চিকিৎসা

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই ইনফেকশন ৭-১০দিনের মধ্যেই ভালো হয়ে যায়। তবুও চিকিৎসক উপসর্গ কমার জন্য ব্যবস্থাপত্র দিতে পারেন। ফুসকড়ি ও র‍্যাশ কমার জন্য সাময়িক মলম বা অয়েন্টমেন্ট, ব্যথার ঔষধ যেমন- অ্যাসিটামিনোফেন বা আইবুপ্রোফেন, গলা ব্যথার জন্য সিরাপ বা লজেন্স খাওয়ার পরামর্শ দিতে পারেন।

ঘরোয়া প্রতিকার
কিছু ঘরোয়া পদ্ধতির মাধ্যমেও HFMD এর লক্ষণগুলোর উপশম করা যায় যেমন- বরফ চোষা বা আইসক্রিম খাওয়া, ঠাণ্ডা শরবত পান করা এবং লবণাক্ত ও মসলাদার খাবার বাদ দেয়া ও লেবু জাতীয় ফল কিছুদিনের জন্য না খাওয়া ইত্যাদি। উষ্ণ গরম পানিতে লবণ মিশিয়ে গার্গল করলে গলা ব্যথা কমবে। দিনে কয়েকবার এটি করতে পারেন।

টিপস
· যদি ৭-১০ দিনের মধ্যে নিরাময় না হয় তাহলে চিকিৎসকের সাহায্য নিন।
· HFMD থেকে প্রতিরক্ষার প্রধান উপায় হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা।
· নিয়মিত হাত ধুলে এই রোগের সংক্রমণ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
· সাবান দিয়ে কিভাবে হাত পরিষ্কার করতে হয় তা আপনার সন্তানকে শিখিয়ে দিন।
· অপরিষ্কার হাত যেন মুখে না দেয় সেটি আপনার সন্তানকে বুঝিয়ে বলুন।
· আপনার সন্তান যেনো খাওয়ার পূর্বে, ওয়াশরুম ব্যবহারের পর ও বাহির থেকে ফিরে যাতে অবশ্যই হাত ধুয়ে নেয় সেদিকে খায়াল রাখুন।
· আপনার ঘর ও এর চারপাশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখুন।
· শিশুর মধ্যে HFMD এর লক্ষণ দেখা দিলে তাকে স্কুলে না পাঠানোই ভালো। এতে অন্যরা সংক্রমিত হবে না। বড়দের ক্ষেত্রেও কর্মক্ষেত্রে বা মানুষের সান্নিধ্যে না যাওয়াই ভালো।
· HFMD এর লক্ষণগুলোর সাথে চিকেনপক্সের অনেক মিল আছে। তবে পার্থক্য হল HFMD এর ক্ষেত্রে হাতে, পায়ে ও মুখে ফুসকুড়ি দেখা যায় এবং এটি একের অধিকবার হতে পারে।



মন্তব্য চালু নেই